চৈত্রিকা পর্ব ২৩

চৈত্রিকা পর্ব ২৩
বোরহানা আক্তার রেশমী

সন্ধ্যার আগে আগেই প্রহর আসে চৈত্রিকাকে নিতে। সারাদিন চৈত্রিকাকে এ বাড়িতে রাখলেও রাতে সে এখানে থাাকার অনুমতি দেবে না। চৈত্রিকাও আর জিদ করেনি৷ যে উদ্দেশ্যে তার আসা সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। সারাদিনে আজম আলী দুপুরে একবার বাড়ি এসেছিলো তবে চৈত্রিকাকে দেখে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া না করে উল্টো নিজের মতো খাওয়া দাওয়া করেই বের হয়ে গেছে।

এতে তো চৈত্রিকা যারপরনাই অবাক। হঠাৎ করে আজম আলী একদম চেঞ্জ! মনে মনে সারাদিনের সকল বিষয় গুলো ঘাটছিলো আর নিজের শাড়ি ঠিক করছিলো। তখন বাহির থেকে হাঁক ভেসে আসে প্রহরের। চৈত্রিকা নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত নিজের চুল খোঁপা করে মাথায় আঁচল টেনে নেয়। বাহিরে এসে দেখে প্রহর উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। গরমে ঘেমে গেছে বেচারা। চৈত্রিকাকে দেখে মুখটা যেমন গম্ভীর ছিলো তেমন গম্ভীর রেখেই বলে,
‘সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। জলদি চলো!’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চৈত্রিকা মাথা নাড়িয়ে সনিয়া বেগম আর সাথীর থেকে বিদায় নেয়। তারপর দুজনে একসাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে শুরু করে। প্রহরের চোখ মুখ গম্ভীরতায় ছেয়ে আছে। তার ভেতরের খবর বোঝা কঠিন। চৈত্রিকা চুপচাপ নিজের মতো হাঁটছে। আশে পাশে মানুষ কাজ শেষ করে ঘরে ফিরছে। প্রহরকে দেখে সালাম দিচ্ছে তবে চৈত্রিকার দিকে কেউ ভুল করেও তাকাচ্ছে না৷ প্রথমদিকে চৈত্রিকা এটা খেয়াল না করলেও পরেরদিকে একটু অবাক হয়। যার সাথেই দেখা হচ্ছে সে প্রহরকে সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছে। চৈত্রিকা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

‘সাধারণত কোনো মেয়ে মানুষ দেখলে পুরুষ মানুষরা এক পলক হলেও তাকায় কিন্তু যারা সামনে দিয়ে যাচ্ছে এরা তো একপলকও তাকাচ্ছিলো না আমার দিকে। এটা কি অতি সাধারণ ব্যাপার নাকি জমিদার বাড়ির কোনো জটিল ব্যাপার জমিদার সাহেব?’

প্রহর জবাব দিলো না। সিনা টান টান করে শুধু নিজের মতো হেঁটে গেলো। চৈত্রিকা ঘাড় বাকিয়ে তাকায় প্রহরের দিকে। প্রহরের হঠাৎ এরুপ ব্যবহার ঠিক বোধগম্য হলো না তার। প্রহর তো তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এমন করে চলে যাওয়ার মানুষ না! তবে? কি হয়েছে জমিদার সাহেবের? চৈত্রিকা নিজ মনের চিন্তা ভাবনা ধরে রেখেই হাঁটতে থাকে। এর মাঝেই দুজনে চলে আসে জমিদার বাড়ির সামনে। পাশেই জমিদার বাড়ির বড় দিঘী। সেখানেই দাঁড়িয়ে পেছন থেকে প্রহর বলে,
‘চৈত্রিকা! বিশ্বাস’ঘা’তকতার শা’স্তি কি জানো?’

চৈত্রিকার পা দুটো থেমে যায়। গরমে ঘেমে যাওয়া মুখ নিয়েই ফিরে তাকায় প্রহরের দিকে। প্রহর তখনো এক দৃষ্টে তার দিকে আছে। চৈত্রিকা অবাক কন্ঠে বলে, ‘মানে?’
প্রহর পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকে। চৈত্রিকার চোখে মুখে অবাকতার রেশ ছাড়া চমকানো বা থমকানোর কোনো রেশ বিন্দুমাত্র নেই। চৈত্রিকার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে সরাসরি। চোখ না সরিয়েই বলে,
‘মানে বিশ্বাসঘা’ত’কতার শা’স্তি কি জানো?’

চৈত্রিকা অবাকতা দমিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। প্রহর অদ্ভুত ভাবে হেঁসে কোনো রকম বাক্য ছাড়াই তাকায় পাশে থাকা দীঘির দিকে। চৈত্রিকা প্রহরকে দেখে নিজেও তাকায় পাশে থাকা দীঘির দিকে। প্রথম দিকে বুঝতে অসুবিধা হলেও পরক্ষণেই প্রহরের ইঙ্গিত বুঝে যায়। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে প্রহরের দিকে। কিছু বলার আগেই প্রহর নিজ স্থান ত্যাগ করে।

চৈত্রিকা রাতের বেলায় বিছানার ওপর বসে বসে প্রহরের বিকেলের কথাগুলো ভাবছিলো। প্রহরের রহস্যে তার পুরো মাথাটাই খু’লে প’ড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। চৈত্রিকার মাথা ব্যাথা শুরু হয়। মাথা থেকে সব বের করে দিয়ে মাথা ঠান্ডা করে নেয়। এরপর ভাবতে শুরু করে জমিদার বাড়ির প্রতিটি সদস্য নিয়ে। এরমাঝেই দরজা খোলার শব্দ কানে আসে। চৈত্রিকা মাথা উঁচিয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখতে পায় প্রহরকে। চৈত্রিকা কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে থাকে। প্রহর নিঃশব্দে চৈত্রিকার কাছে আসে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে পেছনে থাকা হাত থেকে একটা ব্যাগ বের করে। চৈত্রিকা শুধু তাকিয়ে দেখে কোনোরুপ কথা বলে না। প্রহর ব্যাগ থেকে একটা আলতার বোতল বের করে চৈত্রিকার পায়ের কাছে বসে। চৈত্রিকার পায়ের দিকে হাত বাড়াতে নিলেই ফট করে পা সরিয়ে নেয় চৈত্রিকা। ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘কি হয়েছে? পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?’
প্রহরের সহজ জবাব, ‘বউয়ের পায়ে আলতা পড়াবো তাই।’
চৈত্রিকা মনে মনে বকা দেয় প্রহরকে। নিজ মনেই আওড়ায়, ‘ঢঙ দেখলে বাঁচি না ভাই। একবার নিজেই মা’রার হুমকি দেয় আবাার নিজেই আসছে আমার পায়ে আলতা লাগাতে! মানে এ যেনো গরু জ’বাইয়ের আগে তার সেবাযত্ন।’
প্রহর চৈত্রিকার চোখ মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে হুট করেই চৈত্রিকার পা টেনে ধরে। চৈত্রিকা চমকে উঠে পা সরাতে নিলে প্রহর কঠিন কন্ঠে বলে,

‘এতো পাকামো আমার পছন্দ নয়। মনে মনে যা ইচ্ছে ভাবো তাতে আমার কিছু বলার নাই কিন্তু আমি যখন বলেছি তোমার পায়ে আলতা রাঙাবো তখন আমি রাঙাবোই। চুপচাপ বসে থাকো।’
‘আপনার স্পর্শও আমার পছন্দ নয়। পা ছাড়ুন তো!’
প্রহর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়৷ সে দৃষ্টি চৈত্রিকার ওপর রেখেই বলে, ‘বার বার এক কথা বলে কি মজা পাও? আমি বলেছি না তোমাার পছন্দ হলেও এই স্পর্শ পাবে পছন্দ না হলেও পাবে!’

চৈত্রিকা কিছু বলতে নিলে প্রহর চোখ রাঙায়। চৈত্রিকার ভ্রু কুঁচকে যায়। লোকটার কি মাথার তা’র ছিড়ে গেলো? তাকে চোখ রাঙাচ্ছে! মানে চৈত্রিকা কি ভয় পায় নাকি! মুখ বাঁকিয়ে নিজের মতো বসে থাকে। প্রহর ঠোঁট চেপে হেঁসে নিজের মতো করে চৈত্রিকার পায়ে আলতা দিয়ে দেয়। ফর্সা পায়ে আলতা যেনো ফুটে উঠেছে। সেই আলতা রাঙা পায়েই প্রহর পড়িয়ে দেয় এক জোড়া নুপুর। চৈত্রিকা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। যে মানুষটা বিকেলে ওমন করলো সে হঠাৎ করে এতো ভালোবাসা কেনো দেখাচ্ছে! এ ভালোবাসা কি আদৌও সত্য নাকি শুধুমাত্র দেখানো!

এগুলোর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই তো? কোনো রহস্য নেই তো? চৈত্রিকার ভাবনার মাঝেই প্রহর তার পায়ের পাতায় ঠোঁট ছোঁয়ায়। চৈত্রিকা চমকে, কেঁপে ওঠে। দ্রুত পা সরিয়ে নেয়। প্রহর কপালে থাকা চুলগুলো সরিয়ে তাকায় চৈত্রিকার দিকে। চৈত্রিকা দৃষ্টি এদিক ওদিক করে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে যেতে নেয়। প্রহর হাত ধরে আটকে দিয়ে হুট করে টেনে শুইয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় চৈত্রিকা হতভম্ব। প্রহর নিজেও পাশে শুয়ে পড়ে। চৈত্রিকাকে টেনে নেয় নিজের প্রশস্ত বুকে। কি থেকে কি হচ্ছে তা
ভাবতে ভাবতেই চৈত্রিকাা যেনো ঘোরে চলে গেছে। পিটপিট করে তাকিয়ে আছে প্রহরের মুখপানে। প্রহর চোখ বন্ধ করে বলে,

‘আজ থেকে এ প্রশস্ত বক্ষপিঞ্জরই তোমার সঠিক, নিরাপদ স্থান।’
চৈত্রিকা কোনো কথা ছাড়াই তাকিয়ে থাকে প্রহরের দিকে। পলক না ফেলে তাকিয়ে প্রহরকে বোঝার চেষ্টা করে। যে পুরুষের চোখের গভীরতাই চৈত্রিকার মতো নারী বুঝতে পারে না সে নারী কি করে এই পুরুষটির মুখভাব দেখে ভেতরের খবর বোঝার চেষ্টা করে! চৈত্রিকা দীর্ঘশ্বাস নেয়। চোখ নামিয়ে নিয়ে নিজেকে শান্ত করে। তারপর ঠান্ডা মাথায় নিজেকে প্রহরের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। তাতে তো সে নিজেকে ছাড়াতে পারেই না উল্টো আরো ফেঁসে যায় প্রহরের শক্ত সামর্থ্য পেশিবহুল বাহুতে। ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। প্রহরের ঠোঁটের কোণে দেখা মিলে অদ্ভুত হাসি। সে হাসি মিলিয়ে নিয়ে ভীষন নিচু স্বরে বলে,

‘জমিদার সাহেবের থেকে নিজেকে ছাড়ানো এতো সহজ নয় চৈত্রিকা। আর না এই জমিদারকে বোঝা সহজ!’
অর্পিতা নিজের ঘরে বসে বসে চুল বেনুনী করছিলো। সেসময় আসে শায়লা। মেয়েকে এমন নিস্তেজ দেখে তার আর ভালো লাগে না৷ সে জানে নিজের বোনের কর্মকান্ড। পল্লবী তাকে বুঝিয়ে বলেছে সবটা। নিজের একটা ভুল সিদ্ধান্তে আজ তার মেয়েটা কেমন অনুভূতিশূণ্য। অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে। মলিন মুখে এসে বিছানার ওপর বসে। অর্পিতা এক পলক নিজের মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয়। শায়লা উসখুস করতে থাকে। অর্পিতা তা আড়চোখে খেয়াল করে বলে,

‘কিছু বলবেন আম্মাজান?’
শায়লা করুণ চোখে তাকিয়ে বলে, ‘এভাবে কতদিন কাটাবি মা? তোর এমন নিস্তেজ, নিস্তব্ধ রুপ যে আমাকে পু’ড়িয়ে মা’রে।’
‘আপনি বেশি বেশি ভাবছেন আম্মাজান। আমি আগের মতোই আছি।’
‘আমি তোর মা। তুই কেমন আছিস তা আমি নিজ চোখেই দেখতে পাচ্ছি।’

অর্পিতা কোনো কথা বলে না। চুপচাপ নিজের মতো বসে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বর দিকে তাকিয়ে থাকে। সে সত্যিই আর আগের মতো নেই। এতোকিছুর পর কি আগের মতো হওয়া যায়? তার ভাবনার মাঝেই বেশ ইতস্তত স্বরে শায়লা বলে,
‘তুই চাইলেই কিন্তু চিত্রর সাথে সবটা ঠিক করে নিতে পারিস। ছেলেটা তোকে পছন্দ করে তাছাড়া তুইও তো পছন্দ করিস।’
‘এসব ছাড়া অন্য কিছু কি আপনার বলার আছে আম্মাজান?’

শায়লা বোঝে তার মেয়ে তার সাথে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছে না৷ তাই হতাশার শ্বাস ফেলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু সময় দুজনের মাঝেই চলে পিনপতন নীরবতা। এরপর চুপচাপ শায়লা উঠে নিজের ঘরে চলে যায়। অর্পিতা ওভাবেই বসে থাকে। নিজের প্রতিবিম্বের থেকে চোখ সরায় না। ঘোর লেগে যায় তবুও দৃষ্টি সরায় না অন্যদিকে। মাথা ঘুরিয়ে উঠতেই চোখ বন্ধ করে নেয়। সাথে সাথেই চোখের কোণা বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়ায়। অর্পিতা উঠে এসে দাঁড়ায় জানালার কাছ ঘেঁষে।

বাহিরে গোল একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের চারপাশে তারার ঝলকও আছে৷ সব মিলিয়ে বাহিরের সবটা,পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। অর্পিতা অনেকটা সময় সেখানে দাঁড়িয়েই কাটিয়ে দেয়। যেনো কারো অপেক্ষায় আছে। অদ্ভুত ভাবেই গভীর রাতে সেই ঘরে পা রাখে চিত্র। পুরো বাড়ি যখন ঘুমন্ত পুরী তখন অর্পিতা আর চিত্র মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চিত্র অর্পিতাকে জেগে থাকতে দেখে প্রথমে চমকায়। কিন্তু অর্পিতা চমকায়নি। খানিকটা অবাকও হয়নি। যেনো সে আগে থেকেই জানতো আজ এই ঘরে চিত্রর পদচারণ ঘটবেই। চিত্রর চোখে মুখে দ্বিধাদন্দের আভাস থাকলেও অর্পিতা তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ। যেনো তার চোখ মুখে কোনো ধরনের দ্বিধার খানিকটাও ছাপ নেই। দুজনের মাঝেই রয়েছে পিনপতন নীরবতা। চিত্র যেভাবে, যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই থাকে। এগিয়ে আসে অর্পিতা। সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে শুধায়,

‘এতো রাতে আমার ঘরে কি করো চিত্র ভাই?’
চিত্র চোখ নামিয়ে নেয়। দৃষ্টি এদিক ওদিক করে উত্তর ভাবতে থাকে। সে কেনো এসেছে এখানে? নিজেও কি জানে এ প্রশ্নের উত্তর! অনেকটা সময় পরও যখন চিত্র কোনো প্রকার জবাব দেয় না তখন অর্পিতা ফের বলে,
‘গভীর রাতে কোনো যুবতী মেয়ের ঘরে কোনো পুরুষ আসলে কি সেই মেয়েকে ভালো বলা হয় চিত্র ভাই? বার বার কি আমার সম্মানে হাত না দিলেই নয়? তুমি কি ভাবো তুমি প্রতিদিন রাতের আঁধারে এ ঘরে আসো এটা কখনোই কারোর চোখে পড়বে না?’

চিত্র অবাক হয়ে তাকায়। অর্পিতার কঠিন চোখ মুখ দেখে তার ভেতরের অসহায়ত্ব টের পায়। অর্পিতা চোখ মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলে,
‘তুমি আর কখনো এ ঘরে আসবে না চিত্র ভাই৷ সে দিন হোক কিংবা রাত! কখনোই তুমি আসবে না।’
চিত্রর হঠাৎ করে কি হলো জানা নেই। ধপ করে বসে পড়ে অর্পিতার পায়ের কাছে। অর্পিতা চমকে তাকাতেই চিত্র ভীষণ অসহায়ত্ব নিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,

‘আমি জানি নাা তোকে কি বলা উচিত আমার! আমি আর এ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে পারছি না অর্পি। আমাকে এ যন্ত্রণা থেকে একটু মুক্তি দিবি? আমি কি ততোটাই খারাপ, ঘৃণ্য যতটা হলে ক্ষমা করা যায় না? আচ্ছা অর্পি পাপ করার পর মন থেকে ক্ষমা চাইলে তো সৃষ্টিকর্তাও ক্ষমা করে দেয় তবে তুই কি পারিস না আমাকে একটাবার ক্ষমা করতে! শুধুমাত্র একটাবার!’
অর্পিতা সরে যায়। কোনোরুপ প্রতিক্রিয়া না করে শুধু একটাই কথা বলে, ‘সব পাপের ক্ষমা হয় না চিত্র ভাই।’
চিত্রর কাছে বলার মতো অনেক কিছু থাকলেও গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না। বসা থেকে উঠে অর্পিতার মুখের দিকে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। দরজা পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিস্তেজ গলায় বলে,

‘শেষ পর্যন্ত তোর ক্ষমা না করার আক্ষেপ, আফসোস নিয়েই হয়তো আমি হারিয়ে যাবো। তুই বড্ড পা’ষাণ অর্পি। আমার এক আকাশ সমান ভালোবাসাও শুধুমাত্র একটা অন্যায়ের জন্য তোর চোখে পড়ে না। তুই ভালো থাক। কখনো যেনো আমার এ ভালোবাসা তোর প্রয়োজন না হয়! তোর যেনো কখনো আফসোস না হয়!’

চৈত্রিকা পর্ব ২১+২২

চিত্র চলে যায়। শেষের কথাটুকু বলতে গিয়ে তার কন্ঠ ভারী হয়ে আসে। অর্পিতা চিত্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মনটা কেমন চাপা কষ্টে ভার হয়ে আসে। হুট করেই চিত্রর কথাগুলো তীরের মতো হৃদয়ে লাগে। দুদিকে দুজনেরই হৃদয় পু’ড়ে অথচ একটা দ্বিধা, একটা ভুলে দুজনেই আটকে গেছে। এ দ্বিধা শেষ হতে গিয়ে না আবার দুজনের একজন শেষ হয়!

চৈত্রিকা পর্ব ২৪