ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৮

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৮
নুসাইবা ইভানা

মিহির পা’মনে হয় জমে গেলো। পরিচিত কন্ঠ শুনেও আজ কেমন গলা শুকিয়ে গেলো।শেহরোজকে শক্ত করে নিজের সাথে আগলে নিয়ে। সমানে তাকিয়ে বলে,আন্টি আজ তোমার ডাকে আমি আর ফিরবো না।
– তুই বিপদে পা বাড়াচ্ছিস মেয়ে। ওই পথ এতো সহজ না।
– এ পথের শেষে যদি মৃত্যুও থাকে তাও আমি এপথে এগোবো।নিজের হ্যাসবেন্ড খুঁজে বের করবো।
– সেটা এতো সহজ না। সহজ হলে এতোদিন থাকে বের করে ফেলতো খুঁজে। তুমি আমার মেয়ের মতো তোমাকে এক বছর আগলে রেখেছি। তোমার ক্ষতি করতে চাইছি না। তুমি ফিরে এসো নয়তো আমি তোমার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো।

– আমি তোমার মেয়ের মতো কিন্তু মেয়ে না। যদি মেয়ে হতাম তবে এভাবে আমাকে বন্দী করে রাখতে পারতে না।
– দেখো মেয়ে আমি একজনের আন্ডারে কাজ করি। এক বছর পূর্বে। আমার বস আমাকে কল করে বললো,একটা মেয়েকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি আজ থেকে ওই মেয়ের দেখাশোনার দ্বায়িত্ব তোমার। তুমি এখানে আসার পর তোমার প্রেগ্ন্যাসির কথা জানতে পারি।বসকেও জানাই সে শুধু বললো তোমাদের দেখে রাখতে সময় হলে সে আসবেে।
– তার মানে তুমিও ড্রা*গ*স সাপ্লাইয়ারদের একজন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– না আমি…. আর কিছু বলার আগেই সুস্মিত পল পড়ে গেলেন। মিহি একবার তাকে ধরতে চেয়েও ধরলো না।দ্রুত বেড় হয়ে আসলো। ঈশানের জন্য অপেক্ষা করেও ঈশানের কোন দেখা মিললো না। অন্ধকার রাতে ল্যাম্পপোস্টের আধো আলোতে বাচ্চাটা কোলে নিয়ে গন্তব্যহীন রাস্তায় হেটে চলেছে। দু’একটা দুর পাল্লা বাস সা সা করে চলে যাচ্ছে।
আরএকটু সামনে যেতেই সকালের সেই কাপড় বিক্রেতার মহিলার সাথে দেখা। লিরা মিহির থেকে কিছুটা দূরে আর একটু সামনে এসে বলে,তোমাকে শত্রু পক্ষ হয়তো ফলো করছে। তাই তুমি সোজা না হেঁটে একটু অলিগলি রাস্তায় ডুকে পরো। বাচ্চাটাকে আমার কাছে দাও।

– ম*রে*তে হলে এক সাথে ম*র*বো,তবুও শেহরোজ কে কারো হাতে ছাড়বো না।
তাহলে এক কাজ করে আর একটু সামনে যাও একটু পরেই সেখানে কিছু মানুষের জটলা দেখতে পাবে সেখানে মিশে যাবে। প্লান মতো বের হয়ে আসতে পারলো মিহি। ঈশান ড্রাইভ করছে। মিহির কোলে ছোট্ট শেহরোজ ঘুমিয়ে আছে। সারারাত ধরে গাড়ী ড্রাইভ করেছে ঈশান। এখন প্রায় ভোর। রাতের আধার কেটে উঁকি দিচ্ছে নতুন দিনের সূর্য। মিহির ততক্ষণে চোখ লেগে এসেছে। সূর্যের আলো অনেকটা প্রখরতা ছাড়িয়েছে। ঈশান মিহিকে ডাকলো,এই যে মিস মিহি উঠে পরুন।

মিহি ঘুম থেকে চোখ খুলে, চোখ ডলে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে, আমরা বাংলাদেশে চলে এসেছি?
ঈশান, বুকে হাত দিয়ে বলে হায় ম্যা মারজাওয়া।কারো ঘুম জাড়ানো কন্ঠ এতো সুন্দর জানা ছিলো না।
মিহি গলা ঝেড়ে বলে, আপনার ফ্লাটিং করা শেষ হলে কাজের কথা বলুন।
– কি করবো বলুন, সিঙ্গেল ছেলে মানেই তো সুন্দরী মেয়ে দেখলে একটু আধটু ফ্লাটিং করা। আচ্ছা ছাড়ুন সেসব কথা। আসুন আমার সাথে।
মিহি গাড়ী থেকে বের হয়ে আসে। শেহরোজকে কোলে নিয়ে। ঈশান বলে,আপনি চাইলে,আপনার কলিজাটা আমার কাছে দিতে পারেন?

– না এখন কলিজা দিতে চাইছিনা। আমার কিছু খেতে হবে।
– জানি জানি আপনি না খেলে বাচ্চাটাও না খেয়ে থাকবে। কথা বলতে বলতে একটা কাঠের দো তলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো দু’জন। আপনি ভেতরে যে ডান পাশের রুমে যান সব পেয়ে যাবেন। আর তারা যা, যা বলে ভদ্র মেয়ের মতো মেনে নিবেন।

– আপনাকে ভরসা করা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই সেটা ভাববেননা। নিজের সম্মান রক্ষা করার জন্য জীবন শেষ করে ফেলতে দু’বার ভাববো না।
– বাপরে আপনি তো সাংঘাতিক মেয়ে। আপনি সিঙ্গেল থাকলে আপনার গলায় ঝুলে পরতাম।
মিহি ভিতরে যেয়ে শেহরোজকে ফ্রেশ করে বেডে শুয়ে দিলো।
একজন মহিলা এসে মিহিকে একটা লাল খয়েরী রঙের শাড়ী আর শাখা সিঁদুর দিয়ে গেলো।
আর একজন মিহিকে বললো এখন থেকে আপনার পরিচয় মিসেস মুখার্জি। আপনার নাম ইরাবতী। এবার ঝটপট তৈরি হয়ে নিন।

মিহি তৈরি হয়ে বাহিরে আসলো,মেয়েটি তাকে মোটা ফ্রেমের চশমা পরিয়ে দিলোে।বাম পাশে ঠোঁটের নিচে একটা বড় তিল বসিয়ে দিলো। চশমা খুলে রেখে চোখে লেন্স পরিয়ে দিলো ব্লু রঙের। তারপর আবার চশমা পরিয়ে দিলো।
অপর মহিলাটি মিহিকে বললো তোমার ছেলের নাম নীলাদ্রি ডাকবে।কোন ভুল যেনো না হয় এখান থেকে বাসে করে বাংলাদেশে যাবে। সব কিছু যেন ঠিকঠাক থাকে।

মিহি শেহরোজ কে কোলে নিয়ে বাহিরে আসতেই। মিহিকে দেখে ঈশান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মিহি সামনে এসে বলে, অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিতে হয়না।
কে বললো অন্যের বউ আন অফিশিয়ালি এখন বউটা আমার। সেসব কথা রাখুন এবার ভাবছি বিয়েটা করেই ফেলবো।এই আপনার কোন বোনটোন নেই।
– না নেই। ফালতু কথা রেখে তাড়াতাড়ি চলুন।
ঈশান শেহরোজকে কোলে নিয়ে বলে,কোন ভুল যেন না হয়। দু’জনেই রওনা দিলো রহস্যের সমাধানে।

ইরিকা শাফিনের দেখা শুনা করছে এক বছর যাবত। পেশায় একজন ডাক্তার ইরিকা। শাফিনের সেবা করতে করতে নিজের অজান্তেই শাফিনকে ভালোবেসে ফেলেছে। লাস্ট এক মাস ধরে শাফিনের সঠিক চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করে তুলছে। দীর্ঘ এক বছর পর শাফিনের মুখ দিয়ে আজকে কথা বের হয়েছে। ইরিকা মনোযোগ দিয়ে শাফিনের কথা শুনে বলে,আপনাকে সব রকম সাহায্য করবো। শাফিন ইরিকাকে বলে,আমাকে একটা মোবাইল আর সিমের ব্যবস্থা করে দিন। আর হ্যা আমি সুস্থ এটা যেন আপনি ছাড়া আর কেউ না জানতে পারে।

এরমধ্যেই এলিজা চলে আসলো। শাফিন আবার চোখ বন্ধ করে ম*রা*র মতো পরে রইলো। এলিজা এরিকাকে উদ্দেশ্য করে বললো,আজ রাতেই রোগীকে শিফট করবো। তুমি কি আমার সাথে থাকবে নাকি নতুন ডাক্তারের সাথে কন্টাক্ট করবো?

– ম্যাম আমি থাকবো।
– গুড তাহলে রেডি থেকো। রাতের চারটা।
এলিজা কাউকে কল করলো,রিসিভ হতেই এলিজা বললো আয়রা একটা কথা বল এই লোকটাকে বাঁচিয়ে কেন রেখেছিস? কথা বলতে বলেতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আয়রা নামটা কানে আসতেই শাফিনের হৃদয়ে ঝড় বয়ে গেলো। উঠে বসে বলে, আয়রা আছে এসবের পিছনে?
এরিকা এগিয়ে এসে বলে,সাথে আরো একজন আছে। কি যেন নাম সঠিক জানিনা তবে সে ছেলে।
শাফিন নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,শাফিনের ডায়েরিতে গাদ্দারের কোন জায়গা নেই।

– এখন এতো উত্তেজিত হবেন না। আপনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন।
– আমাকে এক বছর আগের পত্রিকা সংগ্রহ করে দিতে পারবেন।বাংলাদেশি পত্রিকা।
– আমি যোগাযোগ করে জানাবো। আর রাতে আসার সময় মোবাইল আর সিম নিয়ে আসবো।
– আপনাকে আরো কিছু কাজ করতে হবে মিস এরিকা।
– জ্বি বলুন আমি চেষ্টা করবো।
শাফিন এরিকার কানে মুখে কিছু বলল।
– ঠিক আছে আপনার কথা মতো কাজ হয়ে যাবে।
শাফিন চোখ বন্ধ করে বলে, আমি আসছি মিহি।আমি আসছি।

আয়রা নুহাসকে বললো, আপনার কথা মতো রাতে গেলাম রমিজ রাজের বাসায়। ওই লোকের চেহারা যতটা কুৎসিত। চরিত্র তারচেয়েও কুৎসিত। এতো কিছু করেও কাজের কাজ কিছু হলো না। একটা কথাও বেড় করতে পারিনি।
– একদিনে অধৈর্য হলে হবে। ধৈর্য ধরে লেগে পরো। আমাদের এম,কে পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।
– আর উদয়ের কি করবেন।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৭

– ও জেলে আছে থাকতে থাক। তোমার ওকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।
– যে কোন সময় জামিন নিয়ে বের হয়ে যাবে।তখন?
-এতো সহজ না। সহজ হলে এতোদিন বাইরে থাকতো জেলের।
মোর্শেদ চৌধুরী চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন।তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে, শেষ সুযোগ দিচ্ছি এরপরও কাজটা না করতে পারলে। পরিনাম কি হবে সেটা আর বলতে হবে না। নিশ্চয়ই।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১৯