খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৭

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৭
Jhorna Islam

যুথি মন খারাপ করে বসে আছে। ইরহান একটু বাইরে গেছে। আর মেয়ে ঘুমোচ্ছে। মেয়ের পাশেই মুখ কালো করে বসে আছে।
ইরহান বাইরে বেশি সময় থাকেনি।কিছু সময় বাদেই ফিরে এসেছে। রুমে ঢুকেই দেখে যুথি মেয়ের পাশে বসে আছে। মেয়ে ঘুমোচ্ছে।
ইরহান যুথির দিকে এগোতে এগোতে বলে এই দুপুর টাইমে মেয়ের সাথে তুমিও একটু ঘুমিয়ে নিতা।শুধু শুধু এভাবে জেগে বসে আছো কেন?
যুথি কোন উত্তর দেয় না।
ইরহান এগিয়ে গিয়ে মেয়ের কপালে চুমু খায়।তারপর মাথায় একটু হাত বোলায়।।।

যুথির কোন সারা শব্দ না পেয়ে যুথির মুখের দিকে তাকায়। পাশে এসে বসে নিজের দিকে ফিরায়। কানের পিছনে চুল গুঁজে দিতে দিতে বলে,, কি হয়েছে মন খারাপ কেন?
যুথি ছলছল চোখে ইরহানের দিকে তাকায়। ইরহান যুথির এরকম তাকানো দেখে অ’স্থির হয়ে যায়। কি হয়েছে তোমার?
শরীর খারাপ লাগছে? কিছু হয়েছে বলো আমায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

যুথি ইরহানের বুকে মাথা হেলিয়ে দেয়।আস্তে করে বলে,, বোকা পুরুষ দাদি কি শুরু করেছে দেখেন না। উনি নাকি চলে যাবে।আমার কোনো কথা শুনছে না।অনেক বছর নাকি থেকেছে। আর থাকবে না। এমনিতেই নাকি লোকে কতো কথা বলেছে এতোদিন। তবুও আপনি ছিলেন না বলে চুপ করে সব মেনে আমার সাথে ছিল।এখন আপনি এসে গেছেন এবার নাকি চলে যাবে।
নয়তো লোক নাকি বলবে নাত জামাই ঘা’ড়ে বসে খায়।এগুলো কোনো কথা বলুনন তো? আমি কোন ভাবেই বুঝাতে পারছি না।

সেই ছোট থেকে আমায় লালন পালন করেছে।মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাইয়েছে।এতো বছর আমার সেবা করেছে। জুই পেটে থাকতে সব নিজে করেছে।আমাকে কিছু করতে দেয়নি।
এখন উনার বয়স হয়েছে। কি করে একা থাকবে? ওখানে তো উনাকে দেখার ও কেউ নেই। কেন বুঝতে চাইছে না বলুনতো?

কথা গুলো বলেই যুথি চোখের পানি ছেড়ে দেয়। দাদিইতো তার অনেক আপন।কিন্তু ওর কথা শুনছেই না।
ইরহান যুথির চোখের পানি মুুছিয়ে দিতে দিতে বলে,, বোকা মেয়ে এর জন্য কাঁদতে হবে নাকি? আমি আছি না? তুমি নিশ্চিন্তে থাকো দাদি কোথাও যাচ্ছে না। এখানেই থাকবে আমাদের সাথে। দাদি ও আমাদের পরিবারের একজন।
আমি কথা বলছি তুমি নিশ্চিত থাকো।দাদি কোথাও যাচ্ছে না।
তারপর ইরহান গিয়ে দাদির সাথে কথা বলে।

দাদি চলে যেতে চায়।লোকে কি বলবে? বলবে একে বারে নাত জামাইর বাড়িতে আসন পেতে বসেছে।
লোকের কথা বাদ দেন দাদি।লোকে কতো কিছু ই বলে।আবার বিপদে পরে দেখেন কাউকে পাশে পাবেন না।
এসব কথা বাদ।আপনি চলে যেতে চাইছেন থাকতে পারবেন আপনি জুই,আর যুথিকে ছাড়া? আপনি জানেন না মা মেয়ে আপনা কে কতোটা ভালোবাসে?
কিন্তু,,,,

কোনো কিন্তু না দাদি।আচ্ছা আপনার নাত জামাইর বাড়ি বলে থাকতে সমস্যা তাইতো? সব বাদ আপনি আমার দাদি। আমি মন থেকে আপনাকে দাদি মানি। নাত জামাইর বাড়িতে থাকতে হবে না নিজের নাতির বাড়িতে থাকবেন।নিজের নাতির বাড়িতে থাকতে নিশ্চয়ই কোন আপত্তি নেই?
ইরহানের সাথে আর পেরে উঠে নি।এখানেই থাকবে।যুথি শুনে কি খুশি।তার বোকা পুরুষ সব ঠিক করে দিয়েছে।

ইমনের পা ঠিক হয়ে যাওয়ার প্রথমে আশা থাকলেও এখন আর সেটা কারো মাঝে নেই।সবাই বুঝে গেছে তা আর কোন দিন ঠিক হবে না।
লিমার পরিবারে বাবা,মা আর লিমাই।তার আর কোন ভাই বোন নেই।টাকা পয়সা মোটামুটি ভালোই আছে।
ইমন তার মায়ের সাথে সব সম্পর্ক শেষই করে দিয়েছে প্রায়। একেইতো টাকা পয়সা নিয়ে মনমালিন্য। তার উপর লিমা ও চায় না। ঐ বাড়ির কথা শুনলেই কেমন মুখ কালো করে ফেলে।কম কথা আর অ’ত্যা’চার তো করেনি তাছলিমা বানু।
তার উপর বাচ্চা নিয়ে কতো কথা শুনতে হয়েছে তাকে।ইমন তার বউকে অনেক ভালোবাসে তাই কষ্ট দিতে চায় না। লিমা যা বলে তাই মেনে নেয়।

আর বিয়ের আগেই কথা ছিলো ইমন লিমাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি থাকবে।সেটা অবশ্য তাছলিমা বানু জানে না। ইমন ও শ্বশুর বাড়ির লোক কে জানাতে বারণ করেছিলো। টাকা পয়সা জায়গা জমি নয়তো তাছলিমা বানু তাকে দিতো না।
লিমা যেমন কোন দিন মা হতে পারবে না। ইমনও হাঁটতে পারবে না। থাকুক না দুইজন এমন ভাবেই।টাকা পয়সা লিমা আর ইমনের যা আছে তা দিয়ে তাদের অনায়াসে জীবন টা কেটে যাবে।আর যদি এসবে না ও হয় লিমার বাবার দুইটা দোকান আছে বাজারে ঐ গুলোর ভাড়া দিয়েই চলে যাবে।

ইরহান নিজে তার মেয়ে কে স্কুলে নিয়ে যাবে বলে ঠিক করেছে। এতোদিন কিছুই উপভোগ করতে পারে নি।এখন যতটুকু পারে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।
তাই সকাল সকাল নিজে উঠে মেয়েকে তৈরি করিয়েছে। চুল বেঁধে দিয়েছে। মেয়ের মুখে হাসি লেগেই আছে। কি সুন্দর মুখ খানি। তার মেয়ে টা পুরোই তার মতো চেহারা পেয়েছে। বাবা বলতে সে পা’গল।

যুথিকে বলে,,,মেয়েকে নিয়ে ইরহান স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়। যুথি গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে বাবা মেয়ের যাওয়া দেখছে।
ইরহানের হাতের আঙুল ধরে হাঁটছে মেয়েটা। কতো কথা বলছে। ইরহান সব মনোযোগ সহকারে শুনেছে। ইরহান চেয়েছিল রিকশা দিয়ে যেতে কিন্তু জুই রিকশা দিয়ে যাবে না। এভাবেই তার বাবার আঙুল ধরে হাঁটতে ভালো লাগছে। কোলে নিতেও চেয়েছিল উঠে নি। সে এভাবেই হাঁটবে।
ইরহান জুই কে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে একটা কাজে যায়। জুই কে বলে গেছে ছুটির সময় দাঁড়াতে এসে নিয়ে যাবে।
ইরহান ঠিক টাইমে এসে দাঁড়ায়। স্কুল ছুটির পর জুই বের হয়। তবে যাওয়ার সময় মুখে যতোটা আনন্দ ছিলো এখন তার মুখে ততোটাই বি’ষা’দের ছাপ।

জুই তার বাবার দিকে তাকিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। ইরহান হাটু গেঁড়ে মেয়ের সামনে বসে। মুখ টা কেমন লাল হয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।নাকটা ঘেমে আছে।
ইরহান হাতের তালু দিয়ে নাক টা মুছে দেয়। তারপর আদুরে স্বরে জানতে চায় কি হয়েছে মা? কেউ কিছু বলেছে? টিচাররা কি মেরেছে?
জুই মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।
তাহলে কি হয়েছে আমার মায়ের? আব্বু কে বলবে না?
তু-তুমি কি আবার চলে যাবে আব্বু?
এসব নিয়ে মন খারাপ?

আমাদের ক্লাসের রুহি বলল,, তুমি নাকি কয়েকদিনের জন্য এসেছো আবার চলে যাবে। তখন আমি আবার আব্বু ছাড়া হয়ে যাবো।ওদের আব্বু সবসময় ওদের সাথে থাকে। কিন্তু তুমি থাকবে না। আবার চলে যাবে। অনেক কষ্টে কথা গুলো বলে শব্দ করে কেঁদে দেয় জুই।

ইরহান মেয়েকে কোলে তুলে নেয়। জুই বাবার গলায় মুখ লুকিয়ে কাঁদে। ইরহান হাঁটতে হাঁটতে বলে,,, আর কাঁদে না মা শান্ত হও।আমি কোথাও যাবো না তো।একেবারের জন্য আমার মায়ের কাছে চলে এসেছি।আর যাবো না। এবার থেকে তোমাদের সাথেই থাকবো।এক সাথে থাকবো আমরা। আমি কোথাও যাচ্ছি না।
জুই কান্না থামিয়ে ইরহানের দিকে তাকায়। তারপর চোখ পিটপিট করে সত্যি তুমি যাবে না?
ইরহান মাথা নাড়িয়ে না বোঝায় সে যাবে না।
জুই এবার খুশি হয়ে যায়। বাবার গালে চুমু একে দেয়।আর খুশি মনে বলে,,,ইয়ে আমিও কাল রুহি কে বলবো আমার আব্বু ও আমার সাথে থাকবে সব সময়।

ইরহান কয়েকদিন ধরে কাগজপত্র নিয়ে কি সব ঘাটাঘাটি করছে।যুথি জানতে চাইলে বলছে এসব দরকারি কাগজপত্র। কিন্তু কিসের সেটা খোলসা করে বলছে না।
আপনি কিছু একটা লুকোচেছন সেটা আমি ভালো করে বুঝতে পারছি।দেখি কাগজ গুলো কিসের।
ইরহান যুথিকে না দেখিয়ে আলমারিতে রেখে দেয়।
যুথি ইরহানের কান্ড দেখে শুধু।
ইরহান কাগজ রেখে যুথিকে জড়িয়ে ধরে। এখন এসব দেখে কাজ নেই।তুমি জানো আমাদের মেয়ে ভেবেছিলো আমি আবার চলে যাবো।কি কান্না। যখন জানলো আমি আর যাবো না তখন কি যে খুশি হয়েছে।

— ও জানতো না আপনি যে একেবারে এসে পরেছেন।
— হুম।
— এখন এসব কথা বাদ।আপনি মনে মনে কি খিচুড়ি পাকাচ্ছেন আমায় কিন্তু কিছু বলছেন না।
— “সময় হলেই জানতে পারবা।”এখন আসো একটু ভালোবাসার কথা বলি।
— যুথি জোর করে ইরহানের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৬

” ম’রণ কথা জিজ্ঞেস করলেই উনার ভালোবাসার কথা বলতে মন চায়। ”
তারপর মুখ ভেংচি কেটে চলে যায়।
ইরহান যুথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার কাগজ গুলো হাতে নেয়।

খড়কুটোর বাসা শেষ পর্ব