খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩১

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩১
Jhorna Islam

ইশান মাথায় বেশ জোরে শো’রেই আ’ঘাত পেয়েছে। লাঠির বাড়িটা লেগেছে বেশ ভালোভাবেই। আ’ঘা’তের জায়গা টা হাত দিয়ে চেপে ধরে নিচে বসে আছে। আর সামনের দিকে এই কান্ড ঘটানো রমনীটির দিকে তাকিয়ে আছে।
যে এখন যুথির হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিতে ব্যস্ত। এতো বড় একটা ঘটনা ঘটিয়েও মুখ ভঙ্গি নির্বিকার।
ইশানের বিষয় টা স’হ্য হলো না। তে’তে উঠে বলল এই তুই আমায় মারলি? তোর সাহস দেখছি বেড়ে গেছে তুই কোন সাহসে আমার গায়ে হাত তুলেছিস?

ইশানের কথা কেউ কানেই তুলছে না।
যুথি অবাক চোখে তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়া রমনীটির দিকে তাকিয়ে আছে।
ইশান এবার একটা গা’লি ছুড়ে মারে।
যা শুনে দুইজন ই ইশানের দিকে দৃষ্টি দেয়। তারপর জোরে চিললিয়ে বলে উঠে ইশান ভুলে ও মুখ খারাপ করবে না। তোমার পা’পের ঘ’রা পূর্ণ হয়ে গেছে এইবার তুমি আর র’ক্ষা পাবে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ও’রে’ব্বা’স এই না হলে আমার বউ।কি সুন্দর নিজের বর কে হু’মকি দিচ্ছে। অনেক দিন হয়ে গেলো তুই আমার হাতে মা’ইর খাস না তাই নারে দিনা? তোর শরীর ম্যা’জ ম্যা’জ করছে নিশ্চই মা’ইর খাওয়ার জন্য?
যুথিকে বাঁচানো ব্যক্তিটা আর কেউ নয় ইশানের বউ দিনা।যে কিনা এতোদিন নানান ছ’লে যুথি কে কথা শুনিয়েছে অপমান করেছে। কতো ভাবে ক্ষ’তি করার চেষ্টা করে গেছে।

এই দিনা তুই এটা বল তুই ঘরে ঢুকলি কি করে? আমিতো ভিতর থেকে লক করে রেখেছিলাম। ভিতর থেকে কেউ না খুললে বাইরে থেকে কেউ ভিতরে ঢুকতে পারবে না। আর তোর কাছে তো চাবিও নেই। তুই কি করে ঢুকলি?
দিনা ইশানের কথায় তা’চ্ছিল্যের হাসি দেয়। তারপর বলে দু’শ্চ’রিত্র পুরুষ তোকে কে বলেছে আমি এখন ঢুকেছি ঘরে?
ইশান কপাল কোচকে ফেলে,, কখন ঢুকেছিস?

কালকে যখন মেয়ে এনে ফু’র্তি করছিলি আমাদের এই রুমে তখন। মেয়ে পেয়ে এতোটাই ব্যস্ত ছিলি মেইন দরজা টা দিতে ভুলে গেছিস। এতোদিন বাইরে এসব করে বেরিয়েছিস এইবার সুযোগ বুঝে ঘরে নিয়ে এসেছিস সব ই আমি দেখেছি।
কাল বাড়িতে আসলে তোকে আমি দেখিনি কেনো? কোথায় ছিলি তুই? মিথ্যা বলে আমার সাথে মজা নিচ্ছিস?
তোর সাথে মজা তাও আমি? হাহ্!

কাল বাড়িতে মায়ের সাথে রাগারাগি করে রা’গ করে রাতের বেলাই বেরিয়ে এসেছিলাম। বাড়িতে এসে দেখি দরজা শুধু ভিড়িয়ে রাখা। বেশ অবাক হয়ে ছিলাম।তুইতো বাড়ি থাকবি না ভেবেছিলাম হয়তো তোর মা দরজা দিতে ভুলে গেছে। ঘরে ঢুকে আগে তোর মায়ের কাছেই গিয়েছিলাম দেখা করার জন্য। গিয়ে দেখি তোর মা নেই।ভাবলাম কোথাও হয়তো গিয়েছে বেশি মাথা ঘামাইনি। শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছিলো তাই তারাতারি রুমে আসতে গিয়ে রুমের সামনে এসে যা দেখি তা আর নাই বলি। এরকম দৃশ্য আমার কোনো শ’ত্রু যেনো কখনো না দেখে। তুই আমায় এতোদিন অনেক কষ্ট দিয়েছিস সব মাথা পেতে নিয়েছি।কিন্তু কোনো নারী তার স্বামীকে ঐই অবস্থায় অন্য একটা মেয়ের সাথে স’হ্য করতে পারবে না।
ঐ দৃশ্য দেখে আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। কথা বলার শক্তি ও আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।

চুপচাপ পিছিয়ে গিয়ে ইরহান ভাইয়ের রুম টায় চলে যাই।তোদের দেখে আমার গা খুব গোলাচ্ছিল। অনেক কষ্টে রুমে ঢুকে দরজা লক করে বসে থাকি।পুরো শরীর জা’লা করছিল।কাল থেকে আজ সন্ধা পর্যন্ত আমি ঐ রুমেই ছিলাম।
যুথি এইখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।কি করবে বা বলবে যুথি বুঝতে পারছে না। এই প্রথম যুথি কথা খুঁজে পাচ্ছে না বলার জন্য। এখন কিছু বলা ঠিক ও হবে না বলে যুথির মনে হচ্ছে।

এই দিকে যুথির দাদি গেইটের সামনে এসে রিকশা থেকে তারাতাড়ি নামে।তারপর ভাড়া মিটিয়ে প্রায় দৌড়ে ভিতরে ঢুকে।
চারিদিকে অন্ধকার।ছোট্ট মোবাইলের আলো দিয়ে এগিয়ে যায়। ঘরের সামনে গিয়ে অবাক হয় এইটা ভেবে এখোনো ঘরে আলো জ্বলেনি। ঘরে আলো জ্বালালে টিনের ফাঁকা দিয়ে আলো এসে বাইরে পরে।
দরজার সামনে এগিয়ে যেতেই কিছু একটা পায়ের নিচে পরে। মোবাইলের লাইট নিচে তাক করতেই দেখতে পায় যুথির ফোন টা।নিচে বসে তারাতাড়ি করে তুলে নেয়। ভাগ্যিস জোরে পাড়া লাগেনি।

কিন্তু যুথির মোবাইল এখানে এইভাবে পরে আছে কেনো? ভিতরে এবার ভয় ঢুকে যায়। তারাতাড়ি দরজা খুলে ঘরে ঢুকে বাতি জ্বালাতে জ্বালাতে যুথিকে ডাকে।কোনো সারা শব্দ নেই। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে ঘরের কোথাও নেই যুথি। কোথায় চলে গেলো মেয়েটা?
যুথির মোবাইল চালু করতে গিয়ে বুঝতে পারে বন্ধ হয়ে আছে।
অন্য দিকে ইরহান একের পর এক যুথির ফোনে আর দাদির ফোনে কল দিয়ে চলেছে। যুথির ফোন বন্ধ। দাদি কল ধরছে না।

টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে ইরহানের। আল্লাহ কে ডাকছে শুধু মনে মনে। একটাই প্রার্থনা তার যুথি রানী যেনো ঠিক থাকে।স’হি’সা’লা’ম’ত থাকে কিছু যেনো না হয়। ইরহানের খুব ভ’য় হচ্ছে। ইচ্ছে করতেছে একছুটে দেশে চলে যেতে।
দাদির অবস্থা খারাপ যুথিকে না দেখতে পেয়ে।বাইরে গিয়ে গোসল খানা,টয়লেট সব চে’ক করে কোথাও নেই। কই গেলো মেয়ে টা আস্তে করে ডাকতে থাকে। কোথায় খুজবে এখন কিছুই বুঝতে পারছে না। মেয়েটার চিন্তায় ঘাম ছুটে গেছে রীতিমতো।পরোক্ষনে পুকুর পাড়ের কথা মাথায় আসতে দৌড়ে পুকুর পাড়ে যায়।এই বয়সে এসব দৌড়াদৌড়ি করা যায়? তাও করছে নাতনি টা কে খুঁজে বের করতে হবে।

তোকে আমি ছাড়বনা দিনা তোকে আমি তা’লা’ক দিবো।এখন তুই সামনে থেকে যা তোকে আমি পরে দেখে নিচিছ।এখন আমার কাজে একদম বাঁধা দিবিনা।
তুই তা’লাক দেওয়ার জন্য আগেতো বেঁচে থাক।তুই কি ভেবেছিস আমি ঐ রুমে বসে সারাক্ষণ বসে শোক পালন করেছি? মোটেও না তোকে কিভাবে শেষ করবো সেই উপায় খুজেছি।তুই অনেক মেয়ের জীবন তাদের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় নষ্ট করেছিস।আর না।শেষে কিনা নিজের ভাবির দিকে ন’জর দিলি।আরে বে’ঈ’মা’নী যতোই করিস ওদের সাথে তাই বলে এমন কাজ করবি? তোকে আজ আমি ছাড়বো না।অনেক হয়েছে আর না।

তোকে মে’রে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার কাছে চলে যাবো।যাকে আমি বিয়ের আগেই আমার মনে দা’ফ’ন করেছিলাম তার কাছে। সেই মানুষ টা আজও আমার পথ চেয়ে বসে আছে।
ইশান এইবার উঠে দাড়িয়ে দিনারে বলে তে’ড়ে আসতে নিলে দিনা তার হাতের লাঠি দিয়ে ইশানের মাথায় আবার আ’ঘাত করে। মুহূর্তের মধ্যে র/ক্তে’র বন্যা বয়ে যায়। ইশান শব্দ করে শুয়ে কা’ত’ড়া’তে থাকে।
যুথি দেখে চোখ বন্ধ করে নেয়।

দিনা যুথির কাছে এগিয়ে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে,,তুমি তোমার ঘরে যাও বোন। তোমার সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে পারবে না। আমি যে এই কাজ করেছি সেটার প্রমাণ লোক ঠিক পেয়ে যাবে।কিন্তু আমাকে পাবে না। তোমার নাম এসবে জড়াবে না। তোমাদের সাথে অনেক অন্যায় করেছি।এই জা*নো*য়া*রদের সাথে মিলে।পারলে মাফ করে দিও।
যুথি দিনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজ এই দিনাকে সে চিনতে পারছে না। আগের দিনার সাথে কোনো মিল নেই। দিনার দিকে তাকিয়ে আবার ইশানের দিকে তাকায়।

দিনা হয়তো বুঝতে পারছে বিষয় টা।তুমি এর চিন্তা করো না।এরে তোমার শাস্তি দিয়ে তোমার হাত নোংরা করতে হবে না। চিন্তা কারো না একেবারে হয়তো মারবো না।কিন্তু এমন অবস্থা করবো কোনো মেয়েদের দিকে তাকাতেও ভ’য় পাবে। তুমি চলে যাও।
যুথি দিনার মাথায় কাঁপা কাঁপা হাত রেখে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দৌড়ে বের হয়ে আসে।হাত পা তার কাঁপছে। শরীরে একটুও বল পাচ্ছে না।

যুথি দৌড়ে বাইরে এসে হাঁপাতে থাকে। আল্লাহ তাকে আর তার সন্তান কে দিনাকে পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
অনেক কষ্টে শক্তিহীন শরীরে ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়। ঘরে বাতি জ্বালানো দেখে বুঝতে পারে দাদি এসেছে।দূর্বল কন্ঠে দাদি কে ডাক দেয়। দুইবার ডাকার পরও কোনো সারা শব্দ পায় না।
যুথির দাদি পুকুর পাড়ে আরো অন্যান্য জায়গায় যুথিকে খুঁজে না পেয়ে ঠিক করে নেয় ইমনদের ঐখানে যাবে।পরে ঘরের সামনে এসে যুথিকে দেখতে পায়।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩০

ও বু তুই কইছিলি? বলেই যুথির কাছে এগিয়ে যায়।
দা-দাদি আমায় ধ-ধরে ঘরে নেও।আর পানি দাও।শরীরে শক্তি পাচ্ছি না। গলা শুকিয়ে গেছে।
যুথির দাদি যুথিকে ধরে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে নানান প্রশ্ন করতে থাকে আর বি’লা’প করতে থাকে।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩২