গভীর গোপন শেষ পর্ব 

গভীর গোপন শেষ পর্ব 
অনন্য শফিক

জেবার হাসব্যান্ড বললো,’ টুকির আসল জন্মদাতা পিতা যে সে আমায় দশ লাখ টাকা দিয়েছে আমার মুখ দিয়ে যেন তার নাম কখনোই না আনি এই জন্য। আমি যেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দোষটা অন্য এক জনের দিকে ঘুরিয়ে দেই।টাকাটা আমার খুব প্রয়োজন ছিল।এই টাকার জন্যই জেবার সঙ্গে আমার বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানতে পারছিলাম না।এই জন্যই টাকাটা হাত ছাড়া করতে চাইনি। সবটা টাকা আমি গুনে গুনে নিয়েছিলাম। কিন্তু বিবেক আমায় বার বার বাঁধা দিচ্ছে। আমার কষ্ট হচ্ছিল খুব।মনে হচ্ছিল ভয়াবহ খারাপ একটা কাজ করছি আমি। জেনেশুনে নির্দোষ একটা লোককে ফাঁসিয়ে দিচ্ছি। এবার আমি এখানে এসেছি সত্যিটা বলতে।আসল শয়তানের মুখোশ আমি উন্মোচন করে দিবো এখন।’

আশফাকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সে মিটিমিটি হাসছে। হয়তো সে নির্দোষ প্রমাণ হবে এই জন্য। কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে জেবার হাসব্যান্ড বললো,’ টুকির আসল জন্মদাতা পিতা আর কেউ নয়।সে এখানেই আছে।এই যে আশফাক সাহেব।সে-ই টুকির পিতা। আশফাক একটা আস্ত শয়তান।ও কদিন পর পরই আমার বাসায় যেতো।জেবার সঙ্গে সময় কাটিয়ে আসতো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাছাড়া বিয়ের সময় আশফাক নিজেও স্বীকার করেছিল জেবার পেটে তার সন্তান। এইসব কথা ঢাকবার জন্য সে আমায় দশ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে দিয়েছে।বলেছে, এই দোষটা যেন আমি জেবার চাচাতো ভাইয়ের নামে চাপিয়ে দেই। এই যে দেখুন আমি সঙ্গে করেই সব টাকা নিয়ে এসেছি। এইসব টাকা দিয়ে আমি আর আমাকে বিসর্জন দিবো না। একজন নিরপরাধ মানুষকে সমস্যায় ফেলে একটা শয়তানকে বাঁচাবো না।এই নে তোর টাকা তুই নিয়ে কলঙ্কিত হ।’

বলে টাকার ব্যাগটা আশফাকের দিকে ছুঁড়ে মারলো জেবার হাসব্যান্ড।
আশফাক রাগে ওর দিকে তেড়ে গেল।জেবার হাসব্যান্ড তখন বললো,’ আমাকে বিশ্বাস না হলে আপনারা মেডিকেল টেস্ট করান গিয়ে। আশফাক সাহেব আপনার সাহস হবে এটা করার? আপনি যাবেন মেডিকেলে?’
জেবা বললো,’ আমিও মেয়েকে নিয়ে যেতে প্রস্তুত। ‘

আমি বললাম,’ আশফাক, তুমি সৎ থাকলে যাও।প্রমাণ করো গিয়ে।’
আশফাক আমার কথার উত্তর না দিয়ে বললো,’ তুলি, ওরা চক্রান্ত করছে সবাই মিলে। আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমাদের সুন্দর সংসার নষ্ট করছে। তুমি ওদের কথায় কান দিও না প্লিজ!’
আশফাক এসে আমার হাত ধরার চেষ্টা করলো।আমি হাত ধরতে না দিয়ে ওর থেকে সরে দাঁড়ালাম।
আশফাক অসহায়ের মতো করে এবার বললো,’ আমার অনাগত সন্তানের কসম করে বলছি, আমি এসবের কিছুই করিনি।’
আমার মেজাজ এতো খারাপ হলো শুনে! সঙ্গে সঙ্গে আমি ওর কলার চেপে ধরে রাগে কটমট করতে করতে বললাম,’ তোমার এই নোংরা মুখ দিয়ে আমার সন্তান নিয়ে কোন কথা বলবে না। তুমি পুরুষ কুকুরের মতো।যেখানে সেখানে সন্তান জন্ম দিয়ে ফেলে আসা তোমার অভ্যেস।’

আশফাক গিয়ে তার বোনের হাত ধরলো। বললো,’ জুঁই, তুলিকে একটু বোঝা।ও আমায় ভুল বুঝতেছে!’
জুঁই এক ঝটকায় ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,’ কি বুঝাবো ওকে? তুমি আগে স্বীকার করো টুকি তোমার সন্তান!’
আশফাক বললো,’ যা হবার তা হয়ে গেছে। আমার এসব ভুল ছিল। বুঝতে না পেরে এসব হয়েছে। এখন তুলি যেন পাগলামি না করে।ও যেন আমায় —
জুঁই কথা কেড়ে নিলো।বললো,’ এখন কি বলবো তাকে? সবকিছু ভুলে গিয়ে তোমার সঙ্গে থাকতে বলবো?’
আশফাক বললো,’ হু।তাই বল।’

জুঁই বললো,’ ওকে নিয়ে কোথায় থাকবে তুমি?’
আশফাক অবাক হলো।বললো,’ কোথায় মানে? এখানে।এই বাড়িতে।এই ঘরে।’
জুঁই হাসলো।বললো,’ এই বাড়ি কার তুমি জানো?’
আশফাক বললো,’ কার নামে মানে? আমার। শুধু আমার নামে।’
জুঁই আবারও হাসলো।বললো,’ কখনো দলিল দেখেছো বের করে? আছে দলিল তোমার কাছে?’
আশফাক বললো,’ আমার জমি। আমার কাছে এর দলিল থাকবে না! ‘
জুঁই বললো,’ তাহলে খুঁজে বের করে দেখাও।’

আশফাক তন্ন তন্ন করে দলিল পত্র খুঁজলো। বাইরের জমির দলিল পেলেও বাড়ির জমির কোন দলিল সে খুঁজে পেলো না। আশফাক রাগান্বিত হয়ে বললো,’ তুই চুরি করেছিস?’
জুঁই আবারও হাসলো। বললো,’ চুরি করিনি। তবে দলিল আমার কাছেই।মা মৃত্যুর সময় আমার কাছে দিয়ে গিয়েছিলেন।এই জমি বাবা মায়ের নামে লিখে দিয়েছিলেন। তোমার মায়ের মৃত্যুর সময় তোমার বয়স দেড় বছর। তখন আমার মাকে বিয়ে করে বাবা।এই সময় নানা দাবি করেন মার নামে বাড়িটা লিখে দিতে হবে।বাবা প্রথমে না চাইলেও পরে বাড়ি লিখে দেন। এতো দিন আমি কিচ্ছু বলিনি এ নিয়ে। কোনদিন বলতামও না।এই বাড়িতে সারা জীবন তুমিই থাকতে। এখন আর এক দন্ডও এখানে থাকতে পারবে না। তোমার মতো দুশ্চরিত্রের লোকের জন্য এই বাড়িতে থাকা নিষেধ!’

আশফাক মানতে চায় না।বলে,’ তুই মিথ্যে বলছিস?’
জুঁই তার ব্যাগ থেকে এক কপি কাগজ বের করে দেখালো।বললো,’ এটা ফটোকপি।আমি জানি তুমি কিছুতেই এই কথা বিশ্বাস করবে না। মানতে চায়বে না।তাই কাগজ নিয়ে এসেছি।’
আশফাক বললো,’ এই বাড়ি আমি ছাড়বো না।দেখি কিভাবে তুই বের করিস আমায়!’
জুঁই বললো,’ পুলিশ ডেকে বের করবো।অবশ্য তুমি এমনি এমনি যেতে চায়লে চলে যেতে পারো।’
আশফাক এখানে টিকতে পারলো না । সে বললো,’ তুলি চলো।আমরা গিয়ে ভাড়া বাসায় থাকবো।’

আমি বললাম,’ তোমার সঙ্গে আমি যাবো? এতো কিছুর পরেও তুমি ভাবলে কি করে তোমার সঙ্গে আমি সংসার করবো? ‘
আশফাক এসে আবার আমার হাত ধরে টানতে শুরু করলো।বললো ,’ যা হবার হয়ে গেছে।আমি ভুল করেছি।আর কখনোই এরকম হবে না।আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও।আসো, এখন থেকে আমরা সুন্দর একটা সংসার ঘরে তুলি।’
আমি এক ঝটকায় ওর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে ওর মুখে এক দলা থুথু ছিটিয়ে দিয়ে বললাম, ‘

ভালোই ভালোই এখান থেকে কেটে পড়ো। নয়তো আমি নিজের হাতে তোমায় খন করে ফেলবো হয়তো। তোমার মতো নোংরা লোকের মুখের দিকে তাকাতেই আমার ঘেন্না হচ্ছে! কুকুর কোথাকার! তোমাকে আমি ডিভোর্স দিবো।’
আশফাক আমার হাত ধরে ফেলেছে আবার। অনেক বেশি শক্ত করে ধরেছে।আমি কিছুতেই ছুটিয়ে নিতে পারছি না। সে আমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আর বলছে,’ তুমি আমার সঙ্গে সংসার করবে।সারা জীবন সংসার করবে। তোমার পেটে আমার সন্তান। বুঝতে পারছো না তুমি কিছু। তোমাকে প্রয়োজনে আমি আটকে রাখবো। তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না।’

এরিমধ্যে পুলিশ চলে এলো। জুঁই আগেই তার স্বামীকে মেসেজ করে বলেছিল এখানে সমস্যা হতে পারে। থানায় খবর দিয়ে রাখতে।প্রয়োজনে সেও যেন সঙ্গে আসে। পুলিশের সঙ্গে জুঁইয়ের স্বামীও এসেছে। পুলিশ এলে জুঁই সবকিছু খুলে বললো । পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে গেলো আশফাককে। এরপর জেবার হাসব্যান্ড চলে গেছে বিদায় নিয়ে।যাবার সময় বলে গেছে টাকা পয়সার একটা বিহিত করে জেবাকে সে ডিভোর্স দিবে।ও চলে যাবার সময় টুকি খুব কেঁদেছে। কিন্তু সে মায়া বারায়নি।মায়া বারাবে কেন? যার মেয়ে তার দরদ না থাকলে সে পর হয়ে তার মনে এই মেয়ের জন্য দরদ হবে কেন?
মনির তখনও এখানেই ছিল। সে যাবার সময় জেবাকে বললো,’ তুমি তো খারাপই।দু*শ্চরিত্রা মেয়ে।প্লিজ, তোমার লক্ষ্মী মেয়েটাকে তোমার মতো করে গড়ে তুলো না।ওর জীবনটা নষ্ট করো না!’

জেবা কিছু বললো না। শুধু হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
মনির চলে গেলে জেবা আমার কাছে এলো। আমার সামনে এসে দু হাত জোড় করে বললো,’
আমি তোমার সুন্দর সংসার নষ্ট করেছি তুলি। আমার জন্যই সব হয়েছে।আমি একটা খারাপ মেয়ে। আমি সব দোষ স্বীকার করছি আমার। তুমি আমায় ক্ষমা করবে বোন?’

আমি হাসলাম। বললাম,’ তোমাকে আমি কোনদিন ক্ষমা করবো না জেবা। তোমাকে আমি আজীবন ঘেন্না করেই যাবো।’
এরপর সে জুঁইয়ের কাছে ক্ষমা চায়লে জুঁইও আমার কথাগুলোই বললো।
শেষমেষ নিরূপায় হয়ে জুঁইকে বললো,’ তোমার তো সন্তানাদি নাই বোন।আমি চরিত্রহীন মেয়ে। আমার কাছে টুকি থাকলে তাকে আমি মানুষ বানাতে পারবো না।আমি চাই না আমার মতো খারাপ মায়ের ছায়ায় সে বড় হোক। তুমি নিবে আমার মেয়েকে? তুমি ওকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবে?’
হাত জোড় করলো জেবা।

জুঁই চুপ করে রইলো। তার স্বামী বললো,’ আমরা নিবো ওকে।’
জেবা সেদিনই এখান থেকে চলে গেল। টুকি অবশ্য খুব কাঁদলো।যাবার সময় সে মেয়েকে আদর করে চুমু খেয়ে বলে গেল,’ মানুষের মতো মানুষ হবে মা। আমার মতো খারাপ হয়ো না। খারাপ মানুষেরা সব সময় ভাবে তারা কোনদিন ক্ষতির মুখে পড়বে না। কিন্তু এই যে দেখো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমি। সন্তান হারিয়েছি। সংসার হারিয়েছি।বাবা মা মানুষের ক্ষমা সবকিছু হারিয়েছি।’
বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল জেবা। জেবা চলে যাবার পর আমি বললাম,’ জুঁই, তুমি গিয়ে আমায় দিয়ে আসো আমাদের বাড়িতে।’

জুঁই বললো,’ এসব কি বলছো তুমি? তুমি এখানেই থাকবে। এখানে।’
আমি হাসলাম। বললাম,’ উঁহু জুঁই। আমার জীবনের এই অধ্যায়টা এখানেই সমাপ্ত। এখন নতুন একটা অধ্যায় শুরু হবে আমার।’
জুঁই প্রথমে মানতে না চায়লেও পরদিন সকাল বেলা আমায় বাড়িতে দিয়ে গেলো।মা সব শুনে রাগ দেখালেন। কান্নাকাটি করলেন। কিন্তু ভাগ্যে যা আছে তা তো মেনে নিতেই হবে।
আমিও এখানে থাকতে লাগলাম।মনে মনে ঠিক করলাম, বাবু পৃথিবীতে আসুক আগে। গ্রাজুয়েশন শেষ করেই বিয়ে হয়েছিল আমার । চাকরি বাকরি নিয়ে আগে মাথা ঘামাইনি। এখনও বয়স চলে যায়নি।সময় আছে। কদিন চেষ্টা করলে চাকরি হবে।সরকারি না হোক।অন্য কোথাও হবে।

সপ্তাহ খানিক পর জুঁই ফোন করলো। ফোন করে বললো,’ একটা খারাপ সংবাদ আছে ভাবি।’
আমি বললাম,’ কি হয়েছে? কোন সমস্যা জুঁই?’
জুঁই বললো,’ ভাইজান তো জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।’
আমি বললাম,’ কিভাবে? কে ছাড়িয়েছে?’
জুঁই বললো,’ শুনলাম জেবা ছাড়িয়েছে। কোত্থেকে জানি টাকা পয়সা জোগাড় করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছে।’
শুনে বুকটা কেমন ধরফর করতে শুরু করলো।আমি বললাম,’ ওরা এখন কোথায়?’
জুঁই বললো জানি না।মনে হয় কোথাও বাসা নিয়েছে। একসঙ্গে নাকি থাকবে দুজন। শুনলাম বিয়ে করবে ওরা।’
শুনে আর কি বলার থাকে! শুধু এটুকুই বললাম ,’ এবার মিলেছে।খারাপে খারাপে সংসার হবে।’

এর পরদিন সকাল বেলা আমি জানলার কাছে বসে সমরেশ মজুমদারের ‘গর্ভধারিনী’ পড়ছি।ঠিক তখন আবার ফোন করলো জুঁই। ফোন দিয়ে বললো,’ ভাবি, সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
জুঁই কাঁদছে।
আমি আতঙ্কিত হয়ে বললাম,’ কি হয়েছে জুঁই?’
সে কাঁদতে কাঁদতেই বললো,’ ভাইজানকে মে*রে ফেলেছে জেবা। রাতে ঘুমের মধ্যে তার গলায় চু*রি চালিয়ে হ*ত্যা করেছে।’
শুনে এতো অস্থির লাগলো! ইশ্! বাহিরটা কতো সুন্দর ছিল আশফাকের। কিন্তু ভেতরটা এতো খা*রাপ।খা*রাপ মানুষদের শেষ হয়তো এভাবেই হয়।

আমি জুঁইকে জিজ্ঞেস করলাম,’ জেবা কোথায় আছে এখন? পালিয়েছে নাকি?’
জুঁই বললো,’ না পালায়নি।সে নিজ থেকেই পুলিশের কাছে গিয়ে ধরা দিয়েছে।সব স্বীকার করেছে।বলেছে, সে খু*ন করার জন্যই নাকি ভাইজানকে ছাড়িয়ে এনেছিল।খু*ন করে সে প্র*তিশোধ নিয়েছে।’
আমি আর কিছু বলিনি।কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে। ফোন কেটে দিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম।আর ভাবলাম, আল্লাহ অবশ্যই উত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনি সবার প্রাপ্য সবাইকে হিসেব করে বুঝিয়ে দেন। কাউকে তিনি ঠকান না।যে দুনিয়াতে ঠকে, তাকে দুনিয়াতে এর ক্ষতিপূরণ না দিলেও আখেরাতে ঠিকই বুঝিয়ে দেন। এবং যে পাপ করে। মানুষকে ঠকায়।তাদের জন্যও তার শাস্তি অপেক্ষা করছে।নিশ্চয় আল্লাহর শাস্তি সবচেয়ে ভয়ংকর!

তিন বছর পরের কথা –
আমার ছেলে হয়েছে। তার বয়স এখন দু বছর আট মাস। সুন্দর করে কথা বলে সে।আমি এখন একটা প্রাইমারি স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি। ছেলে সব সময় আমার সঙ্গেই থাকে।তার ফুফু কদিন পর পর এসে তাকে দেখে যায়।টুকি ওদের সঙ্গে আসে। আমরাও মা ছেলে তার ফুফুকে দেখতে যাই।টুকির জন্য উপহার নেই।আমি চাই টুকির একটা সুন্দর জীবন হোক।

জুঁই আমার ছেলেকে একটা মস্ত জিনিস উপহার দিয়েছে।যে বাড়িতে আমরা ছিলাম সেই বাড়িটা আমার ছেলেকে দিয়েছে। আমার অবশ্য এই বাড়ির প্রতি কোন রকম লোভ নাই।আমি চিন্তা করেছি বাড়িটাতে একটা অনাথ আশ্রম খুলবো।এই বাড়ি হবে অনাথদের আশ্রয়।এটা করবো আরো পরে। আমার হাতে অনেক গুলো টাকা জমার পর। জুঁইকে বলেছি এই কথা। সে শুনে ভীষণ খুশি হয়েছে।

এখন আমার সুন্দর জীবন কাটছে। বিয়ে করিনি আর। করবো কি না তা জানি না। এখন আর কাউকে হয়তো বিশ্বাস করতে পারবো না সহজে।এই জন্যই আপাতত বিয়ে নিয়ে ভাবছি না। ছেলেকে আমি মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে চাই। এখন একমাত্র এটাই আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আমার লক্ষও এটা। আমার ছেলেকে আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং চরিত্রবান পুরুষ হিসেবে বড় করতে চাই!

আমি তাকে শিখিয়ে যেতে চাই, নারী এবং পুরুষ এদের মধ্যে পার্থক্য নাই।আমি শিখিয়ে যেতে চাই, চরিত্র হলো মানুষের সবচেয়ে বড় অমূল্য সম্পদ। সবকিছু ছেড়ে হলেও এটাকে আঁকড়ে ধরতে হবে।আমি জানি এই দায়িত্ব আমি পালন করতে পারবো।কারণ আমি একজন ভালো মা। আমার উদ্দেশ্য চমৎকার।আর যার উদ্দেশ্য ভালো থাকে তার ভবিষ্যৎ আল্লাহ নিজেই সুন্দর করে দেন।

গভীর গোপন পর্ব ১১

( বিঃদ্রঃ – এই গল্প নিয়ে পজিটিভ নেগেটিভ সব ধরনের মন্তব্য করতে পারবেন। কোথায় কোথায় ভুল করেছি বললে আমার উপকার হবে। পরবর্তীতে আমি এই ভুল গুলো শুধরানোর সুযোগ পাবো। এবং অবশ্যই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি এখনও অসুস্থ।)

সমাপ্ত