খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩২

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩২
Jhorna Islam

ইশানকে দিনা ইচ্ছে মতো মা’রতে থাকে আর মুখে যতো গালাগাল আসে সব বলেছে।এই লোকটা তার জীবন টা শেষ করে দিয়েছে। এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর থেকে একদিন ও শান্তি পায়নি। প্রতিদিন অ’শান্তির আ’গুনে জ্ব’লেছে।
মানুষের সামনে ভালো থাকার অভিনয় করলে কি হবে সেতো ভালো ছিল না।কোনো একটা বিষয় নিয়ে গা’লা’গা’ল আর মারামারি করতো।

শুধু মাত্র নিজের বাপের বাড়ির লোকজনের জন্য সে মুখ বুঁ’জে এই বাড়িতে পরেছিলো।
মা ছেলে তাকে শান্তি দেয়নি।আর স’হ্য করবে না। স’হ্যর বাদ ভেঙে গেছে। এইবার সব সুধে আসলে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইশান মা’র স’হ্য করতে না পেরে দিনা কে থামতে বলছে।দিনা তা শুনছেই না।একের পর এক আ’ঘাত করে চলেছে।
প্রথম বারি যাও কম ছিলো কিন্তু দ্বিতীয় বারিতেই ইশানকে দিনা কু’প’কা’ত করে ফেলেছে। ইশানের আর পাল্টা কিছু করার বা নিজেকে রক্ষা করার এক বিন্দু শক্তি ও নেই।
তোর মেয়েদের প্রতি খুব নে’শা তাই না রে? আজকে আমি তোর এমন অবস্থা করবো তুই মেয়েদের দেখলেও ভ’য় পাবি। চোখ নামিয়ে নিবি।চোখে মেয়ে দেখলেও তোর আর নেশা লাগবে না।

ইশান এমনিতেই মাথা ধরে ব্যাথায় কা’ত’রাচ্ছে। র/ক্তে মেঝে ভেসে যাচ্ছে।
দূ’র্বল গলায় বলে দিনা আমি তোর স্বামী হই।কিছু করিস না তোর পা’প হবে।
ইশানের কথায় দিনা শব্দ করে হেসে দেয়।যেনো কোন মজার কৌতুক শোনেছে সে।
আয় হায় কার মুখে কি শুনছি আমি? তুই ইশান পা’প পু’ন্যের হিসাব রাখিস? ওমা কবে থেকে হুু?
ইশান ব্যাথায় চোখ মুখ কোচকাচেছ।মনে মনে এইটাই চাচ্ছে তাছলিমা বানু যেনো আসে নয়তো সব শেষ।
তুই আমার স্বামী তাই না? কথাটা বলেই নিচে বসে ইশানের চুল জোরে টেনে ধরে।
আহ্ ম’রে গেলাম দিনা!

যাহ্ তুই ম’রে।তোর মতো কী’টের বেঁচে থাকার দরকার নেই। তুই শুধু পৃথিবীর ময়লা আর কিছুই না।
তোকে আমি জীবিত আমার মনে কবেই ক’ব’র দিয়েছি।তোকে আমি এখন স্বামী হিসাবে মানি না।তোর মতো স্বামী আমার দরকার নেই। কারোই দরকার নেই। তোর এই সুন্দর মুখটা দেখলেও আমার ঘৃ’ণা লাগে।বলেই এক দলা থু থু ছুড়ে মারে ইশানের মুখে।

তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ইশানের গোপন অঙ্গে বার কয়েক লা’থি মারে।
ইশান আর স’হ্য করতে না পেরে দিনার পায়ে দরে মাফ চাইতে থাকে।
আ-আমায় ছেড়ে দে দিনা।ভুল হয়ে গেছে মাফ কর।স’হ্য করতে পারছি না। ছেড়ে দে আমায় দিনা।
ছেড়ে দিতে বলছিস?
হুু ছেড়ে দে আমায়।
কিন্তু ছেড়ে দিলে ভালো হয়ে তো তুই আবার এমনই করবি।
ক-করবোনা।

তোর কথা বিশ্বাস করবো তাও আমি? কখনো না।কারণ কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না। কথাটা বলে লাঠি টা শক্ত করে ধরে ইশানের মাথায় সজোরে এক বা’রি মারে।
ইশান মাগোওও বলে এক চিৎকার করে চুপ হয়ে যায়।

দিনা ইশানের দিকে তাকিয়ে লাঠিটা নিচে ফেলে দেয়। তারপর দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। হাঁপিয়ে গেছে সে।কোমড়ে রাখা তার ফোনটা বেজে চলেছে। হয়তো তার ভালোবাসার মানুষ টা এখনো সে যাচ্ছে না বলে অধৈর্য হয়ে কল দিচ্ছে।
দিনা চলে যাওয়ার জন্য উঠে ও কি মনে করে ফিরে আসে। আলমারির দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে আলমারি খুলে ইশানের ভাগের যতো টাকা পয়সা আছে সব একটা ব্যাগে নিয়ে নেয়।নিজের জামা কাপড় গয়না সব নিয়ে নেয়। কিছু রেখে যাবে না। সব নিয়ে যাবে সব।

সব নিয়ে আরও একবার ইশানের দিকে তাকায়। তারপর দরজার দিকে পা বাড়াতে যাবে তার মধ্যে কারো চিৎকার আর আর্তোনাদ শুনে পা থমকে যায়। গলা শুকিয়ে যায় দিনার।
তাছলিমা বানু বাড়িতে এসে পরেছে। ইশানের চিন্তায় থাকতে পারে নি। মায়ের মন ছেলের জন্য কু গাইছে।তাই রাত হয়ে গেছে মাথায় রাখেনি এসে পরেছে।বাড়িতে ঢুকে দরজা ঐরকম হা করে খোলা দেখে বেশ অবাক হয়। পরে ভাবে ইশান হয়তো দিতে ভুলে গেছে। তাই বেশি মাথা ঘামায়নি।

ঘরে ঢুকে হাতের ব্যাগটা বসার ঘরে রেখেই নিজের রুমে না গিয়ে ইশানের রুমে আসে।দিনা এতো সময় আলমারির পাশে ছিল বলে দেখতে পায় নি।প্রথমেই মেঝেতে পরে থাকা র’ক্তা’ক্ত ইশানের দিকে চোখ যায়।
যা দেখে মাথা চ’ক্কর দিয়ে উঠে। হুঁশ হারিয়ে নি’র্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। দিনা সামনে আসায় হুঁশ আসে।
বুঝতে আর বাকি নেই এই কাজ কে করেছে।আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না ক্ষি’প্ত হয়ে দিনার উপর চ’ড়াও হয়।
দিনা এই সময়ে তাছলিমা বানু কে মোটেও আশা করে নি।মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে করেই হোক এখন এখান থেকে পালাতে হবে। নয়তো সব শেষ হয়ে যাবে।

তাছলিমা বানু এসেই দিনার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে একটা গা’লি দিয়ে বলে উঠে তুই কি করেছিস? আমার ছেলেকে তুই মেরে দিলি? তোকেও আমি ছাড়বো না। বলেই এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজতে থাকে। তারপর নিচে র”ক্তে মাখামাখি একটা লাঠি দেখতে পায়। বুঝতে পারে ঐটা দিয়েই তার ছেলেকে এই ডা*ই*নী মেরেছে। চুলের মুঠি শক্ত করে ধরেই নিচে পরে থাকা লাঠি টা তুলতে যায়।

নিচে ঝুঁকতে গিয়ে দিনার চুল ধরে রাখা হাতের বাঁধন টা কিছুটা আলগা হয়ে যায়। এই সুযোগে দিনা নিজের শরীরের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে তাছলিমা বানুকে ধা”ক্কা মারে।
তাছলিমা বানু দূরে ছিটকে পরে।খাটের পায়ার সাথে সজোড়ে বা’রি খায়।
দিনা আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না। দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক টা দূর চলে আসে। নিজেকে এখন মুক্ত মনে আছে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিজের পথে চলতে থাকে।
তাছলিমা বানু বোঝে গেছে দিনা কে সে ধরতে পারবে না। অনেক কষ্টে উঠে এসে ইশানের পাশে বসে। ইশানের মাথা টা কোলে তুলে নেয়।

বাপ ও বাপ আমার তোর একি অবস্থা হলোরে? আব্বা চোখ খোল। মা ডাকছিতো শুনতে পাচ্ছিস না? এই ইশান আল্লাহ আমার ছেলেটা কে শেষ করে দিয়ে গেছে গো।আমার ইশান কে মে’রে ফেলেছে। নিজের সন্তানের এই পরিণতি কিছুতেই মানতে পারছে না তাছলিমা বানু। নানান আহাজারি করে চলেছে।
ইশান কে নিয়ে কিছু একটা করতে হবে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে সেটা মাথায়ই আসছে না। অনেক সময় পর খেয়াল হয়।ইশানের বুকে মাথা রেখে দেখতে থাকে শ্বাস চলছে কি না।
শ্বাস চলছে বুঝতে পেরে কলিজায় পানি আসে।তবে খুবই ধীরে বেশি সময় এমন ভাবে থাকলে ছেলে কে আর বাঁচাতে পারবে না বুঝে গেছে।

কাকে ডাকবে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। ছেলেকে ধরে নিজে নিয়ে যাওয়ার ও ক্ষ’মতা নেই। হুট করেই মাথায় ইশানের বন্ধুদের কথা মাথায় আসে। দুইটা কে ফোন লাগিয়ে তারাতাড়ি আসতে বলে।
তাছলিমা বানুর কথায় ইশানের দুই বন্ধু আসে।এসে এতোসব কিছু দেখে আ’ৎকে উঠে। ইশানের পরিস্থিতি ভালো না বুঝতে পারে। হয়তো ডাক্তার ও কিছু করতে পারবে না। তবুও তাছলিমা বানুর দিকে তাকিয়ে উঠিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে থাকে ইশানকে।

যুথি ঘরে ঢুকেই দুই গ্লাস পানি নিমিষেই শেষ করে ফেলে।তবুও যেনো তার তে’ষ্টা মিটছে না। হাত পা কাঁ’পুনি থামছেই না।
যুথির দাদি প্রথমে কয়েকবার প্রশ্ন করেও যখন কোনো উত্তর পায়নি তখন আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি।যুথির পরিস্থিতি দেখে সময় দিয়েছে।মেয়েটা ঠিক নেই। সময় দেওয়া দরকার। স্বাভাবিক হলে নিজে থেকেই বলবে।
দাদিকে বলে যুথি শুয়ে পরে।নিজেকে স্বাভাবিক করা দরকার। যুথির দাদি যুথিকে তার ফোন দিয়ে ইরহানের সাথে কথা বলতে বলে,, ছেলেটা হয়তো চিন্তায় ঐদিকে পা’গল হয়ে গেছে।

যুথির ও ইরহানের কথা মাথায় আসে।লোকটা হয়তো কল দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেছে।
ফোন হাতে নিয়ে চালু করে। ইরহান কে কল লাগায়। যুথি কল দিতে দেরি কিন্তু ইরহানের রিসিভ করতে দেরি হয় না।
যুথি মুখ খুলে ইরহান কে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইরহান বলে উঠে,, আমি কি দেশের বাইরে এসে ভু’ল করলাম?
ইরহানের গলাটা কি রকম শোনালো।যুথির চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে নীরবে।
নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নেয়। তারপর বলে,,এসব কেমন কথা?

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩১

তুমি ঠিক আছো?
হুম একদম ঠিক আছি।আসলে সীমা এসেছিলো অনেক দিন পর ওর সাথে কথা বলতে ছিলাম।ফোন টা কখন বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।
ইরহান কিছু সময় নীরব থেকে বলে,,,,
“তুমি আমায় মিথ্যা বলেছো তাই না যুথি রানী? ”
“হুম”

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৩