ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৮

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৮
নুসাইবা ইভানা

মিহি কিছু বুঝে ওটার আগেই তার ঠোঁট দু’টো কেউ দখল করে নেয়। এই স্পর্শ মিহির পরিচিত। মিহি শান্ত রমনীর মতো সেই স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। নিজের দু’হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো শাফিনের শার্ট। কিছু সময় এভাবেই কেটে যায়। মিহির চোখ থেকে ঝড়ে পরছে অশ্রু। মিহি শাফিনকে জড়িয়ে ধরে আছে। একে অপরে না বলেই নিজের মনের কথাগুলো যেনো প্রকাশ করছে। এ যেনো চুপ থেকেই বলে দেয়া হাজার কথা শত অভিযোগ। মিহি শাফিনেক কিছু বলবে তার আগেই শাফিন মিহির ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো।

ততক্ষণে দু’জন মানুষ প্রবেশ করেছে দরজা দিয়ে। যদিও মাস্ক দিয়ে লোক দু’টির চেহারা ঢাকা। শাফিন মিহিকে নিয়ে আস্তে করে দরজার আড়ালে লুকিয়ে পরলো। শাফিন একা থাকলে হয়তো এখন লড়াই করতো। কিন্তু মিহির জন্য করবেনা। মিহি এখনো মিশে আছে শাফিনের বক্ষে। মিহির মনে পরলো ঈশানের বলা কথাটা। এতো কিছুর আড়ালে আপনার জন্য ভালোবাসাটা আপনার চোখে পড়েনি। আজ চোখে পড়লো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যত ঝগড়া মান অভিমান হোক না কেন । রাতে যত লেট করে ফিরুক না কেন। মিহিকে বুকে না জড়িয়ে ঘুমাতো না। মিহির চোখের জলে শাফিনের বুকের কাছের শার্ট ভিজে গেছে। লোক দু’টো হল রুমের লাইট অন করলো। তারা দুজনেই কিছু খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। তারপর তারা চলে গেলো স্টোর রুমের দিকে। শাফিন মিহিকে আলোতে নিয়ে আসলো। মিহির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাফিন। মিহি শাফিনকে কিছু বলবে তার আগেই লোক দু’টোর কথা শোনা গেলো। একজন বলছে, ওই দু’টোকে কে সরালো এখন থেকে।

অপরজন বলছে আমাদের আরো সর্তক হতে হবে। লোক দু’টো চলে যেতেই।
শাফিন বলে এসব কি?
– সে অনেক কথা আগে তোমাকে একটা খুশির খবর দেয়ার আছে। এর মধ্যেই মিহির ফোনটা বেজে উঠলো। স্কিনে জ্বলজ্বল করে হাবি লিখে সেভ করা নাম্বার টা। মিহি রিসিভ করতেই ঈশান বলে,কোথায় আপনি?শেহরোজ সেই কখন থেকে কান্না করছে। মিহি বললো আমি এক্ষুনি আসি।

মিহি শাফিনকে নিজের ঠিকানা দিয়ে বলে,আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমার।
শাফিন মিহির কপালে চুমু খেতে চেয়েও খেলো না। মিহি চলে যেতেই শাফিন কিছুটা চিন্তায় পরে গেলো।রাত তখন এগারোটা পার হয়েছে। শাফিন বাসা থেকে বের হয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে যেতে লাগলো।মনে রয়েছে তার হাজার কৌতূহল। আপাতত সেসব সাইডে রেখে নিজের লক্ষ্য পূরণে বেরিয়ে পরলো।

মিহি বাসায় প্রবেশ করে হাত ধুয়ে নিয়ে শেহরোজকে কোলে নিলো। শেহরোজ কান্না থামিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো কথা বলতে পারলে জিজ্ঞেস করতো এতক্ষণ কোথায় ছিলে? মিহি শেহরোজকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হতেই। ঈশান বললো,কোথায় ছিলেন?

– আমাদের বাসায়।
– কোন সমস্যা?
– না তেমন কিছু না।
ঈশান অন্য কিছু জিজ্ঞেস করতে যেয়েও থেমে গেলো। এসব প্রশ্ন করার অধিকার তার নেই।
মিহি বললে,মিস্টার মুখার্জি আর কিছু বলবেন?
– নাহহহ।
মিহি চলে গেলো। নিজের রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে শেহরোজের কপালে চুমুু দিয়ে বলে,তোমার বাবাই তো ফিরে এসেছে। কিন্তু তোমার আগমনের বার্তা তাকে দিতে পারলাম না। তোমার বাবাইয়ের রিয়াকশন দেখার মতো হবে।

ঈশান ফাহিনের সামনে বসে আছে। শীতল কন্ঠে ফাহিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,নিজের ইচ্ছে তে সত্যিটা বলবেন নাকি স্পেশাল আপ্যায়ন করতে হবে।
ফাহিন বললো,আমাকে মে*রে ফেলুন।
– আপনার মে*রে আমার কি লাভ বলুন? আর কাকে বাঁচাতে চাইছেন নিজের জীবন দিয়ে!
– আমি যদি মুখ খুলি আমি এমনিতেও বাঁচতে পারবো না।
– তার মানে বলবেন না?

ঈশান একজনকে ইশারা করতেই সে হাতে করে দু’টো গরম শিক নিয়ে আসলো।
ফাহিন অসহায় দৃষ্টিতে একবার সেদিকে তাকালো। নিচোর চোখ বন্ধ করে বলে আপনার যা খুশী করতে পারেন তবুও আমি কিছু বলবো না।
ঈশান বলে, আমি কতটক ভয়ংকর সে সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। বলেই একটা শিক ফাহিনের পায়ে চেপে ধরে। ফাহিন চিৎকার দিয়ে বলে বলছি বলছি।

– দুই বছর আগে এক রাতে আমার দেখা হয় ডিসি রমিজ রাজের সাথে। সেই আমাকে অফার করে। আর আমি এতো বড় বিগ অফার পেয়ে লোভ সামলাতে পারিনি রাজি হয়ে যাই। আমার কাজ ছিলো। শহরের মধ্যে ড্রা*গ সাপ্লাই করা এর জন্য বিশ সদস্যের টিম আছে। কিছুদিন যেতেই আমি জানতে পারি এটা এম,কের গ্রুপ। ততদিনে দেরি হয়ে গেছে। সেখান থেকে আর বের হতে পারবো না। তাই আমি তকদের সাথে কাজ করতে লাগলাম। শাফিনের মৃতুর পর আমার দ্বায়িত্ব ছিলো মিহিকে তাদের হাতে তুলে দেয়া। কিন্তু মিহিকে আমি সেভ করতে পারিনি। তাই মিহিকে তারা পাঠিয়ে দেয় ভারতে। মিহি প্রেগন্যান্ট ছিলো এটা আমি জানতাম না।মিহিকে ওরা পাচার করে দিতো তবে এম,কে নিজেই মিহিকে চায়। তাই তার হেফাজতে ছিলো মিহি। হঠাৎ মিহি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তাই মিহিকে খুঁজে বের করার দ্বায়িত্ব আমার।

– এম,কে ফুল ফর্ম কি?
– আমি জানিনা। আর নিজের চোখেও দেখিনি কথা হয়েছে মোবাইলে।
– বয়স কেমন হতে পারে?
-সঠিক বুঝতে পারিনা তার কন্ঠ একেক সময় একেক রকম শোনা যেতো।
-এই মেয়েটা কে?
– আমার ক্লাসমেট।
– তোদেরকে বন্দী করেছিলো কে?
– নুহাস ও এম,কের দলের লোক।

ঈশান লিরাকে কল করে বললো উদয়কে নিয়ে বাসায় আসতে।
মোর্শেদ চৌধুরী বুঝে উঠতে পারছেন না। বাহিরের দেশের একজন কর্মকর্তা এতো বড় দুঃসাহসিক কাজ কি করে করতে পারে? নাকি এখানে অন্য কারো হাত আছে?
নুহাস এলিজকে কল করলো কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। বেশ কয়েকবার কল করার পর রিসিভ করলো। নুহাস বললো শাফিনের কি অবস্থা সময় এসেছে আসল চাল দেয়ার।

এলিজা বেশ কিছু সময় চুপ থেকে উত্তর দিলো,শাফিন আর সপ্তাহ খানেক আগেই পালিয়ে গেছে।
নুহাস গর্জে উঠে বলে, সেটা এখন জানাচ্ছিস আমায়। তোকে তো আমি ছড়বো না। ফোন কেটে দিয়ে বসে পরলো। শাফিনের জীবিত থাকার খবর নুহাস আর আয়রা ছাড়া কেউ জানেনা।নুহাস মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পরলো তার মানে ডক্টর শফিককে শাফিন হ*ত্যা করেছে।

রমিজ রাজ প্রতিদিনের মতো নে*শা*য় ব্যস্ত শাফিন রমির রাজের সামনে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে বসলো । রমিজ রাজ শাফিনকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গেলো। চিৎকার দিযে বলে ভূত, ভূত শাফিন রমিজ রাজকে উদ্দেশ্য করে বললো,চেঁচা দেখি কত চেঁচাতে পারিস। শেষ বারের মতো চেঁচিয়ে নে।
রমিজ রাজ ভয়ে ঘামতে লাগলো। ভূত কন্ঠে বললো, তুই বেঁচে আছিস কি করে?

– বেঁচে আছি তোদের শাস্তি দেয়ার জন্য।
– আমি কি করেছি?
– তুই তো জানিস তুই কি কি করেছিস। শাফিন রমিজর রাজের সামনে সব প্রমাণ বেড় করে বলে এবার বাঁচতে চাইলে বলে দে। এম, কে কোথায়?
– আমি জানিনা সত্যি বলছি।

– ওকে তাহলে তোকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ বল? গুড বায়। বলেই শাফিন পি*স্ত*ল বের করে রমিজ রাজের মাথা বরাবর তাক করলো। ঠিক সে সময় কারো পায়ের আওয়াজ শুনে শাফিন দ্রুত শুট করে চলে যায়। নুহাসের কানে পি*স্ত*ল চালানোর শব্দ আসতেই দ্রুত রুমে আসলো। এসে দেখে রমিজ রাজ পি*স্ত*ল হাতে নিয়ে বসে আছে।নুহাস এসে বলে,আপনি শুট করেছিলেন স্যার?
– হুম আমি করেছি।

নুহাস বলল একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আপনার থেকে লুকিয়েছি। আসলে শাফিন এখন জীবিত আছে। রমিজ রাজের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম আর তার আশ্চর্য না হওয়াতে নুহাস বুঝে যায় এখানেই শাফিন আছে। সাথে সাথে কল করে ইমার্জেন্সি ফোর্স আসতে বলে। ফোর্স এসে পুরো বাড়ি ঘেরাও করে নেয়। ফোর্স আসার আগেই শফিন বের হয়ে গেছে।
নুহাস বলল,আমি বুঝতে পেরেছি শাফিন এসেছিল।ওর পরবর্তী টার্গেট আমরা। এখন কি করবো। কি ভাবে বাঁচবো,ওর হাত থেকে।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৭

আসসালামু আলাইকুম।গল্প কিন্তু শেষের দিকে। এ পর্যন্ত কেমন লাগলো জানাবেন।
আর হ্যাঁ যেখানে নিয়মিত এক পর্ব লিখার সময় বের করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেখানে বোনাস পর্ব লিখতে চাওয়া বিলাসিতা মাত্র।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৯