তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩২ || suraiya Aayat

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩২
suraiya Aayat

ভোরের আকাশ আর পরিবেশ দুটোই ভীষন আদুরে শুধু বারবার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে ৷ ভোর রাতে বৃষ্টি হয়েছে হালকা তাই পরিবেশের শীতলতা বেশ, বাইরে এখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে যা গাড়ির জানালার বদ্ধ কাঁচে এসে আছড়ে পড়ে তার কার্নিশে জমে জমে রয়েছে ৷ নূরের ভীষন ইচ্ছা করছে সেই কাঁচের গায়ে হাত দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে স্পর্শ করার,,যদিও সেই ফোঁটা আঙুল স্পর্শ করে শরীরে শীতলতা বইয়ে দেবে না কিন্তু কাঁচের এপার থেকে তার সাথে অবস্থান মিলিয়ে চলার চেষ্টা টুকু তো করা যেতে পারে নাকি !

নূর আয়াশের দিকে তাকালো,,ওপরের শার্টের একটা বোতাম খোলা আর মাঝেমাঝে চঞ্চলতা আর বিরক্তিতে মাথার চুল গুলো আঙুল দিয়ে আকিবুকি স্পর্শ করায় সেগুলো বড্ড এলোমেলো হয়ে আছে ৷ নূর সেই বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে কি ভাবছে কারন এতে আয়াশ যদি ওকে নিত্যন্তই বোকা ভাবে তখন !

হাতটা নিশপিশ করছে ভীষন, গাড়ি চালানোতে আপতত আয়াশের সম্পূর্ণ ধ্যান জ্ঞান আর গাড়ি চালানোর সময় আয়াশ খুব একটা কথা বলেনা, অর্ধেক রাস্তা তো নূর ঘুমিয়েই কাটিয়েছে আর বাইরে বৃষ্টি সাথে ভোরের অন্ধকারে সব যাত্রাটুকু অনুভব করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি ওর , কতোটা রাস্তা এসেছে বা এখনো কতোটা রাস্তা যেতে হবে তা নূর জানে না ৷ নিজের ভিতরকার আড়ষ্টতা কাটিয়ে আর নিজের ভাবনা গুলোকে দূরে সরিয়ে নূর গাড়ির কাঁচে লেগে থাকা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি বিন্দু গুলোর সাথে আঙুল মেলাতেই এক প্রশস্ত হাসি ছেয়ে গেল নূরের ঠোঁট জুড়ে, আনন্দে হাসিটা যখনই খিলখিলিয়ে উঠবে তখন হঠাৎই বিরাট একটা ব্রেক কষে আয়াশ গাড়িটা থামালো ৷ নূরের মুখের হাসিটা যেন হঠাৎই মিলিয়ে গেল ,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আয়াশের দিকে তাকাতেই দেখলো আয়াশ সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নামছে, আয়াশের মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে যেন একাই ঘুরতে যাচ্ছে তার আশেপাশে বা তার সাথে কেউ নেই ৷আয়াশ গাড়ি থেকে নেমে নিজেই গটগট করে হেটে চলে গেল নূরের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ না করে ৷নূর আয়াশের এই ব্যাবহারের সাথে অপরিচিত, আয়াশ কখনো এমনটা করে না ৷ নূর গাড়ি থেকে নামলো না সেখানেই ঠাই বসে রইলো, বুকের মাঝের চাপা বেদনাটা কষ্ট দিচ্ছে , ভাবার চেষ্টা করছে সব যে ওর দ্বারা কি কোনরকম কোন ভুলক্রুটি হয়ে গেল আয়াশের প্রতি যা নূরের করা উচিত হয়নি ৷ভাবনা বেদনা বাড়ায় নূরের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হলো না, চোখ থেকে হঠাৎই টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়াই নূর তাড়াতাড়ি করে জলটা মুছে নিলো ৷ আয়াশ একদিন বলেছিলো ওকে
” কখনো অনুভতি ব্যাক্ত করতে নেই তাহলে তা সস্তা হয়ে যাই ৷”

তাহলে এখন কি নূরের অনুভূতি গুলো আয়াশের কাছে সস্তা ?
কথাটা আর বেশি মনোযোগ দিয়ে ভাবতে পারলো না নূর,তার আগেই গাড়ির জানালায় আঙুল দিয়ে কড়া নড়ার মতো এক খটখটানি আওয়াজ তৌরি হলো যাতে নূরের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটলো ৷ জানালার কাঁচটা নামাতেই দেখলো বছর দশেকের এক ছেলে গামছা মাথায় দিয়ে মাথা নীচু করে গুটিশুটি মেরে বলল
” আফা ওই ভাইয়াটা আপনারে সেথায় যাইতে কইলো ৷”
নূর গাড়ি থেকে নামতে গেলেই ছেলেটা নুরের হাতে একটা ছাতা ধরিয়ে দিয়ে বলল
” আপা এই যে ছাতাটা লন আর আইয়া পড়েন তাড়াতাড়ি ৷”
নূর ছেলেটাকে ভিজে ভিজে না গিয়ে ওর ছাতায় করে যেতে বলবে তার আগেই ছেলেটা দৌড় দিলো, তবুও নূর খানিকটা উচ্চস্বরে ডেকে বললো
” এই ছেলে এই , ভিজছো কেন থামো ৷”

কে শোনে কার কথা, ছেলেটা দৌড়ালো টিপটিপ বৃষ্টিতে গামছা মাথায় ৷ পেট চালানোর জন্য, নিজেদের পরিবারের মানুষদের মুখে দু মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য নিজেদের গোটা ছেলেবেলা বিষর্জন দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে তাই তারা এসব কাজে অভ্যস্ত ৷নূর ছাতাটা মেলিয়ে নামতেই দেখলো বাইরে প্যাচপ্যাচে কাঁদা , নুরের কোমরের ব্যাথাটা কমেছে কিন্তু একেবারে ঠিক হয়নি তাই সাবধানেই চলাফেরা করতে হবে নাহলে যখন তখন পা পিছলে গেলে কোমর ভেঙে একাকার হবে ৷ নূর বেশ পা টিপেটিপে হাটতে শুরু করলো, আয়াশকে দেখা যাচ্ছে, তবুও বৃষ্টির মাঝে আয়াশের দৃশ্যটা স্পষ্ট না ৷ নূরের সমগ্র শরীরটা না ভিজলেও শাড়ির পাড় আর আঁচলের খানিকটা অংশ ভিজে গেল ৷

আয়াশের সামনে গিয়ে ছাতাটা রেখে শাড়ির আঁচলটা ঝাড়তে গেলেই দেখলো আয়াশ খাওয়া শুরু করে দিয়েছে, বিষয়টা নূরের একদম ভালো লাগলো না, ও না আসার আগে কিভাবে আয়াশ খাওয়া শুরু করে দিতে পারে নূর জানেনা ৷ শাড়ির অবশিষ্ট অংশটার জল না ঝরিয়ে ধপ অরে বসে পড়লো যাতে কোমরে খানিকটা হলেও ব্যাথা পেলো কিন্তু এই মুহূর্তে আয়াশের প্রতি রাগের কাছে ব্যাথাটা নেহাতই ক্ষীন ৷ এতো বিরহ আর সহ্য করা যাই না , নূরের নিজের ও একটা সহ্য ক্ষমতা আছে আর যার সীমাটা নেহাতই কমে কমে আসছে ৷ নূর এবার খানিকটা ঝাঁঝিয়ে বলে উঠলো

” এই আপনি কেমন মানুষ হ্যাঁ! আমি আসার আগেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন ৷ স্ত্রীকে রেখে কেউ খাই? তাছাড়া আমরা দুজন তো একসাথেই বেরিয়েছি নাকি আলাদা বেরিয়েছি কোনটা?”
আয়াশ মুখের হালিমটুকু শেষ করে পরোটাটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল
“কেন খেতে পারবোনা ? তাছাড়া তুমি না আমাকে ভালোবাসো তাহলে আবার কি !”
কথাটা শুনে নূরের ভ্রূ কুঁচকে এলো, তারপর ভ্রু কুঁচকে বলল
” তো ?”
আয়াশ পরোটাটা ছিঁড়ে বলল

” তুমি জানো না যে পেয়ার আন্ধা হোতা হে ? টিভিতে দেখোনি বলতে ! প্রায় সিনেমাতেই তো বলে ‌৷”
নূরের ভিতরকার বিরক্তির মাত্রাটা বাড়তে লাগলো,,,,,কোন কথার কিভাবে লজিক দেখাচ্ছে মানুষটা ?
নূরের ভিতরে তর্ক করার ইচ্ছাটা মরে গেল, কান্না পাচ্ছে ভীষন, ঠোঁট জোড়া ফুঁপিয় ওঠার উপক্রম ,,মাথা নীচু করে বসে আছে ৷ হঠাৎ আয়াশ বলে উঠলো
” শুনেছি ভালোবাসা বেশি হলে প্রেমিক খেলে নাকি প্রেমিকার আর ক্ষিদে থাকে না আবার প্রেমিকার খাওয়া হলে প্রেমিকের ক্ষিদে থাকে না তারপর চুমু দিলে বলে জ্বর সেরে যাই এক্সেট্রা এক্সেট্রা…..”

নূর আয়াশের দিকে তাকালো মুখ ভার করে, মানুষটা এমন কঠিন হৃদয়ের কেন,বোঝা মুশকিল যে কখন কি চায় ! এই বরফ তো এই জল ৷ নূর আয়াশের দিকে ছলছল চোখে একবার তাকিয়ে মাথা নীচু করে নিলো, ওর সামনে প্লেট ও নেই কোন, টেবিলে কেবল একটাই প্লেট যেটাতে শুধু আয়াশ খাচ্ছে ৷ হাত হাত রেখে মাথা নীচু করে বসে আছে নূর ৷হঠাৎ আয়াশের কন্ঠস্বর শুনলো
” হা করো ৷”
নূর মাথা উঁচু করলো, আয়াশ ওর সামনে খাবার ধরে আছে , আয়াশ হঠাৎ মুখটা নীচু করে নিলো আর খাবারটা আগের মতোই ধরে রেখেছে ৷ নূর একবার বোঝার চেষ্টা করলো তারপর আরও কিছুটা ভাবার সময় নেবে তখন আয়াশ একটু জোর গলায় বলল
” হা করো ৷”

নূর আর ভাবার সময় পেলো না, তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলল আয়াশের হাত থেকে ৷ হঠাৎ আবার আয়াশ বলে উঠলো
” ছলছল চোখে আমার দিকে তাকাবে না কখনো, নিজেকে কেমন নিষ্প্রান আর শক্তিহীন বলে মনে হয় ৷”
হঠাৎ এমন কথা শুনে নুরের গলায় খাবার আটকে যাওয়ার উপক্রম, মানুষটার হলোটা কি?
নূর জল খেয়ে আয়াশের দিকে তাকাতেই আয়াশ বললো
” ভালোবাসা হলো মানুষের সবচেয়ে বড়ো দূর্বলতা , আর যে খুব সহজেই ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে ফেলতে পারে তার মূল্য আর বাস্তবতা অপর মানুষটির কাছে তত দ্রুত কমতে থাকে ৷”
নূর ভাবুক সুরে বলল

” তাহলে কি আমার বাস্তবতা আর মূল্যও কি আপনার কাছে কমে গেছে ? আর তা এত দ্রুত ?”
নূরের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াশ বলল
” আচ্ছা তুমি যদি কখনো জানো যে আমি তোমার সাথে বৈবাহিত সম্পর্কে থাকা সত্বেও আমি অন্য নারীতে মজে থাকি কিন্তু তোমাকে তা কখনোই বুঝতে দিইনা , তাহলে তখন তোমার কেমন লাগবে কথাটা শুনে ?”
আয়াশের বলা কথাটা শুনে নূরের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো তারপর খানিকটা কাঁপা কন্ঠে বলল
” মানে আপনি বলতে চাইছেন যে আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন তাইতো ?”

আয়াশ মুচকি হেসে আর এক টুকরো পরোটা নুরের মুখের সামনে ধরতেই নুর আয়াশের হাতটা নামিয়ে দিয়ে বলল
” আপনি আগে আমার কথার উত্তর দিন তারপর বাকি কথা হবে ৷”
” এটা আগে খাও,অনেক লম্বা একটা গল্প শোনাবো তোমাকে ,তাই খেতে খেতে শোনো ইনটারেস্টিং লাগবে ৷”
নূরের খাওয়ার ইচ্ছা নেই তবুও আয়াশের কথায় আটকা পড়ে ওকে খেতে হচ্ছে ৷
“শুরু করি ?”
নূর কিছু উত্তর দিলো না, আয়াশ বলতে শুরু করলো

” অনেক বছর আগের কথা ,কোন এক অচিনপুরে এক রাজকন্যা ছিলো যে কিনা অপরুপ সুন্দরী, আশেপাশের গ্রাম থেকে কতো রাজপুত্র,জমিদার ,মনিবের ছেলে তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিতো কিন্তু তার বাবা সুযোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন ৷ দূর দূরান্তে তার রুপের প্রশংসা শোনা যেত, কিন্তু সেই রাজকুমারীর মাঝে কোন অহংকার ছিলো না তার নিজের রুপ নিয়ে, তার চালচলন ছিলো বড্ড স্বাভাবিক সাধারন মানুষের মতোই , অপর দিকে রাজকুমারীর এক বড়ো ভাই আর বোন ছিলো,বড়ো ভাই ছিলো বিবাহিত, রাজ্যের কাজে তিনি বেশির ভাগ সময়ই বাইরে থাকতেই , স্ত্রীকে বেশি সময় দিতে পারতেন না ৷ রাজকুমারীর ছোট বোন ছিলো বেশ চঞ্চল আর দুষ্টু প্রকৃতির, বেশ ছন্নছাড়া ৷”

নূরের শুনতে বেশ ভালো লগছে তাই উৎসাহের সাথে কিছুখন পরপর বলছে
” তারপর !”
এর মাঝে আয়াশ ও নূরকে খাইয়ে দিচ্ছে ৷ আয়াশ আবার বলতে শুরু করলো
” রাজকুমারী তার পরিবারকে অনেক ভালোবাসতো, তাই তার নিজস্ব জীবনের সব সিদ্বান্ত তার পরিবারের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলো ৷ তো বেশ চলছে এইভাবে , রাজকুমারীর সমন্ধ আসে কিন্তু রাজকুমারীর বাবা মানে রাজা তিনি কোন না কোন কারন দেখিয়ে রাজি হতেন না ৷তারপর হঠাৎ একদিন রাজকুমারী জানলো তার স্বপ্নের রাজকুমার তার জীবনে আসতে চলেছে, আগামী মাসে তার বিয়ে কোন এক নাম না জানা রাজ্যের রাজকুমারের সাথে ৷

বিয়ের আগে কেউ কাউকে দেখেনি , বিয়ের দিন সেই রাজকুমারীকে দেখে একপ্রকার তাক লেগে গিয়েছিলো রাজকুমারের ৷ তাদের বিয়ে হয় , রাজকুমার এমন রুপবতী বউ পেয়ে তো ধন্য যাকে বলে, তারপর বিয়ের পর রাজকুমারী তার বাপের বাড়ি যায় সাথে তার স্বামী মানে সেই রাজকুমার ও যান ৷ তারপর কথা আলাপে জানতে পারে রাজকুমারীর ভাবী তিনি দিনের অর্ধেকটা সময় মনমরা হয়ে থাকেন তারপর সেই কথা শুনে রাজকুমার তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করে যা রাজকুমারী অত্যন্ত স্বাভাবিক দৃষ্টিতে নিয়েছিলো ৷ নারীর মোহে মে পুরুষ একবার আটকা পড়ে যায় মহসেই মোহ কাটানো দুষ্কর , কথাটা সত্যি প্রমান করে রাজকুমার রাজকুমারীর ভাবীর মোহে জড়িয়ে পড়েন একরকম ভাবে ৷”

কথাটা শুনে নূরের নিশ্বাস আটকে এলো, ঢকঢক করে জল খেয়ে বলল
” ওয়েট , একটু শ্বাস নিই, বড্ড দম আটকে আসছে ৷”
আয়াশ একটু ব্যাস্ত হয়ে বলল
” কেন কষ্ট হচ্ছে তোমার ?”
নূর মাথা নাড়িয়ে বলল
” হ্যাঁ ভীষন তবে আপনার গল্প শুনে ৷ বলুন তারপর !”
আয়াশ মুচি হেসে বলল

” তারপর আর কি ? যা হওয়ার তাই, রাজকুমারী কখনো বুঝতে পারেনি তার স্বামীর এমন গোপন সম্পর্কের কথা ৷ তারপর রাজকুমারী তার নিজের বাপের বাড়ি না গেলেও রাজকুমার ঠিক তার শ্বসুরবাড়ি যেত বেশ ঘনঘন, সবাই তা তখন স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখতো , কারন এমন জামাই পাওয়া দুষ্কর যে শ্বশুর বাড়ির মানুষদের কে এতো খেয়াল রাখে ,তাই তার ওপর সন্দেহের আঙুল ওঠার সম্ভবনা ছিলো ক্ষীন ৷

তারপর একদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজকুমারীর ছোট বোন খুব সাধারন আর মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলের সাথে পালিয়ে যাই ‌যা কেউ মেনে নিতে পারেনি অতঃপর তাকে ত্যায্য কন্যা করা হয় , আর সেই দিন রাজকুমরীর ছোট বোনকে খুঁজতে খুঁজতে ধরা পড়ে যাই রাজকুমারীর স্বামী আর তার ভাবীর এই গোপন সম্পর্কের কথা ৷ রাজকুমারী কখনো কল্পনাতেও আনেনি যে তার যে স্বামী তিন বেলা তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেন তিনিই এমন পরনারীতে আসক্ত হবেন, এ সম্পর্কের নাম ও রাজকুমারীর জানা ছিলো না, কিন্তু খবরটা রটে উঠতেই তার কানে উঠলো ” পরকীয়া ” নামক শব্দটা ,যেই শব্দের সাথে তাদের বংশের প্রতে্্যকটা পুরুষ জড়িত ৷”
নুর এবার খাওয়া থামিয়ে বলল

” তারপর সেই রাজকুমারী কি তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গেল?”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” নাহ ! সে তার স্বামীকে গোপনে একটা দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছিলো যা তার স্বামী কখনো বুঝেই উঠতে পারেনি কিন্তু যখন বুঝেছিলো তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো ৷ তারপর এভাবেই চলল তাদের কয়েক বছর জীবন….”
নূর কৌতুহল নিয়ে বলল
” আরে তারপর কি হলো বলুন না ?”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল

” সেই রাজকুমার আজও ক্ষমা প্রার্থনার অপেক্ষায় অপেক্ষরত ৷”
” কেন রাজকুমারী বুঝি আর নেই , আর দেরিই বা হয়ে গিয়েছিলো কেন ?”
” আছে হয়তো কোথাও গোপনে,ধরা ছোঁয়ার বাইরে যাকে চাইলেও কেউ ধরতে পারবে না ৷”
নূর মন খারাপ করে বলল
” রাজকুমারীর কি কষ্ট ৷ যাই হোক তারপর রাজকুমারীর ছোট বোনটার কি হলো ?”
আয়াশ কথাটা শুনে হো হো করে হেসে বলল
” এটা না হয় সিকরেট থাক অন্য কোন দিন বলবো কারন তার কাহিনী আরও লম্বা ৷”
আয়াশ হাতটা ধুঁয়ে নূরকে বলল
” গল্পটা বলার উদ্দেশ্য কি জানো ?”
নূর অবাক হয়ে বলল
” কি ?”

” এই পুরো খাবারটুকু তোমাকে খাওয়ানো, দেখো তোমার খাওয়া শেষ ৷”
নূর প্লেটের দিকে তাকালো, হ্যাঁ ওর খাওয়া শেষ, গল্প শুনতে শুনতে কখন যে দুটো পরোটা আর হালিমটা খেয়ে ফেলেছে মনে নেই ৷ নূর অবাক হয়ে বলল
” তাইতো ! কিন্তু আপনি তো খেলেন না ?”
আয়াশ চোখ টিপ মেরে বলল
” কই আমার তো পেট ভরা, এই যে তুমি খেলে তাই আমার ও খাওয়া শেষ ৷ পুরো ফিল্মী ৷ জোশ ‌৷”
নূর মুচকি হসলো, অনুভূতিগুলো এখন ক্রমশ স্বাভাবিক ৷ আয়াশের বলা সেই রাজকুমারীর গল্পের শেষ অধ্যায়টুকু আয়াশেথনর নিজের ও জানা নেই, জানলে হয়তো আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ পাওয়ার মতো খুশি হতো ৷
খাবারের টাকা দিয়ে আয়াশ আর নূর গাড়িতে উঠলো ৷আয়াশ গাড়ি স্টার্ট দেবে তখন নূর বলে উঠলো

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩১

” একবার আফু সোনা বলে ডাকুন না প্লিজ ৷”
আয়াশ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
” কেন ?”
নূর একরাশ আনন্দের সাথে বলল
” আপনার আফু সোনা ডাকটা শুনলে মনে হয় যে আপনি শুধু আমার ৷”
আয়াশ নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” তাই নাকি ?”
নূর রেগে বলল
” হমম তাই কিন্তু সকাল জেকে একবার ও আফু সোনা বলেনি , আগে বলুন তাড়াতাড়ি ৷”
আয়াশ চোখ টিপ মেরে বলল
” ডেভিলরা এতো রোমান্টিক ডাক ডাকে না ৷”
নূর বিরক্ত হয়ে বাইরের দিকে তাকালো, আয়াশ ড্রাইভ করা শুরু করলো ৷
বৃষ্টি আর নেই,ভোর কাটিয়ে আলো ফুটছে,এখনো একটা দীর্ঘ যাত্রা বাকি তবে এখনো জানা হলো না রাজকুমারীর ছোট বোনের গল্প তবে হয়তো জানবে কখনো !
আয়াশ হঠাৎই মুচকি হেসে বলল

” আফু সোনা চলোনা আমরা রাজকুমারীকে খুঁজি !”
নুর অবাক হয়ে চেয়ে বলল
” কীভাবে ?”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” জানিনা ৷”
নূরের মনটা খারাপ হয়ে গেল ৷তারপর মনমরা হয়ে বলল
” আচ্ছা রাজকুমারীর ছোট বোনের গল্পটা তো জানেন তাহলে সেটা বলুন !”
আয়াশ ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল
” ওটা হলো কনফিডেন্টশিয়াল !”
নূর ভাবান্তর ঘটিয়ে বাইরে তাকালো ৷

তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৩৩