তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ১২

তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ১২
তাহিরাহ্ ইরাজ

” তোর প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বোন। মন খারাপ করিস না। ”
হতভম্ব হলেন সাজেদা! মলিন কণ্ঠে শুধোলেন,
” কেন? ”
” কারণ আমি ইতিমধ্যে কারো কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ”
চরম আশ্চর্যান্বিত হলেন সাজেদা এবং তানজিনা! সাজেদা বুঝতেই পারছেন না ওনার কিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা উচিত। তার এতদিনের স্বপ্ন এভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে!

” ত্ তুমি এসব কি বলছো ভাইয়া? তুমি কারো কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ! কার কাছে? ”
” তাসলিমা আপার কাছে‌। ”
সাজ্জাদ সাহেবের সরল জবাব। দ্বিতীয় দফায় হতভম্ব হলেন সাজেদা এবং তানজিনা! তাহমিদা অবশ্য চুপটি করে দাঁড়িয়ে। সাজেদা কোনোমতে নিজেকে সামলে প্রশ্ন করলেন,
” প্রতিশ্রুতি দিয়েছো! কবে? আমাদের তো বিন্দুমাত্র জানালে না। নাকি ফুপু হিসেবে আমার জানার অধিকার নেই? ”
সাজ্জাদ সাহেব না বোধক উত্তর দিলেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” এমন কিছুই নয়। মাস তিনেক আগে আপার সাথে কথা হয়েছে। প্রস্তাব আমার মনমতো ছিল। তাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কয়েক বছর পর দুয়া মা’কে তূর্ণ’র হাতে তুলে দেবো। আপাতত ও পড়ালেখা করছে। করুক। ”
সাজেদা বিদ্রুপের হাসি হাসলেন।
” বাহ্! আবারো পক্ষপাতীত্ব? তুমি বরাবরই বাপের বাড়ির থেকে শ্বশুরবাড়িকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে এসেছো ভাইয়া। আদরের মেয়ের বিয়ের বেলাতেও তাই করছো? ”
অবাক হলেন সাজ্জাদ সাহেব! তাহমিদা মন খারাপ করে দৃষ্টি নত করে নিলেন। সাজ্জাদ সাহেব বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন,

” তুই এসব কি বলছিস? আমি পক্ষপাতীত্ব করি? ”
” হাঁ করোই তো। আফটার অল তারা সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোক। তোমার সুখদুঃখের সাথী। মানি প্লান্ট। তাদের তোষামোদ করতে হবে না? ”
সাজ্জাদ সাহেব খানিকটা রাগত সুরে বললেন,

” সাজেদা! মুখ সামলে কথা বল। ভুলে যাস না আমি তোর বড় ভাই। ”
” আমি মুখ সামলেই কথা বলছি ভাইয়া। আর তুমি আমার বড় ভাই সেটাও ভুলিনি। মনে আছে। তবে তুমি ভুল করছো। ছোট বোন হিসেবে সেই ভুলটা আমি শুধরে দেয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। ”
” আমি ভুল করছি? কেমন ভুল? ” সাজ্জাদ সাহেব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোনের পানে।

” ভুল ই তো। ও ই তূর্ণ না তূর্য কি যেন নাম! ও মানুষ হিসেবে দুয়া’র যোগ্য নাকি? সবসময় ঠোঁটকাটা, নির্লজ্জ কথাবার্তা বলে। বড়ছোট কিছুই মান্য করে না। এর উপর দুয়া সর্বদা ওর যন্ত্রণায় তটস্থ। এরা জুটি হিসেবে একদম বেমানান। ওদের বিয়ে হলে সংসারে অশান্তি ছাড়া কিছুই থাকবে না। ক’দিনের মধ্যেই হয়তো ডিভোর্স হয়ে যাবে। ফুপু হিসেবে আমি এটা হতে দিতে পারি না। ”

প্রিয় ভাগ্নেকে নিয়ে এমন কটূক্তি মানতে পারলেন না তাহমিদা। উনি নরম কণ্ঠে বলে উঠলেন,
” আপা তোমাদের মধ্যে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। কিছু মনে করো না। তূর্ণ কিন্তু ছেলে হিসেবে মোটেও খারাপ না। ওর বিরুদ্ধে তোমরা একটাও অভিযোগ পাবে না। সবাই ওকে ভালো জানে‌। আর ভালোবাসেও। আমার বোনের ছেলে বলে বলছি না। তূর্ণ খাঁটি হীরা। সব বাবা মা ই ওর মতো জামাতা চাইবে। ”
সাজেদা বিদ্রুপ করে বললেন,

” হুঁ! খাঁটি হীরা। তুমি তো বলবেই ভাবি। তোমার সম্মানীয় বড় বোনের ছেলে কিনা! ”
তাহমিদা কিছু বলতে উদ্যত হতেই সাজ্জাদ সাহেব হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিলেন। বোনের উদ্দেশ্যে বললেন,
” সাজেদা তুই তূর্ণ’কে কেন অপছন্দ করিস জানি না। তবে শুধু আমরা নই। আশপাশের সবাই জানে তূর্ণ কেমন ছেলে। মেয়ে জামাই হিসেবে আমাদের দুয়া’র জন্য ওর মতো ছেলে পাওয়া দুষ্কর বটে। ”
দম ফেলে উনি পুনরায় বলতে লাগলেন,

” আর কি যেন বলছিলি? তূর্ণ সবসময় ঠোঁটকাটা, নির্লজ্জ কথাবার্তা বলে, বড়ছোট কিছুই মান্য করে না? কথাটায় একটু ভুল আছে। ও কিন্তু সবার সাথে এমন আচরণ করে না। শুধুমাত্র ফ্যামিলির লোকেদের কাছেই তূর্ণ ঠোঁটকাটা, দুষ্টু ছেলে। বাইরের দুনিয়ায় আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ একজন গম্ভীর মানুষ। ও একটা ভার্সিটির লেকচারার। খুব ভালো করেই জানে কোথায় কেমন আচরণ করতে হবে।

কোন জায়গায় কোন আচরণ মানানসই। তূর্ণ ছেলেটা ফ্যামিলি ম্যান। তাই ফ্যামিলিতে একজন মাটির মানুষের মতো মিশে থাকে। ও নিজে নামকরা একটা ভার্সিটির লেকচারার। বাবার এত ধনসম্পদ। পূর্বপুরুষ সূত্রেও বেশকিছু সম্পদ পেয়েছে। তবুও ছেলেটার মধ্যে বিন্দুমাত্র অহংকার নেই। ও যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো মানুষের সাথে সহজেই মিশতে পারে। এই যে আমরা তো মধ্যবিত্ত। ওদের ক্লাসের নই। তবুও ওই পরিবারের সাথে আমাদের খুবই ভালো সম্পর্ক। কখনো মনেই হয় না তারা আমাদের উঁচু শ্রেণীর। আমাদের নিচু দৃষ্টিতে দেখছে। ”
বাবার কথার রেশ ধরে তানজিনা বললো,

” আর ফুপি। তুমি বললে না? দুয়া তূর্ণ’র যন্ত্রণায় তটস্থ, এটা সম্পূর্ণ ভুল। ওদের মধ্যে সম্পর্কটা খুব স্নিগ্ধ, সরল। কোনো প্যাঁচ নেই। খুনসুটিতে ভরপুর। ছোটবেলা থেকেই দু’জনে পাশাপাশি বড় হয়েছে। আমরা সবাই জানি এমনকি দেখেছি। দুয়া তূর্ণ বলতেই পা’গল। ছোটো থেকেই আমার বোনটার বেশীরভাগ আবদার ছিল ওর তূর্ণ ভাইয়ার কাছে‌। দু’জনের বয়সের পার্থক্য নয় বছর। তবুও ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। একে অপরকে বুঝতে পারে। সুখদুঃখে সঙ্গ দেয়। দুয়ার কোনো বিপদ হলেই নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসে তূর্ণ। আবার তূর্ণ’র সামান্য কিছু হলেই আমার বোনটা কেঁদেকেটে সাগর বানিয়ে ফেলে। এসব আজো চলমান। ওদের সম্পর্কটা দিনকে দিন গ্ৰো করেছে। আরো মজবুত হয়েছে। ওরা একে অপরের জন্য পারফেক্ট ম্যাচ। ”

সাজেদা ব্যঙ্গ করে বললেন,
” বাহ্! বড়লোক বাড়ির সম্বন্ধ পেয়ে সবাই তো ঠিকভুল গণ্য করতেই ভুলে গেছে। সমানে গুণগান গেয়ে যাচ্ছে। চমৎকার তো! ”
সাজ্জাদ সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন,
” তুই যে প্রস্তাব দিলি তা আমাদের ভাবনার বাইরে ছিল। এর উপর আমি কারো কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই জাবির এর সাথে দুয়া মায়ের সম্বন্ধ হচ্ছে না। এজন্য তুই এভাবে কটূক্তি করে বলতে পারিস না। এটা বাজে শোনায়। ”
” তোমরা বাজে সিদ্ধান্ত নিতে পারো। অথচ আমি বললেই দোষ? ”
” সাজেদা! ” গম্ভীর স্বরে ডেকে উঠলেন সাজ্জাদ সাহেব।

” হাঁ সাজেদা। সাজেদা ভুল কিছু বলছে না। এখনো সময় আছে ভাইয়া। বড়লোকের ছেলে। এর উপর কারোর ধার ধারে না। বেপরোয়া স্বভাবের। ওখানে মেয়ে দিয়ো না। পরে পস্তাবে। ”
” পরেরটা না হয় পরেই দেখা যাবে। আপাতত এসব কথা বন্ধ কর। আমি আর এই বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নই। ”
উঠে দাঁড়ালেন সাজ্জাদ সাহেব। বোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,
” দুয়া’র কানে যেন এসব কথাবার্তা না যায়। ”
ওখান থেকে প্রস্থান করলেন সাজ্জাদ সাহেব। পিছুপিছু তাহমিদা এবং তানজিনা। রাগে ক্ষো’ভে দু হাতে সোফা খামচে ধরলেন সাজেদা। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা তার। সবটা শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। আর কত চলবে এসব? আর কত?

গোধূলি লগ্ন। রিকশা থেকে নামলো দুই ললনা। দুয়া ভাড়া পরিশোধ করতে করতে হাসিমুখে বললো,
” বিশাল আস্ত এক ড্রামাবাজ। দেখলি ওর কাণ্ড? অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে পারবে না বলে শেষমেষ হাড়কাঁপানো জ্বরের নাটক? ”
তৃষা চোখমুখ কুঁচকে বললো,

” শা লা আস্ত এক ব দ। এমন ড্রামা করলো! আমি তো ভাবলাম আজরাইল দেখা দিয়ে ফেললো কিনা! ”
রিকশাওয়ালা প্রস্থান করতেই দুয়া হাসতে হাসতে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। হাসতে হাসতে বললো,
” আমিও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই তো ভার্সিটি শেষে তোকে নিয়ে ওর বাড়ি ছুটলাম। আর গিয়ে দেখি কি? ”
” মিচকা শ*তান একটা! ওর ভালো হবে না বলে রাখলাম। ফাইনালে ফেল করে পরেরবার ইমপ্রুভমেন্ট দেবে। ”
” হোয়াট অ্যা অভিশাপ! ”
দুয়াকে হাসতে দেখে তৃষা নিজেও হেসে উঠলো। বললো,

” যাই বলিস না কেন। এসবের ভিড়ে ভালোমন্দ নাস্তা তো খাওয়া হলো। ছানা মিষ্টিটা কিন্তু অসাম ছিল! এখনো মুখে স্বাদ লেগে আছে। ”
” একদম। আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তাহলে যাই। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আম্মু চিন্তা করবে। আল্লাহ্ হাফিজ। আসসালামু আলাইকুম। ”
” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আল্লাহ্ হাফিজ। ”
বিদায় নিলো দু’জনে। দুয়া প্রবেশ করলো তাদের অ্যাপার্টমেন্টে। আর তৃষা হাঁটতে লাগলো নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যা কিনা মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত।

বাড়ি ফিরে খুশিতে বাকবাকুম জাহিরাহ্ দুয়া! ফুপু এসেছে। এখন আবার খালামণিও চলে এসেছে। সাথে নানুমনি ফ্রি। দুর্দান্ত! অসাধারণ! দুয়া কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে ছুটে এলো লিভিং রুমে। নানুমনির পাশে বসে তাকে শক্ত করে আলিঙ্গন করলো। ডান কপোলে চুমু এঁকে বললো,
” নানুমনি! আমার কিউটি! কবে এলে তুমি? ”
আনোয়ারা বেগম মুচকি হেসে নাতনিকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বললেন,
” এই তো নানুভাই আজ সকালে এসেছি। ”
দুয়া গাল ফুলালো। অভিমানী স্বরে বললো,

” একে তো সে-ই সকালবেলা এসেছো। আবার আমাদের বাসায় না এসে বড় মেয়ের বাসায় উঠেছো। এমনটা করতে পারলে তুমি? হুঁ? একটুও খারাপ লাগলো না? ”
আনোয়ারা বেগম মুচকি হেসে নাতনির গাল টিপে দিলেন।
” আমার কিউটি! গাল ফুলাতে হবে না। আমি আসতে একটু দেরি করেছি তাতে কি হয়েছে? কয়েকদিন তো তোমাদের কাছেই থাকবো। ”

” সত্যি? ” খুশিতে আত্মহারা হয়ে প্রশ্ন করলো দুয়া।
” হুম। সত্যি। ”
ওদের হাসিখুশি মুহূর্ত সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলেন সাজেদা। রাগে গজগজ করতে করতে পা বাড়ালেন ভাইয়ের কক্ষের দিকে।

কক্ষে সাজ্জাদ সাহেব এবং তাহমিদা কিছু বিষয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। বিনা অনুমতিতে সেখানে প্রবেশ করলেন সাজেদা। যা দেখে দু’জনেই কিছুটা বিব্রত বোধ করলো।
” তুই? কিছু বলবি? ”
ভাইয়ের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ভাবিকে উদ্দেশ্য করে সাজেদা বললেন,
” ভাবি তোমার কোনো আপত্তি না থাকলে আমি ভাইয়ার সাথে একাকী কথা বলতে চাই।‌ অবশ্য তুমি থাকলেও অসুবিধা নেই। ”
ভাবিকে সম্পূর্ণ রূপে অবজ্ঞা করে সাজেদা ভাইকে বলে উঠলেন,

” ভাইয়া! এসব কি শুনছি? তোমার শাশুড়িও এখানে থাকবে? ওনার কি কমনসেন্স বলে কিছু নেই? বাসায় অলরেডি মেহমান আছে। আমি আছি, আমার মেয়ে আছে। আমাদের মিনিমাম স্পেস দরকার। এরমধ্যে উনি ড্যাং ড্যাং করতে করতে চলে এলেন? কেন? ধনী মেয়ের বাড়িতে জায়গা হয়নি? তাড়িয়ে দিয়েছে? ”
” সাজেদা! ”
ধমকে উঠলেন সাজ্জাদ সাহেব। তাহমিদা মলিন মুখে তাকিয়ে।

” মুখ সামলে কথা বল। উনি আমাদের মায়ের বয়সী। তোর ভাবির মা হয়। ভুলে গেছিস? ”
” না ভুলিনি। তবে উনি বোধহয় ভুলে গেছেন এটা ওনার মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। যখন তখন আসাযাওয়া উচিত নয়।”
” উনি তানজি, দুয়া ওদের নানুমনি। যখন খুশি তখন আসতে পারেন। আমরা বাঁধা দেয়ার কে? আর তুই বোধহয় শুনিসনি উনি আমাদের বাসায় এখুনি আসছেন না। কিছুদিন পর আসবেন। আপাতত বড় আপার বাসায় থাকবেন। ”
” হাঁ তাই তো করবেন। বড়লোক মেয়ের বাসা ছেড়ে ফকিরের বাসায় আসবেন কেন? ”
এতসব বাজে কথা শুনে ছলছল করছে তাহমিদা’র নয়ন জোড়া। সাজ্জাদ সাহেব দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
” বাসায় মেহমান। ফালতু কথা বাদ দিয়ে নিজের রুমে যা। এক বিষয়ের ক্ষো ভ অন্য বিষয়ে প্রকাশ করা ঠিক হচ্ছে না। রুমে যা। ”

বাবা-মায়ের রুম থেকে তর্কবিতর্কের শব্দ আসছে। কি হচ্ছে এসব? কৌতূহল বোধ করে উঠে দাঁড়ালো দুয়া। নানুমনিকে সোফায় বসিয়ে রেখে রুমের দিকে পা বাড়ালো। খানিক অগ্রসর হতেই লক্ষ্য করলো খালামণি পানির গ্লাস হাতে বাবা-মায়ের রুমের কাছাকাছি থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে। কিছুটা অবাক হলো দুয়া!
” খালামণি! তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? নানুমনি তো পানি চেয়েছে। ”
হঠাৎ কারোর কণ্ঠে হকচকিয়ে গেলেন তাসলিমা! কোনমতে নিজেকে সামলিয়ে বললেন,

” এই তো যাচ্ছি। তুইও চল মা। ”
” তুমি যাও আমি আসছি। আব্বু আম্মুর রুমে কি নিয়ে যেন তর্ক হচ্ছে। আমি দেখে আসছি। তুমি যাও। ”
তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানালেন তাসলিমা।
” বড়দের কথায় নাক গলাতে নেই। তুই চল আমার সাথে। ”
দুয়া খালামণির সাথে চলেই যাচ্ছিল হঠাৎ কর্ণ কুহরে পৌঁছালো ফুপুর কণ্ঠ। তৎক্ষণাৎ দু’জনেই দাঁড়িয়ে গেল।

” তুমি আমাকে এত বড় কথাটা বলতে পারলে ভাইয়া? তোমার কাছে এখন বাপের বাড়ির ঊর্ধ্বে শ্বশুরবাড়ি! বাহ্ ভাইয়া বাহ্! সব পুরুষ মানুষ ই বুঝি বিয়ের পর বউয়ের নেওটা হয়ে যায়? শাড়ির আঁচল ধরে ঘুরে? ”
চোখ রাঙানি দিলেন সাজ্জাদ সাহেব।
” মুখ সামলে কথা বল সাজেদা। তুই কিন্তু এবার অতিরিক্ত করছিস। আর গলার আওয়াজ নামিয়ে কথা বল। ওনারা বাসায়। ”

” হাঁ তো? আমি কি তাদের ভয় পাই? তোমার বোন হই আমি। আর ওনারা পরের বাড়ি। তোমার বউয়ের আপনজন। তোমার একমাত্র আপনজন আমি। তাই তোমার উচিত আমাকে প্রাধান্য দেয়া। তা না করে ওই বাড়ির লোকেদের তরফদারগিরি করছো? কি করে? সত্যি করে বলো তো তারা কি তোমায় কালোজা*দু করেছে? নাহলে কি করে এতটা বদলে গেলে তুমি? তুমি তো এমন ছিলে না। আমার সহজ-সরল ভাইটা এখন দিনরাত বউয়ের কথায় উঠছে। বসছে। এসব কোন ধরনের কাপুরুষত্ব? ”

আর সহ্য করতে পারলেন না সাজ্জাদ সাহেব। অজান্তেই ওনার হাত উঠে গেল। তৎক্ষণাৎ হাত ধরে বাঁধা প্রদান করলেন তাহমিদা। অবাক কণ্ঠে বললেন,
” তুমি এসব কি করতে যাচ্ছিলে? নিজেকে শান্ত করো।”

তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ১১

কক্ষের বাইরে থাকা দু’জন স্পষ্ট শুনতে পেল এসব। দুয়া ছলছল চোখে তাকালো খালামণির পানে। তাসলিমা চোখের পানি লুকিয়ে মেকি হেসে সেথা হতে সরে গেলেন। দুয়া বুঝতে পারছে না সে কি করবে। ভেতরে যাবে নাকি এখান থেকে চলে যাবে? মেয়েটা যখন মন খারাপ করে কঠিন ভাবনায় মশগুল হঠাৎ…

তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ১৩