তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ৩৭

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ৩৭
Jannatul ferdosi rimi

মেহেভীনের প্রতাক্ষানে আরহাম রাগে দেয়ালে ঘুষি দেয়। মেহেভীন চিৎকার করে কথাটি বলে বেড়োতে নিলে,কেউ তার পথ আটকে দাঁড়ায়। মেহেভীন তাকিয়ে দেখে আরিয়ান এবং ফারিয়া। আরিয়ানকে দেখেও মেহেভীনের রাগ উঠে যায়। আরিয়ান আগে থেকেই জানতো আরহাম এখানে আছে। তাই আরিয়ান ফারিয়াকে নিয়ে এখানে এসেছে। রাস্তায় আসতে আসতে ফারিয়াকে সবকিছুই বলেছে আরিয়ান। অল্প দিনের পরিচয় হলেও,ফারিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক হয়েছে আরিয়ানের। আরিয়ানের দিকে তেড়ে এসে মেহেভীন বলে, ‘ তুই ও সব জানতি আরিয়ান তাইনা? তাহলে এতোদিন ধরে কেন লুকিয়েছিস তুই? ‘

মেহেভীনকে দেখেই মনে হচ্ছে সে যথেষ্ট রেগে আছে।
আরিয়ান মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে নিচু গলায় বলে, ‘ তার আগে একটিবার তুই শান্ত হ। ‘
‘কি শান্ত হবো আমি? তোকে তো আমি ভরসা করেছিলাম আমি। তুই কেন আমাকে বললি না?’
মেহেভীন রাগে ফুশতে ফুশতে কথাটি বললো। আরিয়ান মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ভাই তো তোকে সবকিছুই বললো মেহু। কেন আমরা এইসব করেছিস তুই তো জানিস। অভ্র ভাই যা করেছে সবকিছুই আমরা জানতাম। ভাই শুধু তোর এবং বেবীর জন্যে এতোদিন নিজের ভালোবাসার কথা লুকিয়েছে। এছাড়া আর কোন স্বার্থ নেই ভাইয়ের। ভাই শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলো। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ সঠিক সময় বলতে? কিসের সঠিক সময়? তুই বলতে চাইছিস আমি উনাকে ভালোবাসি? উহু তোর কিংবা তোর ভাইয়ের ধারণা সম্পর্ন ভূল। আমার পক্ষে আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না। আমি চাইনা আর ঠকতে। আমি চাইনা আবারো ভালোবাসার মতো ভূল করে আমার হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হোক। একবার আমি নিজেকে সামলিয়েছি, কিন্তু দ্বিতীয়বার আমি তা একেবারেই সহ্য করতে পারবো না। আমি শেষ হয়ে যাবো রে আরিয়ান। শেষ হয়ে যাবো।’
মেহেভীন কথাটি বলেই,নিজেকে সামলাতে পারে না। ঠোট কামড়ে কান্না আটকানোর প্রচেষ্টায় থাকে। মেহেভীনের চোখের প্রতিটা জল আরহামের বুকে গিয়ে ছুড়ির মতো ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। মেহেভীনের কথাতে সবাই স্পষ্ট বুঝতে পারে,অভ্রের থেকে এত্তো বড় একটা ধাক্কা খাওয়ার পরে, মেহেভীনের মনে ভালোবাসার প্রতি অসম্ভব ভয় বাসা বেঁধে নিয়েছে। মেহেভীন কষ্ট পাওয়ার ভয়ে, আরহামের প্রতি তার সুপ্ত অনুভুতিগুলো লুকানোর প্রচেস্টায় আছে।
‘ যদিও আমি বাইরের মানুষ আমার হয়তো এই বিষয়ে কথা বলার উচিৎ নয়,কিন্তু আমি না বলে থাকতে পারলাম না। ‘
কথাটি বলেই, ফারিয়া মেহেভীনের হাত জোড়া ধরে, দেয়ালের প্রতিটা ছবির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ছবিগুলো দেখতে পারছো মেহু আপু? ডাক্তার সাহেবের থেকে শুনেছি, এই প্রতিটা ছবিগুলো নাকি আরহাম ভাইয়া নিজের হাতে একেঁছে। ছবিগুলো দেখেই মনে হচ্ছে কতটা নিপুঁনতার সাথে,কতটা ভালোবাসার সাথে প্রতিটা ছবি আকাঁ হয়েছে। তাহলে বুঝে দেখো? আরহাম ভাইয়ার ভালোবাসার গভীরতা ঠিক কতটুকু৷ ‘
মেহেভীন নিশ্চুপ হয়ে যায়। ফারিয়া আবারোও বলে,

‘ আমি বোকা মানুষ। বলতে গেলে আস্ত একটা গাধি। কিন্তু একটা কথা কী জানো আপু?
যে মানুষটা তোমার সম্পুর্ন অতীত জেনেও, তোমাকে আগলে রাখতে চায়,সে আর যাই হোক কখনো তোমাকে কাঁদাতে পারেনা। তার আগমনই ঘটে কোন সুখময় অধ্যায়ের সূচনার জন্যে। ‘
ফারিয়ার কথা শুনে আরিয়ান মুগ্ধ হয়। মেয়েটা কতটা গুছিয়ে কথাগুলো বললো। সত্যি মেয়েটার মাঝে বিশেষ কিছু আসে। আরিয়ানও এইবার মেহেভীনের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
‘ একটিবার ভাইকে সুযোগ দে মেহু। ট্রাস্ট মি ভাই তোকে অনেক ভালোবাসে। ‘
‘ নাও স্পটড ইট আরিয়ান। ‘
আরহাম কিছুটা ধমক দিয়ে কথাটি বলে। আরহাম এতোক্ষন পর মুখ খুললো। আরহামের ধমকে দমে গেলো আরিয়ান। আরহাম পকেটে হাত গুজে মেহেভীনের দিকে ঝুঁকে, আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ আরহাম হাসান তালুকদারকে জোড় করে ভালোবাসতে হবে না। কাউকে কিছু বুঝানোর দরকার নেই। যে বুঝার সে এমনতিই বুঝবে। ‘

মেহেভীন মাথা নিচু করে ফেলে। আরহাম এইবার মেহেভীনের হাত ধরে, টেবিলের কাছে এনে বসিয়ে দেয়। মেহেভীন বুঝতে পারছে না আরহাম হঠাৎ কি করতে চাইছে? আরহাম এখন স্টাফকে ডেকে,মেহেভীনের জন্যে কিছু নাস্তা আনিয়ে নেয়। নাস্তা দেখে মেহেভীন অবাক হয়ে আরহামের দিকে তাকাতেই,আরহাম স্মিত হাঁসি দিয়ে বলে,
‘ তুমি আমাকে ভালোবাসো কিংবা না বাসো সেইটা এখন বড় ব্যাপার না। বড় ব্যাপারটা হলো এখন তোমার হাল্কা নাস্তা করতে হবে। এইসময় একটু পর পর খেতে হয়। একটু অনিয়ম হলেই, তা তোমার এবং বেবীর জন্যে ক্ষতিকর বুঝলে? ‘
আরহামের কথা শুনে, মেহেভীন হা হয়ে যায়। লোকটাকে সে প্রতাক্ষান করলো অথচ লোকটা এখনো তার খেয়াল রেখে যাচ্ছে। লোকটা আদোও মানুষ? আরহাম মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে, আস্তে করে বলে,

‘ তোমাকে আমি ভালোবাসতে কখনো জোড় করবো না, কিন্তু তোমার এবং বেবীর প্রতি আমার যেই অফুরন্ত ভালোবাসা রয়েছে, সেই ভালোবাসার অধিকারে আমি তোমাকে এবং বেবীকে সবসময় আগলে রাখবো । তুমি না চাইলেও। ‘
কথাটি বলেই, আরহাম মেহেভীনের দিকে খাবারের চামচ এগিয়ে দেয়। মেহেভীন খেয়ে নেয়। তার চোখ ছলছল হয়ে রয়েছে। এই মানুষটার প্রতি দূর্বল না হয়ে কি পারা যায়?
আরিয়ান এবং ফারিয়া মুগ্ধ হয়ে আরহামের কান্ড দেখে যাচ্ছে। আরহামকে মেহেভীন ভালোবাসে, তা তার চোখের জলেই প্রকাশ পাচ্ছে। এখন শুধু মেহেভীনকে তার ভয় কাটিয়ে, নিজের অনুভুতিটা প্রকাশ করতে হবে।

রাইসার বাড়িতে অভ্র এবং মায়রা বসে আছে। রাইসা সেইদিন হোটেলের ঘটনা সবকিছুই খুলে বলেছে অভ্রকে। এমনকি সেই প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্টটা ধরিয়ে দিয়েছে।
সবকিছুই শুনে অভ্রের দুনিয়াটাই যেন থমকে গেছে। তার মানে আরহাম এবং মেহেভীন স্বামী-স্ত্রী নয়। মেহেভীনের গর্ভে যেই সন্তান বেড়ে উঠছে, সেই সন্তান অভ্রের। রাইসার ধারণামতে, অভ্র মেহেভীন এবং তাদের অনাগত সন্তানের প্রতি অন্যায় করেছে,তাই অভ্রের উচিৎ মেহেভীনকে এবং মেহেভীনের সন্তানকে তাদের আসল মর্যাদা দেওয়া।
মায়রাতো একপ্রকারের জন্যে থমকে গিয়েছে। মেহেভীনের গর্ভে অভ্রের সন্তান বেড়ে উঠছে, তার মানে অভ্র এখন তার সন্তানকে পাওয়ার জন্যে মেহেভীনকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাইবে। মায়রা তা কিছুতেই হতে দিতে পারেনা। মায়রা অভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে অভ্র কেমন একটা শান্ত হয়ে বসে আছে। অভ্রের এই শান্ত থাকাটা বিরাট বড় এক ঝড়ের সংকেত বানী । যা মায়রার বুঝতে বাকি রইলো না। অভ্র এইবার উঠে দাঁড়ালো। মায়রা অভ্রের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু গলায় বললো, ‘ অভ্র! তুমি যদি ভেবে থাকো তুমি এইবার মেহেভীনকে ফিরিয়ে আনবে, তাহলে…’

মায়রা কথাটি সম্পুর্ন বলতে পারলো না, অভ্র মায়রার মুখে চেপে ধরে, দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ আর একটা কথাও না মায়রা। এইবার যা বলার আমি বলবো। ‘
মায়রা অভ্রের এমন রুপে ভয় পেয়ে যায়। অভ্র আরিয়ানকে ফোন করে জানায়, তারা যেন এখুনি ঢাকায় ফিরে আসে। আরিয়ানের কাছে কেমন যেন লাগলো কথাটি। প্রথমে অভ্র ঢাকায় গেলো এখন তাদেরকেও যেতে বলছে। অভ্র আসলে এখন চাইছে টা কি? আরিয়ান আরহাম এবং মেহেভীনের কাছে গিয়ে জানায় তাদের এখুনি ঢাকায় ফিরে যেতে হবে,অভ্র যেতে বলেছে। অভ্র হঠাৎ এইভাবে ঢাকায় ফিরে যেতে বলাতে, মেহেভীনের মনে ভয় জন্ম নিলো। আরহাম ও মেহেভীনের অবস্হা খানিক্টা হলেও বুঝতে পারছে। আরহাম মেহেভীনের হাত শক্ত করে ধরে, আশ্বাস দিলো যেন মেহেভীন ভয় না পায়।
ফারিয়াও ঠিক করলো, একেবারে আরিয়ানদের সাথেই ঢাকায় ফিরে যাবে। আরহাম এবং বাকিরা হোটেলে গিয়ে, আরহামেত কলিগদের থেকে বিদায় নিয়ে, ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সবার মনের মাঝেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকায়।কেমন গুটিয়ে বসে আছে। কি নিষ্প্রান চাহনী। এই মেয়েকে কিছুতেই হারাতে দিবে না সে। আরহাম জানে অভ্র কিছু একটা করতে চাইছে। কিন্তু কি সেইটা?

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ৩৬

সবাই ঠিক ভোরের দিকে রওনা দেওয়ায়, সকাল সকাল ঢাকায় পৌঁছে যায়। ফারিয়া নিজের বাড়িতে চলে যায়। আরহাম, মেহেভীন এবং আরিয়ান নিজেদের বাড়িতে ঢুকেই দেখতে পায় অভ্র বসে আছে। আরহামের বাবা-মা তার অপর পাশে বসে আছেন মাথা নিচু করে। অভ্রকে এতো সকালে তারা কেউই আশা করেনি। মেহেভীনের মনে যেই ভয়টা ছিলো,তা আরো দৃঢ় হয়ে উঠেছে। মেহেভীনকে দেখেই, হুট করে অভ্র একপ্রকার ছুটে গিয়ে মেহেভীনকে সকালের সামনে জড়িয়ে ধরে। মেহেভীন হতভম্ব হয়ে যায়।আরহাম রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ৩৮

1 COMMENT

  1. Golpota onek valo hoitese. Eto joss golpo ami pori nai age kokhono. I hope mehvin nijer babyr kotha vebe ovrer kache chole jabe na and ovro ekta shikkha pabe. Apnar regular golpo drwata amar khub valo lage. Ami apnar onno golpogula o pore felbo

Comments are closed.