তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৫ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৫
Suraiya Aayat

পাঁচ বছর পূর্বে সেদিন ছিল আমার ননদ সানা আর আমার ভাইয়া আহানের বিয়ে , ভালবেসেই বিয়ে করেছিল তারা, তবে ওনার(আরিশ) আর আমার সম্পর্কটা খুব যে একটা মধুর সম্পর্ক ছিল তেমনটা নয় , তার কারণটা হয়ত আমাদের মাঝে থাকা তৃতীয় ব্যক্তি টা ৷

তৃতীয় ব্যাক্তি কথাটা শুনে আবির অবাক হয়ে বলল “আপনার আর আপনার স্বামীর মাঝে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি ! মানে ঠিক কিভাবে? আর কে সেই তৃতীয় ব্যাক্তি তার আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না ৷”
আরু এবার আবিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল
” বুঝতে পারছেন না তাই না ! আসল কথাটা জানেন কি , আমার জীবনটা বড়ই গোলমেলে ৷ তবুও আপনি যখন সবটা জানতে চাইছেন তবে শুনুন ৷”

তখন আমি কলেজে পড়ি , কতই বা বয়স হবে সতেরো কিংবা আঠেরো ৷ আমার আলাপ হয় আমার প্রাক্তন প্রেমিক ইলমাজের সাথে ,মানুষটাকে দেখলে বড্ড প্রেমিক পুরুষ বলে মনে হতো ৷
সে যাই হোক এতো পুরোনো আবেগকে গুরুত্ব না দেওয়াই ভালো ৷
তবে শুনুন ,,,,,,,

তার সাথে আলাপটা হঠাৎই, অনেকটা ভারচুয়াল লাইফের প্রেম যাকে বলে আরকি ৷ তার সাথে আমার সরাসরি আলাপে প্রেম হয়নি, প্রথমে সে আমাকে শপিংমলে দেখে তারপরে আমার সম্পর্কে আরো বেশি জেনেশুনে তারপর সেখান থেকে ফোনালাপ শুরু হয়, ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ৷ বেশ ভালোই ছিলো দিনগুলো,৷ ফাল্গুনের প্রথম দিনে উনার সাথে আমার হয় প্রথম দেখা ৷ ধানমন্ডি লেকের কাছে ওনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ৷ উনিও হাতে করে ফুল এনে আমার পাশে রেখে আলতো করে আমার চোখদুটো চেপে ধরেছিলেন , আর আমিও তার উপস্থিতি অনুভব করছিলাম ৷ উনি ভালোবাসার প্রকাশে হাটু গেড়ে আমার সামনে বসতে গেলেই হঠাৎ একটা শক্ত হাতের জোরালো ঘুসি তার মুখে পড়তেই উনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তারপরে সামনে থাকা ব্যক্তিটা ওনাকে বেধড়ক মারতে লাগলেন , আমি আটকাতে পারেনি সেদিন, লোকজন এসে ইলমাজকে ছাড়িয়েছে তার আগে ইলমাজ আধ মরা হয়ে গেছেন ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাটা শুনতেই আবির এর মধ্যে কৌতুহল জেগে উঠলো , ধড়ফড় করে উঠে বলল
‘ কে সেই মানুষটা যে এভাবে ইলমাজকে নির্মমভাবে মেরেছে আর তার দোষটাই বা কি ছিল?’
আরু এবার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
‘ ইলমাজের একটাই দোষ ছিল যে উনি আমাকে ভালোবেসে ছিলেন , আর আমিও যে কেবলমাত্র একজনের, তা শুধুমাত্র আরিশ খানের, সেই কারনেই হয়তো আরিশ খান আমাকে অন্য কারো সাথে সেদিন সহ্য করতে পারেনি ৷ সেই মানুষটা ছিলেন আমার স্বামী আরিশ খান,তার আর একটা সম্পর্ক ছিলো যে উনি আমার ফুপির ছেলে ৷ওনাকে আমি খুব ভয় পেতাম বড়ো ভাইয়া হিসাবে ৷

‘ তারপর , তারপর কি হলো !’ অনেকটা কৌতূহলের সাথে বলল আবির ৷
‘তারপর আর কি !’ সেই দিনের পর থেকে জন্মালো আমার আরিশের প্রতি তীব্র ঘৃণা ৷
এরপর ইলমাজের সাথে দেখা করার কথা আর দ্বিতীয় বার ভাবিনি,তৌরি হলো ইলমাজের সাথে দূরত্ব আর ওনার (আরিশ)প্রতি রাগ আর তীব্র ঘৃনা ৷ ইলমাজের প্রতি দূরত্ব যখন অনুভব করলাম তখন কখনো ভাবি নি যে তার থেকে এতটা দূরে সরে যেতে হবে আমাকে ৷ আমি আর তার (ইলমাজের)সাথে কখনো দেখা করিনি এটা ভেবে যে ওনার সাথে দেখা করলে যদি অরিশ আবার ওনাকে মারে তখন! সেই ভয়টা বড্ড কাজ করতো !
‘ তাহলে আরিশের সাথে আপনার বিয়ে হলো কিভাবে আর ইলমাজের সাথে কি পরে আপনার আর কখনও দেখা হয়নি ?’

আরু এবার খানিকটা উচ্চস্বরে হেসে বলল
‘ উনার সাথে আমার বিয়েটা আরো বেশি রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার জানেন তো !
‘ কেন রোমাঞ্চকর হতে যাবে কেন?'( আবির যেন আর পরের কাহিনী শোনার জন্য অপেক্ষা করতে পারছেনা ৷ )
‘কাহিনীটা রোমাঞ্চকর এই কারণেই কারন আমার বিয়ে হচ্ছিল অন্য একজনের সঙ্গে , তবে ওই যে আমি যে শুধু আরিশ খানের আর কারোর না ,সেই জন্যই হয়তো বিয়ে টা হয়নি ৷
“মানে ?”

” আমার বিয়ের আসর থেকে উনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছিলেন আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তবে সেটা শুধু আমি আর সে জানতো আর কেউ না ৷ উনি বলেছিলেন আমার. গর্ভে নাকি ওনার অনাগত সন্তান আছে আর আমি সেই সন্তানকে রেখে অন্যকাউকে বিয়ে করছি ৷”
” তাহলে আরশিয়ান কি অবৌধ সন্তান ” কতটা আবির মনে মনে ভাবলো কিন্ত যতখন না পুরোটা শুনছে ততখন কিছু বলতে পারছে না ৷

তারপর ওনার সাথে আমার বিয়ে হয়, উনি আমাকে পেয়ে যেন পুরো দুনিয়া পেয়ে গেছেন কিন্ত ওনার এই মিথ্যা বলে আমাকে নিজের করে পাওয়া কাজটা যেন আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি, শুরু হল উনার প্রতি আমার তীব্র ঘৃণা , বারবার ওনার সাথে খারাপ ব্যাবহার করলাম ৷ ওনাকে উঠতে বসতে কথা শোনাতাম, দূরে দূরে থাকতাম সবসময়

আবির বুঝতে পারলো যে ও যা ভেবেছে তা ভুল ৷ আরুর এক একটা কথা ও শুনছে আর ওর গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে ,তবুও মুখে তেমন উত্তেজনা প্রকাশ করতে পারছে না ৷
জানেন তো ফাল্গুনের দিনগুলোকে আমি বরাবরই খুব ভয় পেতাম , কারণ সেই ফাল্গুনের দিনেই আমি ইলমাজকে হারিয়েছিলাম তাই হয়তো এমন ভয় পেতাম ৷
হঠাৎ ফ্লাগ্নুনের প্রথম দিন উনি যেন কেমন নিজেকে দমিয়ে নিলেন, আরিশ খানের মাঝে যে রাগ আর জেদটা থাকে তা যেন এক নিমেষেই থেমে গিয়েছিলো ৷

সেদিন ওনার সেই থমকে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে ওনার প্রতি আমার সমস্ত রাগ অভিমানের কথা প্রকাশ করেছিলাম , আর উনিও ইলমাজ এর প্রতি এমন কাজে নিজেও খুব অনুতপ্ত ছিলেন, আর যাই হোক ভালোবাসাটা কোন অপরাধের নয় সেটা উনি হয়তো ভালোভাবেই বুঝতে পারতেন ৷
উনি আমাকে সেদিন একান্তে আমাকে নিজেকে একবারের মতো পেতে চাইলে ইলমাজের প্রতি ঘটা সবকিছুর রাগ আর অভিমানে বলেছিলাম যে আমি কেবল তাকে ঘৃণা করি এবং একমাত্র তার কারনেই আজ ইলমাজ আমার সাথে নেই ৷

সেদিন আমার সেই কথাটা শুনে উনি বলেছিলেন যে আর কখনো উনি এভাবে আর আমাকে বিরক্ত করবেন না ৷ ফিরিয়ে নিয়েছিলো তার নিজের অধিকারবোধ ৷

তারপর হঠাৎই একদিন এক আন্টি বলেছিলেন যে নিজের স্বামী ব্যতিত অন্য কোন পুরুষের কথা ভাবাও গুনাহ, আর পরকীয়ার মতো সম্পর্ক যেখানে তিনটি মানুষের জীবন জড়িয়ে থাকে সেই সম্পর্ক গুলোর মতো খারাপ কিছু হয়না ৷ সেই দিনের সেই কথাগুলো শোনার পর নিজের মনের মাঝে অদ্ভুত এক খারাপ লাগা কাজ করছিল , তাছাড়া এক অদ্ভুত অপরাধবোধও কাজ করছিল ওনার প্রতি, মনে হয়েছিল যে ওনার সাথে আমি যা করছি সেগুলো ঠিক না তাই পুরনো সবকিছু ভুলে যদি নতুন করে সবটা শুরু করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের জীবনটা গুছিয়ে নিলেও গোছানো যেতে পারে আর এমন কি আমাদের মাঝে ইলমাজ ও উপস্থিত নেই তাই কেন একটা তৃতীয় ব্যক্তির জন্য নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটাকে নষ্ট করব ! সেই ভেবে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম, ধীরে ধীরে ওনার প্রতি অনুভূতিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠতে লাগলো , ভালোবাসতে শুরূ করলাম তবে উনি তা বুঝতে পারেননি ,নিজেকে সবসময় আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন ৷

ইতিমধ্যে উনিও আমাকে ইলমাজের কাছে ফিরিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেই নিয়েছিলেন ৷
সেদিন ছিলো আমার ভাইয়ার বিয়ের দিন, আমি ছিলাম বরপক্ষ আর উনি ছিলেন কন্যাপক্ষ ৷ ভেবেছিলাম সেদিন ওনাকে নিজের মনের কথা জানাবো ৷
বিয়ে বাড়িতে পৌঁছানোর পর উনি আমাকে হঠাৎ রাস্তায় ডাকলেন ফোন করে , তারপর আমিও ওনার পথ অনুসরন করে রাস্তায় গিয়েছিলাম ৷
সেখানে উনি আমাকে ডেকে বলেছিলেন,,,,,

কথাটা বলে আরু থেমে গেল, ওর গলা ধরে আসছে, পরের কথাগুলো ও কিভাবে বলবে তা ওর জানা নেই ৷
আরুকে থামতে দেখে আবির বলে উঠলো
‘ কি বলেছিলেন উনি সেদিন?'(কৌতুহলী হয়ে)
আরুর এবার নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বলল,,,,

উনি আমাকে বলেছিলেন যে উনি আমাকে ভালোবাসেন ঠিকই কিন্ত এটা ওনার ব্যর্থতা যে উনি আমাকে ভালোবেসে তার ভালোবাসাটাকে প্রকাশ করতে পারেনি, এবং আমিও তার ভালোবাসাটা বুঝতে অক্ষম ৷ কিন্তু উনি চাই যে আমি যেন আমার জীবনে নিজের সঠিক ভালোবাসাটাকে অর্থাৎ ইলমাজকে ফিরে পাই তাই তিনি আমাকে সেদিন ইলমাজের হাতে তুলে দিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন,তবে এটা ওনার কাছে অজানাই রয়ে গিয়েছিলো যে ইলমাজ বিবাহিত ৷ আমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার 1 বছর পরই সে(ইলমাজ) বিয়ে করেছে ৷ আরিশ এটা জানতেন না আর ইলমাজ ও আরিশকে কথাটা কখনো বলেননি ৷ ইলমাজ যদি সেদিন ওনাকে একটি বার ও বলতেন যে ইলমাজ নিজে বিবাহিত , সে আর এখন আরুকে চাই না তাহলে হয়তো আজ আমার আরিশ আমারই থাকতো ৷
আজ আমি ইলমাজকে বড্ড ঘৃনা করি কারন উনার জন্য আজ আমার প্রিয় মানুষ আমার কাছে নেই ৷
কথাটা বলে আরু জোরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো ৷

হাটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে আরু ৷ হঠাৎ কারোর কান্নার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলো আবির ৷ আরুর দিকে তাকিয়ে দেখল আরুর কান্নার যেন কোন বিরাম নেই, এতক্ষণ ধরে আরুর কথা শুনতে শুনতে আরুর পাঁচ বছরের জীবনের ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল আবির , এ যেন সত্যিই এক রোমাঞ্চকর কাহিনী ৷ মেয়েটা কতোটাই না কষ্ট পাচ্ছে আজও , আর এইসব আবির কল্পনা করার চেষ্টা করলেও কল্পনা করতে পারছে না , এ কষ্টের যেন কোন কল্পনা হয় না, তা যেন কেবলই অনুভব করার জন্য ৷
আবির বাকরুদ্ধ ,ও আরুকে কি বলে শান্তনা দেবে তা ওর জানা নেই ৷
আবির আরুর দিকে রুমাল বাড়িয়ে দিয়ে গেলেই আরু মুখ তুলে তাকিয়ে হাত দিয়ে চোখের জলটা মুছে নিয়ে বলল

” এসবের কোনো প্রয়োজন নেই, এই সমস্ত দিন আমি অনেক আগেই পার করে এসেছি ৷”
কথাটা বলে মেঝে থেকে উঠে বেলকুনিতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বলল
” যেদিন হয়তো উনি ফিরে আসবেন সেদিন আমার অভিযোগের আর কোন শেষ থাকবে না , আমার জন্য না হলে আমার আরশিয়ান এর জন্য অভিযোগ করবো ৷”
আবিরের মনে অনেকক্ষণ ধরে একটা প্রশ্ন জাগছে কিন্তু প্রশ্নটা আরু কে কি করা উচিত হবে সেটা আবির বুঝতে পারছে না, তবুও সমস্ত লজ্জা কাটিয়ে বলেই ফেলল
‘ তাহলে আরশিয়ান কিভাবে কি!’

কথাটা এক নিমেষেই আবির বলে ফেলল, কথাটা বলার পর আরুর দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারল যে প্রশ্নটা হয়তো আরু কে ওর করা উচিত হয়নি ৷
আরু আবিরের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল “আরশিয়ান আমাদের সন্তান, উনার আর আমার ভালোবাসার প্রকাশ
কথাটা শুনে আবির আর কথা বাড়ালো না ৷”
“আপনাকে আমি নিজের ভাইয়ের মত ভাবি, তাই আপনাকে বললাম এগুলো ৷ আমি আমার জীবনের কথা কখনো কাউকে বলিনা তবে আজকে নিজেকে বড্ড অস্থির লাগছিল আর কথাগুলো আপনাকে বলতে ইচ্ছা হল বলে বলেই ফেললাম ৷”

ভাইয়া শব্দ টা শুনে আবিরের কিঞ্চিৎ খারাপ লাগলো ,কিন্ত খারাপ লাগাটা বেশিক্ষণ থাকলো না কারণ আজ ও বুঝতে পারছে আরু কেন এত সাহসী ৷ মেয়েটা জীবনের অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে তারপর এই পর্যায়ে এসেছে, আরু আর আরিশের ভালোবাসা দেখে ও মুগ্ধ তাই অযথা আরুকে কে নিয়ে স্বপ্ন না দেখাই ওর জন্য শ্রেয় বলে নিজের মনকে সান্তনা দিলো আবির ৷
আবিরকে কথাটা বলে হঠাৎ আরুর 4th ফ্লোরের ব্যালকনির দিকে চোখ যেতেই আরু কাউকে দেখেই চেঁচিয়ে বলল

” ঐতো আমার আরিশ, আমার আরিশ ওখানেই আছে, আমি বলেছিলাম না ৷ ”
কথাটা বলে আরু তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল ৷ হঠাৎ এতো অল্পসময়ের মধ্যে এতো কিছু হয়ে গেল যে আবির কিছু বুঝতে পারল না ৷
আরিশ এসেছে কথাটা বলে আরু বেরিয়ে গেল তারমানে নিশ্চয়ই আবার কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটবে দুপুরের মতো , আবার যেন সবকিছু জটিল না হয় তার জন্য আবির ও আরুর পিছন পিছন ছুটতে লাগলো ৷
ইতিমধ্যে আরু সিঁড়ি দিয়ে নেমে তিতাসের রুমের সামনে গিয়ে পৌঁছেছে ৷
তিতাসের রুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল,,,

” আমি জানি আপনি এখানে আছেন , প্লিজ দরজা খুলুন , প্লিজ আমার থেকে দূরে সরে থাকবে না, আমি যে আর পারছিনা আপনাকে ছেড়ে থাকতে, আপনি কি বোঝেন না আমি আপনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না ৷”
ভর সন্ধ্যেবেলায় এইরকম হই-হুল্লোড়ের আওয়াজ পেয়ে তিতাস বেরিয়ে এসে দেখল আরুকে ৷ আবার আরুকে দেখে তিতাস দরজা বন্ধ করে নিতে গেলেই আরু তিতাসকে সরিয়ে আবার ওর রুমের ভিতর ঢুকে গেল, চেচাতে লাগলো আরু আর বারবার বলছে আরিশ প্লিজ আপনি বেরিয়ে আসুন ৷
” আপনি লুকিয়ে আছেন কেন? প্লিজ সামনে আসুন ৷”
আবির এসে দেখলো আরু ইতিমধ্যে শোরগোল শুরু করে দিয়েছে, আরূকে যতক্ষন আবির থামাতে গেল ততক্ষণে তিতাস পুলিশের কাছে কল করেছে…..

জেলের মধ্যে বসে আছে আরু, আর চারিদিকের একরাশ মশা ওকে ঝেকে ধরেছে ,হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে ও ৷ আরশিয়ান জেলের লোহার রড ধরে আরুর দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ৷ আরুর সেদিকে হেলদোল নেই ৷পাগল পাগল লাগছে ওকে দেখতে ৷
হঠাৎ জেলের একজন লেডিস কনস্টেবলের তালা খুলে জেলের ভিতরে ঢুকতেই আরু মুখ উঁচু করে তার দিকে তাকালো, আরুর চোখ মুখের অবস্থা ভয়ঙ্কর , চোখদুটি লাল, চুল গুলো উস্কখুস্ক ৷ একনজরে ওনার দিকে দেখে আরশিয়ানকে বলল

” তোমার পাপা আছে আরশিয়ান, আমার খুব কাছেই আছে, আর ওই 4th ফ্লোরেই আছে ৷ তোমার পাপা আসবে আরশিয়ান ,তোমার পাপা আসবে ”
আরুর এমন কথা শুনে জেলের ওই মহিলা কনস্টেবল আরুর গালে ঠাস করে একটা চড় মারতেই আরু মেঝেতে পড়ে গেল ,মহিলা কনস্টেবল আরুর চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করিয়ে বলল
” বেহায়া মেয়ে তোর লজ্জা লাগেনা , আজ তোর এই বেহায়াপনা অবস্থার জন্য তোর স্বামী তোর কাছে নেই , বেহায়া কোথাকার ৷”
বলে আরূকে ধাক্কা দিয়ে গেটের দিকে ছুঁড়ে দিলো ৷

জেলে দরজা খুলতেই আরশিয়ান জেলের ভিতরে ঢুকে আরুকে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো ৷আরুও ছেলেকে জাপটে ধরলো ৷
” ওরা খুব খারাপ মাম্মাম ,খুব খারাপ, তোমাকে খুব কষ্ট দেই, ওদের ভালো হবে না কখনো ৷”
আবির পুলিশের সাথে কথা বলছিল, হঠাৎ করে ভেতর থেকে চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনে আরুর কাছে দৌড়ে ছুটে এসে বলল
” কি হয়েছে তোমার ? আর কিসের এত আওয়াজ !”

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৪

মহিলা কনস্টেবল আবির কে উদ্দেশ্য করে বলল “মেয়েটা একদম বেহায়া , রাত দুপুরে পর-পুরুষের ঘরে ঢুকে যায় তাইতো আজ ওর স্বামী নেই ৷বেহায়া কোথাকার ৷”
আরুর সম্বন্ধে এমন কটুক্তি শুনে আবিরের মাথা গরম হয়ে গেল,আর যাই হোক ও তো সবটা জানে আরুর ব্যাপারে ৷
বেশ জোর গলায় বলল
” না জেনে কোনকিছু নিয়ে একদম খারাপ মন্তব্য করবেন না ৷”

আবিরের কথা শুনে মহিলা কন্তসটেবল আরুকে মনে মনে গালিগালাজ করতে করতে চলে গেল ৷
আবিরের কথাগুলো আরুর কানে যাচ্ছে, আজ নিজেকে বড্ড দূর্বল লাগছে খুব, জীবনের মায়াটা ওর আর নেই ৷ তাহলে কি ও আরিশকে ভুলে যাবে ? যেই মানুষটা ওর জীবন থেকে নিজে নিজে হারিয়ে গেছে তাকে কি হারিয়ে যেতে দেওয়াই ভালো ? নাকি তার আশায় দিন গুনবে ও !

তুমি নামক প্রাপ্তি পর্ব ৬