তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ১৩ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ১৩
Suraiya Aayat

বিকাল 4.15,,,,
আরশিয়ান ব্যালকনিতেই বসে আছে আর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ দেখছে, দূর থেকে দুপুরের জোঁয়ারটাকে বেশ ভালোই উপভোগ করেছে সে ৷
হঠাৎ আরু আর্শিয়ানের কাছে এসে বলল
” আর্শিয়ান চলো আমরা বাইরে যাবো ৷”( খানিকটা গম্ভীর হয়ে )
আরুর গলার আওয়াজ পেয়ে আর্শিয়ান ঝটপট মেঝে থেকে উঠে আরু কাছে গিয়ে আরুর কোমরটা জড়িয়ে ধরে বলল
” মাম্মাম তুমি কি আমার ওপর রেগে আছো ?”

আরু কিছু বলছে না, আর্শিয়ানের ওপর কতোটা রাগ হচ্ছে জানে না তবে মনের মাঝে এক চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে খুব ৷ আজ যদি ও জানতো যে নিহান ই ওর আরিশ তাহলে হয়তো আজ এই কষ্টটা ওকে পেতে হতো না আর আর্শিয়ানকেও বলতে পারতো যে হ্যাঁ ওটাই তোমার পাপা আর্শিয়ান ৷
আরু চুপ আছূ দেখে আর্শিয়ান আবার আরুর দিকে তাকিয়ে বলল
” ও মাম্মাম চুপ করে আছো কেন বলো,আমি আর কখনো এমন কথা বলবো না ৷ আই আ্যম সরি ৷”
আরু আর্শিয়ানের এমন কথা শুনে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আমি রাগ করে নেই আর্শিয়ান , আর তাড়াতাড়ি চলো কিছুক্ষন পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে ৷”
কথাটা বলে পিছন ঘুরে চলে যেতে নিলেই আর্শিয়ান আরুর কামিজের ওড়নাটা টেনে ধরে বলল
” আই এম সরি ৷” ( কাঁদোকাঁদো হয়ে)
আর্শিয়ানের চোখে জল দেখে আরুর সব অভিমান দূর হয়ে গেল ৷
আরু ঝুকে আর্শিয়ানের গালে হাত রেখে বলল
” তুমি কাঁদছো কেনো , আমার এই চ্যাম্পটাকে কাঁদলে যে একদম ভালো লাগে না সেটা কি সে জানে না ?”
আর্শিয়ান আরুকে জড়িয়ে ধরে বলল

” আমি তোমাকে কখনো পাপার কথা বলবো না, আমি জানি পাপা একদিন ফিরে আসবে আর আমিও অপেক্ষা করবো ৷”
ছোট্ট আর্শিয়ান যে হুঠ করেই এতো কিছু তার মস্তিষ্কের মাঝে সব ধারনা গুলোকে আয়ত্ত অরে দেবে সেটা আরু ভাবেনি কখনো ৷
আরু আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বলল
” আর্শিয়ান চলো এখন আমরা যাই ৷”
আর্শিয়ান আরুর গালে চুমু দিয়ে একটা টেডি স্মাইল দিলো ৷

সানা মুগ্ধতাকে খাইয়ে দিয়ে সিড়ি দিয়ে নীচে নামছে আর হঠাৎই চিল্লাপল্লার আওয়াজ শুনে সানা দ্রুত পায়ে নামতে লাগলো ৷ নীচে গিয়ে দেখলো আফসানা বেগম সোফাত ওপর মাথায় হাত রেখে বসে আছেন, আর আরমান সাহেব,ক্রমাগত চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কাউকে কথা শোনাচ্ছেন, উনি কাকে এতো কথা শোনাচ্ছেন তা দেখার জন্য সানা তাড়াতাড়ি করে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল আরমান সাহেবের সামনে মাথা নিচু করেছে ইলমাজ আর উনি ক্রমাগত ইলমাজকে একের পর এক কথা শুনিয়েই যাচ্ছেন ৷ আরমান সাহেব ঠিক কি নিয়ে এতো ঝামেলা বাধালেন তা সানা বুঝতে পারছে না , তবুও মাঝপথে এসে সমস্ত কিছু বোঝার চেষ্টা করছে ৷

“তোমার সাথে কিছুতেই আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেবো না, কথাটা কি তুমি বোঝোনা ! আর আমার মেয়েতো বলেছে যে সে তোমাকে ভালোবাসেনা আর বিয়ে করতে চাই না তাহলে বারবার একই কথা কেন বলছো !”(আরমান সাহেব চেঁচিয়ে )
” আপনি হঠাৎ এমন কথা কেন বলছেন ! কাল অবধি তো আপনি ঠিকই ছিলেন, আপনিও চাইতেন আরূর সাথে আমার বিয়ে হোক তাহলে আজকে কেন এমনটা বলছেন আঙকেল?”
” আমি তো বললাম আমার মেয়ের বিয়ে দেবো না তো দেবো না ব্যাস ৷”
ইলমাজের চোখে জল, মানুষ এতটা আশা দেখানোর পর কিভাবে সেই আশার আলো কেড়ে নেই তা ও বুঝতে পারে না
নিজেকে সামলে নিয়ে বলল

” এখন কি আরূকে পাওয়ার জন্য আমাকে আবার নিজেক যোগ্য প্রমান করতে হবে !”
আরমান সাহেব পড়লেন মহা ফ্যাসাদে কেন যে এই ছেলেকে উনি এতোটা মাথায় তুললেন তার জন্য এখন পসতাচ্ছেন ৷
এই মুহূর্তে সবকিছুকে সামাল দেওয়ার জন্য আর পুনরায় আফসানা বেগমের বিশ্বাস ফিরে যাওয়ার জন্য বললেন
” তুমি কি সহজ সরল বাংলা ভাষা বোঝোনা? বললাম তো হবে না তো হবে না ৷ যাও এখন ৷”
কথাটা শুনে ইলমাজ চোখের কোনের জলটা মুছে বলল
” আমি আরুর অপেক্ষায় থাকবো আঙ্কেল, আমার বিশ্বাস আরু একদিন আমাকে মেনে নেবে ৷”.
কথাটা বলে ইলমাজ চলে গেল ৷
আজ থেকে ইলমাজের দিন গোনার শুরূ আরুকে পাওয়ার ৷
ইলমাজ চলে যেতেই আরমান সাহেব আফসানা বেগমের পাশে বসে বললেন
” ছেলেটা কতো বেয়াদব, বাড়ি এসে এমন কথা বলে ৷”

হঠাৎ আরমান সাহেবের এমন পরিবর্তন লক্ষ করতেই সানার একটু অদ্ভুত লাগলো ৷
আরমান সাহেব দেখল সানা সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ওকে দেখে উনি বললেন
” বউমা একটু জল আনো তো , গলাটা শুকিয়ে আসছে ৷”
.কতটা শুনে সানা মাথা নাড়িয়ে চলে গেল ৷
সানা চলে যেতেই আরমান সাহেব বলে উঠলেন
” আর যাই হোক নিজের মেয়ের এতোবড়ো ক্ষতি আমি কখনো চাইবো না ৷”
কথাটা শুনেই আফসানা বেগম গর্জে উঠলেন, উনি ওনার হাতের পাশে থাকা ফলের ঝাকাতে থাকা ছুরিটা নিয়ে ওনার গলার কাছে ধরে বলল

” আমার মেয়েকে নিয়ে তোমার মুখ থেকে আর একটাও কথা শুনলে আমি তোমাকে জানে মেরে দিবো, খবরদার আমার মেয়ের দিক থেকে দূরে থাকবে ,ওর কাছে পিঠেও তোমাকে দেখলে রক্তের বন্যা বইয়ে দেবো, ও আমার মেয়ে আর কারোর নয় ৷”
কথাটা বলে উনি চাকুটা হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রূমে চলে গেলেন ৷
আরমান সাহেব হাফ ছেড়ে বাঁচলেন,মরার ভয় সবার থাকে ,ওনারো আছে, তাই ছুরি হাতে আফসানা বেগমের ঝলসানো রুপ দেখে উনি একটা শব্দ ও উচ্চারণ করেননি ৷
কিচেন থেকে সবকিছুর সানার চোখে পড়ছে, হঠাৎ এক নিমেষেই বাসার এতো পরিবর্তন, বাসার মানুষের এতো পরিবর্তন ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, সবার এই বিশাল ক্ষমতা আর টাকার লোভের মাঝে নিজেকে নিষ্প্রান আর খুব দূর্বল লাগছে ওর নিজেকে ৷ আজকে আহান বাসায় ফিরলে আহানকে জানাবে, বড়োসড়ো কিছু ঘটার আগে ওকে কিছু করতে হবে নাহলে যে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে ৷

আর্শিয়ান আর আরু বিচের ধার দিয়ে হটছে, জুঁতো জোড়া পাড়ের কোথাও একটা জায়গায় খুলে রেখে এসেছে ৷ ভাটার জল আরু আর আর্শিয়ানের পা ছুয়ে যাচ্ছে, সমুদ্রের সাদা ফেনা ছোট ছোট চক্রবকারে ঘুরছে মাঝে মাঝে ৷
ইনানী বিচের সবচেয়ে আকর্ষনীয় হলো সামুদ্রিক প্রবাল বা কোরাল ৷

কিছুটা হাটার পর আরু আর্শিয়ানকে নিয়ে পাড়ের কাছে বসলো ৷ অনেক বড়ো বড়ো কোরাল রয়েছে বিচের ধার জুড়ে ,মাঝে মাঝে একটা দুটো কাঁকাড়াও দেখা দিচ্ছে ৷ সমুদ্রের দমকা হাওয়ায় আরুর চুলগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে উড়ছে,পাগল পাগল অনুভূতি ৷ আজকে বিচে এসে আর নিহানের দেখা পাইনি ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালো ৷
এমনিতেই কালকে মানুষ ওর হাতটা আচমকাই ধরায় ওর যা অনুভূতি হয়েছিলো তা মারাত্মক আর কালবৈশাখীর মতো ধংসাত্বক যেন ওকে নিমেষেই লণ্ডভণ্ড করে দেবে ৷ এমনিতেই বহু দোটানার সংমিশ্রনে ওর দিনগুলো কাটছে ,সব কিছুতেই বিসাদের ছাঁয়া ৷

” কোন কিছু নিয়ে আপনার অসুবিধা হচ্ছে না তো?”
অনেকটা কৌতুহলী সুরে আবির বলল ৷
” নাহ, বেশ ভালোই আছি এই একাকীত্বের মাঝে ৷”
” রাতে খেয়েছেন?”
” নাহ এখনো খাইনি, আজকে আর হোটেলে গিয়ে খাইনি, খাবার রুমে পাঠাতে বলেছি ৷”
” ওহহ আচ্ছা ৷ তা আর্শিয়ান ঠিক আছে ,,,,”
কতটা বলতে বলতেই আরু বলে উঠলো
” আমি একটু পরে ফোন করছি,খাবার চলে এসেছে ৷”
কতটা বলে আবিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরু ফোনটা কেটে দিলো ৷

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ১২

দরজাটা খুলতেই দেখলো একটা লোক খাবার এনেছে, দেখতে ভদ্র সভ্য হলেও চাহনিটা অদ্ভুত ৷ আরুর দিকে যেন কেমন একটা দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছে ৷ আরু নিজের দিকে ভালোভাবে দেখে নিল যে ও ঠিকঠাক আছে কিনা তারপর একটু গলা পরিষ্কার করে বলল
” ভাইয়া খাবারটা ৷”
লোকটা একটু থতমত খেয়ে বলল
” এই নিন ৷”
বলে খাবারটা আরুর হাতে ধরিয়ে আরু হাতের সাথে একটু বিচ্ছিরি ভঙ্গিতে স্পর্শ করলো যা আরুর পছন্দ হলো না, তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলল
” ভাইয়া বিলটা ৷”
উনি আরুকে আরো অবাক করছ বললেন
” এই ঘরে আপনি আর আপনার ছেলে একা থাকেন তাইনা !”
ওনার কথার সুর আরুর একদমই পছন্দ হয়নি , আর উনি হয়তো আরুকে দূর্বল ভাবছেন এই ভেবে আরু এবার শক্ত গলায় বলল

” তো !”
উনি আরু দিকে চোখ বুলিয়ে বললেন
” নাহ কিছু না , আপনার 1050 টাকা হয়েছে ৷”
আরু ওনার দিকে খানাকটা রাগী চোখে তাকিয়ে রুমে চলে গেল টাকা আনতে ৷
টাকাটা এনে ওনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
” এই নিন ৷”.
উনি বাকা চোখে বললেন
” আসি মেম সাহেবা ৷”
এমন বিচ্ছিরি ভঙ্গিতে বলায় আরুর মাথায় রক্ত চড়ে গেল ৷নিজেকে সামলে রূমে গেল ৷
আর্শিয়ান টিভি দেখছে,চোখে ঘুমঘুম ভাব ৷
চিংড়ি ভুনা, কাঁকড়ার একটা রেসিপি ,ভাত আর জলপাই এর আচার অর্ডার করেছে ৷
আর্শিয়ানকে ভালো করে খাইয়ে ঘুম পাড়ালো আরু ৷
খাবার দাবার সাইড করে রেখে সমুদ্রের দিকের ব্যালকনিতে গিয়ে বসলো, লোকটার অমন ব্যাবহার আর চাহনি ওর একদম ভালো লাগেনি ৷ না জানি কখন কোন বিপদ কোন দিক থেকে আসে তাই সবসময় ওকে সতর্ক থাকতে হবে , কথয় বলে সাবধানের মার নেই ৷

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ১৪