ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৬

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৬
নুসাইবা ইভানা

সময়ের স্রোতে কেটে গেছে দীর্ঘ এক বছর। সময় খুব দ্রুত চলে যায়। কেউ চাইলেও তাকে আটকে রাখতে পারেনা। এই এক বছরে কত কিছু পাল্টে গেছে।
মিহি বসে আছে,কলকাতা শহরের একজন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ইশান মুখার্জির অফিসে।মিহি প্রায় এক ঘন্টা সময় ধরে বসে আছে। পড়নে তার সাদা সুতির শাড়ি। সাদা হিজাবে আবৃত করে রেখেছে মাথার চুল। কালো মাষ্কে ঢেকে রেখেছে মুখ। মিহির অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, ইশান মুখার্জি কেবিনে প্রবেশ করে বলে নমস্কার মিসেস মাহমুদ। অথবা মিস ছদ্মবেশী মিসেস মাহমুদ। তা এই ইশান মুখার্জি আপনার কি সেবা করতে পারে!

– নিজের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করতে চাই। নিজের সন্তানের স্বকৃতি চাই।
– আমি কি করতে পারি?
– আপনি চাইলে আমাকে হেল্প করতে পারেন।অবশ্য তার জন্য আপনি বিনিময় পাবেন।
– তো মিস….
– মার্শিয়া জাহান মিহি আমার নাম।
– তো মিস মার্শিয়া জাহান মিহি। আপনি আমাকে একটা কথা বলুন। আয়রা মাহমুদ আইমিন আপনার সতিন তার সাথে লাস্ট কবে দেখা হয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– মাইন্ড ইউর ল্যাগুইজ মিস্টার ইশান মুখার্জি। শাফিনের একমাত্র ওয়াইফ আমি। কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসলেই ওয়াইফ হয়ে যায় না।
ইশান মিহির দিকে জলের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে রিলাক্স মিস মিহি। এতো হাইপার হলে তো হবে না। ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।

– আপনি আমার কাজটা করবেন কি না।
– ইন্টারেস্টিং কাজের প্রতি ইশানের বারাবর ঝোঁক বেশি। তার উপর যদি সেই কেসটা হয় কোন সুন্দরীর তাহলে তো কথাই নেই। আমাকে একটা কথা বলুন।বাংলাদেশ আপনার নিখোঁজ সংবাদ বেড় হয়েছে।শাফিন মাহমুদের মৃতুর চারদিন পর। আপনি এই কলকাতা শহর গা ঢাকা দিলেন কেন?
– সেটা জানতে হলে আপনাকে। একবছর আগের কিছু কথা জানতে হবে। আপনার কি সেই টাইম আছে?
– অবশ্যই আছে,প্রত্যেকটা কথা বলবেন, আর ডিটেইলসে বলবেন কোথাও যেনো কোন কথা ছুটে না যায়। আর আপনি আসার আগে আমি টুকটাক খোঁজ নিয়েছি এবার বাকিটা আপনার মুখ থেকে শুনবো।
-তাহলে শুনুন….

আমার হ্যাসবেন্ডের মৃত দেহ আমি নিজের চোখে দেখিনি। নুহাস আমার হ্যাসবেন্ডের সহকারী আবার ভালো বন্ধু ছিলো। তবে এখানে একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় কি জানেন, সে আমাকে প্রপোজ করছিলো ভার্সিটিতে থাকতে।তবে তাকে রিজেক্ট করছিলাম আমি। অদ্ভুত ভাবে সেই হয়ে যায় শাফিনের প্রিয় আর বিশ্বস্ত একজন। আমি লাশ দেখিনি তাই আমার ধারণা ছিলো শাফিন জীবিত আছে। নুহাস আমাকে ঠিকানা দিলো কবর স্থানের। আমি গেলাম আবেগে ধরেই নিলাম সেটা শাফিনের কবর। কান্নাকাটি আর শোকে মাথায় আসেনি।

একজন অফিসারের কবর তাও কিছু সময় পূর্বে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গা নিশ্চয়ই ফাঁকা থাকবে না।পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। তাহলে স্বাভাবিক ভাবে সেখানে ফুল থাকবে।
আমি ছিলাম ফাহিনের বাসায়। রাতের শেষ ভাগে আমার ঘুম ভাঙ্গে। আমি বাহিরে এসে শুনতে পাই,ফাহিন বলছে, আজ রাতের মতো আর ঘুম ভাঙ্গবে না। কড়া ডোজের ঘুমের ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। আমি রুমে চলে আসি আর সব ঘটনা গুলো মেলাতে থাকি।

শাফিনের সাথে আমার সম্পর্ক, বিয়ের তিন মাস পর থেকেই খারাপ যাচ্ছিলো। হুট করেই তিন বছরের পরিচিত মানুষটা পাল্টে গেলো। আমি সহ্য করা শুরু করলাম এক ভিন্ন রকম শাফিনকে। সবার থেকে শুনেছি। প্রেমিক আর হ্যাসবেন্ড এক হয়না তাই আমি ওর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু দিনদিন ওর উগ্র আচরণের কারণে আমি অতিষ্ঠ হয়ে। আমি নিজেই আগে বলি আমি এরকম ভাবে আর থাকতে চাইনা। পরে ও ডিভোর্সের কথা বলে, আমি ভাবলাম কিছুদিন আলাদা থাকলে হয়তো ও আবার আমার কাছে ফিরে আসবের।তার আগেই সবটা এলোমেলো হয়ে গেলো।

– মিস মিহি। আপনি কবরের সামনে লাস্ট পাঁচ মিনিট কি করেছিলেন?
– আমি সেখানে একা ছিলাম। সবাই আমাকে কবরের পাশে একা ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায়। আমি কাঁদছিলাম। ঠিক তখন একজন আমার হাতে একটা চিরকুট দিয়ে যায়।
– সেখানে কি লেখা ছিলো।
– নিজের সন্তান আর নিজেকে বাঁচাতে চাইলে পালিয়ে যাও।
– আর কিছু লেখা ছিলো?
– না।
– সেই কাগজটা আছে?
– হুম আছে।

-মিস মিহি আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে সন্দেহের তালিকায়, ফাহিন,আয়রা,নুহাস তিনজনই। বিশ্বাসঘাতক করতে পারে আবার তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন ডন ও হতে পারে?
– সন্দেহর তালিকায় আরো একজন আছে, রমিজ রাজ। উপ কমিশনার।
– তার উপর সন্দেহ হওয়ার কারণ?
– শেষ বার আমাকে কিডন্যাপ করতে সে নিজেই এসেছিলো।

– একটা কথা জানেন কেস টা ইন্টারেস্টিং। তারচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় কি জানেন। আপনার হ্যাসবেন্ড হয়তো বেঁচে আছে। হতে পারে তাকে কেউ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য গু*ম করে রেখেছে। আরো ইন্টারেস্টিং হচ্ছে যে নিজেকে আপনার হ্যাসবেন্ডের ওয়াইফ দাবী করছে আই, মিন আয়রা। আমি কেসটা ইনভেস্টিগেশন করবো। তবে আমাকে পূর্ণ সাহায্য করতে হবে। রাজি থাকলে এই ফাইলে সই করে দিন।

– মিহি সই করে দিলো।
ইশান কাগজটা হাতে নিয়ে, মিহির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,আশা করি আপনার সাথে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে।
– মিহি ভ্রু কুঁচকে বলে, হতে পারে তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো।আজ আসি মিস্টার মুখার্জি। নাম্বার আছে দরকার পরলে কল করে নেবেন।
মিহির চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে ইশান বলে, ধানিলঙ্কা আপনার সাথে কাজ করাটা রোমাঞ্চকর হবে আমার মন বলছে।

নুহাস, আয়রাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,মিহি কোথায় পালাতে পারে?এক বছর ধরে ওর কোন খোঁজ পেলাম না।
– ওকে না পেলে আমরা মেইন টার্গেট মিস করে যাবো।যে ভাবেই হোক খুঁজে বের করতেই হবে।
-মুখে বললেই খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তার জন্য আরো গুপ্তচর সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
– সেটা করেছি।তবে আমার প্রশ্ন রমিজ রাজ কিছু বুঝতে পেরে যায়নি তো? না মানে ওনার উপর আমার ভরসা নেই। ধুরন্দর লোক।

– রমিজ রাজের উপর আমারও সন্দেহ আছে,আসল কার্লপির্ট সে নয় তো। এম,কের আড়ালে।
– হতেও পারে। আবার নাও হতে পারে।
– ফাহিনের সাথে তোমার সম্পর্ক কতদূর এগিয়েছে।
-এগোয়নি বলতে গেলো। তবে এর মধ্যেও কোন একটা কিছু আছে। যেটা আমরা ধরতে পারছিনা।
আর শাফিন স্যার বাসা থেকে যেই ফাইল গুলো কালেক্ট করেছি। তাতে তেমন কোন তথ্য নেই। তারমানে স্যারও আমাদের থেকে কিছু লুকিয়েছেন।

– হুম আমার তো তাই মনে হচ্ছে। তবে শাফিনের আসল উদ্দেশ্য কি ছিলো? সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।
– স্যার হয়তো জানতেন আমাদের ডিপার্টমেন্টের কে আছে এম,কের সাথে জড়িত তাই হয়তো স্যারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্যারের সংগ্রহে আরো তথ্য থাকার কথা সে পর্যন্ত আমরা এখনো পৌঁছাতে পারিনি।
– আমার তো এখন মিহিকে সন্দেহ হচ্ছে। ও কোন আলাভোলা মেয়ে নয়। মেধাবী আর বুদ্ধিমত্তা। হতেই পারে ওদের অশান্তি করাটা। বা আলাদা থাকাটা পুরোটাই সাজানো নাটক।

– তাহলে এখন আমাদের কি করা উচিৎ?
– তুমি ফাহিনকে ছেড়ে রমিজ রাজের পিছু নাও।
– ছিহহহহ বিবাহিত এক আধ বয়সী পুরুষকে ইমপ্রেস করতে হবে।
– ছিহহহহ বলছো কেন, দরকার পরলে তাই করবে।এমনিতেই তার চরিত্র গোবরের মত পবিত্র।
– ওকে।

ফাহিন একটা ইজি চেয়ারে বসে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো। হিসেবে মিলছে না। বছর কেটে গেছে কিন্তু সব যেনো সেই এক জায়গায় আটকে আছে।
ফাহিনের ধ্যান ভাঙ্গে তার মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে নাম্বারটা দেখেই ফাহিনের হাত কাঁপতে থাকে। কোনমতে কল রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝাল কন্ঠে কেউ বলে,তোমাকে দিয়ে একটা কাজও হয়না যে ভাবেই হোক, হয়তো মূল তথ্য নয়তো শাফিনের বউ দু’টোর একটা আমার চাই।আর কত সময় দেবো তোমাকে?
ফাহিন হতাশ কন্ঠে বললো,আমি চেষ্টা করছি।
– শেষবার তোমাকে সুযোগ দিচ্ছি এরপরও না পারলে। গ্রেফতার হবে তুমি। বলেই কল কেটে দেয় ওপাশ থেকে।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৫

মিহি নিজের ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,খুব তাড়াতাড়ি তোর বাবাকে খুঁজে বের করবো। আমি আবার ফিরবে বাংলাদেশ। তবে এবার হবে ভিন্ন পরিচয় ।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৭