তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩৪

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩৪
writer Mousumi Akter

হালকা হালকা শীত পড়েছে।সময় টা বাংলা আশ্বিন মাস।বিদ্যুৎ নেই,ঘর অন্ধকার দেখাচ্ছে।জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে দিলাম।জানালা দিয়ে সাথে সাথে আলো ভরে গেলো রুমে।বিয়ের পাঁচ মাস হয়ে গিয়েছে।বিভিন্ন ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়েও কোথাও চান্স হয়নি।ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি যশোর এম.এম.কলেজ এ।অনেক দিন বাড়ি থেকে এসেছি বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি।এখানে কলেজ, কোচিং সব খোলা।আয়াস অফিসে আছে রাত দশটায় ফিরবে।আয়াসের মামা-মামির ঘটনা টা সারাক্ষণ যেনো চোখের সামনে ভাষতে থাকে আমার।আম্মুর ওই কাঁন্না ভুলতে পারিনা আমি।অনেক কিছুই রহস্য থেকে গিয়েছে আমার কাছে।রুমে বসে নিজে নিজে এসব ভাবছি আমি।এরই মাঝে কুসুম ভাবি আমাকে ডাকলেন।কুসুম ভাবি প্রেগন্যান্ট। আমি ভাবির ডাকে ছুটে গেলাম।ভাবি আমাকে ডেকে বললো,

“তোমার ভাইয়াকে মাঝে মধ্য একটু তরকারী দিও মুগ্ধতা।কাল আমি মায়ের কাছে চলে যাচ্ছি।আর পনেরো দিন পরে আমার ডেলিভারি ডেট।এখানে তোমার ভাইয়া ছেলে মানুষ সে তো কিছুই বুঝবে না এসব ব্যাপারে।তাই যেতে হচ্ছে।আমি যেতাম না যেতেই চাচ্ছি না।কিন্তু তোমার ভাইয়া শুনছেই না।আমাকে পাঠাবেই এটা কেমন কথা বলোতো।”
“আমি হেসে বললাম,আসলে ভাবি ভাইয়ার মতো এত ভালবাসতে আমি কাউকে দেখিনি।আপনার কপাল সত্যি অনেক ভালো জানেন।ভাইয়ার এত ভালোবাসা পেয়েছেন।”
“এইজন্য খুব ভয় হয় মুগ্ধতা জানো।কারো নজর না লাগে।”
“আরে না না ভাবি।কারোর নজর লাগবে না।ভালবাসা সত্য হলে এসব নজরে আরো ভালবাসা বাড়ে।”
“আয়াস ভাই ও তোমাকে ভীষণ ভালবাসে কিন্তু।”
“তা বাসে। ”
“তার নাম শুনেই এত লজ্জা পাচ্ছো।এবার একটা বেবি নিয়ে নিবা।নাকি লেখাপড়া শেষ করতে চাও।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“সত্যি বলতে ভাবি আমার কিন্তু এক্ষুনি বেবির শখ।কিন্তু আয়াস উনি তো বলে দু’বছর দেরি করতে।বাচ্চা নিয়ে নাকি পড়তে পারবো না।”
“তোমার ভাইয়া ও এসব বলে বলে লেট করেছেন এতদিন।”
“”সব পুরুষ ই এমন।তবে একটা কথা বলি আপনার কানে কানে কুসুম ভাবি।কাউকে বলবেন না কিন্তু।আমি কিন্তু গত দু’মাস কোনো ফ্যামিলি প্লানিং এর আশ্রয় নিচ্ছি না।কিন্তু আয়াস এসব জানেনা।সে ভাবে তার বউ এসব কম বোঝে।এসবে তার বউ এর মাথা ব্যাথা নেই।কিন্তু আমি নিজে নিজে ওসব প্লানিং টিলানিং বাদ দিয়েছি।আমার এত লেখাপড়া ভালো লাগেনা।মনে চায় দু’চারটা বেবি নিয়ে মন দিয়ে সংসার করি।”

“তুমি তো খুব দুষ্টু। আমি সত্যি অবাক হচ্ছি।তুমি আয়াস ভাই কে ফাঁকি দিয়ে এসব করছো।তবে শোনো লেখাপড়া ও করতে হবে কিন্তু।কোনো ফাঁকি দেওয়া যাবেনা।তবে একটা কথা কি জানো সংসার জিনিস টা মেয়েদের রক্তে মিশে আছে।”
“হ্যাঁ সিওর লেখাপড়া করবো ভাবি।নাহলে আয়াস আমাকে পিটানি দিবে।”
“কোনো গুড নিউজ হলে আমাকে জানাবে কিন্তু।”
“জানাবো ভাবি।”
পরেরদিন কুসুম ভাবিকে সব গুছিয়ে দিলাম।ভাবি প্রাইভেট কারে করে চলে গেলো।ভাবির হাজবেন্ড ভাবিকে বিদায় দেওয়ার সময় বুকে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিলেন।ভালবাসা সত্যি সুন্দর।বাসাটা কেমন যেনো ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেলো।সেদিন সন্ধ্যায় আয়াস একটু দ্রুত বাসায় ফিরে এলো।একভাবে কলিংবেল চেপে যাচ্ছে।আমি দরজা খুলতেই কপালের ঘাম মুছতে মুছতে একটা প্যাকেট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“দ্রুত খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাবে বেবিডল।”
আমার জন্য গরম গরম সিঙ্গারা আর পুরি নিয়ে এসেছে সেটা আর বুঝতে বাকি নেই।কেননা বেরোনোর সময় বলে দিয়েছিলাম সিঙ্গারা আর পুরি আনতে।প্যাকেট টা রেখে বললাম,

“যখন নিজের বেবি হবে তখন ও কি আমাকে বেবিডল ডাকবেন।”
“ডাকবো।”
“ছিঃবাচ্চারা কি বলবে তাহলে?”
“বাচ্চারা মানে?এত বাচ্চা কই পাচ্ছো।”
“আল্লাহ যতগুলো বাচ্চা দিবে আমাদের তত গুলো ই হবে।”
আয়াস কপাল টানটান করে আমার দিকে রইলো।আর বললো,
“সমস্যা নেই হোক আমাদের বেবি।তার মেয়ের যত গুলো সন্তানের মুখে মা ডাক শুনতে ইচ্ছা করে ততগুলো ই সন্তান হবে।আমার আর কিসের কষ্ট।তুমি যদি পারো আমার কাছে কোনো ব্যাপার ই নাহ।”
“ফাজিল কোথাকার,অসভ্য লোক।আমি সত্যি বলছি কিন্তু।”
“আমি কি মিথ্যা বলছি।যতদিন মা হওয়ার ক্ষমতা থাকে তুমি মা হতে থাকবে।শুধু সন্তান লালন পালনের উছিলায় আমাকে সময় কম দিবে তা কিন্তু হবেনা।আমার জন্য বরাদ্দকৃত ভালবাসা রোজ আমাকে বাসতে হবে।”

আয়াসের কথা শুনে আমি হাসলাম।আয়াস আমার নাক টেনে বললো,
“একটা চা খাওয়াবে।বউ স্পেশাল একটা চ খেতে চাই।”
“আপনি আসবেন বলে আমি চা বানিয়ে ফ্লাক্সে করে রেখে দিয়েছি।”
আয়াস কপাল টান টান করে বললো,
“ভাবতেই অবাক লাগে এত কেয়ার একটা বউ আমার।”
“ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিয়ে বললাম,শার্ট আয়রণ করে রেখেছি। এটা কেমন ঘেমে বিশ্রি গন্ধ হয়ে গিয়েছে।চেঞ্জ করে যান।”
“আমি তো চা খাচ্ছি।এই শার্ট টা খুলে অন্য একটা পরিয়ে দাও প্লিজ।”
আয়াসের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম,
“সত্যি সত্যি বেবি নিলে কেমন হয় বলুন তো।”
“বেবি যখন হবে এমনি হবে।এটা নিয়ে ভাবা লাগবে না একটুও।”
গায়ের শার্ট টা খুলে ওয়াশরুমে নিয়ে হুইল পাউডারে ভিজিয়ে রেখে এসে আয়াস কে আয়রণ করা শার্ট টা পরিয়ে দিলাম।বোতাম লাগাতে লাগাতে বললাম একটু আদুরে কন্ঠে বললাম,
“এই কখন ফিরবেন?
“যাবো আর আসবো।”

“আজ থেকে গেলে হয়না বাসায়।রোজ ই তো বাইরে যান।আজ না গেলে হয়না।”
আয়াস আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“এভাবে বলোনা, আমি তাহলে আজন্ম এখানে আটকে যাবো।কোনো কাজে মন বসবে না।”
“আচ্ছা এভাবে বলবো না।আজ একটু দ্রুত আসবেন কিন্তু।”
“আমি একটু সময়ের জন্য যাচ্ছি একটা কাজ আছে।কিছুক্ষণ পরে ফিরবো বেবিডল।ওপ্স সরি বেবিদের আম্মু বেবিডল।সাবধানে থেকো কিন্তু বেবিডল।”
আমি হাসি মুখে আয়াস কে বিদায় জানিয়ে কিচেনে প্রবেশ করলাম।রান্নার জিনিস গোছাচ্ছি।কম বয়সী একটা মেয়ে আছে প্রায় আমার বয়সী ই হবে।সে এসে আমাকে একটু হেল্প করে দিয়ে যায়।তবে সকালের দিকেই আসে।কিছুক্ষণ পরে দেখলাম,আধাবয়সী একজন মহিলা কুসুম ভাবির ফ্ল্যাটে প্রবেশ করছে।দেখে মনে হচ্ছে ভাবি চলে গিয়েছে তাই নতুন কাজের বুয়া রেখেছে।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩৩

আধাঘন্টা পরে কলিং বেল বেজে উঠলো।আয়াস এসছে ভেবে দরজা খুলতে খুলতে বললাম তুমি চলে এসেছো।কিন্তু দরজা খুলেই চমকে গেলাম আমি।দরজায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা ফর্সা একটি ছেলে।যার হাত এ ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কুচি কুচি করে কাটা। ফ্লোর র;/ ক্তে ভিজে আছে।হাত দিয়ে র/ক্ত পড়েই যাচ্ছে।আমি দেখেই রিতীমত ভয় পেয়ে গেলাম।ছেলেটির মাথার সামনের লম্বা চুল মুখের উপর পড়েছে।আমি দরজা খুলতেই চুল সরিয়ে আমার দিকে তাকালো।ছেলের চোখ দুটো রক্তজবার মতো হয়ে আছে।ছেলেটি এক নয়নে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।শার্টের বোতাম খোলা,খালি গায়ে অজস্র আঘাতের চিহ্ন।এই আঘাত গুলো ও ব্লেড বা ছুরির।ভূমিকম্পণের মতো আমার পুরা দুনিয়া কাঁপছে।আমি একটা চিৎকার দিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকলাম।এমন দৃশ্য দেখে ভ*য় পেয়ে গেলাম।হাত পা সমস্ত শরীর থর থর করে কাঁপছে।মাথার মাঝে চক্কর মেরে উঠলো আমার।ছেলেটির তীক্ষ্ণ নজর আমার দিকে।দেখে মনে হচ্ছে নেশা করেছে এমন মাতাল দেখাচ্ছে।নিজেকে নিজে এত আঘাত করে কিভাবে স্বাভাবিক হয়ে আছে সে।

তুমিময় বসন্ত পর্ব ৩৫