তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৩১ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৩১
Suraiya Aayat

চোখের পাতা জোড়া খুলতেই আরিশ বুঝতে পারলো যে বেশ লেট লয়ে গেছে আজ ওর উঠতে ৷ অন্য দিন এতো লেট ওর হয় না, আগে যখন আরু ছিলোনা তখন রাতে ঘুম আসতো না ঠিকঠাক তাই ডাক্টরের প্রেসক্রাইব করা ঘুমের ওষুধ খেত তাতে করে ওর ঘুমটা ভালো হতো আর তখন ঠিক এমনটাই দেরি করে ঘুম ভাঙতো কিন্তু কই ও তো আর এখন সেই ঘুমের ওষুধ আর খাই না , তাহলে হঠাৎ এভাবে আজ এতদিন পর এত লেট করে ঘুম ভাঙলো তার কারন আরিশ যেন বুঝেও বুঝতে পারছে না ৷সোফার মাঝে ছোট জায়গায় ঘুমাতে কষ্ট হয়েছে, অন্য দিন আরু আর আর্শিয়ানের সাথে বিছানাতেই ঘুমায়, আরু প্রথমে ঘুমাতে চাইতো না, সে মনে করে যে যাদেরকে চেনে না কেন তাদের বাসায় থাকবে তাও আবার একটা পর পরুষের সাথে একই বিছানায় কেন ঘুমাবে ৷ কিন্তু আরিশের জোরের ওপর আরুর কোন জোরই খটেনি ৷এখন আর রাতে ঘুমানো নিয়ে কিন্তু কিন্তু করে না ৷

সোফা থেকে পা ঝুলিয়ে বসে পুরো রুমটা ভালো করে চেক করে নিলো, নাহ কোথাও আরু নেই ৷ মেয়েটা হয়তো এখন মুখ ফুলিয়ে ডাইনিং রুমে বসে থাকবে যার কারনটা হবে খুবই সাধারন ৷ কেন না সেও আর্শিয়ানের সাথে স্কুলে যাবে, তার কি এখন আর স্কুলে যাওয়ার বয়স আছে ? এই সাধারন কথাটা বললে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে, গলা ছেড়ে সারা বাড়ি মাথায় করে কান্না করার ক্ষমতাটা থেকে যে সে বঞ্চিত ৷ আরিশ ও তখন থামানোর প্রবল চেষ্টা করে মাঝে মাঝে তো কান ধরে ওঠবস অবধি করতে হয় এমন ৷ শুধু যে আরিশ আর আর্শিয়ান আরুকে বিরক্ত করার চেষ্টা করে তেমনটা বললে ভুল ৷ বরং বলা যাই আরু তাদেরকে আরো বেশি জ্বালাই ৷

যেমন মাঝ রাতে ফুঁপিয়ে কান্না করে ওঠে, কারন জিজ্ঞাসা করলে বলে যে তাকে নাকি ঘুমানোর জন্য কম জায়গা দেওয়া হয়েছে , খেতে গেলে খেতে চাইনা কারন সে নাকি এসব খাবার আগে কখনো খাইনি, সে নাকি অলওয়েজ বিরিয়ানি খাই, এই করে প্রতিদিন তার জন্য 3 বেলা না হলেও 2 বেলা অনিকা খান বিরিয়ানি বানান , কখনো তো আবার মাঝ রাতে হুঠহাঠ রুম থেকে পালিয়ে গিয়ে ছাদে বসে থাকে, আর আরিশ আর বাড়ির সবাই ওকে তন্নতন্ন করে খুজতে থাকে ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন রকম করে আরিশকে আরু প্যারা দেই , আরিশের ধৈর্য ক্ষমতা অসীম, এতকিছু সহ্য করার পরও কখনো আরুর প্রতি বিরক্ত বোধ করেনি, হয়তো এটাই ওর আরুপাখির জন্য ওর ভালোবাসা ৷
সোফা থেকে নেমে বিছানার কাছে যেতেই দেখল যে ড্রয়ারটা খোলা যেখানে ওর ঔষুধ রাখা আছে ৷ আরিশ ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের চোখে তাকালো, হ্যাঁ ও যা ভেবেছে সেটাই , কালকে রাতে কোনভাবে আরিশের ওই করলার জুসের মাঝে আরু ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু এই কাজটার পিছনে আরূর স্বার্থটা আরিশ বুঝলো না ৷
তবুও আর বেশি কিছু না ভেবে আরিশ ওয়াশরুমে ঢুকে গেল, এখন ও শাওয়ার নেবে, আজকে আর অফিস যাওয়া হলো না ৷ তাই ভাবলো আরুকে নিয়ে আফসানা বেগমের কবরের কাছে যাবে ৷ যদি আরুর পুরোনো কিছু মনে পড়ে ৷
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল আরূ একটা সুন্দর লাল টুকটুকে শাড়ি পরেছে, হাতে লাল রঙের কাচের চুড়ি আর মাথায় বেলি ফুল ৷

আরিশ তোয়ালে দিয়ে মাথার ভিজে চুলগুলো মুছতে মুছতে আরুর দিকে নরম দৃষ্টিতে তাকালো, আজ কতোদিন পর আরুকে শাড়ি পরে দেখছে ও ৷ কতোটা সুন্দর লাগছে, আরিশের চোখ ফেরানো মুশকিল হয়ে পড়েছে ৷
আরু আর এক হাতে চুড়ি পরছিলো তখন আরিশ গলা পরিষ্কার করে বলল
” এহেম এহেম তা আপনার কি কোথাও যাওয়া হচ্ছে? ”
আরু আরিশের দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে কিছু ঈশারা না করে আবার চুড়ি পরায় মন দিলো
আরিশ এবার একটু হেসে ভেজা তোয়ালেটা বিছানায় ফেলে ওয়াড্রব থেকে সাদা পাজ্ঞাবী বার করতে করতে পুনরায় বলল

” তুমি কি কোথাও যাচ্ছো আরুপাখি ?”
আরু আবার কোন ভব ভঙ্গি প্রকাশ করলো না ৷
আরিশ পাঞ্জাবীর বোতাম দিয়ে আরুর দিকে ফিরতেই আরু চলে যেতে নিলেই আরিশ হাত ধরে ফেলল ৷ আরুকে কাছে টেনে আরুর দুই গালে আলতো করে স্পর্শ করতেই আরু শাড়ির আঁচলটা মুঠ করে নিলো ৷
আরিশ আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ মেয়েটা কেমন যেন কাঁপছে , তার কম্পমান ঠোঁটজোড়া যেন ভীষনভাবে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু চেয়েও যেন বলতে পারছে না ৷
আরিশ আরুকে ওর নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল

” কালকে আমি যখন আবিরের সাথে কথা বলছিলাম তুমি কাঁদছিলে কেন আরুপাখি ?”
কথাটা শোনা মাত্রই আরু আরিশের থেকে সরে এলো, ঈশারা করে আরিশকে বলল
” আমি কাঁদিনি , আপনি ভুল দেখেছেন ৷”
.আরিশ আরুর ঈশারা বুঝে মুচকি হেসে বলল
” আমার চোখ কি সবসময় এতোটাই ভুল দেখে আরুপাখি ? আমার চোখ যে তোমার কোন গতিপ্রকৃতিকেই ভোলে না

আরু আর আরিশকে বেশি কিছু বলতে চেষ্টা না করে চটপট বিছানায় বসে কাগজ নিয়ে লিখতে শুরু করলো
” এই যে বেয়াদপ টুইটুই আমার আর বাসায় ভালো লাগছে না, আমার ঘরের মাঝে দম আটকে আসছে, আমি বাইরে যাবো আজকে ! আপনি কি আমাকে নিয়ে যাবেন? হয়ত নিয়ে যাবেন না কারন আপনি তো এই বসার সবার মতো উইইইমা কি সুপার টুইটুই না, তাই আপনি তা করতেই পারেন এটা অসম্ভব কিছু না ৷ আপনি না গেলেন আমাকে যাওয়ার পারমিশন দিন , এই কথাটা বলছি কারন এই বড়ির সুপার টুইটুই মানুষগুলো তো আবার আপনার কথার বাইরে কিছু করেনা তাই আর কি ৷

আপনি যেতে দিলে আপনার বেয়াদপ টুইটুই থেকে বেয়াদপ টা আমি হাটিয়ে দিবো শুধু নট সো টুইটুই থাকবে !আপনি কি আমার এই শর্তে রজি ? ”
কাগজে লিখে কাজটা বারাবরের মতো দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে আরিশের দিকে ছুড়ে মেরে নীচে চলে গেল ৷
আরিশ কাগজটা সোজা করে পড়ে শেষের কয়েকটা লাইন পড়ে বিছানায় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিতে লাগলো এমন অবস্থা ৷

আরিশ এখন বুঝতে পারলো আরুশির ওর জুসের মধ্যে ঘুমের ঔষুধ মেশানোর রহস্য ৷ আরু যানে আরিশ কখনোই ওকে একা বাইরে যাওয়ার জন্য ছাড়বে না যতখন না আরিশ যাবে ৷ তাই আরিশের জুসে ঔষুধ মিশিয়েছে যাতে দেরি করে ঘুম ভাঙার দরুন আরিশ আজকে অফিসে না যেতে পারে আর আরুর এই ছোট আবদার টুকু যেন পূরন করতে পারে ৷ কারন এখন আর আরুর সেভাবে বাসার বাইরে যাওয়া হয় না বলতে গেলেই চলে, বাড়ির মানুষগুলোর সাথেই বেশি সময় কাটাই ৷

আফসানা বেগমের কবরের সামনে দাড়িয়ে আছে আরু আর আরিশ ৷ আরুকে কেমন যেন নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে, আরিশ আরুর দিকে তাকালো ,মেয়েটা কি পুরোনো স্মৃতি মনে কারার বড্ড চেষ্টা করছে ?হইতোবা হ্যাঁ ৷ আরিশ চাইছে আরু পুরোনো কথা মনে করে একটু কাঁদুক চাইলে খুব করে কাদুক তাতে ওর মনের বোঝাটা হালকা হবে, কিন্তু আরু যে কিছুই মনে করতে পারছে না ৷ অন্যথায় আরিশ আরুকে নিয়ে ফিরে এলো ৷

যতোটা সম্ভব একটা মানুষের খারপ স্মৃতিটাকে ভুলে ভালো স্মৃতিটাকেই মনে রাখাই ভালো তেমনি সবাই এখন আফসানা বেগমের সাথে কাটানো ভালো স্মৃতিটাকেই মনে করার চেষ্টা করে ৷রাস্তার পাশে আরুর হাত ধরে দাড়িয়ে আছে আরিশ ৷ আজকে রোদের তেজটা কম যার দরুন এভাবে জনবহুল রাস্তার মাঝে এটু ভালো কবে দাড়াতে পারছে আর রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে পারছে ৷ এভাবে কখনো আরুর হাত ধরে ঢাকা শহরের রাস্তায় হাটা হয়নি, জ্য৷মে আটকা পড়ে কখনো রাস্তা পার করা হয়নি, ভীষন গরমের কড়া দুপুরে তপ্ত পিচের রাস্তায় রিকশার জন্য অপেক্ষা করা হয়নি ৷

আজ আরু যা করেছে মন্দ করেনি, অনুভূতিটা বেশ ৷
কিছুখন দাঁড়াতেই আরিশ আর আরু এটা রিকশা পেল, ধানমন্ডি লেকে যাওয়ার জন্য বলল ৷
আরু এদিক ওদিক দেখছে আর ঢাকা শহরের সৌন্দর্যটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছে ৷ পুরোনো অনুভুতিগুলো সজাগ থাকলে হয়তো আরো ভালো লাগতো ৷

আরিশ ধানমন্ডি লেকে নিয়ে গেল আরুকে, বেশ অনেকখন সেখানে সময় কাটালো ৷ চারিদিকে কতো কাপলদের ভীড়, কেউ কারোর হাতে হাত রেখে বসে আছে তো কেউ কারোর কোলে মাথা রেখে কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও আরিশ আর আরুর মাঝে এক ইঞ্চিও দুরত্ব নেই, আরিশ আরুর দিকে তাকালো ৷ মেয়েটা তার চোখের মনিটা ক্রমশ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখছে ৷ আজ স্মৃতি থাকলে আর কথা বলার ক্ষমতা থাকলে হয়তো আরুও আর পাচজনের মতো আরিশের সাথে পার্কের বেঞ্চে বসে হাজারো গল্পের আসর জমাতো ৷ হঠাৎই আরিশ সেখান থেকে উঠে কোথাও যেন চলে গেল , আরু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ৷ যে আরিশ আরুকে কখনো একা ছাড়ে না সেই আরিশ ই এত সংখক ভিন্নধর্মী মানুষের মাঝে ওকে একা রেখে কোথায় চলে গেল ৷ আরু চোখ ফিরিয়ে নিল ৷

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৩০

হঠাৎ পাশে কারোর উপস্থিতি অনুভব করতেই পাশে তাকালো , আরিশের হাতে আইসক্রিম আর এক হাতে হাওয়াই মিঠাই ৷ এগুলো দেখতেই আরু খুশি হয়ে গেল, এরকম একটা পরিবেশে এগুলোর হয়তো খুব বেশি দরকার ছিলো ৷ আরুর হকতে আইসক্রিম আর হাওয়াই মিঠাই ধরিয়ে দিলো আরিশ ৷ আরু একবার হাওয়াই মিঠাই তো একবার আইসক্রিম খেতে লাগলো ৷ আরিশ আরুর দিকে তাকাচ্ছে, আরিশ কাঁচুমাচু মুখ করে আরুকে বলল
” পাশে কেউ শুকনো মুখে বসে থাকলে তার সাথেও যে একটু খাবার শেয়ার করতে হয় সেটা কি কেউ জানে ৷ ”
আরু আরিশের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে মুখের ভঙ্গিতে বলল

” আই কান্ট শেয়ার মাই ফুড ৷ “বলে আরিশের দিকে ? ভাবে তাকালো ৷
আরিশ হো হো করে হেসে ফেলল আরুর কাজ দেখে ৷ এখন আরুকে বড্ড প্রানচ্ছল লাগছে ঠিক আগের মতো ৷ আরু উঠে গিয়ে হাটতে শুরু করলো ,আরিশও আরুর সাথে হাটছে ৷
আজ যদি ওউ হিমুর মতো হতো তাহলে ওউ কি সব মায়া ত্যাগ করে আরুকে একা রেখে চলে যেত ?
ভালো লাগছে মুহূর্তগুলো কাটছে দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায়, চলুক না এভাবে , সময়টাকে থামিয়ে কাজ নেই, তাকে নিজের গতিতে চলতে দেওয়াই ভালো ৷

তুমি নামক প্রাপ্তি শেষ পর্ব