তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ৫৩

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ৫৩
Jannatul ferdosi rimi

মেহেভীনকে জড়িয়ে ধরে আরহাম অনুভব করলো
তার সদ্য বিবাহিত বউ তার বুকেই পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে। বউয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে আরেকদফা হাঁসলো আরহাম। জানালার দিকে আরেকপলক তাকিয়ে দেখতে পেলো। চাঁদ মেঘের মাঝে নিজেকে ধীরে ধীরে ভাবে লুকিয়ে ফেলছে। যেন আজ তার বিরাট অভিমান হয়েছে৷ অভিমান হওয়াটাই স্বাভাবিক সে যেন খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তার থেকেও সুন্দর কেউ আছে আরহামের চোখে।

সে আর কেউ নয় আরহামের প্রেয়সী। তাইতো অভিমানে একপ্রকার লজ্জায় চাঁদ যেন মেঘের মাঝে নিজেকে আড়াল করছে। নিজের উদ্ভুট চিন্তাগুলো মাথা আসতেই আপনমনে হাঁসে। তার এই মায়াবী বউ তাকে এইবার সত্যি পাগল করে ছাড়বে।
আরহামের কাছে সবকিছুই যেন নিছক স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। সে কখনোই ভাবেনি সে তার প্রেয়সীকে তার বউ রুপে পাবে। আরহাম মেহেভীনের হাতজোড়া নিজের গালের সাথে মিশিয়ে বলে,
‘ ভালোবেসে তোমায় রেখে দিবো মনের গহীনে। যদি তুমি দূরে যেতে চাও তবে জোড় করে করে হলেও তোমাকে নিজের কাছে রেখে দিবো। মাইন্ড ইট। ‘
কথাটি বলে আরহাম পুনরায় মেহেভীনের কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দিয়ে, মেহেভীনকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জ্বরের ঘোরে থাকলেও, অভ্র স্পষ্ট শুনতে পারছে মায়রার অভিমানে সিক্ত প্রতিটা বানী। অভ্র দেয়ালে মাথা ঠেকিয়েই বিদ্রুপের হাঁসি দিয়ে বলে,
‘ তুমি নও আমি তোমাকে মুক্তি দিবো মায়রা। তুমি আমার থেকে দূরে থাকো। মেহেভীনের মতো
নতুন জীবন শুরু করো। পারলে আমার ক্ষমা করি দিও। ‘
অভ্র একদম একদমেই কথাগুলো বলে দিলো। কি সহজেই! একটুও বাঁধলো না? মায়রাকে কতটা সহজ করে বলে দিলো।
মায়রার ঠোট চেপে কান্না আসলো। কান্না গুলো গলায় কেমন যেন দলা পাকাচ্ছে। মায়রা খানিক্টা কেঁদেই বললো,

‘ তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না ঠিক আছে, কিন্তু প্লিয অভ্র আমাকে এইটা বলো না যে অন্য কারো সাথে নিজের জীবনটা জড়াতে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। ‘
অভ্র এইবার মায়রার দিকে তাকিয়ে কাতরতার সুরে বললো,
‘ তাইতো বলছি আমাকে ভালোবাসো না মায়রা। আমাকে ভালোবাসলে শুধু যন্ত্রনা ছাড়া আর কিচ্ছু পাবে না। ‘
মায়রাকে আর কোনপ্রকার বানী উচ্চারণ করার সুযোবটুকু দিলো না অভ্র। অসুস্হ শরীর নিয়েই ঢুলু ঢুলু ভাবে মায়রার কাছে এসে মায়রার হাত ধরে দরজার কাছে নিয়ে আসলো। অভ্রের স্পর্শ পেয়ে চমকে গেলো মায়রা। অভ্রের শরীর যেন আগুনের মতো গরম হয়ে রয়েছে।
মুহুর্তেই অভ্রের জন্যে মনে এক ঝাঁক ভয় বাসা বাঁধা দিলো। অভ্র মায়রাকে দরজার কাছে নিয়ে গিয়েই হাত ছেড়ে দিলো। অতঃপর নিষ্প্রান কন্ঠে বললো,

‘ আমিও ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিবো। যদিও বেবীর ডেলিভারির পরে তা কার্যকর হবে। কার্যকর হওয়ার পরে নতুনভাবে সবকিছু শুরু করো মায়রা। ‘
মায়রা মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে। আচ্ছা অভ্র কী একবার ও ভাবছে না তার এমন কথায় কতটা কষ্ট হচ্ছে মায়রার।
‘ আমাকে ভুলে যাও মায়রা। আমি ঘৃণার যোগ্য
ভালোবাসার নয়।
অভ্র আর অপেক্ষা করলো না। কথাটি বলেই মায়রার মুখের সামনেই দরজাটা আটকে দিলো। মায়রা আহত দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো অভ্রের দরজার দিকে।

সকালে সূর্যের তীব্র আলো জানালা ভেদ করে খানিক্টা মুখে এসে পড়লো মেহেভীনের মুখস্রীতে। চোখ বন্ধ করেই মেহেভীনের কপালে কুচকালো খানিক্টা। নিজেকে আরহামের বক্ষে আবষ্কার করলো। পরক্ষনেই তার চোখ গেলো তার শাড়ির উপর। কেমন এলোমেলো হয়ে রয়েছে।
এই একটা ঝামালা মেহেভীনের। সে শাড়ি পড়লেই
শাড়িটা এলোমলো হয়ে যায়। মেহেভীনের ভালো করে খেয়াল করে দেখলো তার শাড়ি খুব একটা ভালো অবস্হাতে নেই। এই অবস্হায় আরহাম তাকে দেখলে তার তো লজ্জায় মরণ ঘটবে। মেহেভীন আরহামের থেকে নিজেকে সরানোর চেস্টা করলেই, আরহাম জেগে যায়। সে ঘুম ঘুম কন্ঠে মেহেভীনকে বলে,

‘ এতো সকাল সকাল নড়ছো কেন? চুপচাপ ঘুমিয়ে থেকো। ‘
মেহেভীন খানিক্টা নিচু গলায় বললো,
‘ আমি এখন ঘুমাতে পারবো না। আমাকে ছাড়ুন। ‘
মেহেভীনের কন্ঠে স্পষ্ট লজ্জার আভাস ছিলো।
আরহামের চোখ বন্ধ করেই বললো,
‘ এতোটা লজ্জা পাওয়ার তো কিছুই নি। আমি তো কিছুই দেখছি না। আমি কিন্তু চোখ বন্ধ করেই রেখেছি। ‘
আরহামের কথা বলার ভঙ্গিমাতে দুষ্টুমির আভাস পেলো মেহেভীন। মেহেভীন চোখ বড় বড় করে
দ্রুত ছিটকে দূরে সরে গেলো আরহামের থেকে। নিজের লজ্জাকে ঢাকডে দ্রুত বাথরুমে গেলো। আরহাম চোখ বন্ধ রেখেই মুচকি হাঁসলো।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে মেহেভীন দ্রুত শাড়ি চেঞ্জ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, নিজের ভেজা চুলগুলো মুছতে লাগলো। আরহাম ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিলো। সামনে থাকা সদ্য স্নান নেওয়া রমনীকে দেখে তার আখিঁজোড়া কিছুক্ষন স্হীর হয়ে গেলো।
মেহেভীন আপনমনে ভেজা চুলগুলো মুছতে লাগলো। আরহাম ল্যাপটপ টা বিছানায় রেখে, ধীর পায়ে মেহেভীনের কাছে গিয়ে, মেহেভীনের থেকে তোয়ালাটা নিয়ে, মেহেভীনের চুলগুলো মুছে দিতে লাগলো সযত্নে। অতঃপর মেহেভীনের কাছে গিয়ে, অতি শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ রাতে তো তেমন কিছুই হয়নি। সবকিছুই নরমাল ছিলো, তাহলে এই শীতের সকালে গোসল করলে কেন? ঠান্ডা লেগে যাবে তো। ‘

আরহামের কথায় আরেকদফা লজ্জা পায় মেহেভীন। মুখের লজ্জায় লাল রং এসে ধরা দেয়। আরহামের আজ হয়েছেটা কি? কথায় কথায় শুধু মেহেভীনকে লজ্জা দিচ্ছে। মেহেভীনকে লজ্জা পেতে দেখে আরহাম বেশ মজা পাচ্ছে। আরহাম আবারোও মেহেভীনের লজ্জামাখা মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আরহাম বললো,
‘ ওগো প্রেয়সী তুমি কি জানো? তোমার লজ্জামাখা মুখশ্রী আমাকে কতটা আশক্ত করে? তাইতো তোমার আরহাম সাহেব অসভ্য হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। ‘
মেহেভীন নিচের দিকে তাকিয়ে আলতো হাঁসে। তখনি সেখানে আবির্ভাব ঘটে। আরহাম এবং মেহেভীনকে এতোটা কাছাকাছি দেখে,দ্রুত পিছনে ঘুড়ে বলে,
‘ সরি নিউ কাপল! আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। এখন তো তোমাদের রোমান্স টাইম। আমি ভুল টাইমে চলে আসলাম। আম সো সরি। ‘

মেহেভীন এবং আরহাম একে অপরের থেকে তাড়াতাড়ি দুরে সরে আসলো। মেহেভীন আর কথা না বাড়িয়ে নীচে চলে আসলো। আজ এই দুই ভাই তাকে শুধু লজ্জাই দিচ্ছে। মেহেভীন রান্নাঘরে গিয়ে, আরহামের মাকে সাহায্য করলো।
আরহাম মেহেভীনকে চলে যেতে দেখে, আরিয়ানের দিকে তীক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে আবার সরি বলছিস?
তুই জাস্ট রেডি থাক তুই যখন বিয়ে করবি তখন তোর এবং তোর বউয়ের রোমান্সের টাইমেও আমিও এমনভাবে এন্ট্রি নিয়ে তোকে সরি বলবো। তখন দেখবো তোর কেমন লাগে। ‘
আরহামের কথায় আরিয়ানের মুখ পানষে হয়ে গেলো। সে দ্রুততার সাথে বললো,

‘ ইটস নট ফেয়ার ভাই। ‘
‘ আমার জন্যে এইটাই ফেয়ার। ‘
আরহামের পাল্টা জবাবা। আরিয়ান তার বিপক্ষে কিছু বলতে যাবে তখনি তার ফোন টা বেজে উঠলো। অগত্যা সে আর কিছু বলতে পারলো না। সে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ফারিয়ার ফোন। সে বিড়বিড় করে বললো,
‘ ভাই নিশ্চই ম্যাজিক জানে। নাহলে বউয়ের কথা বললো আর তারই ফোন চলে আসলো। ‘
‘ কি বললি তুই? ‘
‘ কিছু না আমি আসছি ভাই। ‘
আরিয়ান কথাটি বলে একপ্রকার কেটে পড়লো।

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ৫২

মেহেভীন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফুলের গাছে পানি দিচ্ছিলো। আরহামের বারান্দা বেশ বিশাল। বিশাল এই বারান্দাটিতে বিভিন্ন ফুলের সমাহার। এই ফুলের সমাহারে মেহেভীন প্রান ভরে নিঃশ্বাস নেয়। তখনি হুট করে তার পা পিছলে….

তুমি আছো মনের গহীনে পর্ব ৫৪