তুমি আমি দুজনে পর্ব ৩৯

তুমি আমি দুজনে পর্ব ৩৯
হুমাইরা হাসান

বাড়িতে ফেরার পর থেকে টুনিকে খুঁজে পাচ্ছে না তুরা, সেসময় কাজের ফাঁকে অতটা গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু বিকেল হয়ে গেলো এখনও টুনিটা তার কাছে আসল নাহ। এমনিতে তো তার কাছেই চিপকে থাকে সবসময়। আশেপাশে না পেয়ে তুরা আহানের ঘরের দিকে গেলো। আহান ফিরেছে ঘন্টা দুয়েক আগে তবে তুরা ওর সামনেই যায়নি। রাইমার ঘরে বসে ছিলো ঘাপটি মেরে।

গুঁটি গুঁটি পায়ে এগিয়ে দরজার সামনে দাঁড়াল, বুকের ভেতর অসহনীয় ধুকপুকানি শুরু হয়েছে, আহানের মুখটা দেখলেও তার লজ্জা লাগছে।
দরজা সামান্য ফাঁক করে ঘরে ঢুকল ভেতরে তো আহান নেই! তবে সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে তুরা টুনিকে খুঁজতে লাগল।
ঘরের ভেতর উলোট পালোট করে ফেলেছে,অবশেষে ফ্লোরে শুয়ে খাটের নিচে উঁকি দিতে লাগলে আহান বারান্দা থেকে ল্যাপটপ টা হাতে ঘরে ঢুকল, পুরো ঘরের অবস্থা বেহাল, তুরাকে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে বলল

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-ফ্লোয়ে শুয়ে কি করছ তুমি?
হঠাৎ আহানের গলা শুনে তুরা ধড়ফড়িয়ে উঠতে গেলে খাটের কাঠের সাথে ধুপ করে গুতা লেগে ব্যথায় মুখ কুচকে নিচেই পরে রইল। সব রাগ গিয়ে পরল আহানের উপর, এই লোকটার এখনই আসতে হলো! ব’জ্জাত লোক,মাথাটা ফেটে যাচ্ছে
তুরাকে সটান উপুড় হয়ে নিচে শুয়ে থাকতে দেখে আহান এগিয়ে এসে সামনে বুকে দুহাত গুঁজে দাঁড়ালো। তুরা ঘাড় ঘুরিয়ে আহানকে দেখে আবারও অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। আহান হাত বাড়িয়ে তুরার বাহু ধরে ওকে দাঁড় করালো, তারপর মাথাটা এপাশ ওপাশ করে দেখলো কোথায় লেগেছে।

-নিচে শুয়ে কি করছিলে তুমি?
প্রশ্নটা শুনে তুরার মন খারাপ হয়ে গেলো, মুখ ছোট করে বলল
-আমার টুনিকে খুঁজে পাচ্ছিনা
আহান কোনো উত্তর না করায় তুরা ঘাড় উচিয়ে তাকাল লম্বা চওড়া মানুষটার গম্ভীর চেহানা পানে,মুহূর্ত খানেক নিশ্চুপ থেকে ভার গলায় বলল
-তোমার আজাইরা বিড়াল টাকে বলো আমাকে ফলো করা বন্ধ করতে, ওর জ্বালায় আজকাল কাজ করেও আমি শান্তি পাইনা।

বলেই সরে গিয়ে টেবিলে ল্যাপটপ রাখতে গেলেই তুরার চোখ গেলো আহান দাঁড়িয়ে থাকা স্থানটাই, এতক্ষণ তাহলে এখানেই ছিলো পাঁজিটা,তুরা চোখ গরম করে টুনির দিকে তাকাল, কিন্তু তাতে তার কি সে তো ছোট্ট লেজটা গুটিয়ে হাত টা মুখের কাছে নিয়ে চাটছে। দু’হাতে কোলে তুলে নিলো তুরা খিটমিট করে বলল
-সমস্যা কি তোর, সুযোগ পেলেই এই জল্লাদ লোকটার কাছে এসে বসে থাকিস কেনো।

টুনি কি বুঝল ওই জানে,তবে তুরার কথায় তার কোনো কান নেই৷ সে তো অপলক চেয়ে আছে আহানের দিকে। তুরার কোল থেকেই ম্যাও করে ডেকে উঠলো আহানের দিকে চেয়ে,আহান ফাইল গুলো রাখতে রাখতে টুনির দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার বোন তো সুযোগ পেয়ে আমার মান সম্মান লুটে নিয়েছে,এখন তুমিও পরেছ পেছনে। দুজন মিলে আমাকে খেয়ে ফেলবে কোনদিন।

-আপনার মতো জল্লাদ লোকটাকে খেতে আমার বয়েই গেছে, আমিতো আইসক্রিম খাবো লাল টুকটুকে রঙের
আহানের কথা শুনে কোনো দিক না ভেবেই তুরা ফট করে বলে উঠলো। আহান তীক্ষ্ণ চাহনিতে তুরার দিকে তাকালেই চুপ হয়ে গেলো।
-কি বললে, আমি জল্লাদ?
মাজায় হাত রেখে বলল আহান, তুরা আহানের এমন ধীম গলায় খানিকটা ভড়কে গেলো, আমতাআমতা করে দুকদম পিছিয়ে খাটের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল

-ক্ কই না তো!
-কালকেও অনেক কিছু বলছিলা, আমি ব’জ্জাত,জল্লাদ আর কি যেন ও হ্যাঁ উগান্ডা! আমি উগান্ডা?
-নাহ,না তোহ। আপনি তো ভালো,খুব ভালো
জড়তা ভরা গলায় বলল তুরা, এসব কখন বলেছিল সে? তাও আহানের সামনেই,কাল কি বলেছিল কিচ্ছুটি মনে নেই তার। টুনিকে দু’হাতে চেপে খাটের পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। আহান এগিয়ে এসে একদম নাক বরাবর দাঁড়িয়ে বলল
-খুব বার বেড়েছে তোমার। কাকে কি বলো তুমি? আমি কে হই তোমার?
জবাবে তুরা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলে আহান শক্ত গলায় বলল

-কি হলো বলছ না কেনো আমি কে হই তোমার?
-স্ স্বামী..
-এক্সাক্টলি! তো নিজের হাসব্যান্ডকে ভয় পাওনা?
বলেই তুরার একদম কাছাকাছি এগিয়ে আসলে তুরা তাল সামলাতে না পেরে খাটে পরে যেতে নিলে এক হাতে টুনিকে আরেক হাতে আহানের টি-শার্ট খামচে ধরে থপ করে বিছানার উপর পরে গেলো, সাথে আহানও ও ওর দুপাশে হাত রেখে ঝুকে পরেছে।
তুরা রেগে তাকাল আহানের দিকে, কেমন জামাই এটা? আবার বলে আমি তোমার হাসব্যান্ড! পরে গেলো বাচাতে পারল তো না উল্টো নিজেই ঝুকে আছে।

-আমি পরে গেলাম ধরলেন না কেনো আমাকে
আহান তুরার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার চোখ বুলালো। আহানের এরূপ দৃষ্টিতে তুরা ভড়কে গেলো। থতমত খেয়ে কিছু বলতে নিবে তখনই দরজার বেল বেজে উঠলে এক হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে আহানকে সরিয়ে উঠে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো।

আহান চিত হয়ে শুয়ে পরল বিছানায়,তুরার ভড়কে যাওয়া চেহারা টা দেখতে ইদানীং অনেক বেশি ভালো লাগে, তাই কারণে অকারণে তুরাকে ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। মাথার নিচে দুহাত দিয়ে এসব ভাবতেই বুকের উপর কিছু একটার ভার অনুভব করতেই ভ্রু কুচকে মাথা উচু করে তাকাতেই দেখল টুনি সামনের দুহাতে আহানের বুকের উপর ভর দিয়ে ম্যাও করে উঠলেই আহান ছিটকে সরে এসে বলল
-সমস্যা কি তোমার,আমাকে এত ভালো লাগে? গাল টিপে আলু ভর্তা করে দেবো আজাইরা বিড়াল

ড্রয়িং রুমে বসে চায়ে শেষ চুমুক দিলো রায়হান আজাদ। চায়ের কাপটা সামনে রেখে বলল
-তাইলে আসি মা
-এখনই চলে যাবেন আংকেল,আরেকটু থাকুন। বাবা মাও কেও বাসায় নেই তারা যদি জানতে পারে আপনি এভাবে এসেই চলে গেলেন খুব কষ্ট পাবেন
রায়হান গোলগাল মুখ খানা ছড়িয়ে হেসে উঠে বললেন

-আবারও আসব মা, আজকে যেতে হবে। ইনসাফ আসুক আমি আবারও আসব
বলেই উঠে দাড়ালো, পাশেই প্রেমা মুখ কালো করে বসে আছে। মূলত প্রেমাকে নিতেই এসেছেন রায়হান। তার বোনের বাড়িতে যাবেন ময়মনসিংহ, তাই প্রেমাকে নিতে এসেছে। প্রেমা বার কয়েক নাকচ করলেও তিনি প্রেমাকে সাথে নিয়ে তবেই যাবে। রায়হান উঠে দাঁড়ালে প্রেমা মুখ কালো করেই সুটকেস টা নিয়ে দাঁড়ালো। আহানের সাথে আরও কিছু কথা বলে রায়হান বেরোলে প্রেমাও প্রচণ্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাঁটা ধরলো

-আপু
তুরার ডাকে হাঁটা থামিয়ে দাঁড়াল প্রেমা। তুরা চোখ মুখে মেকি আবেগ দেখিয়ে বলল
-আহারে,আমিতো ভেবেছিলাম তুমি আরও মাস খানেক থাকবে আপু। ইস,কি আর করার বলো। সে যেতেই হচ্ছে। তবে তোমার যখন ইচ্ছে করবে চলে আসবে কেমন? উনিতো রাইমা আপু আর তোমার মধ্যে পার্থক্য করেন না একই রকম ভালোবাসেন দু বোনকে।

বোন!শুনেই প্রেমার মেজাজ তুঙ্গে চড়ে গেলো, শেষে কি না আহানের বোন। এক আঙ্গুল তুলে তুরার মুখের সামনে ধরে কিছু বলবে তার আগেই তুরা প্রেমার হাত ধরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল
-থাক আপু, আর কিছু বলোনা। তুমি চলে যাচ্ছ ভেবেই তো আমার কান্না পাচ্ছে
প্রেমা বিড়বিড় করে ষ্টুপিড বলে গজগজ করে বেড়িয়ে গেলে তুরা ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। বেশ হয়েছে,পেত্নী টা ঘাড় থেকে নেমেছে।

কৃষ্ণকায় আকাশে থালার মতো রূপালি চাঁদটা জ্বলজ্বল করছে, তার চারিপাশ জুড়ে টিমটিমে তারার আলো। যা অদ্ভুত এক আলোড়ন তৈরি করেছে পরিবেশটাতে। গ্রীষ্ম পেরিয়ে বর্ষার আহ্বান জানিয়ে দমকা বাতাসে থেকে থেকে ভেসে আসছে নানান ফুলের সুবাস। পরিবেশের বুকে দাম্ভিকতার সহিত স্বচ্ছ নির্মল উৎফুল্লতা উপচে পরেছে।
তুরা রাইমার ঘরের বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে আবকাশ পানে। ঘ্রাণেন্দ্রিয় টেনে টেনে সুবাস নিচ্ছে ঠিক নিচেই অবস্থিত বাগানটার নানান ফুলের।

রাত সাড়ে এগারোটা। টেবিলে রাতের খাবার বেড়ে রেখে রাইমার ঘরে এসে পড়তে বসেছিল তুরা,সামনেই পরীক্ষা। তবে পড়া টা তো নিতান্তই বাহানা,সে তো পালিয়ে বেড়াচ্ছে আহানের থেকে। বিকেলের পরে সামনেও যায়নি,পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

তুরার চোখ জোড়া বাগানের দিক থেকে নড়েচড়ে গিয়ে পরল অদূরবর্তীই একটা ফ্লাটের দিকে। যেটার রাইমার ঘর থেকে উত্তরের দিকটাতে। বিল্ডিং টা এদিক থেকে বিপরীতে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকলেও বড় আকৃতির জানালা গুলোর মুখ এদিকটাতেই। খোলা জানালা ভেদ করে তুরার সূক্ষ্ম দৃষ্টি অস্পষ্টতা ভরা এক দৃশ্যতে তাকাতেই কপালে ভাঁজ পরলো। ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুচলে তাকালেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো, তড়িৎ গতিতে নাক মুখ কুচকে বলে উঠলো

-ছিহ্
গা গুলিয়ে উঠল তুরার, নির্লজ্জতার একটা সীমা আছে, এভাবে জানালা খোলা মেলা রেখে এসব কেও করে! এসব দেখেও তুরার চোখ কেঁপে উঠলো, নাশকতার ও একটা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলল
-ছিছিছি,,আস্তাগফিরুল্লাহ্। এসব মানুষ কি লাজ লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে। এসব দেখে আমার ভোলা ভালা মনটাও অপবিত্র হয়ে যাবে।

-কি করছো এখানে?
ভরাট কণ্ঠস্বর শুনে তুরা ধড়ফড়িয়ে তাকাল পেছনে৷ দরজায় গুতা লাগলেও সেটা সামলে তাকাল বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকা আহানের দিকে। তীক্ষ্ণতেজী চোখের দিকে তাকিয়ে সূক্ষ্ম ঢোক গিলল, আহান বিরক্তি নিয়ে তুরার পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-চুপচাপ থাকতে পারো না,এত ছটফট করো কেনো। দেখি কোথায় লেগেছে?
-না না,লাগেনি লাগেনি আমার..
আহান শুষ্ক মুখে তুরার চোখে তাকাল, শান্ত স্বরে বলল

-ঘরে যাওনি কেনো এখনও, এখানে কি করছিলে
তুরা চমকিত হয়ে বলল
-ক্ কিছুনা তো আমি কিছুই দেখছিলাম নাহ।
তুরার এমন হড়বড়ানো দেখে আহান সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো। সামনে এগোতে এগোতে বলল
-কি দেখছিলে তুমি এখানে, আমাকে দেখে চমকে সরে এলে?
তুরার চোখ জোড়া অক্ষিকোটরের বাইরে আসার উপক্রম, আহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল

-কই, কিছুই দেখছিলাম না আমি, কিছুই তো দেখিনি। চলুন ঘরে যাবো।
-না আমি এখানেই থাকব এখন, তুমি ঘরে যাও
তাজ্জব বনে গেলো তুরা, এই লোকটা এখন এখানে কেনো বসবে,নজর একটু এদিক থেকে ওদিক গেলেই মান সম্মান যাবে। আহানের আরও সামনে এসে দু হাত ছড়িয়ে বলল
-নাহ,আমি আপনাকে কিছুতেই এখানে থাকতে দেবো নাহ। কিছুতেই না।চলুন শিগগির ঘরে চলুন
আহান বিরক্তিতে ভ্রু উচালো। চিরাচরিত কণ্ঠে বলল

-পাগল হয়ে গিয়েছ তুমি? কি যা তা বলছো। সরো আমাকে দেখতে দাও?
তুরা উদ্বেগিত হয়ে আহানকে আটকাতে গেলো। লাফিয়ে আহানের পায়ের উপর উঠে পরল। আহানের শার্ট খামচে বলল
-আপনাকে আমার দোহায়, প্লিজ কিচ্ছু দেখবেন নাহ। না তো আমি মরে গেলে অকালে বিধবা হবেন
কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলা তুরার কথা শুনে আহান বিরক্তিতে ধীরস্থির গলা শাসিয়ে বলল
-কি যা তা বলছ,ষ্টুপিড।
বলেই তুরার অভিব্যক্তির প্রতীক্ষা না করে কোলে তুলে নিলো। আকস্মিক শূন্যে ভেসে উঠায় তুরা চেঁচিয়ে উঠলে আহান চাপা স্বরে ধমকে বলল

-শাট আপ,চেঁচাচ্ছ কেনো,লোকজন শুনলে কি ভাববে?
তুরা অবোধের মতো মুখ করে বলল
-কি ভাববে? আর কে ভাববে বাড়িতে তো কেও নেই!
আহানে নিজের ঘরে নিয়ে আস্তে করে নামিয়ে দিলো তুরাকে বিছানায়। তুরার পায়ের কাছে সালোয়ার টা সামান্য তুলতে গেলেই তুরা থতমত খেয়ে বলল
-ক কি করছেন আপনি!
-আদর করছি ইডিয়ট!

দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বলে, তুরার পা টা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখল ব্যথা পেয়েছে কি না।
কিন্তু তুরা আহানের কাজের মর্মার্থ না বুঝে অহেতুক ভীত হয়ে এক টানে পা তুলে খাট থেকে নেমে যেতে গেলেই আহান তার বলিষ্ঠ হাতের এক টানে তুরাকে নিজের উরুর উপর বসালো। এক হাতে কোমর ঝাপটে ধরলো। তুরা আহানের বাহুবন্ধনীতে আবদ্ধিত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলে আহান তুরার কোমরে রাখা হাতটা আরও চেপে ধরলো। তুরা তুতলিয়ে বলল

-ছ’ছাড়ুন না আমাকে, সুরসুরি লাগে আমার
সেদিকে ধ্যান দিলো না আহান, নিজের উষ্ণ তপ্ত শ্বাসের আলিঙ্গনে জর্জরিত করে দিলো তুরাকে। তুরা ভীতিসঞ্চারিত হয়ে বলল
-আমাকে ছাড়ুন, নাইলে কিন্তু আমি চেঁচাবো
-চেঁচাও, তোমার চেঁচামেচি দেওয়ালের বাইরে গেলে ব্যাপারটা তোমার জন্যেই লজ্জাজনক হবে
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল আহান। তুরা হতভম্ব হয়ে চাইল খানিকক্ষণ। আহানের কথার মর্মার্থ ঠাওর করতে না পেরে ভ্রু যুগল ললাটে স্পর্শ করিয়ে বলল
-কেনো লজ্জাজনক হবে?

-ওরা ভাববে আমরাও সামনের ফ্ল্যাটের কাপলদের প্রসেসিং শুরু করে দিয়েছি
কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই অনড় হয়ে গেলো তুরা, স্তব্ধ হয়ে গেলো সমস্ত কায়া! বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। তার মানে আহান আগেই দেখেছে!? বিস্মিত নয়নে আহানের দিকে তাকাতেই দেখল ঠোঁট বাকিয়ে হাসছে আহান, ডান হাতের তর্জনী উঠিয়ে তুরার মুখে উপচে পরা এলোমেলো চুল গুলো সরিয়ে বলল
-এবার বলো, চেঁচামেচির প্রসেসিং শুধু করবো?

তুমি আমি দুজনে পর্ব ৩৭+৩৮

জড়ানো কণ্ঠ আহানের, মোহাগ্রস্থ ভরা কণ্ঠে কেঁপে উঠলো তুরার হৃদগহ্বর। আহানের বুকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরে যেতে নিলে আহান তুরাকে কোলে নিয়েই শুয়ে পরলো বিছানায়। ওকে চেপে ধরে নাকে নাক ঘষে বলল
-উহু,এক চুল নড়বে নাহ। আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙোনা সামলাতে পারবে নাহ। নিজেও ঘুমাও আমাকেও ঘুমাতে দাও
বলে মাথার স্থান পরিবর্তন করে এনে রাখল তুরার পেটের উপর। দুহাতে জড়িয়ে ধরলো তুরার মেদহীন বাকানো কোমড়। প্রগাঢ় স্পর্শে অস্থির করে তুলল তুরাকে,কিন্তু নিজে স্থির শান্ত হয়ে চোখ বুজে রইলো তুরার পেটের উপর মাথা রেখেই

তুমি আমি দুজনে পর্ব ৪০