তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২৪ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২৪
Suraiya Aayat

” তুমি কি আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছো ছেলে ! শোনো তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমি তোমার কথায় ভয় পেয়ে যাচ্ছি তাহলে সেটা ভুল ৷ আর তুমি কি ভাবলে তুমি যা বলবে আমি তাই করবো , কখনো না ৷ আমার তো তোমাকে প্রথম থেকেই সুবিধার মনে হয়নি, না হলে কোন ছেলে একটা বিবাহিতা মেয়েকে বিয়ে করতে চাই এটা জানার সত্বেও তার সন্তান আছে৷ তুমিও সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বার হবার চেষ্টা করছো সেটা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছি ৷”

ইমরান সাহেবের আহত ভঙ্গিমায় বলা কথাগুলো শুনে পৌশাচিক ধারায় হেসে উঠলো ইলমাজ ৷ওনার দগদগে ক্ষততে লবন ছেটানোর কাজটা বেশ ভালো ভাবেই করছে ইলমাজ যদিও এতে ওর আনন্দটা আরো দ্বিগুন হচ্ছে ৷ মনের আনন্দের মতো বড়ো আনন্দ আর কোন কিছুতেই নেই ৷ মন খুশি তো পুরো পৃথিবী তোমার কাছে এমনই ৷
ইলমাজ বেশ কৌতুক সুরে বলল,,,,,

“টাকা পয়সা বেশ ভালোই কামাচ্ছেন, কখনো এই মেয়েকে বিদেশে উড়িয়ে কখনো নিজের মেয়েকে উড়িয়ে ৷ ”
কথাটা বলে ইলমাজ পুনরায় মজার ছলে বলল
” ওপস ! সরি সরি , একটু ভুল বলে ফেললাম ৷নিজের মেয়েকে তো আজকে চালান করবেন তাইনা !”
আরমান সাহেব গর্জিয়ে উঠলেন, ওনার পরিকল্পনা ইলমাজ কি করে জানলো সেটা ওনার বোধগম্য হচ্ছে না ৷ তাই রাগের মাত্রাটাও ক্রমাগত স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েই চলেছে ৷
” এই ছোকরা তুমি আমার সাথে মশকরা করো হে, তোমাকে আমি দেখে নেব ৷”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আমাকে কি আর করবেন , নিজের জামাইকেই মারার চেষ্টা করেও মারতে পারলেন না ৷ কম চেষ্টা করেছেন বলুন তো ! একবার না দুই দুই বার মারার চক্রান্ত ৷”
” আমি আরিশকে মারতে যাবো কেন ! ওকে মেরে আমার কি লাভ !”

“লাভ তো আপনার ই , আরিশ মরলে আপনার মেয়ে আরুকে সুরক্ষা দেওয়ার আর কেউ রইলোই না যে ৷”
আরমান সাহেব চুপ করে রইলেন, ইলমাজ এত কিছু জানলো কি করে সেটা ভেবেই উনি অবাক হয়ে যাচ্ছেন, বেশি কথা বলতে চাইছেন না, বেশি কথা বললে আবার মুখ ফসকে যদি বেকাইদায় কিছু বলে ফেলেন তাহলে তখন সবটা ঘেটে ঘ হয়ে যাবে তার তখন সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে ৷তাই এখন চুপ করে থাকাই শ্রেয় ৷
ওনাকে চুপ থাকতে দেখে ইলমাজ করুন সুরে বলল

” আপনি খেলোয়াড়টা বড্ড কাচা, কাজ করে কাজটা ঠিকঠাক হবে কি সেটা ভাবেন না আপনি, সেই ভাবনা আপনার থাকলে তাহলে আজ এই আরিশ নামের আমার আপনার পথের কাঁটা টা থাকতো না ৷ সে যাই হোক আপনি হয়তো জানেন না যে কালকে রাত্রে আরিশকে মারার জন্য আপনি যে লোকটা পাঠিয়েছিলো সে মারা গেছে আর লোকটা আমার পুষে রাখা লোক ছিলো ৷ তাকে যদি কেউ আলাদা করে টাকা পে করত চাই তাহলে তার আর কি দোষ বলুন তো ৷
কথাটা শুনে আরমান খানের গলা শুকিয়ে এলো ৷ শুকনো একটা ঢোক গিলে বলল

” তুমি এসব কি করে জানলে ?”
ইলমাজ হেসে বলল
” আপনি তো দেখছি মহা পাগল, আরে আমি এক্ষুনি না বললাম লোকটা আমার ৷ সে আমার কথা শুনবে ৷আপনি তো কেবল তাকে অন্ধের মতো টাকা দিয়েছেন, আর একটা কথা জানাই সে কিন্ত এখনো মরেনি সে বেঁচেই আছে ৷”
” আচ্ছা মানছি সে তোমার লোক ,তুমিও তাকে টাকা দিয়েছ আর আমিও তাকে টাকা দিয়েছি তার পরেও কাজ হলো না কেন?”( রাগে চেঁচিয়ে)
ওনার এমন চিৎকার শুনে ইলমাজ বলল

” এই আপনি কাকে ধমকাচ্ছেন হমমম, এটা মনে রাখবেন আপনাকে ফাসানোর জন্য ওই একটা লোকই কাফি , তাই আমার ওপর গলা উঁচু করে কথা বললে কিন্ত আমি সহ্য করবো না, আরুকে বিক্রি করে কোটিকোটি টাকা কামানোর আশা সব ভাষিয়ে দেবো ৷”
” এখন তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো এসব বলে !”
” যদি বলি তাই ৷”
” তোমার উদ্দেশ্য কি? কি চাইছো তুমি, আর হঠাৎ তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন?”
” টাকা ৷ আমরো টাকা চাই ৷ আরুকে পাচার করে যে টাকাটা আপনি একা আত্তসাৎ করবেন বলে ঠিক করেছেন শুধু তার ভগিদার হতে চাই আর কিছু না ৷ 50 ৷ 50 ৷”

” যদি না দিই তাহলে কি করবে !”
” তাহলে যা হবে তার জন্য প্রস্তুত থাকবেন ৷”
আরমান সাহেব ভয় পেয়ে গেলেন বিভৎস, উনি যদি এই নারী পাচার কান্ডে একবার জড়িয়ে যাই তবে উনি নিজে সম্পূর্ণ রকম ভাবে ফেসে যাবেন, জেলে গেলে আরুর প্রতি ওনার রাগ মিটবে না, আর আরুর টাকাও ভোগ করা হবে না, আর না আরুর ছেলেকে এতিম রুপে দেখতে পারবে ৷ কথাগুলো ওনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তাই আর বেশি কিছু না ভেবে বলল

” আমি 30 % তোমাকে দিতে পারি তার 1 শতাংশ ও বেশি নই ৷”
” ওকে আঙ্কেল জেলে আপনার সাথে দেখা করতে একদিন যাবো ইনশাআল্লাহ , আর সাথে এক বটুয়া পান ও নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ ৷ আল্লাহ হাফেজ ৷”
ইলমাজ ফোন কাটতে গেলেই আরমান সাহেব বলে উঠলেন
” আচ্ছা 40% ৷”
” উহুম ৷”
” তুমি আমাকে কথা দাও এই ঘটনার পর আর কখনো আমার কোন ব্যাপারে তুমি হস্তক্ষেপ করতে আসবে না ৷”
” উহুম একদম না, আর আমার তার কোন দরকার ও পড়বে না ৷ সে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন ৷”
” হমমম, কিন্তু তুমি তো এখনো বললে না যে আরিশকে কালকে মরলো না কেন?”
” আরিশ কালকে ওর ফ্ল্যাটে ফেরেনি, ওখানে ওর বদলে ওর ফ্রেন্ড মিহির বলে কেউ একজন ছিলো ৷ মিহিরকে আরিশ ভেবে ছুরি চালানোর আগেই মিহির জেগে যাই ৷”

” কিন্ত আমি এত কাচা কাজ যে করি না , আমি অনেক খোঁজ নিয়েই আমার লোককে পাঠিয়েছিলাম, তাহলে এমনটা হয় কি করে ৷ আমার মনে হয় তুমি আমার সাথে ডাবল গেম খেলছো ৷ ”
” উইইইমা আঙ্কেল এসব কি বলছেন, আমি আপনার সাথে ডাবল গেম খেলবো , আস্তাগফিরুল্লাহ ৷” ( কথাটা বলে হাসতে লাগলো )
” আরিশ সত্তিই কালকে ফ্ল্যাটে ফেরেনি আপনাকে হয়তো ভুল ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে ৷”
আরমান সাহেব দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বললেন
“হাতি পাকে পড়লে ব্যাঙ এও লাথি মারে ৷ আমি একবার শুধু সামলে উঠি এক এক কে দেখে নেব ৷”
” আমাকে কিছু বললেন আ্ঙকেল ?”

” নাহ, তোমাকে আর কি বলবো, আমার সর্বনাশ করার তা তো তুমি করেই ফেলেছো আর কি বাকি আছে !”
” হে এই কথাটা একদম ঠিক বলেছেন, আপনাকে আমি তো অর্ধেক লুটেই নিয়েছি ৷ সেসব ছাড়ুন আর আগে বলুন আপনার সাথে আমি কোথায় দেখা করবো ?”
” তুমি আমার সাথে দেখা করবে মানে ! আমার সাথে দেখা করে তোমার কাজ কি ! ”
” উইইইমা টাকা পয়সার ব্যাপার আছে না, আর তাছাড়া আপনার মেয়ে আরু মানে আমার প্রাক্তন প্রেমিকা কালকে যে দেশ থেকে লোপাট হয়ে যাবে তার আগে আমি তার সাথে একবার ও দেখা করবো না ! তাকে জানাবো না যে তার এই অন্ধকার ভবিষ্যৎ এর জন্য আমার হাত ঠিক কতোটা ! যতোই হোক ওর জন্যই একদিন ওই আরিশ আমার গায়ে হাত তোলার সাহস পেয়েছে, তা কি করে ভুলি ! সেই মার আমি আজো ভুলিনি ৷ যাই হোক আর একটা জিনিস জানার ছিলো, !”

” কি ?”
” আরু সহ আর কতজনকে লোপাট করছেন?”
” সেসব আমি তোমাকে বলতে যাবো কেন? তোমার যতটা দরকার তুমি জেনেছ !”
” আচ্ছা ছাড়ুন, বলতে হবে না, কটার সময় আমি এঢ়ারপো্ট এ যাবো ? আর টাকা কিন্তু কালকেই চাই আমার , কোন কিন্তু শুনতে আমি পারবো না ৷”
” রাত 11 টা, আর টাকা কি পালিয়ে যাচ্ছে নাকি ! ওটা পরেও নিতে পারবে ৷”
” আমি কাউকে বিশ্বাস করিনা,এমনকি নিজেকেও না ৷ আর টাইমটা বেশ ভালো, আপনার সাথে খুশিতে জমিয়ে ডিনার করা যাবে ৷”

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২৩

” এই ছেলে মজা কর আমার সাথে, বেয়াদপ কোথাকার ফোন রাখো ৷”
আরমান সাহেব গজগজ করতে করতে ফোনটা কেটে দিলেন ৷
আরমান সাহেব ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল
” দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি, আগে যদি জানতাম যে এভাবে ছূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল বার হবে তাহলে আগে একেই মারতাম ৷ যতসব আজাইরা আমার কপালেই জোটে ৷”
ইলমাজ ফোনটা কেটে দমফাটা হাসি দিয়ে বলল

” সরি আরু হোয়াটএভার আই ডান উইথ ইউ ৷”
কথাটা বলে সিগারেট ধরালো ৷ সিগারেট টা হাতে নিয়ে মৃন্ময়ীর বড়ো করে বাধিয়ে রাখা ছবিটার সামনে গিয়ে দাড়ালো ৷ পাশে ওর ছেলে কাঁদছে অনেকক্ষন ধরে ৷ হ্যাঁ ইলমাজের সন্তান আছে , ও একা নই ৷ মৃন্ময়ী তিতিনকে জন্ম দেওয়ার সময় মারা যাই ৷ তারপর থেকে ইলমাজ আর ওর ছেলে দুজন ই একা ৷

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ২৫