বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৪

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৪
লেখিকা: তানজিল মীম

আজ লিলির গায়ে হলুদ। পুরো বাড়ি জুড়েই যেন বিয়ে বিয়ে গন্ধ বেরিয়ে গেছে। আজ সন্ধ্যায় হলুদ হবে আর কাল দুপুরে বিয়ে। বর্তমানে পুরো বাড়ি সাজগোছের তোড়জোড় পড়ে গেছে। সাধারণত বাড়ির সামনের বড় মাঠে প্যান্ডেল সাজানো হবে। বর্তমানে সেটা করতেই ব্যস্ত সবাই।’

‘এলেমেলোভাবে খোলা চুলে,সাদা রঙের থ্রি-পিচ সাথে চোখে চশমা পড়তে পড়তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে অথৈ। সকালের ঘুমের রেশটা এখনো কাটে নি তাঁর। মাত্রই ঘুম থেকে উঠে হাল্কা ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয় অথৈ। পুরো বাড়িটাতে ফুলের সুবাসে ভরে আছে সাথে পুরো বাড়ি জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফুল। সিঁড়ির রেলিংগুলোকেও সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। অথৈ নিচে নেমে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো তাঁর মাকে। কিন্তু কোথাও তাঁর মা নেই হঠাৎই চোখ যায় অথৈর লিলির ছোট বোন নিলুর দিকে। অথৈ ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘ নিলু মা কোথায় রে?’
ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলা করছিল নিলু হুট করেই অথৈর কথা শুনে বললো সে,
‘ কাকিমা তো আম্মুর সাথে বাহিরে গেছে?’
‘ কি কেন?’
‘ ওই আপুর বরের জন্য কি জানি আনা হয় নি সেটাই আনতেই গেছে।’
‘ আর লিলি আপু কোথায়?’
‘ লিলি আপু, তা তো জানি না।’
‘ ওহ ঠিক আছে।’
‘ হুম।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলেই বাচ্চাদের সাথে খেলায় মেতে উঠলো নিলু। নিলুর কাজ দেখে অথৈও আর কিছু না বলে বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে চললো বাহিরের দিকে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে তাঁর। এই জন্যই অথৈ কোথাও আসতে চায় না। বেশি মানুষদের ভিড়ে নিজেকে কেমন যেন এলিয়েন এলিয়েন আর একা একা মনে হয় অথৈর। অথৈ গায়ের ওড়নাটা মাথায় জড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হলো। বাহিরে প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে। অথৈ আশেপাশে দু’পলক তাকিয়ে হাতে থাকা ফোনটা নিয়ে মাকে একটা ফোন করলো প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে তাঁর। এরই মাঝে বাহিরে লাউডে গান বাজতে শুরু করলো। এতে যেন বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে অথৈ। গান বাজনা বিয়ে এইসব একদমই পছন্দ করে না অথৈ। কেমন যেন অস্থিরতা আর বিরক্ত লাগে তাঁর। অথৈ বুঝে উঠতে পারে না গায়ে হলুদ সেই সন্ধ্যাবেলা আর এখন কেবল সকাল দশটা না এগারোটা বাজে এখনই কেনো লাউডে গান ছাড়া লাগে। অথৈ লাউডস্পিকারের দিকে একপলক তাকিয়ে মোবাইল হাতে হাঁটতে হাঁটতে একদম প্যান্ডেলের মাঝখানে চলে যায় তাঁকে কেন্দ্র করেই উপরে প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছে যেটা আপাতত খেয়াল করে নি অথৈ। প্রথম কলে মা ফোন না তুললেও দ্বিতীয় কল তুলতেই অথৈ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো,

‘ আম্মু কোথায় তুমি? আমায় কিছু না বলেই চলে গেলে আমায় নিয়ে যেতে পারতে তো?’
অথৈর কথা শুনে অপরপাশে অথৈর মা বলে উঠল,
‘ আরে তুই তো ঘুমিয়ে ছিলি তাই তো ডাকি নি, তবে চিন্তা করিস না আমাদের হয়ে গেছে এক্ষুনি ফিরছি আমরা। তোর ব্রেকফাস্ট রান্নাঘরে রাখা আছে খেয়ে নিস।’
‘ ব্রেকফাস্ট লাগবে না তুমি আগে এখানে আসো আর লিলি আপু কো…
আর কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে গেল অথৈর। একদিকে লাউডে মিউজিকের কারনে ঠিকমতো তেমন কিছু শুনতে পেলো না অথৈ তারওপর ফোন কেটে গেল রাগে যেন মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো তার। অথৈ রেগেমেগে এইবার লিলিকে কল করলো সকাল সকাল গেল কই মেয়েটা?’

এমন সময় বাড়ির গেটের ভিতর ঢুকলো নীরব আর রবিন। নীরবের পরনে ব্লাক কালার শার্ট আর ভিতরে ওয়াইট টিশার্ট সাথে ব্লাক জিন্স, চুলগুলো বরাবরের মতোই সুন্দর করে সাজানো, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। নীরবকে দেখেই আশেপাশের কিছু মেয়েরা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।তবে সেসবের দিকে নীরবের কোনো হুস নেই কারন তাঁর চোখ তো খুঁজছে অথৈকে। অথৈর চিন্তায় কাল রাতে ঘুম হয় নি নীরবের। হঠাৎই রবিন সামনের দিকে হাত দেখিয়ে বলে উঠল,
‘ ওই তো অথৈ চল সবার আগে তোকে অথৈর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই?’
রবিনের কথা শুনে নীররও তাকালো সামনে, এলেমেলো ভাবে ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। অথৈর চেহারা দেখে নীরব বুঝতে পেরেছে কোনো কারনে অথৈ বিরক্ত। নীরব রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এখন লাগবে না পড়ে কথা বলবো ওর সাথে?’
‘ কিন্তু এখন করলে কি সমস্যা দেখতে হবে না অথৈর তোকে মনে আছে কি না?’
‘ এখন দরকার নেই আমার মনে হয় ও কোনো কারনে ডিপ্রেসড।’
‘ আরে কিছু হবে না চল..
বলেই চললো নীরব আর রবিন অথৈর দিকে।
রবিনকে যেতে দেখে নীরবও আর বেশি না ভেবে চললো অথৈর দিকে হয়তো এটাই সুযোগ অথৈর সাথে কথা বলার। আনমনেই এগোচ্ছে নীরব অথৈর দিকে আর তাঁর পাশেই রবিন।’
এদিকে লিলি ফোন না তোলাতে বিরক্তি নিয়ে উল্টোদিকে ঘুরলো অথৈই পরক্ষণেই নীরব আর রবিনকে তাঁর দিকে আসতে দেখে হাল্কা থমকে গেল সে। নীরব তাঁর দিকেই আসছে, কেমন যেন হার্টবিট বেড়ে গেল অথৈর। হুট করে কেমন কেন লাগছে বুঝতে পারছে না অথৈ, নীরবকে তো সে প্রথম দেখছে না তাহলে। হয়তো নীরব তাকে প্রপোজ করেছিল তাঁর জন্যই এমন হচ্ছে।’

‘ আচ্ছা নীরব কি বলার জন্য এখানে আসছে? যদি প্রশ্ন করে আমি ভার্সিটি ছেড়ে চলে কেন এসেছি তাহলে? বা সবার সামনে যদি উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করে বসে তখন?’
এরকম হাজারো কথা মাথায় এসে আঁটকে যাচ্ছে অথৈর। অথৈ আনমনেই একটু পিছিয়ে গেল। কেমন যেন হাল্কা ভয় লাগছে তাঁর।’
রবিন আর নীরব হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলো একদম অথৈর সামনে। অথৈ বরিনকে দেখে হাল্কা হাসলো কিন্তু কিছু বললো না। রবিন অথৈর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কিরে সারাদিন কোথায় থাকিস বল তো, তোকে তো খুঁজে পাওয়াই যায় না?’
‘ কোথায় আর থাকবো বাড়িতেই থাকি।’
‘ হুম বুঝতে পারছি,
এতটুকু বলে নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো রবিন অথৈকে,
‘ মিট আমার ছোট বেলার বন্ধু নীরব।’
রবিনের এবারের কথা শুনে এবার কি বলবে অথৈ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। হাল্কা অসস্থিতা ফিল হচ্ছে অথৈর। অথৈর অবস্থা বুঝতে পেরে নীরব নিজেই বলে উঠল,

‘ কেমন আছো?’
নীরবের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা কেঁপে উঠলো অথৈই। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,
‘ জ্বী ভালো আপনি?’
‘ হুম ভালো।’
ওদের দুজনের কথা শুনে রবিন বলে উঠল,
‘ কি আপনি আপনি করছিস তুই জানিস ও কে?’
এবার বেশ অবাক হয়েই বললো অথৈ,
‘ কে উনি?’
‘ আরে ওই যে ছোট বেলায় তুই আর ও
আর কিছু বলার আগেই ডাক পড়লো রবিনের লিলির বাবা ডাক দিয়েছে তাঁকে। চাচার ডাক শুনে রবিনও আর কিছু বলতে না পেরে বলে উঠল,

‘ কাকা ডাকছে তোরা দুজন কথা বল আমি এক্ষুনি আসছি?’
উওরে অথৈকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় রবিন। অন্যদিকে নীরব নীরবেই তাকিয়ে আছে অথৈর মুখের দিকে। নীরবের চোখের দিকে একপলক তাকিয়েও তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেললো অথৈ। অথৈর কাজে হাল্কা হেঁসে বললো নীরব,
‘ আমার চোখের দিকে তাকাতেও কি ভয় হয় নাকি তোমার?’
নীরবের কথা শুনে হাল্কা ঘাবড়ানো মাখা কন্ঠ নিয়ে বললো অথৈ,
‘ ভয় হবে কেন?’
‘ তাহলে তাকাচ্ছো না কেন?’
নীরবের এবারের কথা শুনে নীরবের চোখে চোখ রাখলো অথৈ তারপর বললো,
‘ আহি কেমন আছে?’
‘ মন ভেঙে দিলে কি কেউ আর ভালো থাকে।’ ( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে )
নীরবের ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথা বলাটা ঠিক পছন্দ হচ্ছে না অথৈর। অথৈ নিজেও সোজাসাপ্টা বলে দিল,
‘ মন ভাঙলে যখন কেউ ভালো থাকে না তাহলে মন ভাঙলেন কেন?’
‘ তুমি কেন ভাঙলে?’
এবার যেন সত্যি সত্যি থমকে গেল অথৈ। তারপরও নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললো অথৈ,

‘ কারনটা তো আপনাকে আগেই বলেছি?’
‘ এই যে আহি আমায় ভালোবাসে তাই?’
‘ না শুধু আহি ভালোবাসে তাঁর জন্য নয় আমি নিজেও আপনাকে ভালোবাসি না।’
‘ হুম জানি কিন্তু এর পিছনে কারন কি শুধু আহি?’
‘ না আহি কেন হতে যাবে।’
‘ তাহলে?’
‘ আমি আপনাকে এত প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবো কেন? আপনাকে আমার ভালো লাগে না এটাই হলো আসল সত্যি।’

‘ বলেই নীরবকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় অথৈ। এরই মাঝে ঘটলো আর একটা ঘটনা হুট করেই পায়ে কিছু বাজতে অথৈ গিয়ে পড়তে নিলো নীরবের গায়ের ওপর, নীরবের পাশ দিয়েই ঝুলে ছিলো একটা দঁড়ি যেটা পুরো স্টেজের প্যান্ডেলটাকে কভার করে আছে। অথৈ নিজেকে বাঁচাতে সেই দড়ি ধরে দিলো টান। সাথে সাথে স্টেজ জুড়ে সাজানো প্যান্ডেলের কাপড় খুলে পড়লো সোজা নীরব আর অথৈর ওপর। হুট করে এমন কিছু হওয়াতে অথৈ নীরব দুজনেই পুরো হা হয়ে গেল। নীরব তো বুঝতেই পারলো না কি হলো এইমাত্র। অতঃপর নীরব অথৈকে সামলাতে না পেরে প্যান্ডেল সমেত অথৈকে নিয়ে পড়ে গেল নিচে। নীরব নিচে তাঁর ওপরে অথৈ আর তাদের উপরে বিয়ের প্যান্ডেল। আশেপাশের লোকজনও পুরো অবাক কেউ কিছু বুঝতে পারে নি কি হলো এইমাত্র আর কি করেই বা হলো এমন।’

হা হয়ে তাকিয়ে আছে নীরব অথৈ একে অপরের দিকে। হুট করে এমন কিছু হওয়ার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না তেমন। এমন একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দুজনের মধ্যে যে অথৈ চাইলেও উঠতে পারছে না নীরবের উপর দিয়ে। যতবারই উঠতে যাচ্ছে ততবারই প্যান্ডেলের ভাড়ে আবার গড়িয়ে পড়ছে নীরবের উপর। নীরব অথৈর কাজ দেখে বলে উঠল,
‘ কুলডাউন আমি দেখছি?’

বলেই আস্তে আস্তে তাঁর হাত দিয়ে তাদেরকে জড়িয়ে থাকা প্যান্ডেলটাকে সরাতে লাগলো নীরব। অন্যদিকে অথৈর এখন কান্না পাচ্ছে ভিষন কারন বার বার অথৈর ঠোঁট নীরবের গালকে স্পর্শ করছে। এই মুহূর্তে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে অথৈর কি কারনে সে ওই দড়িটা ধরতে গেল। সে ভেবে ছিল ওটা ধরলে হয়তো সে নীরবের উপর পড়বে না। কিন্তু হলো কি পড়লো তো পড়লোই এখন ওটার ভাঁড়ে নিজেকে ছাড়াতেও পারছে না। ভিষনভাবে কান্না পাচ্ছে অথৈর। জীবনে কখনো এইরকম বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হয় নি তাঁকে।’
অবশেষে ধীরে ধীরে নীরব খুঁজে পেলো প্যান্ডেলের মাথা এরই মধ্যে আশেপাশের লোকজনও এসে উঠালো নীরব আর অথৈকে। অথৈ তো উঠেই আশেপাশে না তাকিয়ে সোজা চলে গেল বাড়ির ভিতরে। এতক্ষন যেন বুক ধরফর করছিল তাঁর। অন্যদিকে নীরব কিছুক্ষন অথৈর যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাল্কা হাসলো। এরই মধ্যে প্যান্ডেল বাঁধানো একজন লোক এসে বললো,

‘ সরি স্যার আসলে হুট করে টান পড়াতে আর আমরা কেবলই ওটাকে বাঁধতে নিয়েছিলাম তাই হাত থেকে ছুটে।’
উওরে লোকটিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো নীরব,
‘ ইট’স ওঁকে।’
এরই মধ্যে যেখানে দৌড়ে আসলো রবিন। নীরবের সামনে এসে বললো সে,
‘ তুই ঠিক আছিস তো?’
উওরে নীরব রবিনের গলা জড়িয়ে ধরে মুচকি হেঁসে বললো,
‘ হুম আমার আবার কি হবে?’
নীরবের কাজে রবিন অবাক হয়ে বললো,
‘ না ওই যে শুনলাম প্যান্ডেল খুলে পড়েছে নাকি তাই ভাবলাম তোদের ওপর পড়লো নাকি তুই আর অথৈ তো ছিলি প্যান্ডেলের মাঝখানে তাই আর কি?’
রবিনের কথা শুনে নীরব তেমন কোনো রিয়েকশন না দিয়েই বললো,
‘ ওহ হুম তেমনটাই কিছু হয়েছিল?’
‘ যাক বাদ দে তুই ঠিক আছিস আর অথৈকেও তো দেখলাম বাড়ির ভিতরে যেতে চল তোর সাথে বাড়ির সবার পরিচয় করিয়ে দেই।’
বলেই চললো রবিন নীরবকে নিয়ে। নীরবও বেশি কিছু না ভেবে চললো রবিনের সাথে। কিছুক্ষন আগে ঠিক কি কি হলো ঠিক মাথা থেকে যাচ্ছে না নীরবের। আনমনেই হেঁসে ফেললো সে।’

হসপিটালের করিডোরে থাকা চেয়ারের বসে আছে আহি আর তাঁর কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রিনি। কাল শেষ রাতের দিকেই ঘুমিয়েছে দুজন। কাল বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় আহি আর যায় নি বাসায় হসপিটালেই থেকে যায়। আহি তো কাল রাতে শুভকে দেখে চরম অবাক সেও ভাবতে পারে নি শুভ একজন ডাক্তার হবে। প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণে খুশি হয়েছে সে। আহিও এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল জাস্টই ঘুম ভাঙলো তাঁর। এরই মাঝে ফোনটা বেজে উঠলো আহির উপরে মায়ের নাম্বার দেখে ফোনটা তুললো সে। তারপর বললো,
‘ তুমি টেনশন নিও আমি এক্ষুনি আসছি?’
এতটুকু বলে ফোনটা কেটে দেয় সে। আহির কন্ঠ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় রিনির আস্তে আস্তে আহির কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে সোজা হয়ে বসে সে। সারারাত একদিকে থাকার কারনে তাঁর ঘাড় ব্যাথা করছে। রিনির তাঁর মাথাটাকে এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে বললো,
‘ বাসায় যাবি এখন?’
‘ হুম তুই তো জানিস আমায় আবার হসপিটালে যেতে হবে।’
‘ হুম যা গিয়ে ফোন দিস?’
‘ হুম আমি আবার রাতে আসবো আনে।’
‘ ঠিক আছে।’
উওরে আহিও আর কিছু না বলে সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় বাসার উদ্দেশ্যে। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় দুপুর বারোটার কাছাকাছি বেজে গেছে।’

অফিসে নিজের রুমে বসে আছে আদ্রিয়ান। চোখের সামনে বার বার তাঁর আহির সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাসছে। আহিতে এতটাই মগ্ন যে, তার সামনে নিলয় ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছে এটাই বুঝতে পারে নি আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের কাজে নিলয় জাস্ট হা হয়েই তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের দিকে। কারন কম হলেও নিলয় ১০ বার বলেছে আদ্রিয়ানকে এই ফাইলগুলোতে তাঁর কিছু সাইন লাগবে কিন্তু আদ্রিয়ানের যেন নিলয়ের কথা কানেই পৌঁছায় নি। নিলয় আদ্রিয়ানের কানের কাছে তাঁর মুখ নিয়ে বললো,
‘ স্যার আপনার সাইন লাগবে?’
সাথে সাথে যেন আদ্রিয়ান চমকে উঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো সে,
‘ হুম কি?’
বলেই তাকালো আদ্রিয়ান সামনেই নিলয়কে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,
‘ তুই, তুই কখন এলি?’
আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে নিলয়ের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। সেই কখন থেকে সে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের সামনে আর আদ্রিয়ান কি না তাঁকে এতক্ষণ দেখতেই পায় নি? অবাক কান্ড আদ্রিয়ানের সাথে কাজ করে এতবছরে যেন আজ প্রথম এত অবাক হলো নিলয় আদ্রিয়ানের কান্ড দেখে।’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৩

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। সরি ফর লেট হয়তো পার্টটা একটু অগোছালো হয়েছে আসলে একটু তাড়াতাড়ি লিখেছি কিনা]

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৫