খড়কুটোর বাসা শেষ পর্ব 

খড়কুটোর বাসা শেষ পর্ব 
Jhorna Islam

ইরহান এতোদিন কি কাগজপত্র লুকিয়ে রেখেছে যুথির কাছে এখন সব পরিষ্কার। লোকটা দেশের বাইরে থেকেও কতো কিছু করে ফেলল অথচ যুথি কিছুই ধরতে বা জানতেও পারলো না। জানবে কি করে একটু আবাস ও পায়নি এসবের।
ইমনের ভাগের সম্পত্তি কি কি করে নিয়েছে। নিজের এক বি’শ্বস্ত লোকের মাধ্যমে করেছে।প্রথমে ঐই লোকের নামে নিয়েছে।দেশে এসে ঐ লোকের থেকে নিজের নামে করেছে। কি কি ভাবে করেছে নিয়েছে এনারাই জানে।যুথির ছোট্ট মাথায় এসব ঢুকছে না।

যুথিতো এইটা ভেবেই আ’হা’ম্মক হয়ে আছে ইরহানের সাহসে কিভাবে কু’লোয় এমন একটা ঝুঁ’কির কাজ করতে? এতো বড় ধো*কা খেয়েছে জীবনে। তাও লোকটার শিক্ষা হলো না? এবার ও যদি ঐ লোকটা ঠকিয়ে দিতো তখন কি হতো?
আল্লাহ সহায় ছিলো বলে,, আর লোকটা হয়তো অনেক ভালো তাই।নয়তো ভালোর মাঝেও তো খারাপ আছে। মু’খোশ পরে থাকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঐ লোকটার জন্য যুথির মন থেকে দোয়া আসে।শত শত খারাপ আর ভালো লোকের মু’খশ পরে থাকা লোকের ভিড়েও এখনো ভালো লোক আছে।
ইরহান আরো একটা কান্ড ঘটিয়েছে। যুথি ভেবেছিলো ইশান যুথির সাথে কি করতে চেয়েছিল তা সে ভুলে গেছে। আর ইশান তো তার পা’পের শাস্তি পেয়েছেই।
তাছলিমা বানু এখন বদলে গেছে। ভালো হয়েছে। নিজের ভুল গুলো বুঝতে পারে।

ইরহান খোলাখুলি তাছলিমা বানুর সাথে কথা বলেছে। সে চায় না ইশান এই বাড়িতে থাকুক।ইশান এইখানে থাকলে যুথির এক বেলা হলেও চোখে পরবে।অতীত মনে হবে খা’রাপ লাগবে। তাই সে ভেবে চিন্তে একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছলিমা বানু কে জানিয়েছে। কিছু টা দূরে রাস্তার পাশে যেই খেত টা আছে ঐখানে ঘর তুলে দিবে।ঐখানে যেনো চলে যায়।

তাছলিমা বানু আর ইশানের খাওয়ার খরচ সে নিজে বহন করবে।তবে ইশানের কোনো প্রকার চিকিৎসার খরচ সে দিবে না। এমনকি যেনো ইশানের কোনো চিকিৎসা ও না করে ভালো হওয়ার জন্য।
কিছু কিছু লোক কখনো শোধরায় না।এটা তার সমস্ত পাপ আর অন্যায়ের শাস্তি। তাছলিমা বানু কে বর ইরহান কি শাস্তি দিবে? এই বয়সে এমনিতেই বিবেকের কাছে প্রতিনিয়ত জ্ব’লবে। নিজের ছেলেদের পরিণতিতে এমনিতেই শাস্তি পেয়ে গেছে।

তাছলিমা বানু ইরহানের কথা মেনে নেয়। কোন মতো খেয়ে পরে বাঁচতে পারলেই হয়।অন্য কোন কিছুই প্রয়োজন নেই। জীবনে এতো পা’প করার পরও যে শেষে এতোটুকু পাচ্ছে এটাই তো কতো ভাগ্যের ব্যাপার।
ইশান আর নিয়ে তিনি অন্য বাড়িতেই থাকবে।এখানে থাকলে ওদের মুখ দেখলে নিজের ও মনে হবে কি কি অন্যায় যে তিনি করেছেন।ইরহান নামক এই হৃদয়বান মানুষটার সাথে।

নিজের ছেলেকে এতো কিছু দিয়ে ও যেখানে একটু খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। আর যেই ছেলেকে সারাজীবন কষ্ট দিয়ে গেলো শেষ বয়সে সেই ছেলেই খুঁ’টি হলো। যেই ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল সেই ছেলের দয়ায়ই বাঁচতে হবে।

ইরহান তাছলিমা বানুর জন্য ছোট্ট একটা বাড়ি করে দেয়। তাছলিমা বানু সেইখানে ইশান কে নিয়ে চলে যায়। প্রতিদিন নামাজ পড়ে নিজের পা’পের জন্য মাফ চায়। নিজের জন্য আর কিছু চাওয়ার নেই।ইরহানের জন্য সবসময় দোয়া করে।শরীর টা যেনো ভালো থাকে। সংসারে যেনো সব সময় সুখ থাকে।
ইমন ও অন্য দিকে মোটামুটি ভালোই আছে। সবাই কি আর সমান শাস্তি পায়? তাও কম কিসে হাঁটতে পারবে না। কোনোদিন সন্তানের মুখ ও দেখতে পারবে না। কোনো মতে খেয়ে পরে জীবন চলবে।

দিনার খোজ আর কেউ পায়নি।সেই যে গেলো আর কারো সাথে যোগাযোগ করেনি।
তবে দিনা তার ভালোবাসার মানুষ টার সাথে অভাবের সংসারে ও দিন এনে দিন খেয়ে ভালো আছে। দিন শেষে একটু ভালোবাসা তো পায়।এতেই দিনা খুশি। পিছনে সে তার অতীতের দিকে ফিরে ও তাকায় না।সে বর্তমান নিয়ে সুখে আছে।

ইরহান সাত বছর আগে দেশে এসেছিল যেই পরিকল্পনা নিয়ে।সেই পরিকল্পনা এখন সে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
টাকা পয়সা নিয়েই এসেছে একটা ব্যবসা দার করানোর পরিকল্পনা করে। নয়তো আরো আগেই দেশে এসে পরতো।কিছু বছর কষ্ট করে সব ঠিক করে। টাকা পয়সা যথেষ্ট হাতে নিয়ে তার পরেই একেবারে দেশে আসছে ইরহান।
কয়েকজনের সাথে পরামর্শ করে।ব্যবসায় পরিস্থিতি জেনে তারপর কাপড়ের ব্যবসা দার করায় ইরহান।এখন কাপড়ের বাজার বেশ চওড়া।

প্রথম কয়েকদিন একটু ঝামেলায় পরলেও।সব কিছু বুঝে ফেলতে ইরহানের বেশি সময় লাগেনি।কিছু দিনের মাঝেই সব কিছু বুঝে নিয়েছে। কি কাপড়ের কি দর।কোনটা ভালো বিক্রি হয়। সব বুঝে ফেলে।
কয়েকদিনের মধ্যেই ইরহানের ব্যবসা বেশ রমরমা হয়ে উঠে। একাতো সব করা সম্ভব নয়।সাথে তিনজন লোক ও রাখে। ব্যবসা করে ইরহানের দিন আরো ফিরে।

ইতিমধ্যে যুথি ইরহান কে আরো একটা সুখবর দেয়।সে আবারো মা হতে চলেছে। ইরহান শুনে সে কি খুশি।এইবার সে নিজ হাতে বউয়ের সেবা করবে।সব কিছু নিজে করবে।
যুথির এই সময় টা পাশে থেকে ভরসা দিবে। যেটা জুইয়ের সময় করতে পারেনি সব এখন পূরণ করবে।
জুই ও অনেক খুশি। তার আরেকটা খেলার সাথি হবে।এখন থেকেই কতো কি কিনছে।নিজের খেলনা গুলো ভাগ করছে কোনটা তার ভাই অথবা বোন কে সে দিবে।

ইরহান যত্নের কোনো কমতি রাখছে না তার যুথি রানীর। কাজে গেলে বেশি সময় থাকে না। থাকলেও কিছু সময় পরপরই কল দিবে।ঠিক আছে কিনা।আসার সময় বার বার জিগ্যেস করবে কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কি না। কিছু খাবে কি না।
যুথি কিছু না বললেও হাত ভর্তি করে এটা ওটা নিয়ে আসবে।
যুথি কিছু বলতে মুখ খুলতে নিলেই।তুমি ঠিক আছো যুথি রানী? কিছু লাগবে তোমার?
যুথিকে রান্না ঘরেও বেশি যেতে দেয় না। সকালে ইরহান নিজেই বেশির ভাগ রান্না করে। রাতেও না করে করতে সে নিজে এসে করবে।যুথি শুনলে তো।

যুথির দাদির ও এখন বয়স হয়েছে। বেশি কাজ করতে পারে না। যুথি আর ইরহান ও দেয় না। বলে দিয়েছে তিনি যেনো জুইয়ের সাথে শুয়ে বসে গল্প করে কাঁটায়।
এইতো সেইদিন ও হুট করেই যুথির মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে বসে।বাবু পেটের ভিতর থেকে লা’থি মেরেছে।
ইরহান ও টে’র পেয়ে উঠে বসে জানতে চায় কি হয়েছে। যুথি কিছু না বলে ইরহানের হাত টা নিজের পেটে রাখে।ইরহান প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারে বাবু লা’থি দিয়েছে।নড়াচড়া টে’র পাচ্ছে।

ইরহান কি যে খুশি হয়েছে।কতো শতো চুমু খেয়েছে পেটে।যুথিকে ও চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে।
যুথি ইরহানের ভালোবাসাময় পা’গ’লামি গুলো খুব উপভোগ করে। এতো ভালোবাসা যুথি কারো থেকে পাবে জীবনে কল্পনা ও করেনি।
আল্লাহর কাছে হাজার বার শুকরিয়া আদায় করে যুথি তার বোকা পুরুষ কে তার জীবনে পাওয়ার জন্য।
জীবন সুন্দর খুব সুন্দর।

পরিশিষ্টঃ সময়ের সাথে সাথে জীবনের অনেক পরিবর্তন ঘটে।নতুনজনদের আগমন ঘটে। হাসি আনন্দ, সুখ দুঃখ সব মিলিয়ে কেটে যায় সময়।
ইরহানের আর যুথির সংসার খুব ভালো চলছে।সবকিছু তে একে অপরের পাশে ছায়ার মতো থাকে। যে যার মতো জীবনে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইরহান আর যুথির আরেকটা ছেলে হয়েছে। নাম রেখেছে জোভান।পরিপূর্ণ সংসার তাদের ছেলে মেয়ে কে নিয়ে। কাজের ক্ষেত্রে ও ইরহান সফলতা অর্জন করেছে।

এতোকিছুর পরেও ইরহান যুথি তাদের সেই ছোট্ট ঘরটার কথা ভুলে নি।এই ঘরটাতেই তাদের জীবনের অধ্যায় শুরু হয়েছিলো।সুখের আর স্পেশাল দিন গুলো তারা এই ছোট্ট নীড় টা তেই কাঁটায়। তাদের #খড়কুটোর_বাসা।
আজ যুথি আর ইরহানের বিবাহ বার্ষিকী।অনেকগুলো বসন্ত এক বাঁধনে থেকেও হয়তো একসাথে থাকা হয়নি।এখন এক সাথে আছে।এটাই দোয়া যেনো শেষ নিশ্বাস অবদি ছেলে মেয়ে নিয়ে কাটাতে পারে।

আজ ওরা সেই ছোট্ট ঘরটার মধ্যে থাকবে।ছেলে মেয়ে ও বায়না ধরেছে এক সাথে থাকবে। যুথি দুই ছেলে মেয়ে কে নিয়ে আগেই ঘরে চলে গেছে। ওদের ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে বুকে নিয়ে।
ইরহান ঘরে ঢুকে যুথি ও ছেলে মেয়ের দিকে তাকায়। আজ যুথি সেজেছে। ইরহানের আনা সেই চুড়ি,মালা পরে।খোপায় বকুল ফুলের মালা।চোখে লম্বা করে কাজল টানা।
ইরহান বিছানার দিকে এগোতে এগোতে,, তার যুথি রানীর দিকে তাকায়। যুথি রানী ও তার বোকা পুরুষের দিকে তাকিয়ে আছে।

ইরহান গুণ গুণ করে,,,
“খড়কুটো এক বাসা বাঁধলাম বাবুই পাখির মতো,
এই হৃদয়ের ভালোবাসা দিলাম আছে যতো।
খড়কুটো তে তৈরি বাসা হাওয়ায় হাওয়ায় দোলে,
ছানারা সব দিব্যি ঘুমায় মা পাখির আঁচলে। ”
জীবন সুন্দর নিজের মানুষ টা যখন সব পরিস্থিতিতে পাশে থাকে।হাতে হাত রেখে বিপদ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার ভরসা দেয়।

সমাপ্ত

অবশেষে শেষ করে দিলাম।গল্পে হয়তো অনেক ভুলত্রুটি আছে।ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গল্প টা লিখতে লিখতে মায়া পরে গেছে। শেষ করতে ইচ্ছে করছিলো না। সমাপ্ত কথাটা লিখতে গিয়ে হাত কাঁপছে। মায়া পরে গেছে। তবুও শেষ তো করতেই হতো।আজ সবার কাছে আমার নীরব পাঠক পাঠিকাদের কাছেও অন্তত দুই লাইন হলেও মন্তব্য আশা করছি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা পাশে ছিলেন তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করি পরবর্তী গল্পেও আপনাদের এরকম কাছে পাবো। খুব শিঘ্রই নতুন গল্প নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ। সবাই ভালো থাকবেন।আর আমার জন্য দোয়া করবেন।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৭