তুমি শুধু আমারই হও সিজন ২ পর্ব ৬

তুমি শুধু আমারই হও সিজন ২ পর্ব ৬
অরনিশা সাথী

রোজ সকালের মতো আজও ফুল আর রুমকি ফুলের ঝুড়ি হাতে বকুল ফুল কুড়াতে যাচ্ছে। ফুল রোজ’ই বকুল ফুলের মালা গাঁথে। এটা ওর এক ধরনের শখ। প্রতিদিন বকুলের মালা গেঁথে সেটা খোপায় বা বিনুনিতে পেঁচায় ফুল। ফুল আর রুমকি ফুল কুড়িয়ে ওদের বাড়ির দিকে যেতেই শান্ত গিয়ে দাঁড়ালো ফুলের সামনে। ফুল ঘন ঘন চোখের পলক ফেলে দেখলো শান্তকে। শান্ত ফুলের হাত ধরে বললো,

–“নূর? এই নূর তুমি সত্যি চিনতে পারছো না আমাকে? আমি শান্ত, তোমার শান্ত নূর।”
রুমকি শান্ত’র থেকে ফুলের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“আপনেরে না বলছি ও নুর না, আমাগো ফুল ও। আপনি বার বার নূর কইতাছেন কেন ওরে?”
–“তোমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ও ফুল না, ও নূর। আমার স্ত্রী ও। বিশ্বাস হচ্ছে না? ওয়েট।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাটা বলেই শান্ত পকেট থেকে ফোন বের করে ওর আর নূরের বেশ কিছু ছবি দেখালো ওদের। রুমকি তো একবার অবাক চোখে শান্ত’র ফোনে নূর আর শান্ত’র ছবি দেখছে আবার ফুলের দিকে তাকাচ্ছে। ফুল পলকহীন ভাবে শুধু ছবিগুলো দেখছে। একপর্যায়ে দুহাতে মাথা চেপে ধরে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো ফুল। শান্ত আর রুমকি দুজনেই অস্থির হয়ে উঠলো। শান্ত বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

–“কি হয়েছে তোমার? কষ্ট হচ্ছে? কোথায় হচ্ছে নূর? বলো আমাকে।”
–“বাড়ি ফিরবো আমি।”
–“হ্যাঁ, হ্যাঁ চল।”
কথাটা বলেই রুমকি ফুলের হাত ধরে এগোতে গেলে শান্ত ফুলের হাত টেনে ধরে। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও শান্ত’র স্পর্শ পেয়ে ফুলের ভিতরটা কেঁপে উঠলো। এই অব্দি শান্ত যে ক’বার ফুলকে স্পর্শ করেছে প্রতিবারই ফুলের ভেতর উলোটপালোট হয়ে গেছে। ভেতরে ভেতরর অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করেছে। আজ’ও তাই হচ্ছে। শান্ত ফুলের হাত ধরে বললো,

–“চলো আজ আর একটা জায়গা দেখাই তোমাকে।”
কথাটা বলে শান্ত নূরকে সেই খাদের দিকে নিয়ে গেলো। যেখানে নূর পড়ে গিয়েছিলো। ওদের পেছন পেছন রুমকি’ও এসে দাঁড়ায় সেখানে। শান্ত খাদের দিকে আঙুল তুলে বললো,
–“এ জায়গাটা দেখে কিছু মনে পড়ছে নূর?”

নূর গভীর চোখে তাকালো সেদিকে। খুব ভালো করে আশেপাশে চোখ বুলালো ফুল। ওর কেমন যেন লাগছে। ভিতরটা আবার অস্থির করতে শুরু করলো। আবছা আবছা কিছু স্মৃতির পাতায় এসে হানা দিচ্ছে। ফুল দুহাতে মাথা চেপে ধরে আবারো আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয় পড়লো। রুমকি কেঁদে দিয়েছে প্রায়। ফুলকে বারবার ডাকছে। শান্ত ফুলকে কোলে তুলে নিলো। রুমকি ঝাঁজালো কন্ঠে বললো,

–“আপনার জন্য এইসব হইতাছে। আপনে কেন ফুলের পেছনে পইড়া আছেন?”
–“আপাতত এসব বন্ধ করো। নূরকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
–“তার দরকার নাই। ওরে বাসায় নিয়া চলেন। ওর মাঝে মাঝেই এমন হয়৷ ঠিক হইয়া যাইবো।”
–“হোয়াট? ওর মাঝে মাঝে এমন হয় আর তোমরা ওকে এখনো ডক্টর দেখাওনি? এভাবে চললে তো___”
–“আপনের ওরে নিয়া ভাবতে হইবো না। ওরে নিয়া ভাবার জন্য ওর বাপ-মা আছে। আপনি কথা না বাড়াইয়া বাড়ি নিয়া চলেন।”
শান্ত আর কোনো উপায় না পেয়ে ফুলকে নিয়ে ওদের বাড়ির দিকে হাঁটা লাগালো।

রুশান আর তরী একের পর এক শপ ঘুরছে। কোথাও কিছু পছন্দ হচ্ছে না। তরীর কিছু কেনাকাটা করার ছিলো। তাই রুশান নিয়ে এসেছে ওকে। তরী বিরক্ত হয়ে বললো,
–“ধুর, কিচ্ছু পছন্দ হচ্ছে না আমার।”
–“একটা ড্রেস’ও হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখেছো? পছন্দ কি করে হবে?”
–“আচ্ছা, তুমি পছন্দ করে দিবে চলো।”

এই বলে তরী রুশানকে নিয়ে অন্য একটা শপে ঢুকে পড়লো। রুশানের পছন্দ মতোই কিছু ড্রেস নিলো তরী। শপিংমল থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য দাঁড়াতেই রুশানের চোখ পড়লো পাশের একটা ক্যাফে তে। দুইটা মেয়ে আর একটা ছেলে আড্ডা দিচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে এরা তিনজনে ফ্রেন্ড। কি সুন্দর হাসছে, আবার একজন আর একজনের গায়ে থাপ্পড় মারছে। রুশানের এক মূহুর্তের জন্য ছেলে-মেয়ে তিনটার মাঝে নূর অর্নি আর ওকে দেখতে পেলো। কি সুন্দর ছিলো ওদের ফ্রেন্ডশিপ। একজন আর একজনের জান ছিলো। কিন্তু সবকিছু কেমন উলোটপালোট হয়ে গেলো। অর্নি আর নূর হারিয়ে গেলো। তরী রুশানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুশানের কাঁধে হাত রেখে বললো,

–“কি হলো?”
রুশান অন্য দিকে ঘুরে চোখের কোনে জমা পানিটুকু মুছে তরীর দিকে ঘুরে হাসিমুখে বললো,
–“কিছু না, চলো।”
এই বলে রুশান একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে বসলো। তরী রিকশায় বসার আগে একবার সেই ছেলে-মেয়ে তিনটার দিকে তাকালো। তারপর তপ্ত শ্বাস ফেলে রুশানের পাশে বসলো। রিকশা চলতে শুরু করলো। তরী রুশানের হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো,

–“অর্নি আর নূর আপুকে ভীষণ মিস করছো তাই না?”
রুশান টলমলে চোখে তাকালো তরীর দিকে। তরী আবারো বললো,
–“ওদের দেখে তোমাদের ফ্রেন্ডশিপের কথা বড্ড মনে পড়ছে তাই না?”
রুশান এবারেও কিছু বললো না। চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। তরী রুশানের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

–“কষ্ট পেও না। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।”
রুশান কিছু না বলে মলিন হাসলো। তরী রুশানের কাঁধে মাথা রাখলো। রিকশা চলতে লাগলো তার গন্তব্যের দিকে।

উৎসব রান্না করছে। আর অর্নি কেবিনেটের উপর বসে বসে পা ঝুলাচ্ছে আর উৎসবের রান্না দেখছে৷ অর্নি আবদার করেছে উৎসবের হাতের বিরিয়ানি খাবে। সেটাই মনোযোগ সহকারে রান্না করছে উৎসব৷ রান্না প্রায় শেষের দিকে। অর্নি গালে হাত দিয়ে ঘাড় কাত করে উৎসবকে দেখে যাচ্ছে। উৎসব রান্না শেষ করে বললো,

–“ওভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো কেন আমাকে?”
অর্নি ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“আপনি কি খাওয়ার জিনিস?”
–“অবশ্যই, বিশ্বাস না হলে ট্রাই করে দেখতে পারো।”
অর্নি ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে রইলো উৎসবের দিকে। অর্নি লাফ দিয়ে কেবিনেট থেকে নেমে বললো,

–“সবসময় শুধু আজেবাজে কথা তাই না?”
–“এটা তোমার কাছে আজেবাজে কথা মনে হলো বউ?”
–“ক্ষিধে পেয়েছে আমার, খাইয়ে দিন দ্রুত।”
–“সে তো আমার’ও খেতে ইচ্ছে করছে, তবে সেটা খাবার না বউকে।”

অর্নি চোখ রাঙিয়ে তাকালো উৎসবের দিকে। তারপর হনহনিয়ে চলে গেলো ঘরে। উৎসব’ও একটা প্লেটে বিরিয়ানি আর সালাদ নিয়ে নিজেদের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। উৎসবের হাতে বেশ তৃপ্তি করেই খেলো অর্নি। সাথে উৎসব নিজেও খেয়ে নিয়েছে। অর্নি নিজেই প্লেট নিয়ে কিচেনে চলে গেলো। সবকিছু গোছগাছ করে ঘরে এসে দেখলো উৎসব আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে। অর্নিও চুপচাপ উৎসবের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। উৎসব অর্নির কুনই ধরে টেনে নিজের বুকের উপর নিয়ে আসলো। অর্নি উৎসবের বুকে নিজের আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। উৎসব অর্নির চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিরবতা ভেঙে অর্নি বললো,

–“কোনো খোঁজ পেলেন? ওটা আমাদের নূর না?”
–“হু, সাত মাস আগে উনারা নূরকে জঙ্গলে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়ে নিজেদের কাছে রেখে ট্রিটমেন্ট করিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। তবে নূরের আগের কিছু মনে নেই। ও নিজেকে ফুল হিসেবেই জানে। নূরের কিছু মনে না থাকায় উনারা নূরকে নিজেদের মেয়ে বানিয়ে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন।”

–“কে বলেছে এসব? উনারা স্বীকার করে নিয়েছে সব?”
–“নাহ, আমি লোক পাঠিয়েছিলাম খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য৷ গ্রামের কয়েকজন এই কথা বলেছে।”
–“তাহলে তারা কেন নূরকে নিজেদের মেয়ে বলে দাবী করছে? সত্যিটা কেন বলছে না? এভাবে নূরকে আমাদের থেকে দূরে রাখতে চাইছে কেন তারা?”

–“এটাই জানার বিষয় বউ। ভাবছি আর একদিন ওখানে গিয়ে তাদের সাথে বসে কথা বলবো।”
–“আমিও যাবো আপনার সাথে।”
–“সে যখন যাই, তখন দেখা যাবে। এখন ঘুমাও তো।”
অর্নি উৎসবকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“ঘুম আসছে না।”
–“কেন?”
–“জানি না।”

উৎসব অর্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“অন্য কিছু ইচ্ছে করছে?”
উৎসবের কথার মানে বুঝতে পেরে অর্নি উৎসবকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
–“ধ্যাৎ, আপনিও না।”
এই বলে অর্নি উলটোদিক ঘুরে শুয়ে রইলো। উৎসব পেছন থেকে অর্নিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“লজ্জা না পেয়ে আমাকে বলতে পারো, আমি সবসময় প্রস্তুত ম্যাডাম।”

কথাটা বলেই উৎসব অর্নির ঘাড়ে মুখ গুজলো। কেঁপে উঠলো অর্নি। লোকটা ওকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। অর্নি আর টিকতে না পেরে তড়িৎ গতিতে উৎসবের দিকে ঘুরে উৎসবকে জড়িয়ে ধরলো। মৃদু হেসে উৎসব অর্নিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। বেশ কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর উৎসব অর্নির কামিজের দিকে হাত বাড়ালো।

পেট থেকে কামিজ সরিয়ে পেটে স্লাইড করছে উৎসব। অর্নি চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে ধরে উৎসবের স্পর্শ গুলো অনুভব করছে। ততক্ষণে উৎসব অর্নির উপর নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে অর্নির গলায় মুখ ডুবিয়েছে। অর্নি নিজেই নিজের এক পা দিয়ে অন্য পা ঘঁষছে। দুহাতে উৎসবের মাথার চুল খামচে ধরে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। উৎসবের কাছে সপে দিলো নিজেকে। আরো একটা রাত ওদের ভালোবাসাময় মূহুর্তের সাক্ষী হলো।

তুমি শুধু আমারই হও সিজন ২ পর্ব ৫

|আমি জানি এই গল্পটা বেশ অনিয়মিত দিচ্ছি আমি। আমি সত্যিই এর জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তিনদিন ধরে মাইগ্রেনের ব্যাথা আবার মাথা-চাড়া দিয়ে উঠেছে। যার জন্য লাস্ট তিনদিন গল্প দিতে পারিনি। এই তিনদিনে একটু একটু করে আজ এইটুকু লিখে পোস্ট করলাম। এইটুকু লিখতেই তিনদিন লেগেছে আমার। এখনো মাইগ্রেনের ব্যাথা আছে। কিছুতেই সারছে না। আবারো দুঃখিত এত অনিয়মিত গল্প দেওয়ার জন্য|

তুমি শুধু আমারই হও সিজন ২ পর্ব ৭