তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২৭ || suraiya Aayat

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২৭
suraiya Aayat

” তোমার আম্মু মনে খালামনি কোথায় ইফা ? ওনার সাথে দেখা করে গেলে ভালো হতো নাহলে ডেভিলটা বাসায় আসলেও আমাকে বকা ঝকা করার সাহস পেতো না ৷”
ইফা অবাক হয়ে বলল
” ভাবী তুমি এটা কি নামে ডাকলে ! ডেভিল ?”
নূর নিজের মাথায় একটা চাপট মেরে চোখ মুখ কোঁচকালো , বুঝলো যে এই মুহূর্তে ইফার সামনে কথাটা বলা ওর একদম উচিত হয়নি ৷ তারপর কিছু ভাবলো আর বলল

” আরে কথায় কথায় বলে ফেলেছি , আমি বলতে চাইলাম যে উনি জানতে পারলে অনেক বকাঝকা করবে তাই আরকি ৷”
ইফা নূরের সেই কথা বিশ্বাস করে বলল
” ওহহ আচ্ছা কিন্তু আম্মু তো বাসাতে নাই ৷আম্মু একটু খালামনির বাসায় গেছে উত্তরা তে ৷”
নূর একটু অবাক হয়ে বলল
” তোমার খালামনি মানে ? তোমার অলমনি মানে তো আয়াশের আম্মু মানে আমার শাশুড়ি আম্মু , উনি তো আর বেঁচে নেই তাহলে আবার একটা বোন এলো কোথা থেকে?”
ইফা এবার খানিকটা ঘাবড়ে গেল নূরের প্রশ্ন শুনে তারপর আমতা আমতা করে বলল

” আরেহ,,, আরেহ ভাবী তুমিও যে কি বলোনা !আম্মুর আর একটা বোন আসবে কোথা থেকে আম্মুর তো একটাই বোন তা হলো আয়াশ ভাইয়ার আম্মু ৷ আর আম্মু তার চাচতো বোনের বাসায় গেছে তার ছেলে নাকি অসুস্থ সেই কারনে ৷”
নূর ইফার মুখের ভাবভঙ্গি ভালো করে চেয়ে বলল
” তোমাকে একটু অস্থির অস্থির লাগছে ইফা , তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো?”
ইফা কথাটা শুনে খানিকটা কেঁপে উঠলো,বিরাট কোন সত্যি টাকে আড়াল করার যেন প্রানপনে চেষ্টা চালাচ্ছে ৷ নিজেকে তুলনামূলক স্বাভাবিক করে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” তোমার থেকে আমি কখনো কিছু লুকিয়েছি বলো ? আর বিশ্বাস করো আম্মু তার চাচাতো বোনের বাড়িতেই গেছে ৷”
ইফার বলার ধরন দেখে নূর ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলল
” আরে ইফা আমি কি একবার ও বলেছি যে তুমি মিথ্যা বলেছো বা আমি অস্বীকার করেছি, বলিনি তো? তাহলে এতো ঘাবড়াচ্ছো কেন আর আমাকেই বা এতো বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছো কেন?”
ইফা কথা কাটানোর জন্য বলল
” আরে ভাবী আমি তো এমনিই বললাম, বাদ দাও যাই হোক এখন চলো নাহলে আয়াশ ভাইয়া বাসায় চলে আসলে আর তোমাকে না দেখতে পেলে ভয়ংকর এক কান্ড হয়ে যাবে ৷”
নূর বিছানা থেকে ছোট ব্যাগটা হাতে তুলে নিয়ে বলল
” হমম চলো নাহলে উনি বাসায় এসে না দেখলে আরেক প্যাচাল ৷”
কথাটা বলে ওরা বেরিয়ে গেল ৷ বাসার গাড়িতেই যাবে নাহলে রিকশা বা ট্যাক্সি করে গেলে আর রক্ষে নেই, আয়াশ আর আস্ত রাখবে না ৷

” নাম কি ?”
” বলবো না ৷”
অচেনা মানুষটা তার তীক্ষ কন্ঠে জবাব দিলো ৷
কথাটা শোনামাত্রই আয়াশ অ্যাসিডের জার থেকে এক ড্রপ অ্যাসিড লোকটার হাতের ওপর ফেলতেই নিমেষে জায়গাটা পুড়ে গিয়ে মাংস ভেদ করে হাড় দেখা যেতে লাগলো,,তার সাথে শুরু হলো লোকটার তারস্বরে চিৎকার ৷ আয়াশ চোখ বন্ধ করে রেখেছে হয়তো লোকটার চিৎকারে একপ্রকার পৌশাচিক আনন্দ অনুভব করছে ও ৷
তারপর নিজের চেয়ার থেকে উঠে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলো
” কে বলেছিলো আমার আফু সোনাকে আঘাত দিতে ? বল কে বলেছিলো ?”
লোকটা ওনার চিৎকার বন্ধ করে বলল

” বলবো না কে বলেছিলো যা খুশি করে নে ৷”
আয়াশ মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো
” কত টাকা পেয়েছিস কাজটা করার জন্য ?”
” বলেছি তো বলবো না ,তোর কি লজ্জা নেই বে*র ছেলে ৷”
আয়াশ চোখটা বন্ধ করে নিলো, নিজের রাগটাকে সংযত করে বলল
” শেষ বারের মতো বলছি বল কে করতছ বলেছে এটা ৷”
” সাহস থাকলে হাতটা খুলে দেখা তারপর তোরে আমি দেখে নিবো শালার পোলা ৷”
আয়াশ ছুরিটা হাতে নিয়ে বলল
” পাঁচ কোটি দিবো ৷ বল কে বলেছে‌ ৷”
কথাটা শুনে লোকটা হো হো করে হেসে বলল
” আমরা অমন নামকহারাম না যে টাকা পেয়ে সব বলে দেবো , আমাদের মাস্টার আমাদেরকে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে শেখায় নি,,,,”

আয়াশের রাগটা আর সহ্য হলো না লোকটা ওকে আরো কিছু অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিতে যাবে তার আগেই আয়াশ বলে উঠলো আজ তুই শেষ ! নিজে মরবি নাকি আমি করবো বাকি টুকু ৷
লোকটা অত্যন্ত দাম্ভিকতার সাথে বলে উঠলো
” মরার ভয় দেখাচ্ছিস ? একবার শুধু হাতটা খোল তারপর তোকে আর জিন্দা রা,,,,”
আর বলতে পারলো না, আয়াশ চাকুটা ওনার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেই ফিচকানি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এলো, নিমেষেই ওনার চোখমুখ উল্টে এলো ৷
আয়াশ চাকুটা দূরে ছুড়ে ফেলে দিলো ৷ মাথায় হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, এরপর কি করা যায় ভাবছে, নূর কোনভাবেই সুরক্ষিত না, কেউ তো আছে যে আড়ালে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে , এই লোকটা ছিলো তার একমাত্র সম্বল ৷ আয়াশ চাকুটা তুলে একটা প্যকেটে মুড়িয়ে ফোন করলো
” আমি একটা জিনিস পাঠাচ্ছি, সেটা ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠাও আর যে যে টেস্ট গুলো করতে বলবো সেগুলো করে আমাকে যেন তাড়াতাড়ি রিপোর্টটা পাঠানো হয় ৷”
আয়াশ কলটা কাটলো তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো ৷

” নূর মনি যে, কেমন আছো তুমি ? তোমার শরীর কেমন আছে? বাসার সবাই ভালো আছে? আর এই মাইয়াডা কে?”
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে উঠলেন নূর দের বাসার কাজের বুয়া রহিমা খালা ৷
নূর ওনার প্রশ্নের মাত্রা শুনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
” আচ্ছা হয়েছে এবার থামো, তুমি এতো সব প্রশ্ন একসাথে করলে যে আমি কোনটা ফেলে কোনটার জবাব দিবো বুঝতে পারছি না ৷”
নূলের কথা শুনে ইফা আর রহিমা খালা দুজনেই হেসে ফেললেন, নূর নিজেও হেসে বলে উঠলো
” তুমি কেমন আছো তাই বলো ৷”
” এই তো ভলোই আছি ৷ তা তুমি আজকে এলে যে আজ তো রেদোয়ান বা আরাফাত ভাইজান কেউ তো বাসায় নাই ৷”
কথাটা শুনে নূরের মুখটা শুকিয়ে গেল তারপর জিজ্ঞাসা করে উঠলো
” বাসায় নাই মানে কোথায় ওরা ?”

” রেদোয়ান আর মায়া ভাবির মধ্যে সকালে রাগারাগি হইছে তারপর ভাইজানের সাথেও রাগারগি করে ভাইয়া বাসাতে নাই , কোথায় গেছে বলতে পারি না, আর ভাইজান তো বলে গেল যে আজ শুক্রবার তাই ভাবির কবর জিয়ারতে গেছেন ৷”
কথাটা শুনে নুর মাথা নীচু কলে নিলো, এতদূর ভয়ে ভয়ে অনেক রিস্ক নিয়ে এলো তবুও প্রিয়জনদের সাথে দেখা হলোনা ভেবে মন খারাপ লাগছে ৷ আর রেদোয়ান আর মায়ার হঠাৎ ঝমেলা হয়েছে শুনে নূর অবাক হলো ৷ ইফা নূরের মুখের অবস্থা দেখে নূরের গালদুটো টেনে দিয়ে বলল
” আরে ভাবীজান মন খারাপ করছো কেন? মন খারাপ করো না ৷ আমরা না হয় আঙ্কেলের ফেরার জন্য ওয়েট করি ?”
নূর মন খরাপ করে বলল
” নাহ তা হয়না ইফা ,আমরা বাসা থেকে কাউকে বলে আসেনি আর উনি বসায় ফিরে না দেখতে পেলে কি কান্ড করবে নিজেও জানি না ৷”
ইফাও নূরের কথাতে সম্মতি জানিয়ে বলল

” তাও ঠিক ,যাই হোক তাহলে কেউ যখন বাসাতে নেই তখন আর বেশিখন ওয়েট করে লাভ নেই ৷ তোমার যে যে জিনিসগুলো দরকার সেগুলো নিয়ে নাও আমি ওয়েট করছি ৷”
” তুমিও চলো আমার সাথে রুমে, এখানে একা একা বসে কি করবে ! আসো ৷”
ইফা নূরের সাথে যেতে গেলেই রহিমা খালা বলল
” নূর মনি আমিও যাই তোমার সাথে ! গোছগাছ করে দিই তুমি কি কি নিবা !”
” না না খালামনি, বেশি কিছু না, অল্প কিছু নিবো, আমিই পারবো, তুমি বরং ইফার জন্য একটা কিছু বানিয়ে দাও ততখনে ৷”
” আচ্ছা ৷”
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন ৷
নূর ওর রুমে গিয়ে ওর দরকারি কিছু জিনিস নিলো তার মধ্যে যেটা সবচেয়ে দরকারী তা হলো ওর ডায়েরি ৷ ওর ধারনাতেও নেই যে ওর ভাইয়া ওর ডায়েরি পড়বে ৷

অনেকখন ধরে আয়াশ পাশ ফিরে শুয়ে আছে, আজকে আর নূরকে কোনরকম কোন বিরক্ত করেনি, বাসায় এসে ঠিকভাবে কথাও বলেনি , নূরের বুকের ভিতর এক চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে ৷ ভীষনরকম বলতে ইচ্ছে করছে আমাকে বিরক্ত করুন প্লিজ আপনাকে এভাবে মানতে পারছি না ‌৷
নূর বিছানা থেকে নামলো, রাত 1 টা বাজে ৷ আয়াশ বাড়ি ফিরেছে 10টায় তারপর আহানের সাথে কথা বলে গোসলে গেছিলো আর নূরের সাথে কথা বলেনি তেমন শুধু ঘুমানোর আগে নুরকে বলেছিলো
” লাইটটা অফ করে দাও, নাহলে ঘুম আসবে না আমার ৷”

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২৬

কথাটা শুনে নূরের চোখে জল চলে এসেছিলো , সারাদিন পর মানুষটার হঠাৎ এমন ব্যাবহারটা বড়োই অদ্ভুত ৷অনেকখন ধরে বসে থাকার পরও ঘুম আসছে না ,মনের মাঝে নানান ভাবনা আসছে ওর যেমন
” উনি আজকে সারাদিন জন্য কোন মেয়ের সাথে ছিলেন না তো? আচ্ছা উনি কি অন্য কাউকে ভালোবাসেন ? আমার সাথে এমন ব্যাবহার করছেন কেন? আমার অপরাধ কি ? উনি কি আমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন?”
কথাগুলো ভাবলো, মনের মাঝের দোটানা দূর করতে বিছানা থেকে নেমে ওর ব্যাগ থেকে একটা মেহেন্দির টিউব বার করে আনলো তারপর আয়াশের সামনে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো আয়াশ আদেও ঘুমিয়েছে নাকি জেগে আছে ৷ অনেকখন ধরে পর্যবেক্ষন করালো তারপর প্রমানিত করলো যে আয়াশ ঘুমাচ্ছে ৷ নূর খাটের ওপর আয়াশের পাশে বসে আয়াশের বাম হাতটা ধরলো তারপর ফোনের ফ্ল্যাশ জালিয়ে হাতে লিখলো

” আমার বউ আছে, আমি বিবাহিত, তাকে আমি ভালোবাসি , আমার দিকে কেউ ঘুরেও তাকাবেন না প্লিজ নাহলে আমার বউ আমাকে ছেড়ে ছলে যাবে ৷”
মেহেন্দি দিয়ে আয়াশের হাতে কথাগুলো লিখে দিলো নুর,সারারাতে নিশ্চয় এটার একটা সুন্দর গাঢ় রঙ আসবে আর যা সহজে উঠবে না ৷ কথাটা ভেবে নূর ফিক করে হেসে ফেলল আর মনে মনে বলল
” এরপর আপনার সেই গালফ্রেন্ড আপনার হাতটা দেখলে নির্ঘাত আপনার ব্রেকআপ হবে হু ৷ নূর ইউ আর জিনিয়াস?৷”

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২৮.২৯