বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৫১

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৫১
লেখিকা: তানজিল মীম

ছলছল চোখে তাকাচ্ছে আহি, কখনো নিলয়ের দিকে তো কখনো নিলয়ের হাতে থাকা চিঠিটার দিকে। আহির এই মুহূর্তে মানতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আদ্রিয়ান তাঁর আশেপাশে নেই। আহি ছলছল চোখ নিয়েই নিজের হাত নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ এটা কিসের ভাইয়া?’
‘ তা তো জানি না। আমি পড়ে দেখি নি আসলে আদ্রিয়ান চেয়েছিল নিজ হাতে এটা তোমায় দিতে কিন্তু সময়টা এত দ্রুত চলে গেল যে ও বুঝতেই পারে নি। যাইহোক রাত হচ্ছে এখন বাড়ি যাও বাড়ি গিয়ে পড়ে নিও চিঠিটা।’
উওরে দু’বার মাথা নাড়িয়ে পিছন ফিরে চললো আহি। আহির চোখ এইমাত্র অনেক কিছু বললো নিলয়কে। যেটা নিলয় বেশ বুঝতে পেরেছে। আনমনেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
‘ একটু দেরি হয়ে গেল যে আহি।’
বলেই আকাশ পথে তাকালো নিলয় আর উইস করলো,
‘ আদ্রিয়ান যেন খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসে দেশে।’
ভেবেই অন্যদিক দিয়ে চললো নিলয়।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাতের জোৎসা ভরা আলোর পথ পেরিয়ে আনমনেই হাঁটছে আহি। মনটা একদমই ভেঙে গেছে তাঁর, বুকের ভিতর খাঁ খাঁ করছে। শুন্যতা ফিল হচ্ছে ভীষণ এতক্ষণে আহি বুঝতে পারলো সন্ধ্যা থেকেই তাঁর মনটা এত উতলা কেন ছিল?’ ভালোবাসাটা যেন তাঁর জন্য নয়, যখনই ভালোবাসা নিবেদন করতে যায় তখনই কোনো না কোনো প্রবলেম এসে তাঁকে ধরা দেয়। নীরবের ক্ষেত্রেও হয়েছে আর এখন আদ্রিয়ান। ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আহি। আজ আকাশের বুকে কোনো তাঁরা নেই, একদমই নিরিবিলি আর নিস্তব্ধ লাগছে চারপাশ। আহি আনমনেই হাঁটতে লাগলো তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে। ভিতর থেকে একদম পাথর হয়ে গেছে সে। সে বুঝতে পারে না বার বার তাঁর সাথেই এমন কেন হয়? সত্যি কি তাঁর ভাগ্যে ভালোবাসা নেই। যাকে সে মন থেকে ভালো বাসতে যায় তখনই সে তাঁর থেকে দূরে চলে যায়।’
আহি নানান কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চললো নিজের গন্তব্যে দিকে।’

আর এইদিকে, মেঘের মাঝে ভেসে চলা ফ্লাইটের তিন নাম্বার সারির লাস্টের সিটের জানালার পাশে বসে আছে আদ্রিয়ান। মনে ভিতর অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে তার। সে জানে না আহি তাঁর অনুভূতি মিশ্রিত চিঠিটা পড়ে কি করবে? তাঁকে কি আবার ফিরিয়ে দিয়ে উদাস করবে নাকি আনমনেই চোখে বুঝিয়ে ফেললো আদ্রিয়ান। আর বেশি ভাবতে পারলো না সে। বুকের ভিতর কেমন ধুম ধুম শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন ছুড়ি দিয়ে তাঁর হৃদয়টাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে। জোরে নিশ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান। অস্থিরতা হচ্ছে ভীষণ? সে জানে না আগামী দিনগুলো কিভাবে সে সুইজারল্যান্ডে কাটাবে? কম হলেও তাঁকে আহিকে ছেড়ে ৬ মাস থাকতেই হবে। এতগুলো দিন কি করে আহিকে ছেড়ে থাকবে ভাবতেই বুকের বাম পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে আদ্রিয়ানের।’
মাঝেমধ্যে কিছু ব্যস্ততার কাছে ভালোবাসাকে হার মানতেই হয় যেমন আজ আহি আর আদ্রিয়ানকে মানতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে সময়টা যেন সত্যি খুব বেশি বেইমানি করে ফেলে।’– কথাগুলো ভেবে আকাশ পথে আদ্রিয়ান আর মাঝ রাস্তায় আহি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। তাঁরা কেউ জানে না এদের উপসংহারটা আসলে কেমন হবে?’ বিচ্ছেদ নাকি অন্যকিছু।’

টেবিলের কোনে জানালার পাশে বসে আছে আহি। রাতের আকাশে থাকা চাঁদ মামার মৃদু আলো উঁকি মারছে তাঁর রুমে। জানালার কার্নিশ বেয়ে অল্প স্বল্প বাতাসও আসছে কিছু কিন্তু যেটা খুবই অল্প এতটাই অল্প যে জানালার পর্দাটাও খুব বেশি নড়তে পারছে না। এসবের ভিতরেই টেবিলের ওপর নিলয়ের দেওয়া আদ্রিয়ানের লেখা নীল খামের চিঠিটার দিকে তাকিয়ে আছে আহি। বিষন্ন হয়ে আছে মনটা তবে চিঠিটা পড়ার জন্য নয় আদ্রিয়ানের এইভাবে হুট করে চলে যাওয়ার জন্য। আহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নীল খামের ভিতর থেকে সাদা পৃষ্ঠার চিঠিটা বের করলো তারপর দুই ভাঁজ খুলতেই আদ্রিয়ানের হাতের লেখা চোখে পড়লো আহির। যেখানে প্রথমেই লেখা__
‘ আমি জানি না তোমার নামের এই চিঠিটা তোমার মনে কোনো জায়গা করে নিতে পারবে না। আমার অনুভূতিগুলো তোমার সামনে ঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে পারবে কি না? তবে কি জানো আমি কখনো ভাবে নি কোনো মেয়ের জন্য এইভাবে চিঠি লিখতে বসবো তাও কি না বৃষ্টির মাঝে এই গভীর রাতে। এই বৃষ্টিই যেন তোমাকে আমার মনে করে দেওয়ার প্রথম তরঙ্গ।’

‘ তোমার সাথে আমার প্রথম আলাপনই হয়ে ছিল ঝগড়া দিয়ে, মনে আছে কি তোমার সেই বিয়ে বাড়ির কথা। প্রচন্ড বিরক্ত নিয়েই সোফাতে বসে ছিলাম আমি, কারন এইসব বিয়েবাড়ি টিয়েবাড়ি একদমই পছন্দ নয় আমার তারওপর সেই ছোট্ট বাচ্চার নিয়ে আসা চিঠি। চিঠির খামের ওপর লাভ লেটার লেখা দেখেই চরম রাগ হয়েছিল আমার। আর রাগের বসেই সেদিন ফাঁকা রুমে তোমায় নিয়ে গিয়ে কতটাই না উচ্চ স্বরে কথা বলেছিলাম তোমার সাথে,সেদিন তো তোমাকে সহ্য করতেই পারছিলাম না। কিন্তু কে জানতো একটা সময় সেই সহ্য করতে না পারা মেয়েটাকেই এত ভালোবেসে ফেলবো আমি।

এরপর তোমার সাথে সেকেন্ড মিট হলো ভুল করে তুমি আমার গাড়িতে উঠলে। সেদিনও কি ঝগড়া তোমার সাথে, সেটার কারনও ছিল এই চিঠি তুমি ভুল করে আবারো নীরবের চিঠি আমায় দিয়ে ফেললে, তারপর ঝগড়ার বেগে ধুলোবালিতে সেদিন কতই না বাড়াবাড়ি যদিও সেসব ভাবলে এখন ভীষণ হাসি পায় আমার, তারপর তুমি আমার অফিসে এলে তোমায় দেখে রাগ করে তাড়িয়ে দিলাম, শ্রীমঙ্গলে দেখা হলো, ঝড়বৃষ্টিতে ভয় পেয়ে তোমায় জড়িয়ে ধরলাম। এই জড়িয়ে ধরা বিষয়টাই যেন ছিল তোমার প্রতি আমার প্রথম অনুভূতির সূচনা। এটার জন্যই জানতে পারলাম তুমিই ছিলে সেই মেয়ে যে কি না ছোট বেলায় আমায় বাঁচিয়ে ছিলে।

তারপর আবার অফিসে দেখা হলো ঝগড়া করলাম যদিও সেদিন তোমার কোনোই দোষ ছিল না কিন্তু তারপরও আসলে কি বলো তো ছোট বেলা থেকেই আমি নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারি না, তারওপর তোমার সাথে আমার রাগটা কিছুতেই দেখাতে পারতাম না যার বিনিময় হিসেবে বার বার কটুকথা শোনাতাম তোমায়। তারপর সেদিন ভার্সিটিতে নীরবের প্রতি তোমার ব্যর্থতার অনুভূতি দেখলাম। সেদিন ছিল তোমার প্রতি আমার শূন্যতার অনুভূতি। তোমার সেই বেঞ্চে বসে রিনিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদার দৃশ্যটা কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না আমি। খুব কষ্ট হয়েছিল সেদিন বার বার মনে হয়েছিল তোমার কাছে গিয়ে তোমাকে শান্ত্বনা দেই।

কিন্তু সেটা তো কিছুতেই পসিবল ছিল না। তারপর বৃষ্টিতে ভিজে তোমায় নিয়ে আমার বাড়িতে আনা তোমার লেখা প্রথম চিঠির ‘বাবুইপাখির অনুভূতি’ গুলো পড়া যেটা তুমি টানা চারদিন বসে লিখেছিলে। সেদিন খুবই খারাপ লেগেছিল আমার বার বার মনে হয়েছিল হয়তো একটুর জন্য হলেও নীরবকে তোমার ভালোবাসা উচিত ছিল। পরক্ষণেই এখনকার কথা ভাবলে মনে হয় ভালো হয়েছে নীরব তোমায় রিজেক্ট করেছে। কারন ও রিজেক্ট না করলে হয়তো আজ আমি এখানে বসে তোমার জন্য অনুভূতি লিখতেই বসতাম না। হয়তো তোমায় ভালোবাসার সুযোগটাই হতো না।’– এই কথাটা পড়ে আনমনেই হেঁসে ফেললো আহি। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে আবারো পড়তে শুরু করলো_

‘ তারপর ধীরে ধীরে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করা তোমাকে চেনা, ধীরে ধীরে তোমাতে আসক্ত হওয়া, তোমাকে ভালোবাসার আবেদন জানানো যদিও সেটা ব্যর্থতা ছিল। জানো তো আমি যখন সেদিন তোমায় ভালোবাসার কথা বলেছিলাম তখন আমি এটা ভাবে নি তুমিও আমায় ভালোবাসবে। আমি শুধু চেয়েছিলাম তুমি আমার কাছে থাকবে। তোমার আমাকে ভালোবাসার প্রয়োজন নেই, আমি তোমায় ভালোবাসবো তুমি শুধু থাকবে আমার কাছাকাছি, রোজ রাতে তোমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো আমি। কারন তুমিই যে আমার রাতের দুঃস্বপ্নের মাঝে একটু খানি আলোর রশ্মি। হসপিটালের যে কটা রাত তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম সেই কটা রাত যেন আমার জীবনের শান্তিময় রাত ছিল। আমার জীবনে এই পর্যন্ত যতগুলো রাত গিয়েছিল তাঁর মধ্যে সেই হসপিটালে কাটা এক সপ্তাহ ছিল সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। এরপর মাঝখানে কাটলো যে দুই দিন।

এই দু’দিনেই তোমার শূন্যতা ঠুকরে ঠুকরে যন্ত্রনা দিচ্ছিল আমায়।’
‘ আচ্ছা আমায় কি একটুও ভালোবাসা যায় না আহি? নীরবের মতো না হক ওর থেকে অল্প খানিকটা কি ভালোবাসা যেত না? তোমার কি এই কয়দিনে আমার এত কাছাকাছি থেকেও বিন্দুমাত্র আমার জন্য ফিলিংস জন্মায় নি? একবারো কি এই রাগী মানুষটাকে তুমি মিস করো নি? একবারও কি তোমার মনে হয় নি এই মানুষটার সাথেও একসাথে থাকা যায়, বা এই মানুষটার সাথে সারাজীবন থাকার প্রতিশ্রুতি জন্মায় নি? তোমাকে কি খানিকটায়ও আদ্রিয়ান নামক মানুষটার শুন্যতা ফিল করায় নি?’– আমাকে কিন্তু বড্ড করেছে তোমার স্মৃতিতে আমি যেন ক্ষণে ক্ষণে চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছি আহি, আমার তোমায় খুব প্রয়োজন? আমার ভিতরটা যে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে আহি, আমি শান্তি মতো ঘুমাতে পারি না রাতে, একটা আমার দুঃস্বপ্নের কারন আর দুই নাম্বার কারনটা হলে তুমি? প্লিজ আমায় আর ক্ষত বিক্ষত করো না, নইলে যে সত্যি সত্যি শেষ হয়ে যাবো আমি। তুমি নামক আসক্তি আমায় ধীরে ধীরে শেষ করে দিবে আহি। তোমায় বড্ড বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি আমি। এবার প্লিজ দূরে সরিয়ে দিও না আমায়, আমি যে আর সইতে পারছি না। বার বার মনে হয় আমার হৃদয়টাকে কে যেন ছুড়ি দিয়ে বারংবার আঘাত করছে। জ্বলন্ত আগুন দিয়ে হৃদয়টাকে ক্ষনে ক্ষনে পুড়িয়ে দিচ্ছে।”

এতটুকু পড়েই ধম ফেললো আহি। আদ্রিয়ানের এই কথাগুলো যেন তাঁকেও ভিতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে। চোখ ভেসে আসছে তাঁর। আহি আকাশ পথে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,
‘ আপনি আমায় এত ভালো কেন বাসলেন আদ্রিয়ান? পরক্ষণেই আবার ভাবলো, এতই যখন আমি নামক আসক্তি আপনায় কষ্ট দিচ্ছিল তাহলে কেন এইভাবে না বলেই হুট করে চলে গেলেন আপনি? আমার সাথে কি একবার দেখা করা যেত না, বা ফোন করে একটি বার বলা যেত না আমি চলে যাচ্ছি আহি। এতই সময়ের অভাব পড়লো আপনার যে দুই দন্ড কথা বলারও টাইম হলো না। এখন নিজেও কষ্ট পাচ্ছেন আর এই আহি নামক মেয়েটাকেও কষ্ট দিচ্ছেন। আপনি বড্ড খারাপ আদ্রিয়ান, বড্ড খারাপ। আর পড়বো না আমি আপনার চিঠি।’
বলেই চিঠিটাকে টেবিলের উপর রেখেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আহি। হুট করেই এক আকাশ সমান অভিমান এসে ভর করলো তাঁকে। বড্ড অভিমান হলো আহির আদ্রিয়ানের ওপর।’

‘ এত ভালোবাসে অথচ ভালোবাসার মানুষটার জন্য একটুখানি সময় বার করতে পারলো না। চাই না আপনার ভালোবাসা থাকুন আপনি দূরে কোনো প্রয়োজন নেই আহির আপনাকে হুহ।’
বলেই রুমের লাইট অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো আহি। পাশ ফিরে একবার চিঠিটার দিকে তাকিয়ে উল্টোদিক ঘুরে কাঁথা জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো আহি। কিছুক্ষন পর আবার চোখ খুলে তাকালো সে। আবার অভিমান করে চোখ বন্ধ করে নিলো। আবার বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো আহি। শান্তি মিলছে না তাঁর, আদ্রিয়ানের ওপর ভিষণভাবে রেগে গেছে সে? এতটাই রেগে গেছে যে কাছে পেলে কি করতো জানে না আহি?’
অন্যদিকে আহির কান্ড কারখানা বার বার পলক ফেলে দেখতে লাগলো তাঁর বিছানার ওপর থাকা খরগোশ ছানা। সে বুঝতে পারছে না আহির কান্ড কারখানা। কেন বার বার উঠছে বসছে ছটফট করছে। বুঝতে পারলে হয়তো শান্ত্বনা দিতো।’

এদিকে,
আহি চরম প্রকার বিরক্ত হয়ে বিছানার ওপর থেকে তাঁর ফোনটা বের করে কল করলো রিনিকে। প্রথম দু’বার কল করতেও রিনি ধরলো না, এতে যেন আরো রাগ হলো আহির। তিন নাম্বার কল করতেই অপর পাশে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠল রিনি,
‘ হ্যালো?’
রিনির হ্যালো শুনে অপরপাশে কর্কশ গলায় বলে উঠল আহি,
‘ ওই বান্দর মাইয়া এতক্ষণ সময় লাগে ফোন ধরতে, কখন ফোন দিসি আমি?’
হুট করেই এমন ঝাঁঝালো গলা শুনে ঘুম উড়ে গেল রিনির পরক্ষনেই এটা যে সত্যি সত্যি আহির নাম্বার কি না চেক করে বললো,

‘ হ্যালো?’
‘ আবার কি হ্যালো হ্যালো করছিস আদ্রিয়ান এমন কেন করলো রিনি, আমায় নাকি বড্ড ভালোবাসে তাহলে আমায় না বলে কি করে সুইজারল্যান্ড চলে গেল। গেল তো গেল যাওয়ার আগে একবার আমার সাথে দেখা করতে পারতো না। কল করে বলা যেত না আমি চলে যাচ্ছি। আমায় ছাড়া নাকি থাকতে কষ্ট হয়, ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায় তাহলে কি করে পারলো আমায় ছেড়ে চলে যেতে। লোকটা চরম বদমাশ, শয়তান, রাগী, হনুমান আমি কখনই ক্ষমা করবো না তাঁকে, কি করে পারলো এতটা নিষ্ঠুর হতে,, এই রকম হাজারো আদ্রিয়ান কানেক্টেড কথা বলতে লাগলো আহি রিনিকে। এক পর্যায়ে সে নিজেই বক বক করতে করতে ফোন কেটে দিল। আর রিনি পুরো অবাক হয়ে থ মেরে বসে রইলো সে কিছু বুঝতেই পারলো না আহি কেন এইভাবে তাঁর সাথে চিল্লাচিল্লি করলো, আদ্রিয়ান কাজের জন্য সুইজারল্যান্ড গেছে সেটা সে জানতো কারন শুভ তাঁকে বলেছিল কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁর কি করার ছিল?’ হঠাৎ করে আবারো ফোনটা বেজে উঠল রিনির এবারও আহির নাম্বার দেখে থ মেরেই ফোনটা তুলে বললো সে,

‘ হ্যালো।’
‘ তোর হ্যালোর ৪৪০, শোন ওই বদমাইশ লোকটাকে বলে দিস এই আহি তাঁকে ভালোবাসে না। তাঁর প্রতি আহির কোনো ফিলিংস নেই, তাঁর জন্য এই আহি মোটেও কষ্ট পাচ্ছে না।’
বলতে বলতে কেঁদে ফেললো আহি। আহিকে কাঁদতে দেখে ভয়ংকর ভাবে অবাক হয়ে বললো রিনি,
‘ কি হলো তুই আবার কাঁদছিস কেন?’
রিনির কথা শুনে কান্না ভেঁজা কন্ঠে বলে উঠল আহি,
‘ কাঁদবো না তো কি করবো? কি করে পারলো এমন করতে, আমাকে তো একবার কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। আদ্রিয়ান খুব খারাপ রিনি, খুব খারাপ।’
এভাবে কিছুক্ষন কান্না ভেঁজা কন্ঠে বকবক করে আবার ফোন কেটে দিল আহি। এরপর আধ ঘন্টা কেটে গেল রিনি চুপচাপ থ মেরে বসে রইলো। আহিও আর কল করে নি হয়তো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আহির বিষয়টাকে বুঝতে তাঁর আধ ঘন্টা সময় লাগলো। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে চরম রাগ নিয়ে রিনি কল করলো শুভর নাম্বারে।’

হসপিটাল থেকে কেবলই বের হলো শুভ এমন সময় রিনির কল দেখে খুশি হয়ে বললো সে,
‘ হ্যালো জান।’
সাথে সাথে কর্কশ কন্ঠ নিয়ে অপর পাশে বললো রিনি,
‘ তোমার জানের গুষ্টি কিলাই, তোমার ভাই কি করে পারলো আমার বেস্টুকে কাঁদাতে, কিভাবে না বলে চলে গেল সুইজারল্যান্ড। আমার বেস্টু কাঁদতে কাঁদতে আধ ঘন্টা,আর চিল্লাতে চিল্লাতে একঘন্টা ধমকালো আমায়।’
রিনির কথা শুনে ফট করেই বলে উঠল শুভ,
‘ তো এক্ষেত্রে আমি কি করতে পারি?’ আর তুমি আমার ওপর কেন রেগে আছো? আমার কি করার ছিল?
‘ কি করার ছিল মানে তুমি তোমার ভাইকে আটকাবে না।’
রিনির কথা শুনে বিস্মিত হয়ে বললো শুভ,

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৫০

‘ আমি! আমি কি করে আটকাতাম আর ভাইয়ার চলে যাওয়াতে আহি আপু কেন কাঁদছে?’
শুভর কথা শুনে ভয়ংকরভাবে জোরে শব্দে করে একটা চিল্লানি দিল রিনি, এতটাই জোরে চিল্লানি দিল যে শুভর কান যেন ওখানেই স্তব্ধ হয়ে গেল।’
ততক্ষণে রিনিও ফোন কেটে দিল। আর শুভ থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে বিস্মিত হয়ে বললো,
‘ কি হলো? কেন হলো? কিছুই তো বুঝলাম না তাহলে মাঝখান দিয়া আমার কানটা কেন ঝালাপালা হয়ে গেল?’
!

বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব ৫২