খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৬

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৬
Jhorna Islam

অ’না’কা’ঙ্ক্ষি’ত কোন কিছু যেটা খুব প্রিয় হুট করে চোখের সামনে চলে আসলে অনুভূতি কেমন হয়?
নিজের চোখকেই বিশ্বাস হয় না। মনে হয় স্বপ্ন দেখছি।যা খুব করে চাই।কিন্তু সেই চাওয়া টা হুট করে পূরণ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না।

মা মেয়ে মুখে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হচ্ছে না কিছু। মনে হচ্ছে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে।
দরজার অপর পাশে আর কেউ নয় স্বয়ং ইরহান নিজে দাঁড়িয়ে আছে। হাসি মুখে।
যুথি নিজের চোখ কে যেন বিশ্বাস হলো না। চোখ ঘুরিয়ে নিজের মেয়ের দিকে তাকালো। জুই ও তখন মায়ের দিকে তাকায়। মা মেয়ের মুখের ভাষা যেনো হারিয়ে গেছে। যুথি চোখের ইশারায় জানতে চায় সে যা দেখছে তা সত্যি দেখছে কি না। মেয়েও তার বাপ কেই দেখছে কি না।
জুই ও চোখের ইশারায় বুঝায় সেও একই জিনিস ই দেখছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইরহান মা মেয়ের মুখের দিকে তাকায়। তাদের মুখের অবস্থা দেখে বুঝাই যাচ্ছে মা’রা’ত্ন’ক শ’ক খেয়েছে।ওদের অবস্থা দেখে ইরহান মিটমিটিয়ে হাসে। এদের অবাক করার জন্যই তো এতো কিছু করা।
না জানিয়ে টিকিট কেটেছে। না জানিয়ে এসে দেখতে চেয়েছিলো ওরা কি করে।
কাল ফ্লাইটে ছিল বলে মা মেয়ে কে কল দিতে পারে নি। আজ বিকেলে সব ঝামেলা মিটিয়ে গাড়িতে উঠেই তাই কল দিয়েছিলো।

আপনজনদের চমকানো মুখ টা দেখে কি যে ভালো লাগে।
হুট করেই মা মেয়ে দুইজনে ইরহানের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। যুথি ইরহানের গলা জড়িয়ে ধরে আর জুই ছোট মানুষ বাবার পা জরিয়ে ধরে। ইরহান বুঝে উঠার আগেই মা মেয়ে কাজ টা করে।যার দরুন ইরহান পরে যেতে নিয়ে ও দরজার পাট শক্ত করে ধরে নিজেকে সামলে নেয়।

দুইজন ই কান্না জুড়ে দিয়েছে।ইরহানকে ভাসিয়ে দিচ্ছে চোখের পানিতে মা মেয়ে।
কান্নার শব্দে যুথির দাদির ঘুম ভেঙে যায়। ভ’য় পেয়ে যান তিনি। কি হয়েছে তরিঘরি করে উঠে দেখতে।
এসে দেখে দরজা ধরে ইরহান দাঁড়িয়ে আছে। আর মা মেয়ে বি’লা’প করে কাঁদছে। ইরহান কে দেখে তিনিও বেশ অবাক হন।তবে নিজেকে সামলে নেন।বুঝতে পারেন বউ আর মেয়ে কে না জানিয়েই এসেছে। ওদের নিজেদের সময় কাটাতে দিয়ে উনি আবার রুমে চলে যান। নিজের নাতনির জন্য দোয়া করতে করতে আবার শুয়ে পরেন।

এইদিকে এদের কান্না কিছুতেই থামছে না। তোমরা কি শুরু করেছো বলোতো? কাঁদছো কেন?
আমি দেশে না আসায় তো কতো অভিযোগ করতে।এখন যখন আসলাম তখন কাঁদছো?
তোমরা কি খুশি হওনি আমি আসায়? আবার চলে যাবো? আচ্ছা ছাড়ো আমি চলে যাচ্ছি।
দুইজন ই এক সাথে ইরহান কে আরো শক্ত করে আকরে ধরে বলে উঠে না!
ইরহান নিঃশব্দে হাসে।তারপর মা আর তার মেয়ে কে সামলে এসে বিছানায় বসে।

অনেক কষ্টে দুইটারে শান্ত করে। তারপর সব বলে ওদের চমকে দিতেই কিছু বলেনি ইরহান। এতোদিনের জমানো সব কথা বলছে মা আর মেয়ে। ইরহান অপলকে তাকিয়ে চোখের তৃ’ষ্ণা মিটাচ্ছে।
কথা চলছে তো চলছেই থামাথামির নাম নেই।এক পর্যায়ে ইরহান বলে খুব খিদে পেয়ে গেছে যুথি রানী। কিছু দাও না। যুথির এতোসময় পর টনক নড়ে। কথার তালে আর তার বোকা পুরুষ কে সামনে পেয়ে সব ভুলে বসে আছে।
ইরহাননের সাথে সাথে যে নিজেদের ও রাতে খাওয়া হয়নি সে কথা বেমালুম ভুলে বসে আছে।
ইরহান কে তারাতাড়ি বলে ফ্রেশ হয়ে আসতে।তারপর যুথি চলে যায় গ্যাসে খাবার গরম করতে।ইরহান ও উঠে দাঁড়ায় ফ্রেশ হবে বলে।

যুথি খাবার গরম করতে করতে ইরহান পোশাক পাল্টে হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় বসে। ইরহান বসতেই তার রাজকন্যা টা গুটি গুটি করে এগিয়ে আসে ইরহানের কাছে।ইরহান হাত বাড়িয়ে মেয়ে কে কোলে তুলে নেয়। কপালে চুমু একে দিয়ে বুকে আগলে নেয়।আমার মা টা!
যুথি খাবার আনে।ইরহান তিনটা বাসন দেখে ব্রু কোঁচকায়। তিন টা এনেছো কেন?
আমরা কেউই খাইনি তাই।

তো কি হয়েছে আমরা এক থালাতেই খাবো।আর তুমি আমাদের খাইয়ে দিবে।তাই না মা?
জুই ও মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। একসাথে খাবার খাবে।
তিনজন এক সাথেই খাবার খায়।
তারপর ইরহান শুয়ে দুই পাশ থেকে মা মেয়েকে বুকে আগলে নেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় কি যে শান্তি লাগছে।
কিছু সময়ের মধ্যে জুই ঘুমিয়ে যায়। যুথি বুঝতে পেরে মেয়েকে বালিশে শুইয়ে দেয়। তারপর ইরহানের বুকে মুখ গুঁজে আবার কাঁদে।
ইরহান ফিসফিসিয়ে বলে,,পা’গলি কাঁদে না। আমি এসে গেছি তো।

পরের দিন সকাল সকাল ই নতুন বাড়িতে উঠবে বলে ঠিক করে নেয়। সেই অনুযায়ী সব গোছগাছ চলছে। তেমন কিছুই নিবে না এই ছোট্ট ঘর থেকে। আর না এই ঘর টা ভাঙবে।এই ঘরটায় যে হাজারো ছোট ছোট সুখের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
এই ঘরটা সব সময় তাদের বিশেষ দিনের আশ্রয় হবে। ইরহানের মেয়ের কি আনন্দ নতুন বাড়ি থাকবে।অনেক আগেই থাকতে চেয়েছিলো মায়ের জন্য পারে নি।এখন নিজের সব কিছু নিজেই গুছিয়ে আগে আগে নিয়ে যাচ্ছে ঐ ঘরে।
জুইয়ের কান্ড দেখে সকলেই মিটমিটিয়ে হাসে। বাচ্চা মানুষ নতুন কিছু পেলেই খুশি।এখন তো তার খুশি ডাবল ডাবল।বাবা কে কাছে পেয়েছে।বাবা তার জন্য কতো কিছু নিয়ে এসেছে। আবার নতুন ঘরে উঠছে।

ঘরে তালা মেরে ঐ ঘরের উদ্দেশ্যে বের হয় ইরহান আর যুথি।দাদি আর জুই আগে আগেই চলে গেছে।
কয়েকপা দিতেই তাছলিমা বানু এসে সামনে দাঁড়ায়। ইরহান তাছলিমা বানুরে কে দেখে অবাক হয়। এ কাকে দেখছে সে?
আগের সাথে এই তাছলিমা বানু কে একদম ই মেলানো যাচ্ছে না।এতো বছরে বয়স বাড়লেও এরকম দেখার কথা না।শরীর শুকিয়ে গেছে। পড়নের কাপড় খুবই পুরোনো।
চেহারা দেখলে যে কারো মায়া হবে।

তাছলিমা বানু এগিয়ে এসে ইরহানের হাত ধরে। ডেকে উঠে ইরহান বাপ আমার কেমন আছিস তুই?
এরকম ব্যবহার তাছলিমা বানুর থেকে মোটেও আশা করেনি ইরহান।মনে মনে বেশ চমকায় তবুও মুখের অভিব্যক্তি শূন্য।
তাছলিমা বানু ডুকরে কেঁদে উঠে। ইরহানের হাত ধরে সব কিছুর জন্য মাফ চায়।
যুথি ইরহানের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে চাইছে ইরহান যেনো আবার গ’লে গিয়ে এদের আবার বিশ্বাস না করে।
অনেক করে মাফ চায় তাছলিমা বানু। তার পা’পের ফল সে পাচ্ছে। ইরহানকে অনুরোধ করে মাফ করে দিতে।
পায়েও ধরতে যায়। ইরহান বাঁধা দেয়।যতোই হোক মা তো।এক সময় নিজের মায়ের আসনে বসিয়েছে। ইরহান জানায় তাছলিমা বানুর প্রতি তার কোনো রা’গ নেই। সে আগের কিছু মনে করতে চায় না। তাছলিমা বানু যুথির কাছে ও মাফ চায়। যুথি করেছে কি করে নাই কিছু ই বলে নাই।

তাছলিমা বানুর পিছনে ইশান ছিলো।সে এক দৃষ্টিতে দূরে তাকিয়ে আছে। ইরহানের খুব মায়া হলো। ইশানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ইশানের মাথায় হাত রাখবে তার আগেই যুথি ইরহানের হাতটা ধরে ইরহান কে আঁটকে দেয়।
ইরহান কে কিছু বলতে না দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। এখনো যুথির ইশান কে দেখলে ঐদিনের কথা মাথায় আসে।শরীরে আগুন জ্বলে।

তাছলিমা বানু কাঁদতে কাঁদতে ইশান কে নিয়ে চলে যায়। যাক মাফ তো পেয়েছে।
যুথি ইরহান কে টেনে ঘরে নিয়ে আসে।তারপর ঐ দিনের ঘটনা এক এক করে সব খুলে বলে।
ইরহান নীরব দর্শকের মতো হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে সব শুনে।
সবকিছু শুনে ইরহান চুপ ছিলো।একটা কথা ও বলেনি।যুথি এতে বেশ অবাক হয়। তাও কিছু বলেনি ইরহান কে।
যুথি আর জানে না ইরহান মনে মনে কি পরিকল্পনা করছে।

এর মধ্যে আরো দুইটা দিন কেটে গেছে। রাতে হুট করেই ইরহান আগের মতো যুথিকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। মেয়ে আর যুথির দাদি তখন ঘুমে।
প্রায় অনেক ঘুরাঘুরি করে ফিরে আসে।তবে নতুন ঘরে না ওদের সেই ছোট্ট ঘরটায়।
ইরহান ঘরে ঢুকেই যুথিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখে।যুথি ও আবেশে চোখ বন্ধ করে রাখে।

ইরহান যুথির কানে কানে বলে,,,যুথি রানী আমাদের মেয়ের তো একটা খেলার সাথী দরকার তাই না? আমাদের মেয়ের সময় তো আমি পাশে ছিলাম না।না তোমার সেবা করতে পেরেছি।না বাবা হওয়ার সব কিছু কাছে থেকে উপভোগ করতে পেরেছি। এবার আমি সব নতুন করে উপভোগ করতে চাই।নিজের হাতের আঙুল ধরে হাটা শেখাতে চাই।প্রথম কোলে নেওয়ার অনুভূতি টা ও পেতে চাই।

তুমি কি আমার ইচ্ছে টা পূরণ করবে যুথি রানী?
যুথি ঘুরে ইরহানের বুকে মাথা রাখে।তারপর বলে উঠে,,,,
“আপনার যুথি রানী আপনার জন্য জীবন টা ও দিতে রাজি।আর এটা তো আমার বোকা পুরুষের ইচ্ছে। ”
ইরহান যুথির কথায় মুচকি হাসে। তারপর সযত্নে তার বউকে কোলে তুলে নেয়।
এতোদিন তো যুথি রানীর বোকা পুরুষ তার সব ইচ্ছে চাওয়া পাওয়া পূরণ করেছে।আজ থেকে তার বোকা পুরুষের চাওয়া পাওয়ার কিছু টা পূরণ করার ভা’গ না হয় নিজেও নিলো।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৫

গল্প নিয়ে খুবই দুটানায় আছি।শেষ করে দিবো নাকি আরো বাড়াবো বুঝতে পারতেছিনা।চিন্তায় মাথা কাজ করছে না। আপনারা একটু আপনাদের মতামত দিন তো।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৭