ছায়াস্পর্শ পর্ব ২১
জান্নাত চৌধুরী
বেলা গড়িয়ে দুপুর বারোটা নদীর ঘাটে সূর্যের তীব্র ঝলকে বালু গরম হয়ে উঠছে, খা খা দুপুরে কয়েকটি পাখির দল উড়ে চলেছে।
নদীর চড়ে লাশে চারপাশে ইনভেস্টিগেশন টিমের সাদা ফিতার বেরিকেট বাধা। লাশের উপরে তখনো সাদা কাপাড়ে মুড়ানো। চারপাশে লোকজনের ভিড় জমেছে। আগন্তক লাশের এখনো কোন পরিচয় পায়নি কেউ। এলাকার নতুন অফিসার কাব্য খতিয়ে খুঁচিয়ে সব দেখছে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও এসেছে ক্যামেরায় ক্যাপচার করে নিচ্ছে লাশের ছবি।
চেয়ারম্যান দেখতে এসেছে, তার এলাকায় লাশের দেখা মিলেছে সে না এলেই যেন কোন কালেই চলে না। সামনে নির্বাচন জনগণের মুখ বন্ধ রাখতে হবে তাকে। সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরে এসে কিছু সময় ধরে দূর হতে দেখছিলেন সব।
কাব্য লাশের চারপাশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে নিজের টিমকে আদেশ দিয়ে বলে-
-লাশ দ্রুত গাড়িতে তুলে ফরেনসিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন!
আশেপাশে সকলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে, চেয়ারম্যান পাঞ্জাবির পকেট হতে হাত বের করে এগিয়ে এসে দাঁড়াতে কাব্যের নজরে আসে। কাব্য এগিয়ে গিয়ে হাত কপালে ঠেকিয়ে বলে-
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-সালাম চেয়ারম্যান সাহেব!
চেয়ারম্যান সৌজন্য এক হাসি দিয়ে ঘাড় নাড়িয়ে সালামের জবাব দিলেন। কাব্য পা হতে মাথা অব্দি তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করে আবার বলে –
“দিনকাল কেমন চলছে চেয়ারম্যান সাহেব?
চেয়ারম্যান কপাল কুঁচকে কাব্যে দিকে তাকাতে এক বেক্কল হাসি দেয় সে –
“না মানে বলছিলাম শরীর-স্বাস্থ্য ভালো তো নাকি”?
ছেলের বয়স কম চেয়ারম্যান খানিক চুপ থেকে বলে-
“জোয়ান পোলা বয়স্কম রক্ত গরম ব্যাপার না”
কাব্যের হাসি গায়েব হয়ে যায়। চেয়ারম্যানের পুরো কথা না বুঝলেও ইঙ্গিত যে ভালই বুঝেছে। হালকা কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে সে বলে –
“জোয়ানের দ্বারাই তো জাউরামি হয় চেয়ারম্যান সাহেব!”
চেয়ারম্যান কিছুটা হাসলো “ মাথার চুল বাতাসে না বয়সে পাকছে। আবহাওয়া পরিবর্তন না আজকাল ডাল- ভাত মনে হয় বুঝলে অফিসার!
-ধনবান এর ক্ষমতা থাকে চেয়ারম্যান সাহেব এ আর নতুন কি? পরপর তিনবারে বিজয়ী চেয়ারম্যান তো আর কাক চিলের ভোটে হন নি নিশ্চয়ই ?
লাশ গাড়িতে তোলা হচ্ছে লোকজনের ভিড় কমছে চেয়ারম্যান সেদিকে একবার তাকিয়ে বলে-
-কাক চিলে ভোট না দিলেও গ্রামের মানুষ যে ভোট দেয় তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
হঠাৎ কাব্যের ফোন বেজে ওঠে চেয়ারম্যান তার হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে-
-আজ তবে আসি অফিসার দরকার হলে জানাবেন, চাইলে বাসায় আসতে পারেন। দাওয়াত রইলো!
“-অবশ্যই কেন নয় আমি আবার একটু লেগে থাকা মানুষ। মানে আসামি আর দাওয়াত দুটোর দিক থেকে নিজেকে সরাতে পারি।
কাব্যের কথায় চেয়ারম্যান মাথা নাড়ল – “ বেশ ভালো কথা সাবধানে থাকবেন দেখবেন , এমন না হয় দাওয়াতে গিয়ে গোশত আর ভুল সন্দেহে আসামি দুটোই উধাও হয়ে যায়।
আবারো হেসে ফেলল কাব্য। ঘাড়টা ডানে বামে একবার ফুটিয়ে নিয়ে বলে-
“যদিও আপনার কথা মাথায় রাখবো ।তবুও ফুসকে গেলে তখন না হয় আপনাদের মত সমাজ সেবকের সাহায্য নেব। আপনাদেরও তো কিছু কর্তব্য রয়েছে কিনা ?”
চেয়ারম্যান পাঞ্জাবির কিছুটা টেনে নিয়ে বলে –
-এগিয়ে যাও পাশে আছি।
কাব্য এবার কিছুটা বাকা হেসে জিজ্ঞেস করে- “ শুনলাম আপনার তুলনায় আপনার ছেলের নাম ডাকে এলাকায় বেশি তো সে কি আপনার হাতা নাকি পায়জামা!
চেয়ারম্যান মাথা নাড়ালো – উঁহু! সে আমার হাতা পায়জামা কোনটাই নয়। আমার ছেলে সিংহ আর সিংহ মানে জানেন তো বনের রাজা আর রাজাকে প্রজারা সম্মান ঢুকবে এইতো নিয়ম।
কাব্য খানি সময় চুপ থেকে কিছু ভাবে। লাশের গাড়ি চলে গিয়েছে অনেক সময়। চেয়ারম্যান হাত ঘড়ির দিকে একবার নজর বুলিয়ে বলে-
“ আজ তাহলে আসি অফিসার!
কাব্য নিজের ডান হাত এগিয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে –
“অবশ্যই কেন না তবে একটা কথা সিংহের শত্রু বেশি রাজ্য দখলের কুচক্রে কিন্তু বাঘের ক্ষিপ্ততা বেশি। ছেলেকে একটু সাবধান করুন সাহেব।
চেয়ারম্যান কাব্যের কথায় বেশি একটা পাত্তা দিল বলে –
-মনে হয় না
আবারও বেজে ওঠে কাব্যের ফোন। সে ফোন রিসিভ করে দ্রত এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে।
গোসলখানায় বড় বালতিতে পানি ভরে রেখেছিলো ইফরাহ।
ব্যান্ডেজ বাধানো হাতে মুখে চন্দন মেখে সং হয়ে দাঁড়িয়ে ধ্যান মগ্ন রয়েছে আরাধ্য। লোকটা এমন আজব আজব কান্ড বরাবরই বেশ ভাবায় ইফরাহ কে।
প্রায় ১৫ মিনিট গাট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর সে বলে- -আপনার মুখ সাদা ভেড়ার মত হয়েছে এবার মুখ ধুয়ে গোসল সেরে উঠুন আমি আসছি।
আরাধ্য এক চোখ বন্ধ রেখে, আরেক চোখ খুলে বলে-
-আমি সুন্দর হবো বলে হিংসা করছো বউ। করো , করো হিংসে করলেই তো আমার উত্তেজনা ঝলক মারবে।
ইফরাহ চোখ বুঝে শ্বাস ছেড়ে বলে-
“-হাহ! গায়ের রং মিলিয়ে দেখুন আপনার তুলনায় এখনো অনেক সাদা আমি তাই হিংসে করার প্রয়োজন মনে করছি না।”
আরে দ্রুত দুটো চোখ খুলে ফেলে- “ওরে আজ একটুস খানি কালো বলে খোটা ছুড়লে মেয়ে ।
-মোটেও না।
কথা শেষ করে দরজার দিকে পা বাড়াতে যায় ইফরাহ! তবে তার আগেই হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে নেয় আরাধ্য। ব্যান্ডেজ হাতে ইফরাহ কে চেপে ধরে ওপর হাতের শাওয়ার ছেড়ে দিতেই পানি এসে ভিজাতে থাকে তাদের।
ইফরাহর কথা হারিয়ে যায়। তাকিয়ে থাকে আরাধ্যের কালো মনির চোখ জোড়ার। কপালের সাথে লেপ্টে থাকা চুল হতে একটু করে পানি ঝরছে-
-মা’লের নেশা থেকেও তোমার ছোঁয়া অভার ডোস হয়ে যায় আমার জন্য। মাতাল হয়ে যাচ্ছি!
ইফরাহ দৃষ্টি সরিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। ভেজা শাড়ির শরীরকে আটকে রেখেছে। ব্লাউজ এর মধ্যে বুকের এক অংশ নজরে আসে আরাধ্যের। আরো শক্ত করে ইফরাহকে চেপে ধরে সে। ক্রমশ আক্রোশ হতে থাকে , পুরুষ দেহটা পাগলামিতে মেতে উঠেছে তার। কিছু একটা চাইছে তার মন।
ইফরাহ শুষ্ক ঢোক গিলতেই বুকটা খানিকটা ওঠানামা করে মেয়েটার। হাহ! এতেই যেন ক্ষুধা জেগে ওঠে আরাধ্যের ২৫ বছরের একটা তাগড়া যুবকের চাহিদা যেন গিলে নিচ্ছে ১৬ ছুঁই ছুঁই কিশোরী দেহখান।
মনকে আরো খানে আশকারা দিয়ে আরাধ্য কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই দখলে নেয় ইফরাহর ঠোট জোড়া।
ইফরাহ খামচে ধরে আরাধ্যের পিঠের মাংস। চোখের কোনায় পানি এসেছে তার। আরাধ্য শক্ত এক চুমুতে ক্ষত করছে ইফরাহর ওষ্ঠ। কেটে যায় কয়েক মিনিট, ঠোঁটের কোণ হতে বেয়ে আসে তরলের নোনতা স্বাদ অনুভব হতেই ইফরাহ কে ছেড়ে সরে যায় আরাধ্য। বেশ জোরে জোরে বুক ভর শ্বাস টেনে বলে –
ছায়াস্পর্শ পর্ব ২০
“ তুমি আশে পাশে সামনে পিছনে থাকলেই শালা আমি লোভী হয়ে উঠি। এতে কিন্তু আমার কোনো ভুল নেই মেয়ে।
আরাধ্যের কথা শেষ হতেই এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না ইফরাহ। ভেজা শাড়িতেই ঘরে ঢুকে যায় সে। আরাধ্য তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভেজা চুলে পানি ঝাড়ে।
