তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩০ || suraiya Aayat

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩০
suraiya Aayat

” কাল ভোরেই তুই আর নূর বেরিয়ে পড়বি, তোর মামু ফোন করেছিলেন ৷ তারা তোদের কালকে যেতে বলেছেন, নেহাতই নূর অসুস্থ নাহলে তোদের তো অনেক আগেই যাওয়ার কথা ছিলো ৷”
সোফাতে বসে আয়াশের মা প্রিয়ন্তীর ছবির দিকে তাকিয়ে আছে আয়াশ, গভীর দৃষ্টিতে ছবিটা দেখছে যেন কতকাল দু চোখ ভরে দেখা হয়নি ৷ ওনার কথা শুনেও আয়াশের মাঝে পরিবর্তন এলো না ৷ তেহেরাত সাহেব ও আয়াশের সাথে প্রিয়ন্তীর ছিবির দিকে তাকালেন ৷ পরনে লাল শাড়ি , হাত ভরতি চুড়ি, শাড়ির আঁচলটা কাধ থেকে কোমর ওপর অবধি নামানো, কথায় খোঁপা , হালকা গোলাপী ঠোঁট আর মৃদু রঙিন ছবিতে কতোটা মোহনীয় লাগছে দেখতে , এক কথায় অপরুপ , চোখ ধাঁধানো সুন্দরী ছিলেন তিনি ৷ তেহেরাত সাহেব চোখ সরিয়ে পুনরায় বললেন

” আহানের সাথে কথা হয়েছে ? সে কেমন আছে আমাকে বলতে পারো ? আমার সাথে তার হালকা মনোমালিন্য হয়েছিলো তার দেশের বাইরে যাওয়া নিয়ে, বিষয়টাতে আমার তীব্র আপত্তি ছিলো ৷ তোমার কি তার সাথে কথা হয়েছে ?”
আয়াশ এখনো গালে হাত রেখে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আয়াশকে ভাবলেষহীন হয়ে থাকতে দেখে উনি বলেন
” আয়াশ !”
খানিকটা জোর বলায় আয়াশের ঘোর ভাঙলো, একটু থতমত খেয়ে বলল
” কিছু বলিছিলে ?”
উনি একটু গরম নিশ্বাস ছেড়ে বললেন

” আহানের খবরা খবর কিছু জানো? সে কোথায় আছে কি করছে জানো ? আমার সাথে তার কথা হয়নি ৷”
” হমম হয়েছে ৷ ভাইয়ার ক্লাস শুরু হবে কালকে থেকে৷আর সে ভালোই আছে ৷ কথা হয়েছে আমার সাথে ৷”
উনি একটু চিন্তিত হয়ে বললেন
” কবে ফিরবে জানো ?”
আয়াশ খানিকটা মুচকি হেসে বলল
” ফিরবে হয়তো আমি যেদিন ফোন করে ফেরার কথা বলবো ৷”
উনি একটু চিন্তা গ্রস্থ হয়ে বললেন
” আমার সাথে ঠিক থাকুক না থাকুক নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটা কখনো খারাপ আর তিক্ততা পূর্ন হতে দিও না ৷”
আয়াশ ওর বাবার হাতে হাত রেখে বলল
” একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো তোমাকে ?”
“হমম বলো ৷”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আমার মা মানে তোমার প্রিয়ন্তি ছিলো অপরুপ এক সুন্দরী মহিলা , শত শত জমিদারের ছেলে তাকে বিয়ে করতে উতলা হয়ে পড়েছিলো , কিন্তু তাদের মধ্যে থেকে জয়ী হয়েছো তুমি , কারন ভাগ্য ! এগুলো সব গল্প শুনেছি ৷ ”
উনি নিল্পিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন
” হমম , ঠিকই শুনেছো ৷”
আয়াশ এবার খানিকটা গাঢ় কন্ঠে বলল

” শুনেছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বৌদি কাদম্বরী দেবীর প্রেমে পাগলপ্রায় ছিলেন কারন কাদম্বরী দেবী তার স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভালোবাসা পাইনি, তিনি ছিলেন ভালোবাসার কাঙাল ৷ রবীন্দ্রনাথ ও তার মোহে আটকা পড়েছিলেন ৷ একটা নারীর রুপ আর মোহ একটা পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট ! আমার মা অপরুপ সুন্দরী ছিলেন, তার প্রেমে পড়েছিলো সেই সময়কার বহু যুবক , তবুও তার মনে একটাই আক্ষেপ ছিলো……তা কি তুমি জানো ?”
তেহেরাত সাহেব বেশ ঘাবড়ে গেলেন আয়াশের কথা শুনে , বেশ বিষন্ন মুখ নিয়ে বললেন
” কি !”

আয়াশ একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর বলল
” স্বামীর ভালোবাসা পেয়েও নিজেকে কাদম্বরী দেবীর ন্যায় অনুভব করা বড়োই পাপের কাজ যা আমি করে চলেছি ! তিনি স্বামীর ভালোবাসা পাননি, আর আমি ! তাং-28শে বৈশাখ,2001″
কথাটা শুনে উনি স্তম্ভিত হয়ে বললেন
” থামো আয়াশ , আমি তোমার মুখ থেকে পুরোনো কোন কথা শুনতে চাইনা ৷ পরিস্থিতির স্বার্থে তোমার মায়ের লেখা পুরোনো ডায়েরিটা তোমার হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছি বলে সেটাকে দূর্বলতা ভেবে বসোনা , পুরোনো কাসুন্দী ঘাটতে যেওনা, নাহলে তা তেঁতো হয়ে যাবে ৷”

আয়াশও ওর চোয়াল শক্ত করে বলল
” ঠিক ঠিক, আর ভুল তো ভুল,,,,,,বরং সঠিকটাকে যে ভুল হিসাবে প্রমানিত করতে চাই সে কাপুরুষের সমতুল্য ৷”
উনি হুংকার দিয়ে বললেন
” আয়াশ ! তুমি ভুলে যাচ্ছো যে আমি তোমার,,,,,৷”
” বাবা, তুমি আমার বাবা, যেও নিজের বংশের ধারা বজায় রাখার জন্য পরকীয়া করেছে !”
উনি নিজের গায়ের শালটা জড়িয়ে ধরলেন শক্ত করে, এই বয়সে এসে অতীত নিয়ে ছেলেদের মুখ থেকে ইর্ষান্বিত কথা শোনা যে শরীরে কাঁটার মতো এসে বিধছে ওনার ৷
আয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷

তেহেরাত সাহেব বাইরের দিকে চেয়ে রইলেন, প্রিয়ন্তির নিঁখোজ হওয়াতে উনি নিজেও অনেকটা দায়ী, নিজের অপরাধ আর পাপবোধকে মুছে ফেলতে উনি বাইরে আসেন না, লোক সমাজে মুখ দেখান না, অপেক্ষায় আছেন কোনদিন প্রিয়ন্তি আসবে তারপর ওনার অপরাধের শাস্তি দেবেন ৷ কথাগুলো ভাবতেই ওনার চোখে নোনা অশ্রূধারা বয়ে গেল ৷

” মাথায় হাত রেখে চেয়ারে বসে আছে আয়াশ,চোখ মুখে ক্লান্তির রেশ ৷ বিছানায় বসে জামাকাপড় ট্রলিতে ভরছে নূর ৷ মাঝে মাঝে আয়াশের দিকে তাকাচ্ছে, কেমন ঝিম মেরে বসে আছে ও ৷ পাশে রেখে দেওয়া কফিটা দু চুমুক খেয়ে রেখে দিয়েছে তা থেকে এখনো উষ্ন ধোঁয়া উড়ছে ৷ নূর শাড়িটা ভাজ করে, ট্রলির চেনটা দিয়ে হালকা নরম সুরে বলল
” আপনার কি শরীর খারাপ ৷”
কিছুখন থেমে আয়াশ উত্তর দিলো
” নাহ !”

নূর ট্রলিটা বিছানা থেকে নামিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাবে ভাবলো , আয়াশের কন্ঠস্বর শুনে মনে হলো সে যেন এখন কাউকে তার আশেপাশে চাইছে না, একটু একা থাকতে চাইছে, কথাটা ভেবে নূর রুমের বাইরে পা বাড়াতে নিলেই আয়াশ বলে উঠলো
” কোথাও যাবে না তুমি আমার সামনে সামনে থাকো ৷”
নূর বেশ অবাক হলো,মানুষটা ঠিক করে কিছু বলছে না আবার দূরেও যেতে দিতে চাইছে না,হলো টা কি ?”

আয়াশের বারন শুনে নূর বাইরে গেল না, বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো ওর বাবার থেকে কল এসেছে , কালকে তাদের সাথে দেখা না করেই ফিরে এসেছে তাই জন্যই হয়তো ফোন করছে ৷ আয়াশের দিকে তাকালো,আয়াশ হাত দিয়ে রিতীমতো কপাল চাপড়াচ্ছে, মাথা ব্যথা করছে কি তাও বোঝার উপায় নেই কারন আয়াশ অতো আবেগপ্রবন না ৷ নূর এই মুহূর্তে আর ফোন না করে ফোনটা রেখে বলল
” আপনার কি মাথা ব্যাথা ? ”

কথাটা শোনামাত্রই আয়াশ চেয়ার থেকে উঠে গেল তা দেখে নূর ভাবলো আয়াশ হয়তো ওর কথাতে বিরক্ত হয়েছে , কিন্তু নাহ ! নূরকে অবাক করে আয়াশ এসে নূরের কোলে মাথা রেখে গুটিগুটি হয়ে শুয়ে রইলো ৷নূর অবাক হলো বেশ ৷ আয়াশ বললো
” মাথায় কোন ভারী বস্তু দিয়ে খুব জোরে আঘাত করবে প্লিজ ! যদি একটু শান্তি মেলে !”
নূরের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আয়াশ ভীষনরকম মাথা ব্যাথায় জর্জরিত তাই আর কোন কিছুনা ভেবে আয়াশের মাথাটা টিপে দিতে লাগলো , আয়াশ চোখ বন্ধ করে আছে,কিছুখন পর নুরের কোমরটা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো , নুরের পেটে আয়াশের ঠোঁটের ছোঁয়াতে নূর মাঝে মাঝেই কেঁপে কেঁপে উঠছে ৷

হঠাৎই আয়াশ বলে উঠলো
” বড়ো আর উচ্চবিত্ত বংশের ছেলেরা অনেকাংশেই চরিত্রহীন হয়, তাদের বংশগত একটা ধারা অব্যহতি আছে যার নাম হলো পরকীয়া ৷ জানো নিশ্চয়ই !”
কথাটা শুনতেই নুর একটা দমে গেল, এতদিন ওউ জানতো এ কথাটা কিন্তু আয়াশের মুখ থেকে শুনবে ভাবেনি ৷ নূর মৃদু কন্ঠে বলল
“হমম ৷”
” আমাদের বংশেও সেই ধারা আছে , আর তা যদি আমি আজও টিকিয়ে রাখি তাহলে কেমন হয় বলোতো?”
কথাটা শুনে নূরের হাতের বাধন আলগা হতে লাগলো, আয়াশের থেকে দূরে সরে যেতে ইচ্ছা করছে, সত্যিই বড়ো কোন একটা বস্তু নিয়ে আয়াশের মাথাতে আঘাত করার ঈচ্ছা জাগছে প্রবল ৷ নূর চুপ করে রইলো ৷

আয়াশ এবার নুথের কোমর টা ছেড়ে নূরকে বিছানায় ফেলে নুরের দিকে ঝুকে নূরের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল
” বংশের ধারাকে বিলীন না হতে দেওয়ার দায়িত্বটা বরং আমিই নিয়ে নিই বলো ? নাহয় দু চারটে বিয়ে করলাম , সমস্যা কি ? কেউ বলতে আসবে না চরিত্রহীন কারন এতদিন এই বংশে এটাই হয়ে আসছে, যদিও একাধিক বিয়ে করা থেকে আমার বাবা আর আমার ছোট আব্বু বিরত ছিলেন ৷”

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ২৮,২৯

নূরের চোখে জল জমে এলো, ঠোঁট জোঁড়াও হালকা কেঁপে উঠলো ফুঁপিয়ে ওঠাতে,,আর কিছুখন শুয়ে থাকলেই চোখ দিয়ে জল গড়াবে, তাছাড়া সকালেই তো নিজের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছে, এমন তো নয় যে ও ওর মনের কথা বলেনি , তারপর ও আয়াশ এমন কথা বলছে দেখে নূরের শরীরের রক্ত ঠান্ডা হয়ে আসছে ৷ নুর উঠতে গেলেই আয়াশ আবাই বিছানায় ফেলে ওর হাতজোড়া মুঠি বদ্ধ করে নিলো ৷ নুর ফুঁপিয়ে উঠলো, অবশেষে সকল বাঁধা না মেনে চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়তেই আয়াশ বলল
” আরেকবার বলো যে ভালোবাসি !”

নুর আয়াশের থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো, আয়াশ নূরের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো, আয়াশের নরম নিশ্বাস নুরের গলায় পড়ছে, নুর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আয়াশ হাতটা ছেড়ে দিয়ে নূরের গলা থেকে সরে এসে ঠোটের এক কোনায় কামড়ে ধরতেই নূর ধাক্কা দিলো আয়াশকে, আয়াশ কামড়ানো অংশটুকু ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল

” একবার বলেছো বলেছো বাট আর কখনো উচ্চারন ও করবে না ভালোবাসি শব্দটা ৷ নয়তো খারাপ হবে খুব ?”
কথাটা বলে আয়াশ চলে গেল ৷ নূর চোখটা মুছে আয়াশের দিকে তাকালো, মানুষটাকে যতই বোঝার চেষ্টা করছে ততই যেন আরও গোলক ধাঁধা হয়ে যাচ্ছে , সকালেই তো কতো খুশি হলো আর এখন এতো পরকীয়া, বিয়ে ,ভালোবাসি না বলা এগুলোর তাৎপর্যতা নূর খুঁজে পাচ্ছে না ৷

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩১