ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৬

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৬
নুসাইবা ইভানা

মিহি বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শেহরোজকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
ঈশান বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে। কিছুতেই ঘুম আসছে না। বারবার মিহির জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ঈশান শোয়া থেকে উঠে পরলো। সোজা কিচেনে এসে একটা স্ট্রং কফি বানিয়ে নিয়ে হল রুমে বসলো। কফির মগটা পাশের টেবিলে রাখলো।

ধোঁয়া উঠা কফির দিকে তাকাতেই চোখ পরলো দেয়ালে টাঙানো ঈশান আর মিহির কাপল পিকের দিকে। সেদিন এই পিকটা তুলেছিলো। ছবিটির দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে বলে, বাস্তব আর কল্পনার মাঝে এক বিশাল ফারাক। সাথে সাথে নিজের মাথায় গাট্টা মেরে বলে, এসব উল্টো পাল্টা চিন্তা বাদদে। সে তোর কলিগের ওয়াইফ। কফিটা শেষ করে সোজা চলে গেলো। মিহিদের বাসায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

স্টোর রুমের দরজা খুলে ভেতর প্রবেশ করলো। বেশ দক্ষতার সাথে খুঁজে বের করলো গোপন দরজা কিন্তু দরজা খুলবে কি করে? এসব ভাবছে।আশ্চর্যের বিষয় হলো দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। ঈশান কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে অগ্রসর হলো নিজের ফোনের ফ্লাসে দু’জন মানুষকে চেয়ারে হাত পা বাধা অবস্থায় দেখতে পেলো। ঈশান দ্রুত তাদের সামনে এসে ডাকতে লাগলো।মেয়েটা পিটপিট করে চোখ খুললো,ঈশান স্পষ্ট স্বরে বললো আর ইউ ওকে?

সুমু অস্পষ্ট স্বরে বললো পানি।ঈশান আশেপাশে কোথাও পানি দেখতে পেলো না।ঈশান সুমুর বাঁধন খুলে দিয়ে বলে, একটু অপেক্ষা করুণ আমাদের আগে এখান থেকে বেড় হতে হবে।
ঈশান ফাহিনকে ডাকতে লাগলো। বেশ কিছু সময় পর ফাহিন চোখ মেলে তাকালো। ঈশান সুমু,আর ফাহিনকে নিয়ে বেড় হয়ে আসলো।তখন রাত শেষ হয়ে ভোর শুরু হয়েছে। ঈশান নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে গেলো। ফাহিন আর সুমুকে। দু’জনকে রেস্ট নিতে বলে। খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়ে। বাহির থেকে তালা দিয়ে চলে গেলো।

মিহি তখনো গভীর ঘুমে।
ঈশান বাসায় ফিরে নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পরলো।
মিহি ঘুম থেকে উঠে নিজে ফ্রেশ হয়ে শেহরোজকে ফ্রেশ করালো। শেহরোজকে কোলে নিয়ে কিচেনে আসলো। কিন্তু এক হাতে কি করে নাস্তা বানাবে। কিচেনে দাঁড়িয়ে সেই চিন্তা করছিলো। পেছন থেকে ঈশানের কন্ঠ শুনে সেদিকে তাকালো।
ঈশান মিষ্টি হেসে বলে,গুড মর্নিং মিসেস মাহমুদ।
মিহি অবাক হয়ে বলে, বপারেহহহ ভূতের মুখে রাম নাম!

ঈশান শেহরোজকে কোলে নিয়ে বলে,আপনি আমাকে কপি করছেন কেনো?
-একটু ট্রাই করলাম।
ঈশান শেজরোজকে নিয়ে বসার ঘরে চলে যাওয়ার আগে বলে গেলো,এই যে, মিসেস মাহমুদ আমার জন্য আজকে লুচি আর আলু পোস্ত করবেন। পারেন তো নাকি?
– মিহি বলে,আপনি অপেক্ষা করুন জাঁহাপনা এই অধম আপনার খেদমতে হাজির।
দু’জনেই হেসে দিলো।

মোর্শেদ চৌধুরী পায়ের উপর পা তুলে সোফায় আয়েশ করে বসে টেবিলের উপর থেকে পত্রিকা তুলে ধরতেই প্রথম পৃষ্টায়। ব্রেকিং নিউজ দেখে হাত থেকে পত্রিকা পরে যায়। পত্রিকার পাতায় বড় বড় করে লেখা। কতকাল রাতেই সনামধন্য ডক্টর শফিকে কেউ হ*ত্যা করেছে।বিস্তারিত জানতে তিন নাম্বার পৃষ্ঠায় চোখ রাখুন।
মোর্শেদ চৌধুরী একজনকে ডাকলেন।কর্কশ কন্ঠে বললেন, আমি ডিটেইলস জানতে চাই।
– জ্বি স্যার আমি সব খবর জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।

নুহাস একটা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে আছে।বারবার চোখের সামনে ডক্টর শফিকের মৃ*ত দেহ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সমস্ত প্রমান সামনে রেখে কেউ কি ভাবে এটা করতে পারে?
নুহাস উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে চোখে মুখে পানি দিলো। ড্রয়ার থেকে ইনজেকশন পকেটে নিয়ে বের হয়ে গেলো আয়রার কাছে।

এই কয়দিনেই আয়রার চেহারা কেমন ফিকে পরে গেছে। চোখের নিচে মনে হচ্ছে কেউ কালী লেপ্টে দিয়েছে। দু’দিনের রিমান্ড শেষে আয়রাকে সেলে রাখা হয়েছে। নুহাস আয়রার জন্য সাক্ষাৎ রুমে অপেক্ষা করছে।
আয়রার নুহাসকে দেখেই নুহাসকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। মানুষ যতই খারাপ হোক প্রতিটি মানুষের হৃদয় কোমল। কেউ তা প্রকাশ করে আর কেউ তা আড়াল করে। আয়রার এই অবস্থা দেখে নুহাসও আয়রাকে জড়িয়ে নিলো। আয়রা কান্না থামিয়ে ভারাক্রান্ত স্বরে বলে,আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।

নুহাস ইমোশনাল হয়ে পরে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরে আয়রাকে বাঁচিয়ে রাখলে তার বিপদ বাড়বে।তাই পকেট থেকে ইনজেকশন বেড় করে কাঁপা কাঁপা হাতে আয়রার ঘাড়ের দিকে নিয়ে যায়। যেই পুশ করবে ঠিক সেসময় আয়রা নুহাসের হাত ধরে নেয়।
আয়রা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,সহকারী হিসেবে না হোক নিজের ওয়াইফ হিসেবে তো আমার প্রতি দয়া দেখাতে পারতে?
নুহাস আয়রার মুখ চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,একদম বাজে কথা বলবে না। এই কথা কাউকে বলা নিষেধ সেই শর্তে তোমাকে বিয়ে করেছিলাম। যাও তোমার কোন ক্ষতি আমি করবো না। আবার সাহায্যও করবো না।যেই ফাইল গুলো আমার থেকে লুকিয়ে রেখেছো সেগুলো কোথায়?

নুহাস আয়রার মুখ ছেড়ে দিতেই আয়রা জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে বলে,সেগুলো ঈশান মুখার্জির কাছে।
নুহাস অবাক হয়ে বলে,ঈশান মুখার্জি মানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি! সে বাংলাদেশে আসলো,কি করে? আর কবেই বা আসলো?

– আয়রা নুহাসকে উদ্দেশ্য করে বলে,তুমি চলে যাও তোমাদের বিষয়ে আমি মুখ খুলবো না।তবে মনে রেখো পাপ কাউকে ছাড়ে না। তোমাদেরকেও ছাড়বেনা।শাফিনের কাজ ঈশান মুখার্জি করবে।তোমাদের সবার খেল খতম।
নুহাস হন্তদন্ত হয়ে বেড় হয়ে সোজা চলে আসলো, রমিজ রাজের বাসায়। রমিজ রাজ নি*কো*টিন ধোঁয়া ছাড়তে ব্যস্ত।
নুহাস বলে,আপনার কাছে কি কোন খবর নেই? আপনি কি ডক্টর শফিকের মৃত্যুর খবর শুনেননি?
– আহা রিলাক্স। এতো টেনশন কেন নিচ্ছেন।আমরা কারা আইনের লোক। এখন আমরা খুব আনন্দিত এমন একজন মানুষ খু*ন হওয়ায়। তবে খু*ন*টা যেই করে থাকুক তাকে খুঁজে শাস্তি দিতে হবে।কারণ সে কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিলো।

– ঈশান মুখার্জি নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। সে বর্তমানে কোথায় আছে জানেন?
বাংলাদেশে আছে রাষ্ট্রীয় মেহমান হিসেবে আছে কোয়ার্টারে। সাথে তার সুন্দরী স্ত্রী ও এসেছে।
নুহাস হাত তালি দিয়ে বলে বাহহ বহহহহ এতো কিছু জানার পরেও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন?
– বিপদে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হয়। এখন মাথা গরম করা মানেই নিজের পায়ে নিজে কু*ড়ো*ল মা*রা।ঈশান মুখার্জি স্ত্রী ইরাবতী। তার ছেলে নীলাদ্রি। আমি তাদের উপর আগেই এটাক করিয়েছিলাম। কিন্তু শা*লা বেঁচে গেছে। ( রমিজ রাজ মিহির কথাটা চেপে গেলেন নুহাসের কাছ থেকে)

– কিন্তু ডক্টর শফিকের মৃত্যুতে পুরো সব হিলে পরেছে। মিডিয়া সাংবাদিক।আর এখন তো তদন্ত শুরু হবে। তার সব অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
– তার জন্য তুমি প্যারা নিচ্ছো কেন? খু*ন*টা কি তুমি করেছো? করোনি তাহলে ভয় শুধু ধরা পরার এতো সহজ না। যাও তুমি নিজে প্রেস কনফারেন্স করো। নিজে দ্বায়িত্ব নিয়ে নাও এই কেসের। তারপর রিলাক্স করো। বাকিটা আমি দেখছি।
নুহাস পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বলে,আপনি ঈশান মুখার্জিকে যতটা সহজ ভাবছেন ততটা সহজ কিন্তু নয়। সে কোন উদ্দেশ্য ছাড়া এখানে এসেছে সেটা আমি মানতে পারছিনা।
– তোমাকে সে সব নিয়ে ভাবতে হবে না। ঈশান মুখার্জির জন্য আমি যথেষ্ট। তোমাকে যেটা বলা হয়েছে সেটা করো।

শাফিন ছদ্ম বেশে খোঁজ করছে মিহির। অনেক চেষ্টা করেও কোন খোঁজ পেলো না। পার্কের একটা বেঞ্চে বসে ছক কষতে থাকলো আগামী প্লানের। হঠাৎ শাফিন পায়ের কাছে কিছু কৃষ্ণচুড়া ফুল পরলো উপর থেকে। চোখ তুলে উপরে তাকালো উপরের দিকে মাথার উপর ফুলে ফুলে লাল আভা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচুড়া।দৃষ্টি ফিরিয়ে হাত বাড়িয়ে ফুলগুলো হাতে নিলো।মনে পরে গেলো ক্যাম্পাসে মিহির সাথে কাটানো কিছু মধুর মূহুর্তের কথা।যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই দৃশ্য।
ওই এভাবে বোকার মতো তাকিয়ে কি দেখছো।

শাফিন হেসে বলে, আমার বোকা পাখিকে দেখছি। এই দুপুর বেলা রোদের মধ্যে তুমি এই ফুল কেন কুড়াচ্ছ?
মিহি হাত ভর্তি ফুল শাফিনের সামনে ধরে বলে,এক মিনিট অপেক্ষা করুন এক্ষুনি বলছি। মিহি ফুলগুলো শাফিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের মাথা থেকে হিজাব খুলে নিলো। এই যে এবার ফুলগুলো একটা, একটা করে আমার বেনির মাঝে গেঁথে দিন তো।

শাফিন যত্ন নিয়ে গেঁথে দিয়ে বলে,আমার ফুলের সৌন্দর্যের কাছে তোমার ফুলের সৌন্দর্য ফিকে পরে গেছে।
মিহি শাফিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, আপনার ফুল মানে?
আমার ফুল মানে এই যে আমার সামনে দাঁড়ানো আমার বোকা ফুল।
মিহি মৃদু হেসে বলে,এবার ঝটপট দুই ফুলের ছবি তুলে দেন দেখি।
শাফিন মিহির ছবি তুলে দিয়ে মিহিকে বলে এবার হিজাব পরে নাও জান।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৫

-ইশশ এতো সুন্দর করে চুল সাজিয়ে আবার হিজাব
শাফিন মিহির মাথায় ওড়না টেনে দিয়ে বলে এই সৌন্দর্য শুধু আমি উপভোগ করবো। আর কারো দৃষ্টি পড়তে দেবো না। হালকা বাতাসে আরো কিছু ফুল শাফিনের শরীরে পরতেই শাফিনের হুঁশ ফিরে। এতোক্ষণ যেনো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিল।কিছু ফুল পকেটে পুরে নিয়ে আন মনে বলে, তোমাকে কোথায় খুঁজবো বোকা ফুল।

ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৭