চেকমেট গল্পের লিংক || সারিকা হোসাইন

চেকমেট পর্ব ১
সারিকা হোসাইন

ঘড়ির কাঁটায় রাত দেড়টা ।ঘন কালো মেঘলা আকাশ।থেকে থেকেই বিকট শব্দে শুকনো বাজ পরছে।ওয়েদার ফোরকাস্ট অনুযায়ী ভারী তুফানের আগমন হতে চলেছে খুব শীঘ্রই।ইতোমধ্যে আকাশ জুড়ে যেনো যুদ্ধের দামামা বেজে গিয়েছে।ঝড়ের তীব্রতা আগে থেকেই অনুমান করে চট্রগ্রাম শহর জুড়ে কঠিন হুঁশিয়ারি জারি করা হয়েছে।টিভি ,রেডিও সমস্ত সংবাদ মাধ্যমে বার বার সতর্ক করা হয়েছে সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে না বের হতে।উপকূলীয় এলাকাতেও নয় নম্বর বিপদ সঙ্কেত ঘোষণা করা হয়েছে।শুধু তাই নয় নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে বার বার।

এহেন ভয়ানক বৈরী আবহাওয়া তে শুনশান নিস্তব্ধ পিচঢালা রাস্তার বুক চিড়ে সাই সাই গতিতে এগিয়ে চলছে সফেদ রঙা এক খানা গাড়ি।যিনি গাড়ি চালাচ্ছেন তার চোখে মুখে আতংকের ছাপ স্পষ্ট।জানা অজানা ভয়ে মাথা বেয়ে দরদর করে ঘাম এসে জমা হলো চিবুকে।সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে কিনা কে জানে?এদিকে পেছন থেকে ধেয়ে আসছে একটি মালবাহী ট্রাক।বারবার সাঈড দেবার পরেও তার পিছেই ছুটছে।ভদ্রলোক জানেন কেনো ওই ট্রাক তার পিছু নিয়েছে।পালানোর সকল পথ বুঝি আজ রুদ্ধ। গাড়ির ভেতরে ভদ্রলোকের সহধর্মিনী দুই হাতে পেট চেপে ধরে উচ্চ স্বরে আর্তনাদ করে চলেছে সমানে।ভদ্রলোক বার বার ব্যাক সিটে নজর দিয়ে নিজের স্ত্রী আর ছয় বছরের বাচ্চা মেয়েকে দেখে চলেছেন।ভাগ্য যেনো আজ বড়োই নির্মম তার।ছোট মেয়েটা ঘুমের ঘোরে বার বার ঢলে পরে যাচ্ছে তার মায়ের উপর।স্ত্রী আর কন্যার এহেন অবস্থায় সায়েম রিয়াজি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।এরপর সহসাই নিজেকে সামলে স্ত্রীকে ডেকে উঠলেন

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আরেকটু সহ্য করো রুনা।কাছেই হসপিটাল রয়েছে।আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবো।
রুনা জানে তার স্বামী তাকে মিথ্যে শান্তনা দিচ্ছে।কাছে কুলে কোথাও হসপিটাল নেই।আর তারা যেই রাস্তা ধরে ছুটে চলেছে এখানে হসপিটাল পাওয়া স্বপ্নের ব্যাপার।চোখের জল ছেড়ে দিয়ে পেট টা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে অনাগত সন্তানের উদ্দেশ্য রুনা গুঙিয়ে বলে উঠলো
“তোকে বোধ হয় পৃথিবীর আলো আর দেখাতে পারলাম না ।আমাকে তুই মাফ করে দিস।
এরপর ঘুমে ঢলে পড়া মেয়েকে বুকে জড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লেবার পেইন সহ্য করার বৃথা চেষ্টা করলো রুনা।গাড়ি ছুটতে ছুটতে কংক্রিটের রাস্তা ছেড়ে কাঁচা মাটির রাস্তায় চলে এলো।সামনে বিশাল পাহাড়।রিয়াজি সাহেব বুঝলেন আর যাবার পথ নেই।তবুও হাল ছাড়লেন না।খুবই দক্ষ হাতে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ছুটলেন অন্য রাস্তায়। ট্রাকের ড্রাইভার ক্রুর হেসে সেও ছুটলো গাড়ির পেছন পেছন।গাড়ির ঝাকুনি আর পেটের তীব্র ব্যাথায় এবার জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো রুনার।ছোট মেয়েটার তন্দ্রা বুঝি এবার ছুটে গেলো।হর্ণের বিকট শব্দ,গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, ভারী বাতাস আর বজ্রপাতের শব্দে ভয়ে কেঁদে উঠলো মেয়েটি।মেয়েকে সামলানোর কোন অবস্থাতেই রইলেন না রুনা।সায়েম রিয়াজি মেয়েকে ডেকে বলে উঠলো

“ভয় পেও না মা।আমরা এডভেঞ্চার এ এসেছি।
ছোট বাচ্চা মেয়ে সেটাই মেনে নিজের কান্না থামালো।কিন্তু পাশেই তার মাকে কোকাতে দেখে কপাল কুঁচকে আধো বুলিতে শুধালো
“ভাই কি তোমাকে আবার লাথি দিচ্ছে মাম্মা?
মেয়ের কথার প্রতিউত্তর করলেন না রুনা।
ছোট মেয়েটা এবার জানালা দিয়ে বাইরে নজর দিলো। চার পাশ নিকষ আধারে ছাওয়া।সব কিছু কেমন যেনো ভৌতিক।এডভেঞ্চার এ কোন উচ্ছাস কাজ করলো না তার।উল্টো ভয়ে সিটিয়ে বললো
“পাপা ভয় করছে।

সায়েম রিয়াজি ভয়ার্ত চোখে লুকিং গ্লাসে একবার পেছনের গাড়িকে দেখে মেয়ের উদ্দেশ্যে শান্তনার বাণী বলতে নিলেন।কিন্তু তা আর বলা হলো না।কেউ কিছু বুঝে উঠবার আগেই মালবাহী ট্রাক এসে পিষে দিলো গাড়িটিকে।অমন দৈত্যাকার ট্রাকের কাছে ছোট এই প্রাইভেট কার নিতান্তই পিঁপড়ের সমান।ট্রাকের ধাক্কায় উল্টে গেলো গাড়ি।কয়েক বার উল্টে পাল্টে একটা বৃহৎ কড়ই গাছের সাথে আটকে রইলো।রুনা আর কোনো আর্তনাদ করলো না।হয়তো অনেক আগেই সে বিদায় নিয়েছে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।ভাঙা কাঁচে সায়েম রিয়াজির চোখ মুখ কেটে বিভৎস রূপ ধারণ করলো।কোথা থেকে যেনো একটা ধারালো রড তার বুকের এফোড় উফোড় করে দিলো।কানে বিকট শব্দ হয়ে স্তব্ধ হলো সবকিছু।বহু কষ্টে একবার পিছনে তাকালো সায়েম রিয়াজি।রুনার এক হাত এখনো তার মেয়ের বুক জড়িয়ে আছে।ছোট মেয়েটা আর নড়ছে না।হয়তো সেও দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে।এতো আঘাত কি ওই ছোট বাচ্চা সইতে পারে?

স্ত্রী আর মেয়ের করুন হালে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো সায়েম রিয়াজির।হাত দিয়ে বুকে বিধে থাকা রড খুলে স্ত্রী আর সন্তান কে একবার শেষ স্পর্শ করে দেখতে চাইলেন।কিন্তু শরীর নিস্তেজ হয়ে এলো।শক্তিতে কুলালো না।
ট্রাকের ড্রাইভার হেলেদুলে হো হো শব্দে হাসতে হাসতে উল্টে থাকা গাড়ির কাছে এলো।এরপর হাটু ভাঁজ করে উকি দিলো গাড়ির ভেতর।সবাই কেল্লা ফতে।এবার হাত তালি দিয়ে হেসে উঠলো ড্রাইভার।তারপর রসিয়ে রসিয়ে বলে উঠলো
“কেমন অনুভব করছো ক্যাপ্টেন?বলেছিলাম বেশি বেড়ো না।শুনলে না।বেশি বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে স্ত্রী সন্তান সহ বেঘোরে প্রাণ হারালে।আফসোস।বড্ড আফসোস।
কথা গুলো বলে গগন কাঁপিয়ে হেসে উঠলো ড্রাইভার।আকাশের অবস্থা আরো খানিক বৈরী হলো।ড্রাইভার আর কাল বিলম্ব না করে ট্রাক হাঁকিয়ে ছুটে চললো কোথাও।এদিকে সায়েম রিয়াজি বহু কষ্টে ডাকলেন
“রূপ!
মেয়ের সাড়া পাওয়া গেলো না।এরপর স্ত্রীর নাম ধরে ডাকলেন
“রু রু রু না
সেখান থেকেও শব্দ এলো না।ধীরে ধীরে সব কিছু কেমন অন্ধকার হয়ে এলো।কানে শুধু ভারী বর্ষণ আর বাতাসের শো শো আওয়াজ এলো।কেমন কাল ঘুম এসে চেপে ধরলো সায়েম রিয়াজি কে।চোখের সামনে ফকফকে বিশাল আকাশ।মৃদু হাসলেন সায়েম রিয়াজি।এরপর সবকিছু থেমে গেলো।

প্রকৃতির নিষ্ঠুর রূপ দেখার জন্য ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে এক কিশোর ।দেখার জন্য বললে ভুল হবে।আসলে পরিমাপ করতে এসেছে কার নির্দয়তা বেশী।তার নাকি তুফানের?বয়স সতেরোর দোরগোড়ায়।শরীরে বয়ঃসন্ধির ছাপ স্পষ্ট।চেহারায় কোনো মাধুর্য নেই।কিন্তু বিশালাকার শরীরের গঠন জানান দিচ্ছে কোনো সুপুরুষ ই বটে।কিশোর বিশাল আকাশের পানে তাকিয়ে খালি পায়ে হেটে চলেছে পিচঢালা পথ ধরে।জীবন তাকে কোথা থেকে কোথায় এনেছে কিচ্ছুটির হিসেব মিলছে না।এমনটা হবার কথা ছিলো না।রাজ প্রাসাদ থেকে স্থান হয়েছে রাস্তায়।জীবন ছিলো রাজপুত্রের মতো।ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জীবন হয়েছে রাস্তার নেড়ি কুত্তার মতো।কিন্তু এসব নিয়ে কোনো আফসোস নেই তার।চোখ মুখের কাঠিন্যতা আর গম্ভীর ভাবমূর্তি জানান দেয় কিশোর তার লক্ষ্যে অটল।কিন্তু এই টুকুন বয়সে কিসের লক্ষ্য তার?

ঝড়ের মাত্রা আরো বাড়লো দুধাপ।ইতোমধ্যে গাছপালা ভেঙে রাস্তা অবরোধ হয়ে রয়েছে।নিকষ কালো আধার হৃদয় কাঁপিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।বাতাসের তোড়ে টেকা মুশকিল।এই বুঝি উড়িয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়।
বজ্রপাতের কঠিন ঝলকে অদূরে নজর স্থির হলো কিশোরের।একপা দু পা করে এগিয়ে এলো সেই স্থানে।এক্সিডেন্ট হয়েছে।এমন নির্মম ঘটনায় চেহারার ভাব ভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হলো না তার।পকেটে থাকা টর্চ জেলে ভেতর টা দেখে নিলো।ভেতরে একজন মহিলা একটা বাচ্চা আর একজন ড্রাইভার।পোশাকে ড্রাইভার মনে হচ্ছে না।জাহাজের নাবিকের পোশাক তার গায়ে জড়ানো।সাদা দামি পোশাক রক্তে লাল রঙ ধারণ করেছে।হয়তো তারা দম্পতি।নিজের মাধুর্য হীন কণ্ঠে ডাকলো কিশোর
“বেঁচে আছেন কেউ?
কোনো উত্তর এলো না।কিশোর তাচ্ছিল্য হাসলো।সব মানুষের কপালই তার মতো ফুটো।নইলে এমন বেঘোরে কেউ প্রাণ হারায়?

নিষ্ঠুরের মতো সেই স্থান ত্যাগ করতে নিলো কিশোর।এমন সময় ছোট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ এলো।পায়ের গতি শ্লথ হলো কিশোরের।পেছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে সামনে এগিয়ে গাড়ির ভেতর টর্চের আলো ফেললো পুনরায়।ছোট বাচ্চাটি তার মায়ের পিঠের নীচে চাপা পরে আছে।এক হাত বাড়িয়ে মেয়েটির বাহু চেপে ধরে জোরে টান দিলো।অসাবধানে কাঁচ ভাঙার ধারালো অংশে তার বাহু কেটে বলি হলো।কিন্তু কিশোর আউচ্ শব্দ পর্যন্ত করলো না।
সন্তর্পণে গাড়ির ভেতর থেকে বের করে আনলো মেয়েটিকে।
মেয়েটি চোখ মেলে তাকাতে পারছে না।পুরো শরীর কেটে ছিড়ে একাকার।গায়ের সুতি ফ্রক চুয়ে চুয়ে রক্তের ধারা ঝরছে।মেয়েটিকে কিছু জিজ্ঞেস করবার আগেই গাড়ির ইঞ্জিন বক্সে নজর গেলো তার।মুহূর্তেই শক্ত হাতে ছো মেরে মেয়েটিকে কোলে তুলে দৌড়ে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে এসে থামলো।এরপর পিছন ফিরে কিছু দেখার আগেই বিকট শব্দে চারপাশ আলোকিত হলো। ব্লাস্ট হলো গাড়ি খানা।মেয়েটি ভয়ে অল্প আর্তনাদ করে কিশোরের গলা খামচে ধরে বুকে মুখ লুকালো।

মেয়েটির এহেন কাণ্ডে বেশ মায়া হলো তার।এদিকে বৃষ্টিতে ভিজে হিম শীতল রূপ ধারণ করেছে মেয়েটি।কিশোর দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে দ্রুত পদে ফিরে এলো নিজের ঘরে।নিজের ঘর বললে ভুল হবে।অন্যের আস্তানা এটা।
সেখানে তার নিজের একটা ছোট কক্ষ রয়েছে।তাতেই এনে শুইয়ে দিলো বাচ্চা মেয়েটিকে।এরপর ভেজা পোশাক পাল্টে নিজের একটা টিশার্ট পরিয়ে দিলো।মেয়েটি অবচেতন।কিশোর তপ্ত শ্বাস ফেলে উঠে গেলো।ফিরে এলো মিনিট দশেক পর।হাতে এন্টিসেপ্টিক আর ধোয়া উঠা জল।ধীরে ধীরে সেই জলে সুতি নরম কাপড় ভিজিয়ে মেয়েটির হাত পা মুছে দিলো।শরীরে বেশি চোট লাগেনি তার।মমতাময়ী মা বোধ হয় নিজের সবটা নিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আগলে নিয়েছে তাকে।শুধু কপালের কাছে একটা কাটা দাগ পাওয়া গেলো।ভাগ্য ভালো কোনো কাঁচ বিধেনি তার শরীরে।কিশোর ভালো করে হাত মুখ মুছিয়ে তুলো তে মেডিসিন লাগিয়ে কপাল এর ক্ষত পরিস্কার করলো।এরপর একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিঃশব্দে উঠে গেলো।

ঘড়িতে সকাল নয় টা বেজে কুড়ি মিনিট।ঝড়ের পর সব কিছু নিস্তব্ধ নীরব।চারপাশের রয়ে রয়ে যাওয়া তান্ডব দেখে ঝড়ের হিংস্রতা অনুমান করা যাচ্ছে সহজেই।ধীরে ধীরে বাড়ছে মানুষের কর্মব্যাস্ততা সেই সাথে সাফ করা হচ্ছে রাস্তাঘাট।গত রাতের ভয়ানক দুর্ঘটনা নিয়ে কোথাও কোনো খবর পাওয়া গেলো না।হয়তো কেউ সেই খবর রাখেই নি।
আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে উঠে এলো কিশোর।
দূতলা বিশিষ্ট বিশাল বাড়িটির ড্রয়িং রুমে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন মাঝ বয়সী এক ব্যাক্তি।নাম তার সুবহান গং।চেহারায় কেমন যেনো হিংস্রতা বিরাজ করে সবসময়।বাম চোখের নিচে লম্বালম্বি কালো রঙের কাটা দাগ গায়ে কাঁটা দেওয়ার অনুভূতি দেয়।বাঁকা বাঁকা লম্বা লম্বা গোঁফ তার আভিজাত্য বহন করে।পড়নে সফেদ পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি।সব মিলিয়ে তার মধ্যে শাসনকর্তার ভাব পরিলক্ষিত।
দুই আঙুলে বাম পাশের গোঁফ মোচড়াতে মোচড়াতে গম্ভীর মোটা স্বরে ডাকলেন

“সারফরাজ!
ডাক শুনে এগিয়ে এলো কিশোর।মাথা নত করে উত্তর করলো
“বলুন দাদাজান
“শুনেছি মেয়ে নিয়ে এসেছিস এখানে?
“মেয়ে নয় দাদাজান ছোট বাচ্চা।
তাচ্ছিল্য হাসলেন সুবহান।নিজের রাজকীয় চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বললেন
“হায়েনার আঁতুরঘর এটা।এখানে রাস্তার একটা বিড়াল ও নিরাপদ নয়।সেখানে মেয়ে মানুষ দূর কি বাত।
মাথা উঁচু করলো সারফরাজ।গলায় তেজ এনে বললো
“এই বাচ্চা মেয়ে আমার আমানত দাদাজান।ওর দিকে চোখ তোলার আগে আমাকে অতিক্রম করতে হবে।
“কি করবি তুই?
“জ্যান্ত গেড়ে দেবো।
“বয়স কতো তোর?
“বয়সের চাইতে রক্তের তেজ বেশি দাদাজান।

সুবহান গং আর কথা বাড়ালেন না।চূড়ান্ত সাহসিকতা দেখে রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের কাছে আশ্রয় দিয়েছিলেন এই ছেলেকে তিনি।তখন বয়স ছিলো সবে দশ।বাচ্চা থেকে ধীরে ধীরে পুরুষে রূপান্তর হচ্ছে এই ছেলে।কিন্তু গায়ে যেনো রক্তের চাইতে কারেন্ট বেশি।ছুলেই চারশত চল্লিশ ভোল্টের ঝটকা লাগে।যেমন টা ভেবেছিলেন তার চাইতেও খতরনাক এই ছেলে।মনে মনে সুবহান নিজের বিশাল অধিপতি এই ছেলের হাতে তুলে দেবার স্বপ্ন দেখেন।কিন্তু কি আছে ভবিষ্যতে?
সুবহান শেখ আর সারফরাজ এর কথার মধ্যে গুটি গুটি পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো মেয়েটি।সারফরাজ একবার নজর দিলো তার পানে।মায়াবী এক বাচ্চা।যেকারোর মনে আদর স্নেহ জাগবে মেয়েটাকে দেখে।সারফরাজ এর বিশাল জামা মেয়েটার পায়ের পাতা ছাড়িয়ে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।ভীত চোখে দুই হাতে টিশার্ট উঁচু করে ধরে ইতি উতি তাকাতে তাকাতে সারফরাজ এর সামনে এগিয়ে এলো মেয়েটি।এরপর সারফরাজ এর কনিষ্ঠ আঙ্গুল টেনে ধরে বড় বড় চোখে সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে মিহি স্বরে বললো
“ক্ষুধা লেগেছে।খাবার দাও।

মেয়েটির আবদারে হৃদয় শীতল হলো সারফরাজ এর।হাটু গেঁড়ে মেয়েটির সামনে বসে দুই কাঁধে হাত রেখে সারফরাজ নরম কন্ঠে শুধালো
“নাম কি তোমার?
সারফরাজ এর অদ্ভুত সাদা আকাশি মিশেলের আইস ব্লু চোখের মনিতে তাকিয়ে ফাঁকা ঢোক গিললো মেয়েটি।এরপর অস্ফুট স্বরে বললো
“রূপকথা।

চেকমেট পর্ব ২