তাসের ঘরে তুমি আমি পর্ব ১৬

তাসের ঘরে তুমি আমি পর্ব ১৬
আয়াশ রহমান

হাসপাতালে পৌছে দেখলো বাবার রুমের বাইরে এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে তার মা।
শানের বাবাকে এখন নরমাল বেডে শিফট করা হয়েছে, তার রক্ত দেয়া কমপ্লিট কিন্তু এখনো জ্ঞান ফেরেনি।

হস্পিটালে আসার সময় রিয়াদ শানের কাছে ফোন করে এসব বলেছে।
মায়ের কাছে যাওয়ার সময় হাতের লাঠির আওয়াজেই হয়ত শানের মা টের পেল তার ছেলে এসেছে।
ছেলেকে দেখতেই তার কাছে ছুটে গেল সে।
‘বাবা, ডাক্তাররা তো এখনো কেউ কিছু বলছে না। তোর বাবার কি অবস্থা কেউ বলছে না বাবা, আর মিথিলা,,,’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘কি হয়েছে মা মিথিলার?ওকে দেখছি না কেনো?’
‘তোর বাবার রক্ত দিতে গিয়ে মেয়েটা আমার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এমনিতেই জ্বর ছিল গায়ে, রক্ত দিয়ে বারবার মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল বাবা। পাশের রুমে ওকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে।’
শানের কথাটা শুনে যেখানে মিথিলার জন্য টেনশন হওয়ার কথা ছিল সেখানে বোধহয় আশাহত বেশি হল।

মায়ের সাথে পাশের রুমে গিয়ে দেখলো মিথিলা শুয়ে আছে, হাতে স্যালাইন লাগানো। হয়ত ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু মিথিলার থেকে তো অনেক কিছু জানার ছিল শানের। এ অবস্থায় শান কিছু বলতেও পারছে না।
নিরাশ হল শান। মা পাশে থেকে বলল, ‘বাবা সামনের বেডে মিথিলা শুয়ে আছে। তুই আয় বস এখানে।’
‘না মা চলো বাইরে যাই, দেখি ডাক্তাররা কি বলে, বাবার জ্ঞান কখন ফিরবে।’
‘আচ্ছা চল।’

রুম থেকে বেড়োতে যাবে তখনই ডাক্তার সাহেব তাদের সামনে আসলো।
‘আপনাদের পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। আপনারা দেখা করতে পারেন। তবে খুব সতর্ক, একদম প্রেশারাইজ করবেন না।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

শানের বাবাকে বেডে শুইয়ে রাখা হয়েছে। ধীরে ধীরে চোখে মেলে শান ও তার মাকে দেখে সে হাত দিয়ে তার মাকে কাছে আসতে ঈশারা করল।
শানের মা এক সেকেন্ড বিলম্ব না করে শানের বাবার কাছে গেল, পাশের চেয়ারে বসলো। শান পিছনে পিছনে এসে তার মার পাশেই দাড়ালো।

‘এখন কেমন লাগছে তোমার? ঠিক আছো তো?’
‘হ হুম।’
‘কি থেকে কি হয়ে গেলো!’
শানের বাবা তখন শানকে হাত বাড়িয়ে আসতে বলল।
শানের মা শানের হাত ধরে কাছে নিল তার বাবার।
‘বাবা শান, মা, মা, মাথায়’
‘বাবা কিচ্ছু হবে না তোমার। তুমি চিন্তা করো না।’
‘না বাবা শোন আ, মা,,র ক.. কথা।’

‘তুমি চুপ করো এখন বলতে হবে না। পরে বলবা।’
‘বাবা একটু রেস্ট নাও। আমরা না হয় পরেই শুনব।’
শানের মা তার বাবাকে চুপ করিয়ে দিল। শানও কিছু বলল না। কারণ এমনিতেই তার বাবা অসুস্থ।
শানের মাথা স্থির হচ্ছে না। কি বলতে চাইছে তার বাবা!!!!

রাতটা তাদের এভাবেই কাটল। মিথিলার তখনো জ্ঞান ফেরেনি। শান সারারাত মিথিলার রুমেই ছিল। ঘুমন্ত মিথিলাকে কতবার পরখ করে দেখেছে শান তা সে নিজেও জানে। এই নিষ্পাপ মেয়েটির মনেও কি এরকম কিছু থাকতে পারে? শান সেটাই বুঝতে পারছে না। শুধু অপেক্ষা কখন মিথিলার জ্ঞান ফিরবে আর কখন তার বাবার কাছে থেকে শুনতে পারবে কি হয়েছিল।
পরদিন খুব সকালে শান তার বাবার রুমে গেল। তার মা উঠেছে, শানের বাবার হাত ধরে আছে।
‘বাবা।’

‘শান, বাবা এসেছিস। বস তোর বাবার কাছে আয়।’
মায়ের কথায় শান গিয়ে বসল ওর বাবার কাছে।
বাবা, এখন কেমন লাগছে?’
””ভালো বাবা। তোর মা আমাকে কিছু বলতেই দিচ্ছে না। তোকে সব জানানো দরকার বাবা।’
‘বাবা তোমার কষ্ট হবে বলতে’
‘না বাবা শোন। আমি আস্তে আস্তে বলছি।

কালকে আবার পরশুদিনের মত উপরের রুম থেকে আওয়াজ আসছিল। ভালকরে খেয়াল করে দেখি হ্যা উপরের রুমেই কেউ একজন আছে, কিছু একটা করছে। শুনসান ঘরে না হলে এরকম শব্দ আসার কথা নয়। আমি চুপিসারে গেলাম। গিয়ে রুমের দরজা ধাক্কানোর সাথে সাথে কে যেন তড়িৎবেগে বেলকনিতে চলে গেল। আমার সন্দেহ স্পষ্ট হল। অন্ধকারে সে মনে করেছে আমি দেখতে পাইনি তাকে।’
একথা শুনে শানের তখন নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সেদিন সে লাইট জ্বালিয়ে পরো রুমটা দেখলেও বেলকনিটা কেনো দেখলোনা!!! সেদিনই সব সত্যি সামনে আসতো তাহলে!!’

‘তারপর!!’ শানের মা ভীতস্বরে বলল।
‘আস্তে আস্তে বেলকনিতে আগালে অন্ধকারে দেখি একটা নারীমূর্তি পিছন মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পড়নে শাড়ি পড়া। দেখতে যাব সে কে কিন্তু,,’
‘কিন্তু কি হল!!’

‘তার কাছে যাওয়ার আগেই সে অন্ধকারে ঘুরে আমার মুখে কি যেন স্প্রে করল তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। তার চেহারাটা দেখতে পাইনি আমি কারণ হঠাৎ চোখ ঝাপসা হয়ে গেছিলো সেটা মারার পর। মুহূর্তেই আমার বোধশক্তি কেমন যেন লোপ পায়। তারপর চোখ খুলে নিজেকে এখানে দেখি।’
‘বাবা আসছি আমি।’

শান সাথে সাথে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। শানের বাবা শাড়ি পড়া মেয়েকে দেখেছে। আর মিথিলার শাড়ির টুকরাও পাওয়া গেছে রুমে। এখন তো কোনো সন্দেহই থাকে না। রাগে শরীর জ্বলে যাচভহে শানের। তাহলে কি মিথিলা সব জানে? তার চোখের কথাও? না আগেই ধরা দেয়া যাবে না ওর কাছে।
শান দ্রুত পায়ে মিথিলার রুমে গেলো।
মিথিলার রুমে গিয়ে দেখল মিথিলা মাত্র চোখ আধো আধো খুলছে। শান এক মিনিট বিলম্ব না করর লাঠির সাহায্যে মিথিলার কাছে গেল।
মিথিলা চোখ পিটপিট করে আশে পাশে তাকিয়ে শানকে আসতে দেখলো। মুখের কোনে হাসি ফুটে উঠল তার।

‘আপনি এসেছেন?’
শান মিথিলার বেডের পাশে গেল। মিথিলা হাত বাড়িয়ে শানের হাত ধরল। শান মিথিলার বেডে তার পাশেই বসল।
‘আমি গেলামই কখন? সারারাত তো এখানেই ছিলাম।’

মিথিলার মুখ যেন লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করল। কিন্তু সেটা দেখে শানের আরো রাগ বেশি হচ্ছে। মনে তো হচ্ছে গলা টিপে মেরে ফেলতে। কিন্তু একটা কথা সে বুঝতে পারছে না।
যদি মিথিলাই তার বাবাকে মারবে তাহলে আবার নিজেই অসুস্থ শরীর নিয়ে রক্ত দিতে গেলো কেনো? কি রহস্য এর!!
‘বাবা কেমন আছে?’

‘ভাল।’
‘আমাকে ওইখানে নিয়ে চলুন বাবার কাছে।’
‘মিথিলা তোমাকে কিছু কথা বলব, তুমি কি ঠিক ঠিক উত্তর দেবে?’
‘হঠাৎ কি কথা?’
‘তুমি কি উপরের রুমে গেছিলে?’
প্রশ্নটা শুনে মিথিলার মুখে ভয় ডানা দিল। চশমার আড়ালে শান সব দেখছে।
‘মা মা মানে!!’
‘আমার কথার উত্তর দাও মিথিলা, তুমি কি উপরের রুমে গেছিলে?’
মিথিলার ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,’হ্যা।’
‘কি বললে?’

মিথিলা চুপ করে আছে।
‘এই মেয়ে কি বললে তুমি?’
‘আপনি ক..কি ভাবে জানলেন?’ চোখে মুখে ভয় মিথিলার,
শান কিছু বলবে এর মাঝেই আবার ফোন আসল,
‘হ্যালো শান’
ফোনটা ডি আইজি স্যারের।
‘জি স্যার।’

‘রুমে পাওয়া সেই হাড়ের টুকরো সম্পর্কে কিছু তথ্য এসেছে হাতে। তুমি এখনি এসো **** এই ঠিকানায়। একটুও দেরি করো না।’
‘আচ্ছা স্যার আসছি আমি।’
এই মুহুর্তে কিচ্ছু করার নেই শানের। না গেলে তার উপর সন্দেহ এসে পড়বে। যেতেই হবে।
‘আমার অনেক কিছু জানার আছে মিথিলা। তুমি আমাকে অনেক কিছু বলোনি। তুমি যদি কিছু করে থাকো তার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।

মিথিলা উপরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছিল। শানের কথা শুনে মুচকি হাসলো মিথিলা।
‘আপনার যা মন চায় সেই শাস্তিই দিবেন না হয়।’

তাসের ঘরে তুমি আমি পর্ব ১৫

রুম থেকে লাঠির সাহায্যে উঠে বের হয়ে গেলো শান। মিথিলা তার দিকে তাকিয়ে আছে একভাবে।
শান হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে ডিআইজি স্যারের বলে দেয়া ঠিকানায় যেতে একটা রিক্সায় উঠলো।
ব্যস্ততম শহর ঢাকা। এর মাঝেই এক সিগনালে শানের রিক্সা থেমে আছে। এমনিতেই এত চিন্তা, এই ট্রাফিক য্যাম যেন সেটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ঠিক এমন সময় রাস্তার পাশে একজনকে দেখে চোখ আটকে গেল শানের। এ কাকে দেখছে সে!!!

তাসের ঘরে তুমি আমি পর্ব ১৭