তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম শেষ পর্ব 

তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম শেষ পর্ব 
তাহিরাহ্ ইরাজ

আজ তূর্ণ ও দুয়া’র বিবাহ। আরো একবার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে তারা। এবার ধর্মীয় এবং সামাজিক দুইভাবেই জুটিবদ্ধ হবে এই যুগল। পুরো রিসোর্টে শেষ মুহূর্তের কর্ম ব্যস্ততা চলমান। পুরুষ সদস্যরা সকলেই ব্যস্ত। তবে এসবের ভিড়ে তাদের নজর এড়িয়ে গেল কিছু তীক্ষ্ণ চোখের মালিক। রিসোর্টের আনাচে কানাচে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েক জন। কি উদ্দেশ্য তাদের? কেন এখানে তাদের উপস্থিতি? তবে কি ঘোর বিপদে আসন্ন? অন্ত হতে চলেছে সুখের লগন?

বরাদ্দকৃত কক্ষে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে দুয়া। অশ্রু বিন্দুতে সিক্ত হয়ে চলেছে মাতৃ হৃদয়। তাহমিদা’র চোখেও অশ্রু। মেয়েকে স্নেহের সহিত আগলে রেখেছেন। ছোট্ট জাহিন আম্মু ও ছোটাপু’র আবেগী অবস্থা অবলোকন করে দুঃখ ভারাক্রান্ত হলো। ছোট ছোট কদম ফেলে এগিয়ে গেল বিছানায়। বসলো বোনের পেছনে। ছোট হাত দু’টো দিয়ে আঁকড়ে ধরলো ছোটাপু’কে। আস্তে করে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ছোটাপু। কাঁদে না। জাহিন দুঃখ পায়। ”
দুয়া আরো আবেগী হয়ে পড়লো। বাঁ হাতে ভাইকে টেনে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। তাহমিদা স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিলেন ছেলেমেয়ের ললাটে। সে মুহূর্তে পরিবেশ স্বাভাবিক করতে কক্ষে প্রবেশ করলো তানজিনা। নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে তাদের উদ্দেশ্যে বললো,

” আম্মু আর কেঁদো না। কেন কাঁদছো বলো? দুয়া কি দূরে কোথাও যাচ্ছে? আমাদের কাছাকাছিই তো থাকবে। ”
মাতৃ হৃদয় তো। শুনতে নারাজ। দুয়া মায়ের বুকে আরো লেপ্টে গেল। ভিজে গেল তানজিনা’র নেত্র জোড়া। এমন মুহূর্ত সে-ও তো অতিবাহিত করেছে। জানে কতটা যন্ত্রণা হয় ভেতরে। সবটুকু দুমড়ে মুচড়ে দেয়। একদিকে নতুন জীবনের সূচনা। ভয়, উত্তেজনা। আরেকদিকে আপনজনদের পিছে ফেলে এগিয়ে যাওয়া। দুয়া’র তো তা-ও দ্বিতীয়বারের মতো এই অনুভূতি হচ্ছে। সে তো..! নিজেকে ধাতস্থ করে মা এবং ভাই বোনদের সামলানোর প্রয়াস চালিয়ে গেল তানজিনা। সে মুহূর্তে সহায়তা করতে কক্ষে উপস্থিত হলেন সাথি। দু’জনে মিলে বলেকয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলো।

বিগত দিনের যাতনা ভুলে আজ স্বাভাবিক তৃষা। অধরে লেপ্টে খুশির ছাপ। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে বেশ ফুরফুরে মেজাজ। দূর হতে এ অবলোকন করলো নিশাদ। প্রেয়সীর চোখেমুখে খুশির ঝিলিক দেখে অজান্তেই বুকে পাথরসম ভার অনুভব করলো।

তবে কি পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে মেয়েটা? নিশাদ নামক আকর্ষণ ভুলে গিয়েছে! হাঁ ভুলেই গিয়েছে। ভুলবে না? কে এই নিশাদ? বড় ভাইয়ের বন্ধু শুধু। এছাড়া কিছু নয়। তবে কেন মনে রাখবে? কেন? বড় যন্ত্রণা অনুভূত হতে লাগলো মানুষটির। চোখে জমলো নোনাজল। শুকনো ঢোক গিলে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো নিশাদ। ঠিক সে মুহূর্তে ওর পানে তাকালো তৃষা। মেয়েটার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। মনে মনে করছে কোনো গোপন পরিকল্পনা। কি সে পরিকল্পনা? কখন হবে বাস্তবায়ন? জানে শুধু তৃষা। মেয়েটা লাজুক হেসে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। আশ্চর্য! ভাইয়ের বন্ধুকে দেখে আজ এত লাজ এসে ভিড় করছে কেন? উত্তর কি সত্যিই অজানা?

সমতল আরশির সম্মুখে বসে বধূ। তার গলায় রাজকীয় ভঙ্গিমায় ঠাঁই পেলো রানিহার। ডান হাতে গলিয়ে গেল একের অধিক ব্রাইডাল ব্রেসলেট। দীঘল কেশের খোঁপায় আবদ্ধ হলো গোলাপের আস্তরণ। অতি সুন্দর কায়দায় হিজাবের অন্তরালে লুকায়িত হলো নারীর অন্যতম সৌন্দর্য, তার দীঘল কালো কেশ। বধূরূপে সজ্জিত হতে লাগলো জাহিরাহ্ দুয়া। বেশ কতক্ষণ সময় অতিবাহিত হলো। সাজ সম্পন্ন হলো বধূর। সে মুহূর্তে কক্ষে প্রবেশ করলেন দুই মা। তাসলিমা ভেতরে প্রবেশ করতে করতে প্রশ্ন করলেন,

” কি গো তোমাদের হলো? ”
একজন বিউটিশিয়ান হাসিমুখে বললো,
” ইয়েস ম্যাম। দেখুন তো হবু কনেকে কেমন লাগছে? ”
পুত্রবধূর পানে তাকিয়ে মুগ্ধ হলেন তাসলিমা। মুখনিঃসৃত হলো,

” মাশাআল্লাহ্! আমার মেয়েটাকে তো চেনাই যাচ্ছেনা। তাহমিদা তোর জামাই বাবাজি আজ হুঁশ হারালো বলে।”
লাজে অবনত হলো বধূর মুখখানি। তাসলিমা মাথায় হাত বুলিয়ে ললাটে চুমু এঁকে দিলেন। তাহমিদা অশ্রুসজল নয়নে অবলোকন করলেন এ স্নেহময় দৃশ্য। দুয়া শাশুড়ি মায়ের বাহুডোরে আবদ্ধ থেকেই জন্মদাত্রী মায়ের পানে হাত বাড়িয়ে দিলো। আবেগী তাহমিদা এগিয়ে এলেন। দুই মায়ের মধ্যিখানে আবদ্ধ হলো নববধূ। উপস্থিত কয়েকজন বিমুগ্ধ হলো এমন দৃশ্য অবলোকন করে!

বরবেশে প্রস্তুত আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ। সমতল আরশির সম্মুখে উপস্থিত সে। নিজেকে পরিপাটি রূপে শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে রাজীব এবং রিশাদ। রিশাদ ভায়রা ভাইয়ের কাঁধ চাপড়ে দিলো।
” মাশাআল্লাহ্ ভায়রা ভাই! যা লাগছে না তোমায়! শা’লিকা আমার আজ নতুন করে প্রেমে মজে যাবে। ”
তৃপ্তির আভা ফুটে উঠলো বরের মুখপানে। রাজীব দুষ্টুমি করে বললো,

” সে আর বলতে? বন্ধু। বউকে দেখে রেখো একটু। এমন হিরো ফেস দেখে হুঁশ না হারিয়ে বসে। ”
” নতুন দেখছে না তো। পুরনো রূপে নাহয় নতুন করে প্রেমে পড়লাম। হারালাম একে অপরেতে। ” তূর্ণ বুঝি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।
রাজীব এবার তাড়া দেখিয়ে বললো,

” হাঁ বন্ধু বুঝতে পারছি। এবার চল চল। দিলওয়ালে আব দুলহানিয়া লে আয়েঙ্গে। ”
” হাঁ হাঁ চলো। ”
বরবেশে তূর্ণ প্রস্তুত। চেহারায় আপাতদৃষ্টিতে সে স্বাভাবিক। তবে ভেতরে ভেতরে চিন্তার পাহাড়। সে চিন্তার মূলে কি? আসন্ন বিপদ নাকি ভিন্ন কিছু? নিজেকে স্বাভাবিক প্রদর্শন করার প্রয়াস জারি রেখে কক্ষ হতে বেরিয়ে এলো তূর্ণ। সাথে রিশাদ এবং রাজীব।

তমস্র রজনী। রিসোর্টের হলরুম আজ কৃত্রিম আলোক সজ্জায় সজ্জিত। লাগছে রাজকীয়, অসাধারণ! আগত অতিথিদের ভিড়ে বেশকিছু অজানা, সন্দেহজনক মুখ লুকিয়ে। তাদের তীক্ষ্ম চাহনি ঘুরে বেড়াচ্ছে ওয়েডিং হলের আনাচে কানাচে। বন্ধুদের মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। অসীম চিন্তায় দিশেহারা সে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিশাদ এবং রাজীব তা ঠিক অনুধাবন করতে পারছে। তারাও চিন্তিত। বারবার এদিক ওদিক সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে চলেছে। এখন অবধি সন্দেহজনক কিছুই দৃষ্টিগোচর হয়নি। সব স্বাভাবিক লাগছে। আসলেই কি তাই?

লেহেঙ্গা সামলিয়ে লন ধরে হেঁটে যাচ্ছিল নিশি। আকস্মিক লেহেঙ্গার নিম্নাংশে পা ফসকে গেল। অসাবধানতাবশত পড়েই যাচ্ছিল মেয়েটা। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বুঁজে নিলো আঁখি যুগল। ভীত স্বর মুখনিঃসৃত হওয়ার পূর্বেই থমকে গেল। নিজেকে অনুভব করলো পুরুষালি হাতের মাঝে। সে পড়েনি। নিরাপদে রয়েছে। স্তব্ধ রমণী আস্তে ধীরে আঁখি পল্লব মেলে তাকালো। নয়নে মিলিত হলো নয়ন। জাবিরের চোখেমুখে উদ্বেগ তো নিশির চোখেমুখে ভয় ও লাজুকতা। একে অপরের পানে কিছু মুহূর্ত তাকিয়েই রইলো। সহসা হুঁশ ফিরতে নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো জাবির। সাবধানে নিশিকে আগলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মৃদু স্বরে শুধালো,

” আর ইয়্যু ওকে? ”
দৃষ্টি অবনত করে মেয়েটি ইতিবাচক সম্মতি জানালো। লালিমা লেপে তার কপোলদ্বয়ে। তা লক্ষ্য করে খানিকের জন্য কি বিমোহিত হলো জাবির? এ কিসের ইঙ্গিত ছিল? নতুন কোনো প্রণয়ের সূচনা?

” কনে এসে গেছে। ”
মিহাদের কণ্ঠে খুশির ছাপ। তা শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে পৌঁছাতেই পিছু ঘুরে তাকালো তূর্ণ। থমকে গেল মুহুর্ত। বিমুগ্ধ হলো আঁখি যুগল। নববধূর পড়নে মেরুন রেড কামিজ লেহেঙ্গা। কামিজটি খাদি সিল্কের গোলাকার নেকলাইন এবং মোটা জারদোজি এবং মারোরি বর্ডার সহ হাতে তৈরি জারদোজি মোটিফের একটি গুচ্ছ দিয়ে তৈরি। লেহেঙ্গার জন্য ব্যবহৃত ফ্যাব্রিক হলো কাঁচা সিল্ক যার চেহারা চূর্ণ।

নববধূর দীঘল কালো কেশ আবৃত লাইট মেরুন হিজাবের অন্তরালে। কাঁচা শিফন ফ্যাব্রিক যুক্ত নেট শিফনের অলঙ্কৃত দোপাট্টার অন্তরালে লুকিয়ে মানানসই হিজাব। দোপাট্টার ডান অংশ দেহের সম্মুখ ভাগে ছেড়ে রাখা। বাঁ অংশ রাজকীয় ভঙ্গিমায় পেছনে পৃষ্ঠে ঠেকে। হিজাবের নীচে সিঁথি বরাবর একটি মানানসই মাং টিকা। গলায় শোভা পাচ্ছে রানিহার। দু হাত ভর্তি ব্রাইডাল ব্রেসলেট সমূহ। অনামিকায় বাগদান রিং। মুখশ্রীতে মানানসই কৃত্রিম প্রসাধনীর প্রলেপ। অপরূপা লাগছে সে!
বিমোহিত তূর্ণ’র মুখনিঃসৃত হলো,

” মাশাআল্লাহ্! ”
তৃষা এবং তানজিনা’র মধ্যমণি হয়ে এগিয়ে আসছে দুয়া। তার প্রতিটি কদমে ধুকপুকানি অনুভূত হচ্ছে প্রেমিক পুরুষটির হৃদয়ে। হৃদয়ে মধুর তোলপাড় আরম্ভ হলো। ভুলে গেল সে জাগতিক ভাবনা। পলায়ন করলো সকল দুশ্চিন্তা। নয়ন জোড়া নিবদ্ধ তার মাইরা’তে। তূর্ণ’র পড়নে আজ মেরুন বেনারসী শেরওয়ানি। ডান কাঁধে ভাঁজকৃত দোপাট্টা ছেড়ে রাখা। লালচে চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা।

পায়ে নবাবী শ্যু। দুয়া দৃষ্টি অবনত করে এগিয়ে চলেছে। তার মনোরম সৌন্দর্যে আকৃষ্ট মানব ধীরপায়ে এগিয়ে আসছে। অতি সন্নিকটে দু’জনে। আকস্মিক নিভে গেল আলো। হলো বিকট অদ্ভুত শব্দ। শিউরে উঠলো উপস্থিত প্রতিটি সদস্য। ভীতসন্ত্রস্ত নববধূ লেপ্টে গেল স্বামীর বক্ষপটে। সযতনে তাকে আগলে নিলো তূর্ণ। হইচই আরম্ভ হলো ওয়েডিং হল জুড়ে। বু*লেটের শব্দে দিশেহারা উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। মুহুর্তের মধ্যেই ফিরে এলো আলো। সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো এক ব্যক্তি। হাতে যার পি*স্তল। চোখেমুখে ক্রো’ধের আগুন। নাজমুল সাহেব অবাক স্বরে বলে উঠলেন,

” মিস্টার শিকদার! ”
তূর্ণ, দুয়া’র পানে নিবদ্ধ নিশানা। শিকদার সাহেব হিসহিসিয়ে বললেন,
” ইয়েস। শিকদার। রুমান শিকদারের বাবা। ”
হতবিহ্বল সকলে! রুমানের বাবা এখানে? এমন রূপে! কিন্তু কেন? ইতিমধ্যে তাদের ঘিরে ফেলেছে শত্রুর দল। সকলেই ব*ন্দুকের নলের মুখে। শিকদার সাহেব অতি রাগান্বিত স্বরে হু মকি প্রেরণ করলেন,
” আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ। দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ে করার শখ জেগেছে তাই না? আমার ছেলের জীবনটা ন’রক বানিয়ে দিয়ে আবার বিয়ে করছিস? এবার দেখ। বিয়েবাড়ি কি করে শোকের বাড়ি হয়ে যায়। ”

বলতে না বলতেই ছুঁড়ল বু”লেট। সময়মতো স্ত্রী সহ মাথা নিচু করে বু”লেটের হাত থেকে রক্ষা পেল তূর্ণ। এতে অসন্তুষ্ট হলেন শিকদার সাহেব। পুনরায় গু’লি ছোঁড়ার পূর্বেই আকস্মিক প্রতিক্রিয়ায় হতবিহ্বল সকলে! অতিথিদের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা কিছু মানব রণমূর্তি ধারণ করলো। কুপোকাত করতে লাগলো শত্রু পক্ষকে। এরা কারা? আগত অতিথিরা প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি আরম্ভ করে দিলো। ছুটতে লাগলো এদিক ওদিক।

দুয়াকে সাবধানে মায়ের কাছে গচ্ছিত রেখে শত্রুর পানে অগ্রসর হতে লাগলো তূর্ণ। একজন ছুটে আসতেই তার মুখ বরাবর ঘু;ষি মে রে দিলো সে। শত্রুটি লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। শিকদার সাহেব হতবাক! ওনার পরিকল্পনা এভাবে উল্টে গেল কি করে? এরা কারা? আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ পূর্ব হতেই সতর্ক ছিল? কিভাবে? রাগে ক্ষো’ভে উনি তাকালেন দুয়া’র পানে। ভীত রমণী বারবার দোয়া পাঠ করে যাচ্ছে। মা”রপিটে লিপ্ত স্বামীর পানে তাকিয়ে মহান রবের সহায়তা প্রার্থনা করছে।

উনি যেই না দুয়া’র উদ্দেশ্যে পি*স্তল তাক করলেন ওমনি এক ঘু”ষিতে হটে গেলেন। ঘু’ষিটা মে;রেছে তূর্ণ। রাগত চাহনিতে তাকিয়ে শিকদার সাহেবের পানে। উনি পুনরায় পি*স্তল তাক করে হা;মলা করার চেষ্টা চালাতেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো তূর্ণ। বয়স্ক লোকটিকে আঘাত করতে দ্বিতীয়বার ভাবলো না। এদিকে রাজীব, নিশাদ, জাবির এরাও সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। লিপ্ত হয়েছে মা”রপিটে।

পরিবারের সদস্যরা এতে বেশ ভীত, চিন্তিত হয়ে পড়লো। পুত্রের প্রতিশো”ধ নিতে মরিয়া শিকদার সাহেব। ওনাকে দমানো যেন আজ মুশকিল। উনি তূর্ণ’র আপনজন কেড়ে নেবেন ই নেবেন। তাই তো মেঝেতে পড়ে থাকা পি*স্তল হাতে নিলেন। তাক করলেন নিশানা। নিশানা একদম নববধূ বরাবর। আকস্মিক স্তব্ধ হলো চারিপাশ। বু”লেটের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো হল জুড়ে।

পরিশিষ্ট:-
আঁধারে নিমজ্জিত বসুধা। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে অভিমানী রমণী। মন খারাপের মেলা বসেছে তার অন্তঃপুরে। দৃষ্টি নিবদ্ধ কৃষ্ণকালো ও-ই দূরাকাশে। হঠাৎ তার ধ্যান ভঙ্গ হলো। নিজেকে অনুভব করলো পুরুষালি গাঢ় বেষ্টনীতে। অভিমানিনী ললনা নিজেকে সে বেষ্টনী হতে ছাড়ানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালালো। তবে সফলতা এলো না। বরং আরো প্রগাঢ় বাঁধনে বন্দী হলো। কর্ণ কুহরে পৌঁছালো,

” আমার থেকে তোমার রেহাই নেই যে বউ। শুধু শুধু বৃথা চেষ্টা করে অ্যানার্জি লস করছো। এই অ্যানার্জিটুকু না হয় মাঝরাতে ভিন্ন কোথাও কাজে লাগালে। ”
তেঁতে উঠলো রমণী,
” অ*সভ্য লোক। দিন পেরিয়ে রাত হলো। ওনার এখন মনে পড়েছে বউ বলে কেউ আছে? ”
কাঁধে থুতনি স্থাপন করলো মানব। অনুতপ্ত স্বরে বললো,

” সরি সোনা। জানোই তো অফিসিয়াল কাজে এখানে আসা। খুব ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ছিল। এজন্য.. ”
” এজন্য বউকে ভুলে গেলেন তাই না? খুব তো বলেছিলেন সিঙ্গাপুর চলো আমার সাথে। ওখানে মিনি হানিমুন সেরে ফেলবো। এই তার নমুনা? ”
আকস্মিক অর্ধাঙ্গীকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো নিশাদ। দাঁত কেলিয়ে হাসলো। হাঁটি হাঁটি পায়ে বিছানার ধারে অগ্রসর হতে হতে বললো,

” আচ্ছা? বউ আমার হানিমুনে এসে স্বামী সোহাগ না পাওয়ায় অসন্তুষ্ট? নো টেনশন সোনা। আজ রাতে এখনো ছ ঘন্টার বেশি সময় পড়ে আছে। ”
কর্ণে উষ্ণ শ্বাস ফেলে ফিসফিসিয়ে,
” বহুত রোমান্স করা যাবে। বুঝলে? ”

লাজে রাঙা হলো তৃষা’র মুখখানি। বালিশে ঠেকে গেল মাথা। পাশেই জায়গা করে নিলো নিশাদ। আলো আঁধারির খেলায় বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে রইলো স্ত্রীর পানে। এই স্নিগ্ধ মায়াবী মুখখানি তার সকল চিন্তা, ক্লান্তির উপশম। দিনের সমস্ত কর্ম সেরে এ মেয়েটির সান্নিধ্যে এলেই সবটা দূরীকরণ হয়ে যায়। ভালোলাগায় ছেয়ে যায় তনুমন। তৃষ্ণার্ত নয়ন জোড়া খুঁজে পায় স্বার্থকতা। আচ্ছা। সেদিন যদি ভ’য়াল থাবায় এ মেয়েটির কিছু হয়ে যেতো কি হতো তার? সে কি বেঁচে থাকতো এ অবধি? থাকতো না তো। প্রিয়তমার শোকে হয়তো জীবিত লা শ হয়ে পড়ে রইতো। ভুলে যেতো জাগতিক সকল ভাবনা। জীবনযাপন করতো মৃ ত মানুষের ন্যায়। সহসা পুরনো ভীতসন্ত্রস্ত স্মৃতি মানসপটে ভেসে এলো। মনে পড়ে গেল বছর দুই পূর্বের সে-ই কালো রাত‌।

শিকদার সাহেব দুয়া’কে নিশানা করে গু”লি করলেন। ভাবির বিপদে ছুটে এলো চিন্তায় বি-ধ্বস্ত তৃষা। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ভাবিকে। তবে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হলো না। তার বাহু ছুঁলো বু”লেট। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলো রমণী। র*ক্তাক্ত বাহু আঁকড়ে ভারসাম্য হারিয়ে বসে পড়লো মেঝেতে। যন্ত্রণায় লালাভ মুখখানি। স্তব্ধ সকলে! ভয়ে, দুশ্চিন্তায় চিৎকার করে উঠলো দুয়া।

নিশাদ তা অবলোকন করে হুঁশ হারিয়ে ফেললো যেন। অজানা ভয়ে জর্জরিত হয়ে এলোপাথাড়ি মা*রতে লাগলো বুড়ো শিকদারকে। আজ বুঝি মে,রেই দেবে। তূর্ণ দ্রুত ছুটে গেল বোনের পানে। বোনকে বুকে আগলে চিৎকার করে ডক্টর ডাকতে বললো। তৃষা ব্যথায় ভাইয়ের বুকে লেপ্টে গেল। বদ্ধ হলো চক্ষু জোড়া। রিসোর্টের কাছাকাছি একটি ক্লিনিক। মিহাদ এবং রিশাদ দ্রুত সেখান থেকে চিকিৎসক নিয়ে এলো।

প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করলেন উনি। ভাগ্য সহায় ছিল। গু”লি শুধুমাত্র চামড়া ছুঁয়ে গেছে। ভেতরে বিদ্ধ হতে পারেনি। উনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে প্রস্থান করলেন। ততক্ষণে পুলিশি হেফাজতে শিকদার সাহেব। আধম’রা অবস্থা। নিশাদকে ঠেকানো ছিল দুষ্কর। বহু কষ্টে দমানো গেছে। তূর্ণ’র নিয়োগ করা সিকিউরিটি এজেন্সির লোকগুলো বিপদের মূহুর্তে ওদের বেশ সহায়তা করলো। শত্রুর মোকাবেলায় এগিয়ে এলো। শারীরিক সাহায্য করলো।

বিছানায় শায়িত মেয়েটি। বেদনা পরিলক্ষিত চেহেরায়। মুখখানি শুকিয়ে এতটুকু। প্রেয়সীর এমন করুণ দশা অবলোকন করে নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হলো নিশাদ। ভুলে গেল সকল মান অভিমান। হৃদয়ে শুধু হারানোর ভয় বিরাজমান। অস্থির মানব লোকসমাগম ভুলে গিয়ে ছুটে গেল বিছানায় শায়িত তৃষা’র পানে। তাকে বক্ষপিঞ্জরে আগলে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। এতে হতবাক পরিবারের সদস্যরা! একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। বুঝে উঠতে পারছে না নিশাদের এহেন আচরণের কারণ।

তৃষা চমকিত! জীবনে প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষের আলিঙ্গন। র,ক্ত কণিকা যেন টগবগ করে ফুটতে লাগলো। হৃৎপিণ্ডের গতিবেগ দ্রুততম। আবেশে বুজে গেল অক্ষি জোড়া। সবল ডান হাতটি স্থাপন করলো অস্থির মানবের পৃষ্ঠদেশে। কাঁধে অনুভব করলো নোনাজল। মানুষটি কাঁদছে। হাঁ তার জন্যে কাঁদছে। অসম্ভব ভালোলাগায় ছেয়ে গেল হৃদয়। অধরে ফুটে উঠলো তৃপ্তিকর আভা। তূর্ণ এবং দুয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মুহুর্তটুকু অনুভব করলো। উপলব্ধি করতে পারলো হারানোর ভয় কারে কয়। নিভৃতে দুয়া আঁকড়ে ধরলো স্বামীর হাতটি। তূর্ণও শক্ত করে আগলে নিলো।

প্রেয়সীকে হারানোর ভয়ে জীর্ণশীর্ণ নিশাদ সেদিন যেন উ*ন্মাদ হয়ে উঠলো। পরিবারের সদস্যদের কাছে এলোমেলো ভঙ্গিমায় কোনোমতে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করার প্রয়াস চালালো। তবে ভয়ডরে অবস্থা খারাপ। ঠিকমতো বুঝিয়ে উঠতে পারছিল না। তখন তূর্ণ দুয়া এগিয়ে এলো। পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে বোঝালো। অবশেষে কয়েক ঘন্টার চেষ্টা সফল হলো বটে।

অনুমতি পাওয়া মাত্রই অতি আনন্দে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো নিশাদ। প্রিয় বন্ধুকে জাপটে অশ্রু বিসর্জন দিলো। তূর্ণ মুচকি হেসে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো। অতঃপর..! নিশাদ হালাল রূপে আপন করে নিলো তৃষাকে। তার প্রেয়সীকে। রাত একটার দিকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো দুই যুগল। তূর্ণ-দুয়া এবং নিশাদ-তৃষা। বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল মেয়েটির। কিন্তু এ কি হয়ে গেল? সাধারণ লেহেঙ্গা আর হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হলো। এরেই কয় কপাল!

পুরনো স্মৃতি মনে করে নিঃশব্দে হাসলো তৃষা। কি থেকে কি হয়ে গেল। ভেবেছিল সেদিন এ মানুষটির তরে লুকানো অনুভূতি প্রকাশ করবে। বুঝিয়ে দেবে এই পা*গলাটে, ধৈর্যশীল মানুষটি অতি নীরবে তার হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। সফল হয়েছে তৃষার হৃদয়ে প্রেম পুষ্প বপন করতে। তা আর হলো কোথায়? এভাবে যে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে, কে ভেবেছিল? পা*গলাটে মানুষটা এখন তার বর।

অর্ধেক অংশ। অতি আপন একজন। লাজুক মেয়েটির ভাবনায় ছেদ পড়লো। ইতোমধ্যে আদুরে অ*ত্যাচার আরম্ভ করে দিয়েছে নিশাদ। বিবাহ জীবনের দু বছর পূর্তি হলো। তবুও আদুরে স্পর্শে প্রথমবারের মতো শিউরে ওঠে মেয়েটি। হৃদয়ের অন্তঃস্থল হতে অনুভব করে স্বামী সোহাগ। আবেশে মুদিত হলো তৃষা’র নেত্রপল্লব। কোমল ওষ্ঠে পেল স্বামীর নে*শাক্ত পরশ।
সিঙ্গাপুরের বুকে ভালোবাসার খেলায় মেতে উঠলো এ কপোত-কপোতী।

বছর কয়েক পূর্বে তূর্ণ, দুয়ার রিসিপশনে অতর্কিত ভাবে আগমন হয়েছিল রুমানের। তার বি শ্রী কাণ্ডের ফলস্বরূপ শাস্তি প্রদান করলো তূর্ণ। সঙ্গে ছিল নিশাদ, রাজীব। সেদিন মা”রের পরিমাণ বেশিই ছিল। হাত-পা ভেঙ্গে গেল রুমানের। চিকিৎসাধীন ছিল কয়েক মাস। তার প্রভাবশালী পিতা এ মানতে পারলো না। পুত্রের নিকট থেকে জানতে পারলো এসবের নেপথ্যে কে। ব্যাস। শুরু হলো ওনার কুটিল পরিকল্পনা।

সড়ক দুর্ঘটনার শিকার করে প্রথম আঘাত হানলেন নিশাদের ওপর। অতঃপর তূর্ণ। তবে দু’জনেই মহান রবের কৃপায় বেঁচে গেল। এতে অসন্তুষ্ট হলেন উনি। পরিকল্পনা করতে লাগলেন কি করে তূর্ণ’কে পরাস্ত করা যায়। বোঝানো যায় আপনজন হারানোর ভয়। এজন্য উনি বিয়ের দিনটা বেছে নিলেন। করলেন পরিকল্পনা। তবে তা সফল হলো না। কারণ বিয়ের ক’দিন পূর্বে পুলিশ মারফত তূর্ণ জানতে পেরেছে ওদের দূর্ঘটনা সাধারণ নয়।

এর পেছনে সম্ভবত মিস্টার শিকদার দায়ী। তদন্ত চলছে। পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। স্বাভাবিকভাবেই এমন আনন্দঘন পরিবেশে ঘাবড়ে গেল তূর্ণ। সামান্যতে পুলিশি সহায়তা পাবে না জেনে, একটি সিকিউরিটি এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করলো। সেখান থেকে প্রেরিত বেশকিছু লোক নিযুক্ত হলো রিসোর্টের নিরাপত্তায়। তারা ছদ্মবেশে চলাচল করতে লাগলো। এবং সময়মতো আসল রূপ দেখালো। এভাবেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয়লাভ করলো ন্যায়। গ্ৰেফতার হলেন শিকদার সাহেব। রক্ষা পেল তূর্ণ, দুয়া এবং তাদের পরিবার।

সান্ধ্যকালীন প্রহর। অসীম জলধারার পাশে বালির আচ্ছাদন। লালচে কমলা রঙে রঙিন বসুধা। সে রঙের ছোঁয়ায় জলছবি অঙ্কিত সমুদ্রের বুকে। মুক্তোর ন্যায় চিকচিক করছে তীরবর্তী বালুর বিছানা। সতেজ পবনে শিহরিত তনুমন। এলোমেলো দীঘল কেশ। পোশাক। চকচকে বালির বুকে পদচিহ্ন এঁকে ছুটে চলেছে এক রমণী। তার পিছুপিছু এক পুরুষ। দু’জনের অধরে লেপ্টে সুখময় হাসির রেখা। তাদের হাস্য কলরব প্রতিধ্বনিত হচ্ছে চারিপাশ।

আকাশে বাতাসে। রমণীকে আয়ত্ত্বে পাবার জন্য পিছু ছুটছে মানব। তাকে ভেংচি কেটে বালুর বুকে ছুটে চলেছে রমণী। কিয়ৎক্ষণ বাদেই পরাস্ত হলো। পেছন হতে আগলে নিলো তূর্ণ। দু হাতে তার মাইরা’কে আবদ্ধ করে গোল গোল করে ঘুরতে লাগলো। খিলখিল হাসির কলরবে মুখরিত হলো সমুদ্রতীর। বারকয়েক গোল গোল ঘুরে থেমে গেল তূর্ণ। তার সঙ্গিনীকে দু হাতে আগলে জমিনে পদযুগল নামালো। ঘন শ্বাস ফেলছে দু’জনে। অস্থির শ্বাস প্রশ্বাসের গতি। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলো তারা। স্বামীর পানে ঘুরে দাঁড়ালো দুয়া। বাহুবন্ধনে আবদ্ধ দু’জনে। নয়নে মিলেছে নয়ন। একে অপরের পানে বিমুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে। সম্মোহনী স্বরে প্রেমিক পুরুষটি ব্যক্ত করতে লাগলো,

” তুমি ভাবনায় ডুবে থাকা
দূর আকাশের নীলিমায়
তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম
মিশে থাকা গভীর মুগ্ধতায়
তুমি এলে মন ছুঁলে
অন্যরকম হয়ে যাই
ইচ্ছে গুলো জড়োসড়ো
ভালোবাসি বলে তাই
আমার আমি বলতে তোমায় জানি
ঐ আকাশ জানে তুমি আমার কতখানি। ”

বিমোহিত রমণী প্রতিটি শব্দ অনুধাবন করলো। গেঁথে নিলো হৃদয়ের অন্তঃস্থলে। তার নয়নতারায় দৃশ্যমান হলো স্বামীর জন্যে অসীম ভালোবাসার বহর। মন্থর গতিতে আরো সন্নিকটে এলো মানুষটি। প্রিয়তমার ললাটে অঙ্কন করলো প্রেমময় চুম্বন। আবেশিত রমণীর আঁখি পল্লব মুদিত হলো। অনুভব করতে লাগলো এ পবিত্র-প্রেমময় স্পর্শ। তারা আজো একে অপরকে সরাসরি চার বর্ণের জাদুকরী শব্দ ‘ ভালোবাসি ‘ বলে ওঠেনি। ভালোবাসি না বলেও যে ভালোবাসা যায়। অনুভব করা যায় প্রিয়জনকে। হাঁ যায়। তাই তো মহান রবের কৃপায় আজ সফল তূর্ণ’র হৃদয়ে লুকানো প্রেম। সে প্রথম অনুভূতি, প্রথম ভালোবাসা আজ আর লুকায়িত নয়। এ নভোমণ্ডল জানে, এ বাতাস জানে, জানে এ প্রকৃতি… দুয়া তূর্ণ’র হৃদয়ে লুকানো কতখানি।

তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ৫৭

[ আসসালামু আলাইকুম। দুই মাসের একটু বেশি সময়ব্যাপী ছিল তূর্ণ দুয়া’র পথচলা। অবশেষে আজ এ মুহূর্তে সে পথচলা সমাপ্ত হলো। বিদায় নিচ্ছে তূর্ণ, দুয়া। পাঠকমহলের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তূর্ণয়া’র মাধ্যমেই এ ক্ষুদ্র লেখিকা গল্প জগতে পরিচিতি লাভ করেছে। পেয়েছে অসংখ্য ভালোবাসা, শুভকামনা। এজন্য কৃতজ্ঞ আমি। শুকরিয়া সকলের প্রতি। তূর্ণ, দুয়া’র মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো কাজিন লাভ স্টোরি লেখা। কখনো ভাবিনি কাজিন লাভ স্টোরি লেখা হবে। তবে পাঠকদের মূল্যবান মতামত অনুযায়ী এ গল্প লেখা। ভেবেছিলাম ছোট গল্প হবে এটি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাহিনী বিস্তার লাভ করলো। পৌঁছালো পর্ব আটান্ন অবধি। তবে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। হয়তো গল্পের শেষের অংশ আপনাদের মনমতো হয়নি। তাই তো রেসপন্স বড্ড হ্রাস পেয়েছে। পুরো গল্পটা আমি রাইটিং ব্লকে থাকাকালীন লিখলাম। লেখায় মোটেও মন বসতো না। শব্দমালা আটকে যেতো। কাহিনী বিন্যাস হতে চাইতো না। বেশ কিছু জায়গায় কাহিনী বেশ মন্থর ছিল। এছাড়াও ছোট হতো পর্বগুলো। তাই তো এতগুলো পর্ব হলো। নাহলে পূর্বেই শেষ হতো। যাই হোক। আজ তূর্ণয়া’র পথচলা শেষ। আশা করি পাঠকমহল মনে রাখবে এ ক্ষুদ্র লেখিকাকে। তূর্ণ ভাইয়া এবং তার মাইরা’কে। পুনরায় অসংখ্য শুকরিয়া জানাই। আল্লাহ্’র রহমতে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ইনশাআল্লাহ্ পরীক্ষা শেষে ফিরবো কোনো নতুন কাহিনী নিয়ে। ]

সমাপ্ত