তুমি আমি দুজনে পর্ব ২৬

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২৬
হুমাইরা হাসান

-একি ভাবি? তোমার পায়ে কি হয়েছে?
বলেই ছুটে তুরার কাছে আসল,তুরা এখনো মেঝেতে পরে আছে, অনেক্ষণ ধরে তুরাকে না দেখতে পেয়ে রুহি ডাকতে এসেছিল ওকে, ঘরে ঢুকতেই দেখল তুরা মেঝেতে বসে আছে,আর পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরচ্ছে
-দেখি,,পা টা তো অনেক খানি কেটে গেছে ভাবি কি করে হলো এসব? তুমি দাঁড়াও আমি এক্ষুনি সাবাইকে ডেকে আনছি
একদমে কথা গুলো বলে উঠতে নিলেই তুরা রুহির হাত ধরে বলল

-থাক রুহি,সবাই ভীষণ ব্যস্ত এসবের মাঝে এই কথা বলে বিব্রত করার দরকার নেই,রাইমা আপু শুনলেই ব্যস্ত হয়ে পরবে
-কিন্ত এভাবে তো তোমাকে থাকতে দিতে পারব না ভাবি, অনেক রক্ত বেরচ্ছে
রুহির কথায় তুরা খানিক দম নিল,পায়ের তিরতির করে বাহিত রক্ত আর সূক্ষ্ম কাঁচের আঘাতে ভীষণ জালাপোড়া ধরেছে, ঠোঁট কামড়ে ব্যথা দমন করে রুহিকে হাতের ইশারায় সামনের টেবিল দেখিয়ে বলল
-ওই ড্রয়ারে ফার্স্ট এইড বক্স আছে, ওটা আনো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তুরার কথামতো রুহি ড্রয়ার থেকে বক্স বের করে এনে তুরার সামনে বসল। বক্স থেকে তুলা বের করে স্যাভলনে লাগিয়ে ক্ষত স্থানে ধরল। লিকুইডের কড়া গন্ধ আর ঠান্ডা স্পর্শে ভীষণ জ্বলন ধরল তুরার ক্ষত স্থানে,,তবুও নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে চুপচাপ বসে রইল,,রুহি বেশ সময় নিয়ে ক্ষত স্থানে স্যাভলন চেপে ড্রেসিং করে অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে শুভ্র পাতলা কাপড়ের আস্তরণে ব্যান্ডেজ করে দিলো।
-আমাকে একটু উঠিয়ে দাও তো

তুরার কথামতো ওর হাত ধরে রুহি উঠিয়ে দাঁড় করাল তুরাকে। শাড়ির আঁচল আর পায়ের দিকে পাড়ে অনেক খানি রক্ত লেগে গেছে, এ অবস্থায় বাইরেও যেতে পারবে না। রুহির সাহায্য পরনের শাড়ি টা পালটে একটা কুর্তি আর লং স্কার্ট পরে নিল, স্কার্টটা লং হওয়ায় পায়ের ব্যান্ডেজ টাও বোঝা যাবে নাহ।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে বেশ অনেক্ষণ আগে। রাইমাকে সবাই মিলে মাথায় পানি ঢেলে ঘরে এনেছে। মেহমান রা খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে একে একে চলে গেছে, এখন রাইমার মেহেন্দির অনুষ্ঠান। রাইমাকে এনে স্টেজে বসিয়ে ওর চারপাশে ঘিরে বসল মেয়েরা,রাইমার পরনের হলুদ শাড়ি পালটে সবুজ রঙের একটা জামদানী আর হালকা গয়না পরিয়ে সাজিয়েছে। আরমান সাউন্ড বক্সে গান বাজাচ্ছে ‘mehendi hain rachne wali hathon mein gehri lali’
রুহি তুরাকে ধরে নিয়ে বসাল সবার মাঝে। একে একে আরমান,জায়মা,তনু,বিহান, রুহি সকলে বসল। তুরা কৌতুহলী চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, তুরাকে এভাবে বেচইন হয়ে কিছু খুঁজতে দেখে বিহান টুসকি মেরে বলল
-এদিক ওদিক কি খুঁজো অল্প বউ। আমিতো আছিই বরকে কেনো খুঁজতে হবে হানি

বিহানের কথায় তুরা না চাইতেও ফিক করে হেসে দিল। জায়মা আর রুহি উঠে নাচা শুরু করেছে তার সাথে তনু আর আরমান ও। আরমানকে ওরা ভিডিও করতে লাগিয়েছে, কিন্তু ও ক্যামেরা হাতে ভিডিও কম নাচছে বেশি। আরমানের উদ্ভট ভঙ্গিমায় নাচা দেখে তুরা হাহা করে হেসে উঠল। তনু নাচার মধ্যেই এগিয়ে এসে তুরাকে নাচার জন্য ডাকল তুরা কয়েকবার না করলেও তনু তুরার হাত ধরে টেনে তুলতেই তুরা আহ্ করে আর্তনাদ করে উঠল। মুহুর্তেই নাচ গান থামিয়ে এগিয়ে আসল ওরা সবাই

-ভাবি কি হয়েছে? কি হলো তোমার?
জায়মা এগিয়ে এসে বলল, তুরা উঠতে গিয়ে ক্ষত স্থানে চাপ লেগে প্রচন্ড যন্ত্রনায় আর্তনাদ করে উঠল, ব্যথায় চোখ মুখ কুচকে রইল,বিহান তুরার হাত ধরে পাশে বসিয়ে পায়ে হাত দিলে শুভ্র কাপড়ের ব্যান্ডেজটা চোখে পরতেই তড়িঘড়ি করে রাইমা বলল

-একি! তুরা,পায়ে কি হয়েছে তোর? ব্যান্ডেজ কেনো?
রাইমার অস্থিরতা দেখে তুরা নিজেকে সামলে রাইমাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-আপু শান্ত হও,কিচ্ছু হয়নি। সামান্য একটু লেগেছে চিন্তার কিছুই নেই
তনু তুরার সামনে বসে পায়ের ব্যান্ডেজ টা ভালো করে দেখে বলল
-ব্যান্ডেজ টা দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক খানি কেটেছে,এসব কখন হলো ভাবি,বলনি কেনো তুমি?
অনুষ্ঠানে রমরমা হওয়া এতক্ষণের পরিবেশ টাতে মুহুর্তেই দুশ্চিন্তার ছাপ পরে গেলো সকলের মুখে, তুরা মোটেও এমনটা চাইনি। এই জন্যেই তো বলতে চাইনি ওদের

-তোমরা প্লিজ এত হাইপার হইয়ো না, সামান্য কেটেছে আর আমি ওষুধ লাগিয়েছি তো
-কিন্ত এতটা কাটলো কি করে ভাবি?
আরমানের প্রশ্নে তুরা মুখটা কাচুমাচু করে বলল
-আসলে আমার হাত থেকে কাঁচের জগটা পরে ভেঙে গেছিল,অসাবধানতা বশত হাঁটতে গিয়ে পায়ে বিঁধে গেছে
-কি যে করিস তুরা, একটু সাবধানে চলবি না। কাঁচে কেটেছে, ব্যাথাও হবে খুব। মা অথবা ফুফু শুনলে কত চিন্তা করবে
রাইমার কথায় তুরা ওর হাত ধরে বলল

-তুমি প্লিজ মা কিংবা ফুফু আম্মাকে এসব বলোনা৷ উনাদের শুধু শুধু চিন্তিত করতে চাইনা আমি। এইটুকুই তো কেটেছে, ঠিক হয়ে যাবে। তুমি প্লিজ বলোনা প্লিজ!
তুরার এমন বাচ্চামো আবদারে রাইমা সামান্য হেসে বলল
-আচ্ছা ঠিকাছে বলছি না, কিন্তু এবার থেকে সাবধানে থাকবি কিন্তু, আমার একমাত্র ভাবি তুই, তুই ই যদি পা কেটে বসে থাকিস তাহলে কি করে হবে বল তো

-আচ্ছা আর এমন করব নাহ,এখন তোমরা এমন মনমরা হয়ে বসে থেকো না তো প্লিজ
তুরার কথায় আবারও সবাই নাচ গান শুরু করল। জায়মা আর রুহি মিলে রাইমার দুহাতে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে, আর তনু আরমানের সাথে উড়াধুড়া নাচ দিচ্ছে। জায়মার মেহেদী পরানো হলেই রুহি উঠে তুরার সামনে এসে বসে বলল
-দেখি হাত দাও তো ভাবি তোমার হাতেও মেহেদী পরাব
-না না,আমি মেহেদী দিব না থাক না

-কোনো থাক না,কিসের থাক রুহি ওকে জোর করে দিয়ে দে তো
রাইমার কথায় রুহি আরও উচ্ছ্বাস নিয়ে তুরার হাত ধরে মেহেদী দিতে লাগল। মেহেদী দেওয়া শেষে রুহি উঠে ওদের সাথে নাচতে গেলে তুরা নিজের হাতের দিকে তাকাল,এতক্ষণ খেয়াল করেনি বলে দুষ্টুমি করে রুহি হাতের একদম মাঝখান টাই আহানের নাম লিখে দিয়েছে। একনজরে চেয়ে রইল মেহেদীর টকটকে রঙে লিখা আহানের নামের দিকে। আহান! এই মানুষ টা তো তার স্বামী, যার জন্য বাধবাঙা পাখির মতো ডানা ঝাপটানো অনুভূতিরা ছেয়ে যাচ্ছে।

তুরা ওদের সাথে হাসাহাসি করলেও তার চোখ জোড়া তৃষাতুর পথিকের মতো আশেপাশে ঘুরে খুঁজে চলেছে একটি চেহারা, বারবার অবাধ্য নেত্রযুগল একই আনন দেখবার জন্য আকুল হচ্ছে। তবুও মানুষটার পাষাণ মন যেন এক বিন্দু গলে না, যার পাহাড় সমান গূঢ় ব্যক্তিত্ব একটু বেশিই কঠিন। তুরার পেলব অনুভূতি গুলোকে বারবার মুষড়ে দেয়, বারবার যার ক্রোধের আনলে তুরার মোমের মতো মনের অনুভূতি গুলো উবে গেলেও বেহায়া মনের জিরিজিরি আবেগেরা না চাওয়া বৃষ্টির মতোই বারবার ফিরে আসে,বারিধারায় সিক্ত করে বিয়োগান্তক পরিণতি।

সন্তপর্ণে ধাক্কা দিয়ে দরজা টা খুলল আহান। ঠেলে নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকল। ক্লান্ত জীর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল ডিমলাইটের আলোতেও স্পষ্ট বিছানাতে ঘুমে বুদ হয়ে থাকা চেহারার পানে। মন্থর গতিতে এগিয়ে গেলো বিছানায় শুয়ে থাকা তুরার দিকে। হাঁটু গেড়ে বসল তুরার সম্মুখ বরাবর। নিষ্পলক অবলোকন করল তুরাকে খানিকটা সময়। এক হাত বাড়িয়ে চোখে মুখে উপচে পরে থাকা চুল গুলো যত্ন সহকারে সরিয়ে দিল। হালকা নীল রঙের আলোতে মেদুর গাল আর ঘন নেত্রপল্লবের কম্পন স্পষ্ট।

বেশ দীর্ঘক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকল তুরার আননে। কেন এমন লাগে, সে তো বিয়েটা মানে না তবুও কেনো মেয়েটাকে কারো পাশে একদম সহ্য হয়না,কেনো ওর দিকে কেও তাকালেও মাথায় খুন চড়ে যায়,কেনো? সে তো তাকে বউ ও মানে না। স্বামী স্ত্রীর পারস্পারিক প্রাকৃতিক সম্পর্কও তো নেই তাদের,তবুও কেনো এই শক্ত মলাটে আবৃত মনটাতে প্রলয়ের ঝড় তোলে এই ছোট্ট চেহারা টা,, কেনো ইদানীং এই নির্দিষ্ট মানুষ টাকে ঘিরে তার যান্ত্রিক অনুভূতি গুলো নিমজ্জিত হয় ভাবনার নিরালোকে! তার টগবগে মেজাজ অনুভূতিকে শৈথিল্য করতে যেনো এই এক ফালি চেহারায় যথেষ্ট। কেনো লাগে এমন কেনো? ইদানীং তুরাকে ঘিরে আবিভূত হওয়া পুঞ্জীভূত হওয়া অনুভূতির মেঘ গুলো যেনো আহানের রক্তিমা আকাশের হরিদ্রাভ সূর্যকে ডুবি ডুবি করিয়েছে।

ভাবনার মাঝেই চোখ গেলো মেহেদী রাঙা তুরার হাতের দিকে,যার উপর পৃষ্ঠে বড় বড় অক্ষরে ‘Ahan’ শব্দটি লিখা। আনমনেই মুচকি হাসলো আহান, পরক্ষণেই মনে হলো নামটা তো তারই, কিন্তু তুরার হাতে লিখা নামে তো তার কোনো প্রভাব বা অধিকার নেই! তুরা তো নিজের স্বামীর নাম লিখেছে নিজ হাতে যে স্বামীর উপর তার পূর্ণ হক আছে, অধিকার আছে

আবছা আলোর ঘরটা জুড়ে নিদারুণ নিরবতা, তুরার নিঃশ্বাসের শব্দ আহানের কানে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পরছে, দ্বিধাদ্বন্দ্বিত হাত এগিয়ে বাড়াল তুরার দিকে, ছুঁয়ে দিলো রেশমের মতো নরম কপোল আর কম্পমান অধর যুগল, তড়িৎ ইষৎ কেঁপে উঠল আহান,ঘামে লিপ্ত শরীর টাতেও রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে গেলো শিহরণ। তৈলাক্ত চেহারায় চিকচিকে নাক আর ঘুমের ঘোরে কামড়ে রাখা ঠোঁট দেখে হঠাৎই আহানের মতো নিষিদ্ধ ইচ্ছেরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল, দপদপ করে উঠল শিরা উপশিরায় প্রবল জোয়ার বয়ে গেলো। দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলল, নিজেকেই নিজের ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করল আহানের, তার প্রখর ব্যক্তিত্বে যেনো কলঙ্ক লেগে যাচ্ছে,মনের বেহায়াপনা বেড়েই চলেছে দিনদিন, স্বচ্ছ চরিত্রের প্রতিচ্ছবি ধূলিসাৎ করে বক্ষপিঞ্জরের অবাধ অনুভূতিরা তাকে ব্যাপক বিড়ম্বনায় ফেলছে ইদানীং।

পায়ের ঠান্ডা শীতল স্পর্শ পেয়ে ঘুম হালকা হয়ে এলো তুরার। স্পর্শ টা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতেই পায়ের গোড়ালির দিকটাতে তরতর করে জ্বলন ধরল। চোখ খুলে উঠে বসল তুরা, পা টান দিতে নিলেই তালুতে রাখা বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ আরও শক্ত করে চেপে ধরে আহান বলল
-একদম নড়াচড়া করবে না,ওষুধ লাগাতে দাও

ভরাট কণ্ঠস্বরের অতিমাত্রায় শীতলতায় তুরা জমে গেলো। আকস্মিক ঘুম ভাঙায় ঘোরের মধ্যে থাকলেও আবছা আলোতে সামনে বসে থাকা আহানকে দেখে তা তড়িৎ গতিতে সরে তার জাগায় ছেয়ে গেলো একরাশ অস্থিরতা, সাথে একীভূত হলো নাম না জানা অভিমানের পাহাড়, এতক্ষণ কোথায় ছিল লোকটা?যখন ফেলে চলে গেলো তখন চিন্তা হয়নি? এখন কেনো এসেছে, লাগবে না ওষুধ লাগানো। ফট করে পা সরিয়ে নিলো তুরা, আহান বিরক্তি নিয়ে তুরার পানে চেয়ে বলল
-পা সরাচ্ছ কেনো আজব,দেখছ না ব্যান্ডেজ টা লাগাচ্ছি

বলে আবারও পা টেনে নিয়ে ব্যান্ডেজ করতে লাগলে তুরা পা টেনে গুটিয়ে নিলো। আহানের ক্রুর দৃষ্টিকে অগ্রাহ্য করে অন্যদিকে ঘুরে রইল।আহান চোখ বাকিয়ে তুরার দিকে তাকাল। ওর কার্যকলাপ শান্ত চোখে খানিক অবলোকন করে কণ্ঠস্বরের খাদ বহাল রেখেই বলল
-কি সমস্যা ব্যান্ডেজ টা করতে দিচ্ছ না কেনো তুমি?
-লাগবে না

অন্যদিকে তাকিয়েই বলল তুরা। আহান জড় করা ভ্রু যুগল প্রসারিত করল, তুরার দিকে একবার চেয়েই পায়ের কাছ থেকে উঠে এগিয়ে এসে একদম কাছ ঘেঁষে বসল।
-কি হয়েছে? এদিকে ঘোরো
-কিছু না

গাল ফুলিয়েই বলল তুরা, তুরার এমন কপট রাগ আর অভিমান দেখে আহান বেশ বিব্রতবোধ করল। তুরা গালে হাত দিয়ে মুখ তার দিকে ঘুরিয়ে বলল
-ওদিকে কেনো ঘুরেছ
-কিছুনা ঘুমাব আমি
বলেই তুরা থপ করে শুয়ে পরল। আহান এবার বেশ ক্রুদ্ধ হলো। মেয়েটা তাকে ইগনোর করল? আবার ব্যান্ডেজ ও করতে দিলো না। তখন তো শুধু শুধু বকেনি, কেনো হাত দিলো ছেলেটা ওর গালে।তা না হলে তো সে এত রাগ করত না,আর নাইবা এতকিছু হত

-তুরা! এদিকে ফেরো
তবুও কোনো রা করল না তুরা, ঠাঁই শুয়ে রইল ওপাশ করে। আহান এবার এক ঝটকায় তুরাকে টেনে নিজের দিকে ফিরাল। দুই হাত তুরার দুপাশে দিয়ে ঝুকে বলল
-এদিক ফিরতে বলিনি? কথা কানে যায়না? ব্যান্ডেজ টা কেনো করতে দিচ্ছ না
একে তো অভিমানে বুক ভার হয়ে আছে,তার উপর আহানের এমন কাঠ কাঠ কথায় তুরার সব বাধ ভেঙে গেলো, ধরে আসা গলায় বলল

-কেনো ঘুরব,কার দিকে ঘুরব। লাগবে না আমার ব্যান্ডেজ,যখন কেটেছিল তখন তো দেখতে আসেননি এখন কি দরকার। লাগবে না কারো দয়া আমার
কথার সাথে দুচোখ ছাপিয়ে অশ্রুজল বাধ ভেঙে গড়িয়ে পরল, তুরার নিজের উপরই রাগ হলো, কেনো সে কাঁদল,কাঁদতে চাইনি তো এমন পাষাণ মনের মানুষের সামনে সে কিছুতেই আর কাঁদতে চাইনি। কিছুতেই লোকটার সাথে কথা বলবে না,আবারও অন্যদিকে ফিরতে গেলে আহান ওর দু বাহু চেপে ধরে বলল
-আমি দয়া দেখাচ্ছি?

-দয়া না তো কি, আমি কে যে আমার জন্য চিন্তা হবে? বউ তো মানেন না তবুও ঘরে থাকতে দিয়েছেন,এটাই অনেক। আমার কারো দয়া আর লাগবে না আমি একা..
-চুপ! একদম ফালতু বকবে নাহ,বেশি কথা শিখেছ তুমি? কি যা তা বলছ। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, দয়া হোক আর মায়া, অধিকার হোক আর অনাধিকার চর্চা সবটাই আমি করব,শুধু মাত্র এই আহান ই করবে। যদি কোনো ছেলে ভুলেও ছোঁয়ার চেষ্টা করে তো মে’রে ফেলব

-কেনো,আমিতো যা তা,ষ্টুপিড, ফালতু তাহলে যা খুশি করি না কেনো
-শাট আপ, আরেকটা কথা বললে ঠ্যাং খোরা করে দেব। দেখি এদিকে আসো তো
বলে তুরাকে এক হাতে আগলে ধরে উঠে বসালো। এক হাতে তুরার দু চোখের পানি মুছে দিয়ে পা টান করে আধ সম্পূর্ণ করা ব্যান্ডেজ টা ভালো করে লাগিয়ে দিলো। তুরা নাক টেনে ভেজা ভেজা দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকাল। আহান তুরার দিকে তাকালে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো, তুরাকে আহান এক হাতে নিজের বুকেই চেপে রেখেছে যার দরুন দুজনের মধ্যবর্তী দূরত্ব নিতান্তই কিয়ৎপরিমান। আহানের উষ্ণ শ্বাস আর গায়ের পুরুষালি ঘ্রাণ দুটোই ভীষণ কড়াভাবে ভেদ করছে তুরার নাসারন্ধ্র।

তুরার অপলক চেয়ে থাকার মাঝেই আহান তর্জনী উঠিয়ে মুখে লেপ্টে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে শুইয়ে দিলো তুরাকে। এক হাত তুরার পিঠের নিচে দিয়ে আরেক হাত পাশে রেখে ঝুকেই রইল ওর মুখের উপর, বিরতীহীন অপলক চেয়ে আলতো হাতে স্পর্শ করল তুরার গাল। একটু আগেও কেমন বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছিল মেয়েটা। কান্নার দাপটে লাল হয়ে যাওয়া নাক,গাল,কান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল আহান। নজর গিয়ে ঠেকলো তুরার ফুলিয়ে রাখা ওষ্ঠের খুব গভীরে, দৃষ্টি সরাতে অক্ষম হলো আহান।

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২৫

আবারও, আবারও একই ভাবে অনুভূতি গুলো বাধছাড়া হলো, স্ব স্ব গন্ডিতে আগলে রাখা তীব্র বাসনা গুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতেই ওঠাপড়া চাহিদা গুলো তাকে গ্রাস করে ফেলেছে, কিন্তু তুরার দিকে চোখ যেতেই দেখল ঘুমন্ত তুরার মায়াবী মুখ খানায়।এইটুকু সময়ে মেয়েটা ঘুমিয়েও গেছে? ঘুমন্ত চেহারা দেখে অদ্ভুত নিগূঢ়তম মায়া চেপে ধরল আহানকে,আদুরে ওষ্ঠদ্বয় আর ছোঁয়া হলো নাহ,নিজেকে বহুকষ্টে সংযত করল আহান,রয়েসয়ে তপ্ত নিঃশ্বাসের সাথে নিজের অবাধ্য বাসনাকেও ঝেরে ফেলল

তুমি আমি দুজনে পর্ব ২৭