বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৫

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৫
লেখিকা: তানজিল মীম

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নিলয় আদ্রিয়ানের মুখের দিকে। আদ্রিয়ানের কান্ড কারখানা যেন এখনো হজম হচ্ছে না নিলয়ের। নিলয় আদ্রিয়ানের কপাল আর গলায় হাত দিয়ে বললো,
‘ দোস্ত তুই ঠিক আছিস তো, জ্বরটর আসে নি তো আবার?’
নিলয়ের কাজে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,
‘ কি করছিস কি তুই আমি একদম ঠিক আছি।’
‘ তাহলে এমন করছিস কেন?’
‘ কি করেছি আমি?’
‘ কি করিস নি তাই বল সেই কখন থেকে তোর সাইন নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি আর তুই কি না প্রশ্ন করছিস আমি কখন এসেছি?’
‘ ওহ সাইন লাগবে আগে বলবি তো কই পেপারগুলো দেখি।
বলেই নিলয়ের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে এঁকে এঁকে সব কাগজে সাইন করে দিলো আদ্রিয়ান। তারপর বসা থেকে উঠে বললো সে,
‘ আজকের সব কাজগুলো তুই দেখেনিস আমার কিছু কাজ আছে।’
বলেই নিজের চুলটাকে একবার ঠিক করে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের কাজে জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নিলয় আদ্রিয়ানের দিকে।’
‘ নির্ঘাত বেডাকে ভূতে ধরেছে,দেখতে হচ্ছে তো কাহিনিটা আসলে কি?’
বলেই থাইগ্লাসের উপর থেকে নিচে তাকালো নিলয়।’
এক প্রকার নাচতে নাচতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল আদ্রিয়ান।’

রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে অথৈর মা, সাথে লিলির মা সহ আরো অনেকে। আর অথৈ বসে আছে সোফায়। কতক্ষণ আগে অথৈ বাড়ি ঢোকার আগেই লিলির মা আর অথৈর মা আসে বাড়িতে।
কয়েক মুহূর্ত আগে কি ঘটলো তাঁর সাথে সেটাই যেন মাথা থেকে যাচ্ছে না অথৈর। বার বার শুধু প্যান্ডেল পড়ে যাওয়ার দৃশ্যটা ভেসে আসছে তাঁর সামনে। বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে সোফায় বসেই চোখ বন্ধ করে ফেললো অথৈ। সাথে নিজের মাথার চুল টেনে ধরে বিরবির করে বললো সে,
‘ উফ! কেন যে ওই দড়িটা ধরে টান দিতে গেলাম আমি?’ শালার আজকের দিনটাই খারাপ।’
এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রবিন আর নীরব। নীরব কাল এখানে আসার পর আজ প্রথমই আসছে লিলিদের বাড়িতে। যদিও তাঁকে চিনতে মোটামুটি সবারই প্রবলেম হচ্ছে। রবিন নীরবের হাত ধরে নিয়ে যায় লিলির মায়ের সামনে। যদিও যাওয়ার আগে একপলক তাকিয়ে ছিল অথৈর দিকে। অথৈও খেয়াল করে কিন্তু পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে ফেলে সে। রবিন তাঁর কাকির কাছে নীরবকে নিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কাকি?’
হুট করেই কাজের মধ্যে রবিনের কন্ঠ শুনে বললো লিলির মা,
‘ হুম এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো?’
‘ আসছি তো অনেক আগেই কাকার সাথে কথা বলতে ছিলাম।’
‘ ওহ তা ও কে? (নীরবের দিকে তাকিয়ে)
কাকির কথা শুনে বললো রবিন,
‘ তুমি ওকে চিনতে পারো নি?’
‘ না তো..
‘ আরে ও হচ্ছে নীরব ওই যে মনে ছোটবেলায় মাছ ধরে এনে তোমায় রান্না করতে বলতো।’
লিলির মা কিছুক্ষন ভেবে বললো,
‘ ওহ ওই চশমা পড়া পুঁচকে ছেলেটা ওমা কত বড় হয়ে গেছে, সেই কবে দেখেছিলাম। কত বড় হয়ে গেছো তা কেমন আছো তুমি?’
লিলির মায়ের কথা শুনে নীরব মুচকি হেঁসে শান্ত গলায় বললো,
‘ জ্বী ভালো আপনি ভালো আছেন তো?’
‘ হুম, তোমায় তো চেনাই যাচ্ছে না বাবা।’

উওরে শুধু হাসলো নীরব। এরপর অথৈর মা এবং লিলির মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দিলো নীরব।’
রান্নাঘর থেকে এতো হাসাহাসি করার শব্দ শুনে সোফায় বসে থাকা লিলির বাবা বলে উঠলেন,
‘ কি রে রবিন রান্না ঘরে এত হাসাহাসি হচ্ছে কি নিয়ে?’
লিলির বাবার কথা শুনে সবাই চুপ করে রইলো। কিন্তু রবিন বলে উঠল,
‘ না কাকা তেমন কোনো ব্যাপার না।’
‘ আজকে যে এখনো চা খাই নি তাঁর দিকে তোর চাচির হুস আছে কোনো নাকি সারাদিন রান্নাঘরেই কাটিয়ে দেওয়ার পন করেছে। মেয়ের বিয়ে দেখে কি চাও খেতে পারবো না আজ।’
লিলির বাবার কথা শুনে ঠোঁটে কামড় দিল লিলির মা সে সত্যি ভুলে গিয়েছিল। চটজলদি ফ্লাস্ক থেকে চা কাঁপে বেড়ে বললেন তিনি,
‘ আমি সত্যি ভুলে গেছি রে তোরাও আয় তোর কাকার সাথেও পরিচয় করিয়ে দেই নীরবের।’
উওরে নীরব আর রবিনও কিছু না বলে চলে যায় লিলির বাবার কাছে।’
সোফায় তখনও বসে ছিল অথৈই। যদিও রান্না ঘরে কি নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে সেটা শুনতে পায় নি সে। অথৈ তো এটাই বুঝতে পারলো না নীরবের সাথে এ বাড়ির সম্পর্ক কিসের। কাকির সাথে এমন ভাবে মিশে গেছে যেন কত বছরের পুরনো সম্পর্ক।’
লিলির মা লিলির বাবার দিকে চা টা এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ এই নেও তোমার চা?’
উওরে লিলির বাবাও চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললো,
‘ অবশেষে তবে বের হলে রান্নাঘর থেকে।’
‘ হুম ওসব বাদ দেও আগে বলো তো তুমি ওঁকে চিনতে পেরেছো কি না?’ (নীরবের দিকে তাকিয়ে)
এতক্ষণ পর লিলির বাবা খেয়াল করলো নীরবকে। নীরবের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি,
‘ না তো ও কে?’
‘ কে আবার ওই যে ছোট বেলায় তোমার পুকুরের জিয়িয়ে রাখা মাছ যে ধরতো সেই নীরব।’
এতবছর পর সেই নীরবকে দেখে অবাক হয়ে বললো লিলির বাবা,
‘ ওহ আমি তো চিনতেই পারি নি?’ কত বড় হয়ে গেছে। তা কেমন আছিস?’
‘ জ্বী ভালো কাকা আপনি?’
নীরবের কথা শুনে চায়ের কাঁপে এক চুমুক দিয়ে বললো লিলির বাবা,
‘ হুম ভালো ছোট বেলায় তো তুই আর অথৈ মিলে রোজ বিকেলে একসাথে মাছ চুরি করে পালাতি।’
লিলির বাবার কথা শুনে মাথা চুলকাতে চুলকাতে দাঁত কেলানি হাসি দিলো নীরব। তারপর বললো,

‘ এ তো দেখি কাকার ভালো মতোই মনে আছে আমার কথা।’
‘ তোকে ভুলে যাবো কি করে? তোদের জন্য তোর চাঁচির কত কথা যে শুনেছি আমি, তার হিসাব আছে?’
এদিকে কাকার কথা শুনে অথৈর যেন মাথা ঘুরাচ্ছে কি বলছে এঁরা। অথৈ অবাক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইলো সবার মুখের দিকে। তার মানে কি সেই ছোট বেলার চশমা পড়া ছেলেটিই নীরব– কথাটা ভাবতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো অথৈর। না না এটা হতে পারে না। অথৈকে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে দেখে রবিন চলে গেল অথৈর কাছে তারপর বললো,
‘ কিরে শকট হয়ে গেলি নাকি তার মানে তখন নীরব তোকে ওর পরিচয় দেয় নি।’
উওরে অবাক হয়ে রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো অথৈ,
‘ উনি,
‘ উনি হলো নীরব যার সাথে ছোট বেলায় একসাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে ছিলি। ও মাছ ধরতো তুই বসে থাকতি। মনে পড়ছে কিছু। বেডা এর আগেও তো তোর সামনে সাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়েছিল তাই না।’
বলেই হেঁসে ফেললো রবিন। আর অথৈ জাস্ট স্তব্ধ হয়ে রবিনের থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো নীরবের দিকে। নীরব তখন হেঁসে হেঁসে কথা বলছে সবার সাথে। বুকের ভিতর এক অজানা ভয় এসে গ্রাস করলো অথৈকে। অথৈ আর বসে থাকতে না পেরে দৌড়ে চলে গেল উপরে কেন যেন সে যাকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসে সেই নীরব এটা ভেবেই প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে অথৈর।’
অথৈকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে সবাই ভাবলো হয়তো ছোট বেলায় তাঁর আর নীরবের কান্ডকারখানার কথা শুনে লজ্জায় পালালো।’

নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দরজা গেসে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর, এটা কি হলো শেষে কি না সে যাকে ভালোবাসে সে নীরব হলো।
‘ না না এটা হতে পারে না ওই ছেলেটা কিছুতেই নীরব হতে পারে না। যদি সত্যি সত্যি নীরব হয় তাহলে আমি কি করবো? একদিকে আমার অনুভূতি আর অন্য দিকে আহি।’
মাথাটা চেপে ধরে নিচে বসে পড়লো অথৈ। এ কোনো মায়াজালে আঁটকে পড়েলো সে। অথৈর ভীষণভাবে কান্না পাচ্ছে। কি হলো এটা সেটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তাঁর। এমন সময় অথৈর দরজায় নক করলো অথৈর মা বললেন উনি,
‘ কি রে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিস কেন কিছু খাবি না নাকি।’
মায়ের কন্ঠ শুনতেই হকচকিয়ে উঠল অথৈ। তাঁরপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো সে,
‘ হুম খাবো তুমি আমার খাবার এখানে নিয়ে আসো?’
‘ ঠিক আছে।’
বলেই চলে যায় অথৈর মা। অথৈও মায়ের চলে যাওয়াটা বুঝতে পেরে বিছানায় গিয়ে বসলো। একরাশ অস্থিরতা ফিল হচ্ছে অথৈর। এখন কি করবে সে ঠিক বুঝতে পারছে না।’

গাড়ি করে যাচ্ছে আদ্রিয়ান কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানে না। আদ্রিয়ান আজ যেন নিজের মধ্যে অন্যরকম কিছু একটা ফিল করছে। কিন্তু কি ফিল করছে বা কেন কিছু ফিল করছে এটাই যেন বুঝতে পারছে না আদ্রিয়ান। তাই আনমনেই গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলছিল সে। এমন সময় মাথায় স্কাফ সাথে কালো রঙের সানগ্লাস পড়া একটা মেয়ে চলে আসলো তার গাড়ির সামনে। হুট করে এমনটা হওয়াতে আদ্রিয়ান কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে গাড়িতে ব্রেক কষলো জলদি। আদ্রিয়ানের গাড়ি এসে থামলো ঠিক মেয়েটার সামনে। মেয়েটাও যে ভয় পায় নি এমনটা নয় একটু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এমনটা হয়েছে। মেয়েটি নিজেই আদ্রিয়ানের গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘ আই এম স…
আর কিছু বলার আগেই ভিতরে আদ্রিয়ানকে দেখে বললো সে,
‘ আরে আদ্রিয়ান ভাইয়া যে,
বলেই উল্টোদিক ঘুরে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়লো সে। মেয়েটির কাজে আদ্রিয়ান যেন হতভম্ব সে সত্যি চিনতে পারে নি মেয়েটাকে। কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললো সে,
‘ কে আপনি?’
আদ্রিয়ানের কথা মেয়েটি তাঁর চোখের চশমা সাথে মাথায় পড়া স্কাফটা খুলে বললো,
‘ আরে তুমি আমায় চিনতে পারো নি আমি প্রীতি,
এতক্ষণ পর মেয়েটির ফেস আর নাম শুনে মনে পড়লো আদ্রিয়ানের সেদিনের শ্রীমঙ্গল থেকে ফেরার পথে প্লেনে বসে আলাপ হওয়া মেয়েটির কথা। আদ্রিয়ান বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ তুমি তাও আবার এভাবে?’
‘ আর বলবেন না ভাইয়া বাড়ি থেকে লুকিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাচ্ছিলাম।’
প্রীতির এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ান চোখ বড় বড় করে ফেললো কিন্তু কিছু বললো না। আদ্রিয়ানকে চুপচাপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল প্রীতি,
‘ কিন্তু আশেপাশে কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম তাই হেঁটে ওদিক টায় যাচ্ছিলাম আর তখনই তোমার গাড়ি আসলো সামনে। খুব ভালো হয়েছে আমায় একটু পৌঁছে দিবে ওই সামনেই যাবো।’
‘ রিয়েলি তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমার কাছে লিফট চাইছো।’
উওরে হাসলো প্রীতি। প্রীতির হাসি দেখে বললো আদ্রিয়ান,
‘ তা কতগুলো বয়ফ্রেন্ড আছে তোমার?’
‘ কি যে বলো না তুমি একটাই বয়ফ্রেন্ড আমার। আমি একজনকেই ভালোবাসি আর বিয়ে করলে ওঁকেই করবো।’
‘ খুব ভালো।’
বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো আদ্রিয়ান। কি একটা ব্যাপার হলো। আদ্রিয়ান বেশ বুঝতে পেরেছে এই মেয়েটা সারা রাস্তায় এখন বকবক করবে। তাই হলো পুরো রাস্তা জুড়ে বকবক করছে সে। হঠাৎই বলে উঠল প্রীতি,

‘ আচ্ছা তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই ভাইয়া?’
প্রীতির কথা শুনে আদ্রিয়ানও না বোধক মাথা নাড়ালো। আদ্রিয়ানের মাথা নাড়ানো দেখে প্রীতি অবাক হয়ে বললো,
‘ কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই?’
‘ না।’
‘ যা তুমি মিথ্যে কথা বলছো এত সুন্দর দেখতে একটা ছেলের নাকি গার্লফ্রেন্ড নেই আমাকে বোকা পেয়েছো নাকি?’
‘ আরে সত্যি বলছি, আসলে কি বলো তো আমার মেয়েদের তেমন একটা পছন্দ নয়। আর আমি কখনো সেইভাবে কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবি নি।’
‘ এখনও ভাবো না,কেউ তো একজন আছে নিশ্চয়ই। ‘
‘ আরে নেই সত্যি বলছি।’
‘ ???
প্রীতির চাহনী দেখে বললো আদ্রিয়ান,
‘ তবে একটা কথা বলবো তোমায়?’
‘ হুম বলো।’
‘ ইদানীং আমি নিজের মধ্যে কেমন একটা চেঞ্জিং লক্ষ করছি।’
‘ সেটা কেমন?’
‘ সেটাই তো বুঝতে পারছি না, আমার মনে হচ্ছে আমি একটু পাল্টে গেছি বাট সেটা যে আসলে কেন সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি খুব রাগী স্বভাবের কিন্তু সেই স্বভাবটা যে হারিয়ে যাচ্ছে আমার কাছ থেকে।’

‘ তোমার লাইফে কি কোনো মেয়ে এসেছে ভাইয়া?’
আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে থেকে বললো,
‘ মেয়ে একজন আছে বুঝলে ওই আমার লাইফের প্রথম একটা মেয়ে যে মেয়েটা কারনে অকারনে আমার কাছাকাছি চলে আসে। ওর সাথে আমার কাটানো অনেক মুহূর্ত আছে যেগুলো আমি চাইলেও ভুলে যেতে পারছি না। প্রথমে তো আমি ওঁকে সহ্যই করতে পারতাম না কিন্তু এখন যেন ওর সাথে দেখা হলেই আমার বেশি ভালো লাগে। কিছুদিন যাবৎ মনে হচ্ছে আমার জীবনে প্রতিটা মুহূর্তে,, ‘ i feel her. এসব কেন হচ্ছে এটার কারনটা কি?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে প্রীতি মুচকি হেঁসে বললো,
‘ কারন you love her.
প্রীতির কথা শুনেই গাড়িতে ব্রেক কষলো আদ্রিয়ান। গাড়ি থামিয়ে প্রীতির দিকে তাকিয়ে বললো সে,
‘ হোয়াট?’
উওরে হাসে প্রীতি। প্রীতির হাসি দেখে বেশ বিষন্ন ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো সে,
‘ তুমি হাসছো কেন?’

‘ হাসবো না তো কি করবো তুমি একটা মেয়েকে ভালোবাসো অথচ বুঝতে পারছো না।’
‘ আচ্ছা আমি যে সত্যি ওঁকে ভালোবাসি এটা বুঝবো কি করে? আইমিন তুমি যে তোমার বয়ফ্রেন্ডকেই ভালোবাসো এটা বুঝলে কি করে?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে প্রীতি বেশ আগ্রহের সঙ্গে বলতে লাগলো,
‘ ভালোবাসা হলো একটা অনুভূতি। এই অনুভূতির মধ্যে আছে ভালো-লাগা খারাপ লাগা দুঃখ কষ্ট। তুমি যখন কাউকে ভালোবাসতে শুরু করবে দেখবে তাঁকে ছাঁড়া তোমার আর কিছুই ভালো লাগবে না। সে যখন তোমার সামনে আসবে you feel something, দেখবে তোমার হাত অটোমেটিক তোমার বুকের কাছে চলে যাবে। তুমি যখন তাঁর চোখের দিকে তাকাবে মনে হবে সেখানেই যেন ডুবে থাকো সারাক্ষণ। তাঁর স্পর্শ, তাঁর হাঁটা চলা, পাগলামি ইত্যাদিতে কখনোই তুমি বরিং ফিল করবে না। তোমার ভালো লাগবে তাঁর সাথে মিশতে, তাঁর সাথে কথা বলতে। রাতে ঘুমাতে পারবে না চোখ বন্ধ করলেই যেন তাঁর ফেসটা তোমার সামনে ভাসবে। তাঁর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি। আর একটা কমন বিষয় সেটা হলো জ্বেলাসি।’

‘ সেটা কেমন?’
‘ সেটা এমনই যে তোমার প্রিয় মানুষটার কাছে তুমি কোনো ছেলেকে সহ্য করতে পারবে না ইত্যাদি। এইরকম হাজারো আছে এবার বলো এগুলোর কোনো কিছু ফিল করছো তুমি?’
‘ আমি তো এগুলো খেয়াল করি নি আর রাতে তো আমি এমনি ঘুমাতে পারি না।’
আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে বিস্ময় নিয়ে বললো প্রীতি,
‘ মানে?’
‘ আছে কিছু বাদ দেও।’
এতটুকু বলে আবারো গাড়ি চালাতে শুরু করলো আদ্রিয়ান। সে সত্যি জানে না আহিকে দেখলে এইসব কিছু হয় কি না তাঁর। বাট আহিকে তো সে ফিল করে, আহির সাথে কাটানো সেইসব মুহূর্তগুলো আজও মনে পড়ে আদ্রিয়ানের। সেই বিয়ে বাড়িতে প্রথম দেখা, গাড়ির পিছনে লুকানো, অফিসের ইন্টারভিউ দিতে দেখে রাগা, শ্রীমঙ্গলে একসাথে কাটানো, আহিকে জড়িয়ে ধরা। আহিকে জড়িয়ে ধরার কথা মনে পড়তেই মনে পড়লো আদ্রিয়ানের তাঁর সমস্যার সমাধান তো আহির কাছেই আছে। কিন্তু…

আর বেশি ভাবলো না আদ্রিয়ান কেমন যেন সবকিছু ঘোলাটে লাগছে তাঁর কাছে।’
কিছুক্ষন পর হঠাৎই একটা রাস্তার সামনে গাড়ি থামাতে বললো প্রীতি। প্রীতির কথামতো আদ্রিয়ানও গাড়ি থামালো। গাড়ি থামতেই প্রীতি গাড়ি থেকে নেমে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ ভাইয়া। আর অল দা বেস্ট।’
প্রীতির কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,
‘ অল দা বেস্ট কেন?’
‘ কারন খুব শীঘ্রই তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষকে প্রপোজ করবে।
উওরে আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই প্রীতি বাই বলে মুচকি হেঁসে চলে গেল। আর আদ্রিয়ান জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রীতির যাওয়ার পানে। যেন প্রীতি যা বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল।’
প্রীতি কিছুদূর যেতেই আদ্রিয়ান আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। আর ভাবতে লাগলো প্রীতির কথাগুলো। তাঁকে জানতেই হবে সে সত্যি আহিকে ভালোবাসে কি না, কিন্তু কিভাবে?’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৪

দুপুরের কড়া রোদ্দুরের মাঝে আনমনেই হাঁটছে আহি। তাঁর মূল উদ্দেশ্য হলো হসপিটালে যাওয়া। আজ একটু লেট হয়েছে তাঁর। আসলে রিনিদের কাছ বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফিরে একটু ঘুমিয়ে ছিল সে। যার কারনেই একটু লেট হয়েছে তাঁর। তবে এতে খুব অসুবিধা হবে না হয়তো। এর রকম নানা কিছু ভাবতেই এগোচ্ছিল আহি। এমন সময় তাঁর সামনে আসলো একটা গাড়ি।’

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৩৬