জঠর পর্ব ২৪ || লেখনীতে তাজরিয়ান খান তানভি

জঠর পর্ব ২৪
লেখনীতে তাজরিয়ান খান তানভি

বসার ঘরে বসে আছেন কেউ। নওশাদ সাহেব উদ্বিগ্ন। তার পাশেই আছেন সায়েরা। দুজনের সংকুচিত দৃষ্টি তাদের একপাশের অন্য কাউচে বসা সুদীর্ঘ দেহের গম্ভীর পুরুষটির আননে। মৌনতায় আচ্ছন্ন বসার ঘর। নওশাদ সাহেবের হৃৎকম্পন বেড়ে চলছে বেগতিক হারে। জানালার গ্রিল গলিয়ে আসা শান্ত প্রভঞ্জনে তিনি শুনতে পাচ্ছেন প্রলয়ের মহড়া।
কথা বলতে বলতে বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো অর্হিতা আর পিউলী। বসার ঘরের আগন্তুককে দেখে সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে ভ্রূ কুঞ্চন করে অর্হিতা। বড়ো ঢোক গিললেন নওশাদ সাহেব। গম্ভীর মুখের লোকটি অর্হিতাকে দেখে তার মুখের পরিবর্তন করল। মৃদুহাস্য অধরে বলল—

“আসসালামু আলাইকুম।”
অর্হিতা অনেকটা দ্বিধা নিয়ে সালামের প্রত্যুত্তর করে।
“ওয়ালাকুমুস সালাম। আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না?”
পুরুষটি ওঠে দাঁড়াল। অর্হিতার কাছে আসতেই তার প্রশস্ত আঁখিজোড়া আবদ্ধ হলো পিউলীর দিকে। চট করেই মিষ্টি হাসল সে। দ্বিধান্বিত গলায় বলল—
“মিসেস নায়েল?”
“জি।”
“আপনার মেয়ে?”
“জি।”
“গুড।”
পুরুষটি নিচু হলো। পিউলীর গালে ছোট্ট চিমটি কেটে বলল—
“কী নাম তোমার?”
“পিউলী।”
“নাইস নেম।”
“তোমার নাম কী?”
পুরুষটি অধর চওড়া হলো। ভালো লাগল তার। সহাস্য অধরে বলল—
“মাহিম, মাহিম হাওলাদার।”

সোজা হলো মাহিম। আঁতকে ওঠে অর্হিতা। নিহিতার হাজবেন্ড! অধৈর্য হয়ে নিজের শশুরের দিকে তাকাল অর্হিতা। তাকে শান্ত থাকার ইঙ্গিত করল নওশাদ সাহেব। তড়িৎ বেগে ছুটে আসে নায়েল। নায়েলকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় অর্হিতা। কপাল কুঞ্চন করে মাহিম। গূঢ় হাসল সে। তাচ্ছিল্য ফুটে উঠল কিয়ৎপলে তার চোখে। নায়েল ভয়ার্ত। তার কপাল জুড়ে ঘামেরা টুকটুক করে খেলছে। কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনতা জলের নহর। কণ্ঠনালীতে উত্তালতা। মাহিম হাসল। বলল—
“তুমি কী জেল থেকে পালিয়ে আসলে না কি?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নায়েলের শুষ্ক গলায় কথা আটকে গিয়েছে। সে মিইয়ে গলায় বলল—
“আপনি! আপনি এখানে?”
“হুম। একটা কাজে এসেছি তোমার কাছে।”
নায়েল দৃঢ় হলো। কঠিন গলায় বলল—
“আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
মাহিম শান্ত সুরে বলল—
“উঁহু, সম্পর্ক নয়। অফিসিয়াল কাজে এসেছি। তোমার কোম্পানির জন্য একটা অর্ডার নিয়ে আসলাম।”
নায়েল ক্ষয়িষ্ণু চোখে চেয়ে হুকুম করল—
“অর্হিতা, পিউকে নিয়ে ঘরে যান।”
“জি, চলো পিউ।”

টুকটুক করে মায়ের সাথে হেঁটে যাচ্ছে পিউলী। তার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে মাহিম। নায়েলের ভয়কাতুরে মন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। মাহিম দৃষ্টি অশিথিল রেখেই বলল—
“বিয়ে করলে কবে?”
নায়েলের শ্বাস ভারী হতে লাগল। সে কোনো জবাব দিলো না। মাহিম নায়েলের দিকে তাকাল। তার মনে হলো কেউ যেন নায়েলের লেজে আগুন দিয়ে দিয়েছে। তার তপ্ততায় জ্বলছে সে। মাহিম কৌতূহলী গলায় বলল—
“তুমি ঠিক আছ নায়েল?”
নায়েল থতমত খেয়ে বলল—
“জিইইঈজি।”

“তোমার মেয়ে এত বড়ো হয়ে গেল…লাস্ট টাইম যখন তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে তখন তুমি অবিবাহিত ছিলে!”
নায়েল নিজেকে শান্ত করল। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল। চট করেই বলল—
” আমরা একে অপরকে ভালোবাসতাম। আমাদের সম্পর্ক থাকাকালীণ অর্হিতা কনসিভ করে। আমরা পরে বিয়ে করি।”
এক নাগারে সকল মিথ্যে উগড়ে দিয়ে দম ফেলল নায়েল। অবাক হলো মাহিম। উপহাসমিশ্রিত গলায় বলল—
“বোন আর ভাইয়ের একই হাল! ইন্টারেসটিং!”

নায়েলের মেজেজ চওড়া হলো। কিন্তু ঘটনা হাতের নাগালের বাইরে। তাদের এই ঘাত-প্রতিঘাত এনজয় করছে সুহাস। নিজের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে সে। তার ক্রুর দৃষ্টি নায়েলের দিকে। দিলে তার পৈচাশিক আনন্দ। দরজার সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত ভাঁজ করে রেখেছে সুহাস। তাকে পাশ কাটিয়ে বের হয় হৃতি। সুহাস গাঢ় গলায় বলল—
“কোথায় যাচ্ছ?”

“পিউলীর বাবাকে দেখতে। আমি তাকে আগে কখনো দেখিনি।”
সুহাস অক্ষিপল্লব প্রসারণ করে বলল—
“আমাকে দেখে মন ভরে না? ঘরে যাও।”
হৃতি অস্বস্তিদায়ক মুখ ভঙ্গি করে। সুডোল স্বরে বলল—
“একটুখানি দেখেই চলে আসব।”
“ঘরে যেতে বলেছি। যাও।”
“দুর!”
হৃতি যেতেই হাত সোজা করে সুহাস। পা চালায় ধীরে। গালভর্তি হাসি নিয়ে মাহিমের সামনে এসে দাঁড়ায়। মাহিম চমকিত হয়। খুশি খুশি মনোভাব নিয়ে মাহিমকে আলিঙ্গন করে সুহাস। অতর্কিত ঘটনায় অপ্রস্তুত হয় মাহিম। চোখ জোড়ায় বিস্ময় খেলিয়ে বলল—
“তুমি কে?”

সুহাস হৃদয় গলানো হাসল। অধর প্রসারিত করে বলল—
“আমি বড়ো ভাইয়ের কাজিনের হাজবেন্ড।”
“তো এখানে কেন?”
সুহাস মন্ত্রমুগ্ধের মতো হেসে বলল—

“ঘরজামাই থাকি। এধারে ওধারে কেউ নাই তো তাই। আমি কিন্তু আপনার বিশাল ফ্যান ভাই। কুসুমপুরে আমার এক বন্ধু থাকত।আপনার কথা অনেক শুনেছি ওর কাছে। ইয়াং জেনারেশন ইন্সপিরিশন আপনি। আই স্যালুট ইউ ভাই।”
গায়ে পড়া লোক একদম পছন্দ না মাহিমের। রাজনীতিতে অল্প সময়ে ভালো নাম কামিয়েছে সে। তার এলাকার মানুষ তাকে অনেক সমীহ করে, মান্য করে। নায়েলের বিস্ময়ও আকাশ ছুঁল। গরগর করে কথা বলছে সুহাস। কিন্তু সে বুঝতে পারল না মাহিমের সাথে সখ্যতার গোপন কারণ!

মাহিম নিজের প্রশংসায় খুশি হলো। অধর বিস্তৃত হলো তার। বলল—
“ধন্যবাদ। তবে অতি রঞ্জিত প্রশংসা আমার পছন্দ নয়।”
সুহাস কপট হাসল। কিন্তু তার হাসি চঞ্চলা। বলল—
“রঞ্জিত না। একদম সত্য। ভাই আরেকবার জড়িয়ে ধরি আপনাকে। ধন্য মনে হবে নিজেকে।”
সুহাসের এমন ব্যবহারে শঙ্কিত সবাই। কিছুই বুঝতে পারছে না কেউ। সকলে উৎসুক নজর নিয়ে সুহাসের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহিমও চকিত। দৈবাৎ সুহাস এক অবিশ্বাস্য কাজ করে। মাহিমের সামনের দিকের একটা চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলে হাস্যোজ্জ্বল গলায় বলল—

“ইশ,পাকা চুল! ভাই এত তাড়াতাড়ি চুলে পাক ধরলে হবে। চুলের প্রতি যত্ন নেওয়া উচিত ভাই।”
নিজেই দাঁত কেলিয়ে হাসতে থাকে সুহাস। যেন খুবই মজার কিছু ঘটেছে। বিব্রত হয় মাহিম। কণ্ঠে ঠাট বজায় রেখে নায়েলকে বলল—
“আসছি আমি আজ। কাল দেখা হচ্ছে।”
নায়েল নরম গলায় বলল—
“জি, কাল অফিসে আসবেন। সেখানে কথা হবে।”
“ওকে।”
বাড়ি থেকে বের হয় মাহিম। একটা সাদা পাজেরোর পাশে দুজন তাজা, মোটাসোটা লোক দাঁড়ানো। পরনে তাদের কালো রঙের পোশাক। দেখেই যেকেউ বুঝতে পারবে তাদেরকে উক্ত ব্যক্তির দেহরক্ষী রাখা হয়েছে।

নায়েলের মুখে অনুতপ্ততা। নিজের কারণে আজ একটা জঘন্য কথা বলে ফেলেছে। নায়েল চায় না মাহিম কোনোভাবে জানতে পারুক পিউলী তার মেয়ে। অর্হিতা স্বামীর দিকে সরল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
“ব্যাপারটা কী দাঁড়াল বলুন তো?”
নায়েল প্রত্যুত্তর করল না। ভয়ে তার মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো এতটা দুর্বল হলো যে সে এর চেয়ে ভালো উত্তর আর খুঁজে পায়নি। নায়েল মাথা তুলে চাইল না। অর্হিতা চোরা হাসল। নায়েলের হাত দুটো সরিয়ে তার বুকের কাছে বসল। মিষ্টি গলায় বলল—
“মি. গিরগিটি কথা বলছেন না কেন?”

“সরি মিসেস অর্হিতা!”
টুপ করে নায়েলের গালে চুমু খেলো অর্হিতা। ফিচেল হেসে বলল—
“বলার সময় মনে ছিল না? এখন কেন মন খারাপ করছেন?”
নায়েল বিষণ্ণ চোখে তাকায়। তার কোল জুড়ে অর্হিতার অস্তিত্ব। নায়েল সরব গলায় বলল—
“মাহিম যদি জানতে পারে পিউলী তার মেয়ে ঝামেলা করতে পারে।”
“আচ্ছা..তাই বুঝি আমাকে কুমারী মায়ের খেতাব দিয়ে দিলেন।”
“সেজন্য আমি দুঃখিত, প্লিজ।”

নায়েলের দিকে তাকায় অর্হিতা। নায়েলের চোখ, মুখ ফ্যাকাশে, রক্তহীন মনে হচ্ছে। নায়েল বসে আছে বিছানায়। তার বুকের সাথে নিজেকে সিটিয়ে রেখেছে অর্হিতা। পেছন ফিরতেই নায়েলের শ্বাসের সাথে আলাপন সারে অর্হিতার উষ্ণ শ্বাস। সমাহিত নায়েল। তার স্থবির দৃষ্টি। অর্হিতা মাথাটা একটু বাঁকিয়ে নায়েলের কণ্ঠমনিতে অধর ছোঁয়ায়। নায়েল অনঢ়। তার মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মাহিমের ভুতের মতো উপস্থিতি তাকে দোটানায় ফেলেছে। অর্হিতা ক্ষুণ্ণ দৃষ্টি ফেলে। তার অতর্কিত ছোঁয়াতেও নায়েলের হেলদোল নেই। স্থম্ভিত সে। নায়েলের পুরু ঠোঁটের কোণে গাঢ় স্পর্শ করে অর্হিতা। টনক নড়ে নায়েলের। চোখের তারায় চঞ্চলতা আনে। পল্লব নাচিয়ে বলল—

“কী?”
“শাস্তি।”
“কীসের?”
“অবৈধভাবে আমার নাম খারাপ করার জন্য।”
“আপনি আমার বৈধ স্ত্রী।”
হুট করেই নায়েলের কলার চেপে ধরে অর্হিতা। কপট রাগ দেখিয়ে বলল—
“তাহলে এমন করে রেখেছেন কেন মুখ? আমি কী আপনাকে কিছু বলেছি!”
“তবুও কাজটা ঠিক হয়নি।”
“তাহলে সাজা পেতে হবে।”
“আপনার দেওয়া যেকোনো সাজা আমি মাথা পেতে নেবো।”

অগণিত চুমুর টানা বর্ষণ শুরু করে অর্হিতা। নায়েল অপ্রস্তুত। ঠোঁটভর্তি হাসি নিয়ে অর্হিতাকে বক্ষ পাটাতনে পিষে ধরে। অর্হিতা ঢেকে যায় ভালোবাসার চাদরে। দীর্ঘ সময়ের ভালোবাসার এক পর্যায়ে প্রশ্ন করে নায়েল—
“শাস্তিটা কী বললেন না মিসেস অর্হিতা।”
নায়েলের উপর নিজের পুরো ভর ছেড়ে দিয়ে আড় হাসে অর্হিতা। ফিসফিসিয়ে বলল—
“যা মিথ্যে বলেছেন তা সত্য করে দিন। পিউর জন্য তার ছোট ভাই বা বোনের ব্যবস্থা করুন। এটাই আপনার শাস্তি।”
নায়েল প্রশ্রয়ের হাসি হাসে। অর্হিতার নিরাবরণ কায়ায় নায়েলের একচ্ছত্র বিচরণ।

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুহাস। এক সাগর শুভ্রতায় আচ্ছন্ন নভোলোক। নীলাভ মেঘের হাতছানি! সাদা,নীলের মিশেলে রঞ্জিত নভোলোকে উড়ে যাচ্ছে কালো দুটি পাখি। সুহাস দাঁড়িয়েই রইল। মনে তার বসন্ত লেগেছে। হোক না শরতের শুরু!
সময় ঢলতে শুরু করেছে। নীলাভ আকাশ ধূসরের মায়ায় জড়াচ্ছে। হলুদাম ম্রিয়মান সূর্য ক্রমশ তার কমলা আভায় মাতিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমাদেশ। তা অতি দ্রুত পরিবর্তন হয়ে জায়গা করে নিলো রক্তিম লাল। যেন রক্তক্ষরণ হচ্ছে আকাশের বুক ফেঁড়ে। যেমনটা হয়েছিল সেদিন সুহাসের বুকে।

কাউকে নিবিড়ভাবে ভালোবেসেছিল সুহাস। এতিমখানায় বড়ো হলেও শিষ্টাচার, ভদ্রতায় আর ব্যবহারে সে ছিল অমায়িক। পড়াশোনাতেও ছিল চৌকস। তার দীর্ঘকায় দেহ, দৃঢ় ব্যক্তিত্ব, অধরের চিলতে হাসিতে যেকোন যুবতীর মনে কাঁপন ধরাতে যথেষ্ট ছিল। হয়েছিলও তাই। গভীর প্রণয়ে আবদ্ধ হয়েছিল কারো সাথে সুহাস। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করত তখন। কিন্তু দিনশেষে দেখতে পেল এক বিশ্বাসঘাতক প্রণয়িনীকে। প্রণয়িনী নয়, সর্বগ্রাসী !

জীবনের প্রথম ধোঁকা পেয়েছিল মা- বাবার কাছ থেকে। বড়ো হতে হতে সেসব পেছনে ফেলে সামনে আগায় সুহাস। কিন্তু আবার ধরা খায় সে। নারী! যা মর্তলোককে স্বর্গ বানাতে পারে, আবার নরক! সুহাসের জীবনটাও নরক বানিয়ে দিয়েছে। ভালোবাসার কাছ থেকে ধোঁকা সে নিতে পারেনি। নিজের ভেঙে -চুরে একাকার করে ফেলেছে। সিগারেট, ড্রাগস হলো তার নিত্য সঙ্গী। যা ছাড়া একমুহূর্ত তার চলা দায়!

নিজের বীভৎস স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত সুহাসের ভাবনার ব্যবচ্ছেদ হয় তার পায়ে কারো স্পর্শে। তাকাতেই দেখে সমান্তরাল দাঁতের এক টুকরো রোদেলা হাসি।
“আঙ্কল বল খেলবে?”
সুহাস শ্রান্ত হাসে। তার দু’চোখ প্রসন্ন। হাঁটু ভেঙে বসে বলল—
“না।”
“কেন?”

জঠর পর্ব ২৩

সুহাস দুই আঙুল দিয়ে চেপে ধরে পিউলীর গাল। তাতে করে পিউলীর ছোট্ট দুই ঠোঁট টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো হয়। সুহাসের অন্তরিন্দ্রিয়তে চিনচিনে ব্যাথা হয়। আজ হয়তো তার সন্তানও তার কোলে থাকত!
সুহাস নিজেকে ধাতস্থ করে বলল—
“তুমি কাকে বেশি ভালোবাস পিউ? মামুনিকে না কি পাপাকে?”
পিউলীর ছোট্ট দুই গাঢ় লাল ঠোঁটে প্রাণোচ্ছল হাসি। অধর ছড়িয়ে চোখের কোণে তারা অঙ্কিত করে বলল—
“মামুনিকে-পাপাকে। তোমাকে-হৃতি আনটিকে। দাদুকে-দিদানকে। সবাইকে ভালোবাসে পিউ। মামুনি বলেছে সবাইকে ভালোবাসতে হয়।”

“আমার সাথে যাবে পিউ? তোমাকে অনেক চকলেট কিনে দেবো, আইসক্রীম দেবো, বারবি ডলও কিনে দেবো?”
“না। আমি পাপার কাছেই থাকব।”
“আঙ্কল তোমাকে আদর করব তো। তুমি চলো আমার সাথে?”
পিউলী ঠোঁট ভেঙে কান্না শুরু করে। টিয়াপাখির মতো ঠোঁট বানিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে কাঁদছে। চোখ দিয়ে নামছে স্রোতোস্বিনী।
“আমি যাব না, আমি যাব না। আমি পাপার কাছে থাকব।”

ব্যস্তসমস্ত হয়ে পিউলীর চোখ, মুখ মুছে দেয় সুহাস। বুকের সাথে পিউলীর মাথাটা চেপে ধরে বলল—
“কোথাও যেতে হবে না তোমায়, কোথাও না। পাপার কাছেই থেকো তুমি।”
কান্না রোধ করে নেয় পিউলী। তার নাক, মুখ, চোখ লালিমায় ছেয়ে যায়। হেঁচকি তুলতে থাকে।

জঠর পর্ব ২৫