ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৭

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৭
নুসাইবা ইভানা

মিহি নাস্তা নিয়ে এসে ঈশানের টেবিলে রাখলো। ঈশানের কাছে যেয়ে দেখে ঈশান গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাবছে। মিহি বললো,এই যে, মিস্টার মুখার্জি আপনার নান্তা রেডি।
ঈশান বলে উঠলো,আপনার সেদিন কেনো মনে হয়ে ছিলো! ওই লোকটা শাফিন মাহমুদ ছিলো?

-ওর কন্ঠ। শাফিন কখনো কারো কাছে ক্ষমা চাইতো না।আমরা যেমন কথায় কথায় সস্তা সরি বলি, ও বলতো না। তবে ওর যদি মনে হতো ও সত্যি ভুল করছে তখন সরি বলতো তাও খুব চাপা স্বরে মনে হয় কেউ ওকে ফোর্স করে সরি বলাচ্ছে। ওর স্পর্শে আমার কেমন একটা অনূভুতি হচ্ছিলো। তাই ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। আর আপনি যখন আমার সাথে কথা বলছিলেন ও যাস্ট সরি বলে চলে গেলো।ওর কন্ঠ শুনে মূহুর্তেই আমি জ্ঞান শুন্য হয়ে পরি বারবার কানে ওই সরিটা বাজতে থাকে।বেখেয়ালী হয়ে পরি। খেয়াল আসতে আসতে ও হাওয়া।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আপনি শিউর ওই লোকটা মিস্টার মাহমুই ছিলো?
– হুম ওই আমার শাফিন ছিলো এতে কোন সন্দেহ নেই।
ঈশান টিভি অন করে বলে,তাহলে এই খু*ন টা মিস্টার মাহমুদ করেছেন।

একজন সংবাদ পাঠিকা সংবাদ পাঠ করছেন। আজকের শীর্ষ সংবাদ গুলোর মধ্যে আছে,নিজ বাসায় খু*ন হলেন সনামধন্য ডক্টর শফিক সারোয়ার। কে বা কারা এই হ*ত্যা কাণ্ডের সাথে জড়িত সে বিষয় স্পষ্ট কিছু জানা যাইনি। ধারণা করা হচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেড় ধরেই এই হ*ত্যা কান্ড। তবে তার মৃ*ত্যু*র পর তার বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। প্রথমিক ভাবে জানা যায়। ডক্টর শফিক স্মা*গ*লা*রদের সাথে জড়িত ছিলেন। তার হাত ছিলো মাফিয়া গ্রুপের সাথে। সে বিষয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তার সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার সাথে সাথে তার পরিবারের লোকদেরকে রাখা হয়েছে পুলিশি হেফাজতে।

মিহি মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো। ঈশান টিভি অফ করে দিয়ে বলে,মিসেস মাহমুদ আর ইউ ওকে?
মিহি বলে,একমাত্র ডক্টর শফিক জানতেন আমার শেহরোজের কথা। শেহরোজ আসার খবর আমি শাফিনের কাছ থেকে লুকিয়েছিলাম।
– এতো বড় একটা কথা কেন লুকিয়েছেন?

– তখন আমাদের সম্পর্ক ঠিকঠাক যাচ্ছিলো না। আর আমি চাইনি একটা অসুস্থ পরিবেশে আমার সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে। তাই ডিভোর্স দিয়ে অন্য কোন জেলায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম।
ঈশান বলে,আপনাদের মেয়েদের এই এক সমস্যা ওভারথিংকিং করা। মানলাম আপনাদের ঝগড়া হতো ঝামেলা হতো তাই বলে, তার সন্তান আসার খবর তাকে জানাবেন না!আর সে যতই এসব করুক তার আড়ালে আপনার প্রতি তার ভালোবাসা দেখতে পাননি?

– আপনি আমার জায়গায় থাকলে বুঝতেন। একজন মা*তা*ল নে*শা*খো*রে*র সাথে কি করে কথা বলতাম।
– হোয়াট?
– প্রতিদিন রাতে দশ-টায় বেড় হতো আর শেষ রাতের দিকে মাতালের মতো বাসায় ফিরতো। মাঝে মাঝে আমার গায়ে হাত তুলতো। তাহলে আমি কি করে ভাববো এতোকিছুে?

– ওয়েট দিছ পয়েন্ট। আপনার গায়ে হাত তুলতো মানে।
– হুম আমাকে মা*র*ধ*র করতো প্রায়ই। তাও আবার আমার বাসার কাছের লোকের সামনে।
-ওই কাজের মেয়ের ঠিকানা জানা আছে?
– তখনতো সালমা একটা কলোনিতে থাকতো।
– এবার প্রথম কাজ শাফিন মাহমুদকে খুঁজে বের করা। আসুন নাস্তা করেনেই।
– শেহরোজকে আমার কাছে দিয়ে, আপনি খেয়েনিন। শেহরোজ টুকটুক করে তাকিয়ে আছে ঈশানের দিকে।
ঈশান শেহরোজের কপালে চুমু খেয়ে বলে,আবার বাবাটাহ বড় হয়ে আমার চেয়ে বড় অফিসার হবে।তাইনা বাবা।

কে জানে ছোট্ট শেহরোজ কি বুঝলো কিন্তু সে হাসছে। কি নিষ্পাপ মন মুগ্ধকর সে হাসি।
মিহি ঈশানকে কোলে নিয়ে বলে,এই ভুল দ্বিতীয় বার হবেনা মিস্টার মুখার্জি। আমার ছেলেকে আমি এসব লাইনে কখনো যেতে দেবো না।
– বাপরেহহহ আপনার দ্বারাই সম্ভব ছোট ছোট কথাকে সিরিয়াসলি নেয়া।
– এবার বাজে কথা রাখনু আর খাবার খেয়েনিন

শাফিন নিজের বাসায় চলে এসেছে ছদ্ম বেশে। কেউ সন্দেহ করছে না কারণ প্রায় এখানে তদন্ত কমিটির মানুষজনের আসা যাওয়া হয়। শাফিন বাসায় প্রবেশ করে দরজা লক করে দিলো।বুকের ভেতর কেমন হাহাকার করছে। এই বাসায় কথ স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

নিজের বেড রুমে আসলো দেখে বোঝাই যাচ্ছে এখানে কেউ চিরুনি তল্লাশি দিয়েছে।চোখে পড়লো আয়রা আর শাফিনের কাপল পিকে। শাফিন রেগে সেটা ভেঙ্গে ফেললো। মিহির আর নিজের পিক খুঁজলো কিন্তু একটাও পেলো না। চলে আসলো স্টোর রুমে সেখান থেকে গোপন রুমে কিন্তু এখানেও কিছু পাওয়ার আশা নেই। চলে আসবে এমন সময় পায়ের কাছে মিহির লকেট দেখতে পেলো হাত বাড়িয়ে লকেটটা উঠিয়ে নিলো। মনে মনে বললো তারমানে আমার বোকা ফুল আমার কাছাকাছি কোথাও আছে! খুশিতে চোখ চিক চিক করে উঠলো। রুমে বসে আজকের প্লানিংয়ের ছক কষে নিলো। বাসা থেকে বেড় হলো না। একেবারে রাতে বের হবে। তাই সোফা পরিস্কার করে সেখানে শুয়ে পরলো।

আজ উদয়ের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। লিরা উদয়কে নিয়ে আসছে।উদয় বললো,আমি কি জানতে পারি আমার প্রতি এতোটা দয়াশীলা হওয়ার কারণ?
– প্রথম কারণ আপনি নিজের মানুষ। দ্বিতীয় কারণ আপনাকে প্রয়োজন।
উদয় হেসে বলে, শুনেছি ছেলেরা ফ্লাটিং করতে পারে তবে আজ দেখছি মেয়েরাও কম না। তিনবারের সাক্ষাতে নিজের মানুষ। বলেই হেসে দিলো।

– লিরা বললো, আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেননি।আমি লিপিকা সরদার।
– উদয় চোখ বড় করে বলে, লিপিকা!
– হুম লিপিকা।
– কিন্তু কি ভাবে হতে পারে? চোহারায় এতো অমিল!
– আপনার দেয়া আঘাত সহ্য করতে না পেরে ছাদ থেকে লা*ফ দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য বেঁচে গেছি। তারপর প্লাস্টিকে সার্জারী করিয়ে চেহারায় পরিবর্তন আনিয়েছি। দেশ ত্যাগ করেছি।
– আমি দুঃখিত তখন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতাম।
– এখন বাসেন না?

– ভালোবাসা হলো মরণ ব্যাধি রোগ। একবার এই রোগে আক্রান্ত হলে তা থেকে আর মুক্তি নেই। আমি যাকে ভালোবেসেছি সে অন্য কাউকে ভালোবেসে সুখে আছে। এতেই আমি আনন্দিত। ভালোবাসি মানেই শরীর ছোঁয়ার আকাঙ্খা না। আত্মার তৃপ্তি। আমি তাকে ভালোবেসে মানুষিক শান্তি পাই।

– ঠিক বলেছেন তবে কেউ ভালোবাসলে বিনিময়ে তাকে ভালোবাসা না দিতে পারলেও অবহেলা করা নিশ্চয়ই উচিৎ নয়। সেদিন যদি মা*রা যেতাম তবে আপনার দুঃখিত হওয়া আমার কোন কাজে আসতো না। ভালোবাসা কাটা যুক্ত এটা যেনেই আমরা তা বরণ করি। এর এক পিঠে যেমন শান্তি অন্য পিটে তেমন বিরহ। আপনার দোষ দেবো না। কারণ প্রকাশিত ভালোবাসা সব সময় অবহেলিত।

তবে এখন সেসব অতীত। আপনি হয়তো জানেন না। শাফিন মাহমুদ আর নেই। আর সেই কেসের ইনভেস্টিগেশনের জন্য আপনাকে রিহা করা হয়েছে।
উদয় বলে নেই মানে!
– বাসায় চলুন বাকি কথা স্যারের থেকে জেনে নেবেন।
পূর্বে দিকে উদিত হওয়া সূর্যটা ধীরে ধেীরে পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছে। সাথে সাথে আলোকিত শহরটা একটু একটু করে অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। রাত উপভোগ করে না।এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে রাত কারো জন্য উজ্জ্বল পূর্নিমার চাঁদ তো কারো জন্য বিষাদের কালো ছায়া।

রাতের ন’টা ছাড়িয়ে গেছে শাফিন নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে আজকের মিশনের জন্য।
নিজের রুম থেকে বের হবে ঠিক সে সময় কারো উপস্থিত টের পেলো ফ্লাটে। সব লাইট অফ করা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেউ ফ্লাশ লাইটের মৃদু আলোতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শাফিন নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো আক্রমণ করার জন্য। কেউ একজন আস্তে আস্তে এদিকেই অগ্রসর হচ্ছে।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৬

হঠাৎ ফ্লাশ বন্ধ হয়ে গেলো। শাফিন একটু সামনে এগিয়ে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগলো। শাফিন অন্ধকারে নিজের বাহুতে আগলে নিলো। ধরতেই বুঝে গেছে এটা একটা মেয়ে। শাফিনের এক হাত রমনীর কোমড়ে। অপর হাত পিঠে। অন্ধকার আর নিরবতা ভেদ করে একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে লাগলো। শাফিন রমনীকে কোন কথা বলতে না দিয়েই অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৮