ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৭

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৭
নুসাইবা ইভানা

মিহি নিজের মোবাইলটা সেই কখন থেকে খুঁজে চলেছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না। মিহি সুস্মিতা পাল কে উদ্দেশ্য করে বলে,সুস্মিতা আন্টি তুমি আমার মোবাইলটা দেখেছো?
– না আমি দেখেনি।তা তুমি কোথায় গিয়েছিলে মেয়ে।তোমার তো বাসার বাহিরে বা রাখা রিস্ক।
– আমি একটু কাজে বেড় হয়েছিলাম। তবে আমি নিজেকে যথেষ্ট আড়াল করেই বেড় হয়েছি।
– মোবাইল নিয়ে তুমি এতো টেনশন করছো কেন? মোবাইলে যোগাযোগ করার মতো তোমার তো কেউ নেই।
মিহি কোন কথা বাড়ালো নার।কলকাতা শহরে একমাত্র সুস্মিতাই মিহির ভরসার।
মিহিও শেহরোজের পাশে শুয়ে পরলো। চারমাসের শেহরোজতো জানেই না তার জন্মের শুরু থেকে কত ট্রাজেডি।

ইশান চেয়ার ছেড়ে উঠে বলো,ওহহহ শিট ইশান মুখার্জির এতো বড় ভুল কি করে হলো। মিহি তো নিজেই বন্দি আছে। তারমানে মিহিকে যে এখানে রেখেছে। দাবার চাল সেই চালছে। আর মিহি সেই দাবার একটা গুটি। ইশানের সিক্রেট সহ কর্মী লিরা কে কল করে মিহির সাথে দেখা করতে বললো। ইশান কল কেটে দিয়ে বলে,বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান।এইবার ঘুঘু তোমার বধিঁব প্রাণ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিহির ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বেলা গড়িয়ে দুপর হয়ে গেলে। হঠাৎ শেহরোজের কান্নার শব্দে মিহির ঘুম ভেঙে যায়। মিহি শেহরোজের কান্না থামিয়ে। সামনের রুমে আসতেই দেখে,সুস্মিত কারো সাথে কথা বলছে,মিহি বললো কে এসেছে গো আন্টি? এই দেখনা এই মেয়েটা কত সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় নিয়ে এসেছে। তুই তোর আর বাবুর জন্য কিছু পছন্দ করেনে। মিহি বসে পছন্দ করা শুরু করতেই। লিরা বললো,একটু জল হবে গো মাসি মা। গলাটা কেমন শুকিয়ে গেছে।
– কেন হবে না মেয়ে,তুমি বসো আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।

সুস্মিত পল চলে যেতেই লিরি মিহির হাতে একটা শাড়ী দিয়ে বলে ম্যাডাম এটা আপনার জন্য। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,ইশান স্যার পাঠিয়েছে।একাএকা দেখবেন।
সুস্মিতাপল এসে বলে,গি গো মেয়ে তুমি আমার মেয়ের সাথে কি কথা কইছো?
– জল এনেছো মাসিমা তাড়াতাড়ি দাও আগে গলাটা ভিজিয়ে নেই তারপর বলছি। জলটা পান করে লিরা বললো,তোমার মেয়ের এই শাড়ীটা পছন্দ হয়েছে। আমিও বলছিলুম এই শাড়ীতে কত মানাবে তোমার মেয়েকে।

– তা কত দাম রাখবে তুমি।
– তুমি বুঝে দাও দেখি মাসি মা। তুমিতো শাড়ী কেনোই।
-সুস্মিত পল হাজার টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বলে, হ্যা লো মেয়ে তোর নাম কিরে? আর থাকিস কোন পাড়ায়?
– আমার নাম ময়না। থাকি মেলা দূর ওই স্টেশনের পাশে ঝুপড়িতে।
– ঠিক আছে এবার তুই যা।

মিহি শাড়ী নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। দরজা বন্ধ করতে নিয়ে আবার করলনা। শাড়ী নিয়ে সোজা চলে গেলো ওয়াশরুমে। শাড়ীর ভাজ খুলতেই বেড় হয়ে আসলো চিরকুট আর একটা ঔষধের প্যাকেট।
চিরকুটে লেখা ছিলো,,,,তো মিস মিহি আপনি নিজেও কিন্তু বন্দী আছেন?সেখান থেকে বেড় হওয়ার ব্যবস্থা করে দিলাম বাকীটা আপনার হাতে। আমি অপেক্ষায় থাকবো রাত তিনটে অব্দি।

মিহি চিরকুটা জলে ভিজিয়ে ফেলে দিলো। ওয়াশরুমের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি হচ্ছে এসব। আমি কার কথায় ভরসা করবো। আর কাকে বিশ্বাস করব?শেহরোজের কান্নার শব্দে দ্রুত ওয়াশরুম থেকে বেড় হয়ে আসলো মিহি। এসে দেখে সুস্মিতা শেহরোজকে কোলে নিয়েছে। মিহির হৃদপিণ্ড কেমন কেঁপে উঠলো৷ আগে তো এমন হয়নি। শেহরোজকে তো সুস্মিতা কত আদর স্নেহ করেছে।তবে আজ কেন হচ্ছে? মিহি শেহরোজকে সুস্মিত পলের কাছ থেকে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।

– কিরে তোকে এতো অস্থির কেন দেখাচ্ছে। কোন কিছু নিয়ে চিন্তায় আছিস।
– না তেমন কিছু না আন্টি।আজ বাবা, মা, শাফিনের কথা খুব মনে পরছে।
-তোকে কতবার বলেছি যা ছেড়ে এসেছিস সেসব ভুলে যা।
– চাইলেই কি ভুলে যাওয়া যায়?কতশত স্মুতি জড়িয়ে আছে ওই মানুষগুলোর সাথে।
সুস্মিতা পল বের হয়ে এলেন মিহির রুম থেকে।

নুহাস আয়রাকে বলছে আমাদের শাফিনকে অন্য কোথাও শিফট করা উচিৎ?
– সিঙ্গাপুরে আছে সেখানেই থাক ওইখান থেকে কোথাও নিতে হবে না। তবে আপনার প্রশংসা না করে পারছি না। কি দারুণ চাল চাললেন।
– আপনার বুদ্ধিতে সেদিন শাফিন স্যারকে আমরা গোপন করতে পেরেছি।
– আমি জানতাম ও দেশের শত্রুকে আক্রমণ করার জন্য নিজের জীবনের পরওয়া করবে না। আমি ঠিক সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি।

– আপনি যখন আড়াল থেকে গু*লি করছিলেন আমি ভিষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
– বোকা মেয়ে ঘাবড়ানো কি আছে। আমি প্রথম গু*লি*টা করি শাফিনের মাথার ঠিক কাছাকাছি। দ্বিতীয় গু*লি পায়ে, তৃতীয় গু*লি হৃদপিণ্ডের কাছাকাছি। যাতে একেবারে ম*রে না যায়। ওই খানে ম*র্গ থেকে এনে একটা লা*শ রেখে শাফিনের ড্রেস পড়িয়ে তার চেহারা থে*ত*লে দিয়েছি। যাতে কেউ বুঝতে না পারে।

– আমি না হলে এতো নিখুঁত ভাবে কাজটা করতে পারতেন না।
– না সেটা কষ্টকর হতো আমার জন্য। তবে মিহিকে একবার ওই লা*শ*টা দেখানো উচিৎ ছিলো।
– এসব কথা মনে করে কি লাভ। তবে আমি আশ্চর্য হয়েছি। আপনার কাজে নিজের প্রাণ প্রিয় বন্ধুর সাথে এতো বড় বেইমানি।

– ভার্সিটি লাইফ থেকে ওর জন্য আমি ভালো কিছু পাইনি। প্রথমে আমার থেকে মিহিকে কেড়ে নিয়েছে। তারপর যখন এই চাকরির সুযোগ এলো তখন ও আমার উপরস্থ কর্মকর্তা আর আমি ওর সহকারী। আমি সুযোগ খুঁজে ছিলাম।ও যখন এই কেসের তদন্ত করে তখন আমি ইচ্ছে করে এমন এমন ভীতি ওর মতো সৃষ্টি করেছি। যাতে মিহির সাথে ওর সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। সব কিছুতেই দিন শেষে সাকসেস আমার হয়েছে। চাইলে মিহিকেও আমার বানাতে পারতাম।তবে মেয়েটা বড্ড বেশি বোঝে পালিয়ে চলে গেলো।

– আপনি এখনো মিহি ম্যামকে ভালোবাসেন?
– না এখন ও আমার জেদ কোন ভালোবাসা নেই। এসব কথা রাখো কাজের কাজ করো। আজ রমিজ রাজ বাসায় একা থাকবে। তার পুরো,ফ্যামেলি কোথাও বেড়াতে গেছেে।এই সুযোগ তুমি কাজে লাগাও।
– আপনি কি করে জানলেন?

– আমি তোমার মতো মাথা মোটা না। এই সামান্য সংবাদ আমি রাখবো না। এবার যাও নিজের কাজে লেগে পরো।আর হ্যা অবশ্যই ঘু*মে*র ঔ*ষ*ধ সাথে রাখবে, যদি নিজের সম্মান রক্ষা করতে চাও তো? বাকী তোমার ইচ্ছে। আর হ্যা যাওয়ার আগে এলিজাকে বলো শাফিনকে তার বাসায় নিয়ে রাখতে টাকা আমি পাঠাচ্ছি।
– অলরেডি শাফিনের পিছনে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। আরো টাকা নষ্ট করা বোকামি।
– ভুলে যাচ্ছ কেনো শাফিনের জন্য যত টাকা ইনকাম হয়েছে তার চার ভাগের এক ভাগ টাকাও এখনো খরচ হয়নি।
– কিন্তু সব হি*রে তো আমরা বিক্রি করতে পারিনি।

– পারিনি তার মানে এমন না পারবো না। সিঙ্গাপুর যেয়ে ডিল করবো, আরোশের সাথে। একশ কোটি টাকার ডিল।
– এতো টাকা একবারে আনতে গেলে সমস্যা হবে।
-সেটা আমি বুঝবো তুমি থার্টি পার্সেন্ট পাবে।তোমারটা তুমি বুঝে পেলেই তো হলো।
– সব বুঝলাম কিন্তু শাফিন স্যারকে বাঁচিয়ে কেন রেখেছেন?

– তোমার মোটা মাথায় সেটা ডুকবে না। যখন এই হিরের বেচাকেনার তথ্য ফাঁস হবে। তখন সবাই দেখবে শাফিনকে। তাহলো আসল অপরাধী হবে শাফিন। সিঙ্গাপুরে বাড়ি ওর নামে স্বাদে কিনি-নি। ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা আর সিঙ্গাপুরের বিলাসবহুল বাড়ি। সবার দৃষ্টিতে অপরাধী হবে শাফিন।
– এম,কে আমাদের ছেড়ে দেবে?

– সে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। কারণ আমরা সেই সুযোগ দেবো না। তবে মিহিকে আমাদের চাই। ওই চাবি না পেলে ডিল হবে চল্লিশ কোটি টাকার বাকী ষাট কোটি টাকা মিহির হাতে।
– তবে আমার মনে হয় মিহি এ বিষয়ে বেখবর।
– এতো বোকা মেয়ে মিহি না। হতে পারে সবটাও জানে।
– কোথায় খুঁজবো বাংলাদেশ আছে বলে তো আমার মনে হয়না।
– তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোতেও খোঁজ লাগাও। আর এখন দ্রুত রমিজ রাজের বাসায় যাও।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৬

মিহি ইশানের দেওয়া রুলস ফলো করে পালাবে, সেই মতে সব করেও ফেলেছে বাসা থেকে বের হবে ঠিক সেই সময় পেছন থেকে একজন বলে, কোথায় যাচ্ছ?

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৮