তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ৩১

তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ৩১
তাহিরাহ্ ইরাজ

” কি রে পুতলা? হানিমুন যাওয়ার খুশিতে মনে লাড্ডু ফুটেছে? এখনই লেটস্ নাচো শুরু করে দিয়েছিস?”
তূর্ণ’র কণ্ঠে হাস্যরসাত্মক ভাব। মুহুর্তের মধ্যেই খুশিতে আত্মহারা মেয়েটি লাজুকলতার ন্যায় মিইয়ে গেল।

লিভিংরুম হতে ছুটে কক্ষে প্রবেশ করলো দুয়া। ঘন ঘন শ্বাস পড়ছে।
” ইশ্ কি লজ্জা! বাবা ছেলে দু’জনে মিলে আমায় লাজেই মে রে দেবে! ”
লাজুক হাসলো মেয়েটি। খুশি খুশি বসলো টাফটেড বেঞ্চে। মুখখানি দু হাতের আঁজলায় ভরে একাকী বিড়বিড় করতে লাগলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” সুইজারল্যান্ড! সত্যিই আমরা সুইজারল্যান্ড যাবো? আল্লাহ্! আমি তো ভাবতেই পারছি না। গা শিরশির করে উঠছে। জীবনে প্রথম বিদেশ ভ্রমণ তা-ও ওই মানুষটির সঙ্গে। ”
তপ্ত হলো কপোল। লাজুক হেসে উঠে দাঁড়ালো দুয়া।
” উম্! হাতে মাত্র এক সপ্তাহ আছে। কত গুছগাছ করতে হবে। সবার আগে শপিংয়ে যাওয়া দরকার। গরম পোশাক কিনতে হবে কতগুলো। হুম। ”

মেয়েটি নিজস্ব ভাবনায় মশগুল। একাকী হাঁটতে হাঁটতে হাত নাড়িয়ে কত কি বলে চলেছে। কক্ষের দ্বারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। বুকের কাছে ভাঁজ করা দু’টো হাত। চোখেমুখে তৃপ্তিময় ঝলক। বিমোহিত দৃষ্টি নিবদ্ধ তার মাইরা’তে! আস্তে করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ধীরপায়ে অগ্রসর হতে লাগলো দুয়া’র পানে। দুয়া তো টেরও পায়নি পেছনে কার অবস্থান! তূর্ণ এসে দাঁড়ালো পেছনে। খুব সন্নিকটে। কর্ণ কুহরে অধর ঠেকিয়ে দুষ্টু কিন্তু হাস্কি কণ্ঠে বলে উঠলো,

” কি রে পুতলা? হানিমুন যাওয়ার খুশিতে মনে লাড্ডু ফুটেছে? এখনই লেটস্ নাচো শুরু করে দিয়েছিস?”
কর্ণ কুহরে তপ্ত শ্বাসের বহর। সঙ্গে একান্ত মানুষটির কণ্ঠস্বর। মুহুর্তের মধ্যেই খুশিতে আত্মহারা মেয়েটি লাজুকলতার ন্যায় মিইয়ে গেল। অবনত হলো মুখশ্রী। লালাভ আভা ছড়িয়ে পড়া মুখপানে তাকিয়ে মুগ্ধ হলো তূর্ণ। আরেকটু সন্নিকটে এসে দাঁড়ালো। ফিসফিসিয়ে বললো,

” হানিমুনে যাচ্ছি বিবিজান। ওখানে শুধু ঘোরাঘুরি নয়। এইটিন প্লাস অনেক কিছুই ঘটতে পারে। সো বি প্রিপেয়ার্ড। হুম? ”
কর্ণ পাতায় অধরের ছোঁয়া অনুভূত হতেই আবেশে মেয়েটার আঁখি যুগল মুদিত হলো। বক্র হেসে সরে গেল তূর্ণ। তার অনুপস্থিতি অনুভব করেই মেয়েটি ধীরে ধীরে নেত্রপল্লব মেলে তাকালো। র’ক্তিমা রূপে লাগছে অপরূপা! দু হাতের অন্তরালে লাজুক মুখখানি লুকিয়ে ফেললো দুয়া। ইশ্! বেলাজ পুরুষ!

সুইজারল্যান্ড ট্রিপের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। শপিংয়ে ব্যস্ত দুয়া। সঙ্গ দিচ্ছে তানজিনা, তৃষা এবং নিশি। বোনের জন্য সেরা পোশাক নির্বাচনে ব্যস্ত তানজিনা। কতগুলো গরম পোশাক কিনে দিলো। সুইজারল্যান্ডের আবহাওয়া বড় শীতল কিনা! ওদিকে তূর্ণ একদিন সময় করে শপিংয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে ছিল নিশাদ এবং রাজীব। দুই বন্ধু ওকে কম জ্বালাতন করেনি। দুষ্টু দুষ্টু কথায় জর্জরিত করে ফেলেছিল। আর তূর্ণ? সে-ও কম নয়। দুষ্টু এক বাক্যেই বন্ধুদের বোল্ড আউট! এভাবেই গুছগাছ করতে করতে সময় ঘনিয়ে এলো।

সকাল থেকেই ব্যস্ত ‘ ছায়াবিথী ‘. আজ রাত নয়টা বেজে পনেরো মিনিটে তূর্ণ দুয়া’র ফ্লাইট। কাতার এয়ারওয়ে এর মাধ্যমে ওরা সুইজারল্যান্ড যাচ্ছে। দুয়া’র পরিবারের সদস্যরা দুপুর হতে না হতেই এ বাড়িতে চলে এসেছে। যদিওবা সাজ্জাদ সাহেব অনুপস্থিত। নিজ কর্মে ব্যস্ত। দুই মা মিলে দুয়া’কে কত কি পরামর্শ দিলো! প্রথমবার বিদেশ সফর কিনা? তূর্ণ তো ইতোপূর্বে কয়েকবার গিয়েছে। তাই ওকে নিয়ে চিন্তা নেই। কিন্তু এই পুঁচকে চঞ্চল মেয়েকে নিয়েই যত রাজ্যের চিন্তা দুই মায়ের। তাই তো দু’জনে মিলেমিশে বলে চলেছে,

” ওখানে শীত বেশি। বাইরে গেলে অবশ্যই গরম কাপড় পড়বি। ”
” তূর্ণ’কে ছাড়া একা একা বাইরে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববে না। সবসময় ওর সাথে সাথে থাকবে। ”
” বাহিরের খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবি।”
” রাতের বেলা ওখানে নাকি খুব শীত পড়ে। তাই রাতে তেমন একটা বের হবে না। ”
” ওখানে পৌঁছেই আমাদের কল করবি। কল করলে যেন সাথে সাথে পাই। নাহলে দুশ্চিন্তা হবে। মনে থাকবে তো? ”
আরো কত কি পরামর্শ। দুয়া হেসে উঠলো। দুই মা’কে আলিঙ্গন করে আশ্বস্ত করলো। অবশেষে তারা শান্ত হলো।

তমসায় আচ্ছাদিত রজনী। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তূর্ণ এবং দুয়া। পরিবারের সদস্যরা বিদায় জানালো ওদেরকে। তাসলিমা পুত্র এবং পুত্রবধূর ললাটে চুমু এঁকে দিলেন। দোয়া করলেন ওদের সুস্থতা এবং নিরাপত্তার জন্য। দুয়া মা বাবার কাছে গেল। তাদের আলিঙ্গন করে বিদায় নিলো। সাজ্জাদ সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তূর্ণ ও দুয়া ধীরে ধীরে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিলো। তৃষা, নিশি এবং ছোট্ট জাহিন ওদের আলিঙ্গন করলো। এবার বিদায়ের পালা। ধীরে ধীরে সকলের চোখের আড়াল হলো তূর্ণ, দুয়া। ছোট্ট জাহিন হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে তার প্রিয় ছোটাপু আর তূর্ণ ভাইয়া’কে।

বিমানবন্দরে সকল ফর্মালিটিজ সমাপ্ত করে দু’জনে পা বাড়ালো বিমানের দিকে। নিজস্ব ফ্লাইট অনুযায়ী ওরা প্রবেশ করলো প্লেনে। দুয়া কৌতুহলী নজরে সবটা অবলোকন করে চলেছে। গেঁথে রাখছে স্মৃতির পাতায়।
পাশাপাশি সিট তূর্ণ, দুয়া’র। দুয়া বসলো জানালার পাশে। তূর্ণ মোবাইল হাতে নিয়ে বাবাকে কল করলো। জানিয়ে দিলো ওরা প্লেনে উঠে পড়েছে। অতঃপর সালাম দিয়ে কল কেটে দিলো। বন্ধ করে ফেললো মোবাইল।
দুয়া জানালা দিয়ে তাকিয়ে রাতের শহরে। আঁধারে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। তবুও সে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ বাদেই উড্ডয়ন করবে বিমান। প্রথমবারের মতো আকাশপথে ভ্রমণ। ভাবতেই শিহরিত হচ্ছে হৃদয়। তূর্ণ বাম পাশে বসে থাকা সঙ্গিনীর দিকে তাকালো।

” আর ইউ ওকে? ”
দুয়া জানালা হতে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। তূর্ণ’র পানে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। তাতেই জবাব খুঁজে পেল তূর্ণ। ওর হাতে হাত রেখে বললো,
” ডোন্ট বি নার্ভাস। ওকে? প্রথমবার তো। একটু অস্বস্তি হতে পারে। তবে আমি আছি তো। ভয় পেয়ো না। ”

দুয়া বিমুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে স্বামীর হাতে হাত রাখলো। চোখের ইশারায় সম্মতি পোষণ করলো। বিনিময়ে মৃদু হাসলো তূর্ণ। খানিক বাদে বিমানবালা এলো। উপস্থিত সকল যাত্রীদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ সকল নির্দেশনা পেশ করলো। মনোযোগ সহকারে তা শুনতে লাগলো দুয়া। সে-ই ফাঁকে তূর্ণ নিজেকে সিটবেল্ট বন্দি করে নিলো। অতঃপর বন্দিনী করলো তার মাইরা’কে। হঠাৎ ধ্যান ভঙ্গ হলো মেয়েটার। নিজের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলো তূর্ণ সিটবেল্ট বেঁধে দিয়েছে।

” থ্যাংকস। ”
থ্যাংকস গ্রহণ করলো না তূর্ণ। বরং ওর দিকে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে গেল। ফিসফিসিয়ে বললো,
” আমার যে থ্যাংকস চাই না। ”
” মানে? ”
” অন্য কিছু চাই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কিসের থ্যাংকস? হবে শুধু লেনাদেনা। ”

দুয়া ঠিক বুঝতে পারলো না। জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে। বক্র হাসলো তূর্ণ। নিম্ন অধর কা’মড়ে হাস্কি স্বরে বললো,
” কিসের লেনদেন বুঝলে না তো? বিদেশের মাটিতে হাতেকলমে বুঝিয়ে দেবো। হ্যাভ প্যাশেন্স। ওকে? ”
তূর্ণ চোখ টিপে দিতেই হকচকিয়ে গেল মেয়েটি। তড়িৎ দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। নিঃশব্দে হাসলো তূর্ণ।

নয়টা বেজে পনেরো মিনিট। নির্ধারিত সময়ে উড্ডয়ন করলো কাতার এয়ারওয়ে এর বিমানটি। প্রথমবারের মতো ভিন্ন অভিজ্ঞতা। ভীত মেয়েটি শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো অর্ধাঙ্গের হাতটি। আঁখি পল্লব বন্ধ করে স্মরণ করতে লাগলো মহান স্রষ্টাকে। তূর্ণ ওর হাতের ওপর হাতটি রেখে ভরসা জোগালো। বুঝিয়ে দিলো পাশে রয়েছে সে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলো দুয়া। এবার নিজস্ব কৌতুহল মেটাতে লাগলো। উপভোগ করতে লাগলো বিমান যাত্রা।

দিবাকরের আলোয় আলোকিত ধরিত্রী। ঘড়িতে তখন বাংলাদেশের সময় সাতটা বেজে ত্রিশ মিনিট। জুরিখ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলো বিমানটি। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে টার্মিনালে উপস্থিত হলো তূর্ণ, দুয়া। তূর্ণ’র বাঁ হাতে ভারী লাগেজ। ডান হাতের মুঠোয় বন্দি সঙ্গিনীর কোমল হাতটি। দুয়া’র হাতে ছোট একটি লাগেজ। পড়নে তাদের শীতের পোশাক। বিমানবন্দরে সমস্ত ফর্মালিটিজ পূরণ করে দুজনে বেরিয়ে এলো। সুইজারল্যান্ডের মাটিতে দেহে মাখলো মিঠি রৌদ্র।

বিমানবন্দরের বাহিরে উপস্থিত বেশকিছু ট্যাক্সি। তূর্ণ একটি ট্যাক্সি বুক করলো। চালক এবং সে মিলে ট্যাক্সিতে লাগেজ তুললো। অতঃপর বললো রেলস্টেশনে যেতে। চালু হলো ট্যাক্সি। বিমানবন্দর এলাকা ত্যাগ করে বেরিয়ে এলো ট্যাক্সিটি। দুয়া উপভোগ করতে লাগলো জুরিখের সৌন্দর্য। জুরিখ বিমানবন্দর থেকে ট্রেন স্টেশন যেতে মাত্র দশ মিনিট সময় লাগে। ক্ষণিকের যাত্রা শেষে তূর্ণ এবং দুয়া পৌঁছে গেল ট্রেন স্টেশনে। বৃহৎ জায়গা নিয়ে অবস্থিত স্টেশনটি। সংলগ্নে রয়েছে শপিংমল। রেস্টুরেন্ট। তূর্ণ দুয়া আপাতত কিছু খেলো না। একবারে রিসোর্টে পৌঁছে তবেই খাবে।

সেন্ট্রাল স্টেশনের ট্রেনগুলো আরামদায়ক এবং যাত্রীদের লাগেজ রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে। তারা সকাল পাঁচ টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিটে চলে। জুরিখ সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রেনগুলি সকাল চারটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট হতে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে।

জুরিখ সেন্ট্রাল স্টেশনের একমুখী টিকিটের দাম প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাত ইউরো। যদি আগে থেকে জুরিখ কার্ড বা সুইস ট্র্যাভেল পাস কেনা থাকে, তাহলে জুরিখ বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে কোনো খরচ ছাড়াই শহরে যাওয়া যাবে। তূর্ণ’র কাছে সুইস ট্রাভেল পাস রয়েছে। তাই ওরা বিনামূল্যে রেল ভ্রমণ করতে পারলো।

জুরিখ সিটি সেন্টার থেকে ৩.৮ কিমি ( 2.2 মাইল ) দূরে অবস্থিত, ফাইভ জুরিখ হলো একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট- উইডিকন জেলা, শহরের সীমানায়। এটি তাদের জন্য উপযুক্ত জায়গা যারা ব্যবসা এবং অবকাশ মিশ্রিত করতে চান। কারণ এটিতে দুটি সুইমিং পুল (একটি আউটডোর), একটি ফিটনেস সেন্টার, পাশাপাশি একটি হট টব এবং অন্যান্য ব্যবস্থা রয়েছে৷ এটি বিনামূল্যে বাইকও অফার করে।

রিসোর্টের একটি আধুনিক এবং ট্রেন্ডি সাজসজ্জা আছে। কক্ষগুলো প্রশস্ত এবং খুব আড়ম্বরপূর্ণ। বিশালাকার রিসোর্টটি একটি সবুজাভ এলাকা দ্বারা বেষ্টিত। বিশাল জায়গা নিয়ে অবস্থিত ফাইভ জুরিখ হোটেল। হোটেলের সামনে অবস্থিত নীলাভ জলের বিশাল সম্ভার। একটি লম্বা আকৃতির বড় সুইমিংপুল। সুইমিংপুলের এক পাশে হোটেল অবস্থিত। অপর পাশে সবুজ গাছপালার বিশাল সমারোহ। অভূতপূর্ব সে দৃশ্য!
তূর্ণ রিসিপশনের সমস্ত ফর্মালিটিজ সমাপ্ত করে নিলো। অতঃপর দুয়া’র হাত ধরে অগ্রসর হলো তাদের জন্য নির্ধারিত কক্ষের পানে।

কক্ষের দ্বার উন্মুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করলো তূর্ণ। পিছু পিছু দুয়া। একজন হোটেল বয় এসে ওদের লাগেজ পৌঁছে দিলো। বিলাসবহুল কক্ষটি দেখে মুগ্ধ হলো দুয়া! ছোট লাগেজটি দেয়াল ঘেঁষে দাঁড় করালো। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো তাদের কক্ষটি।

কক্ষের মাঝ বরাবর দেয়াল ঘেঁষে মাস্টার বেড। বেডের দুই পাশে সরু ড্রেসিং টেবিল। ডান পাশে কিঞ্চিৎ দূরত্বে অবস্থিত বিশালাকার কাবার্ড। বাম পাশে প্রশস্ত স্লাইডিং ডোর। ডোরের অপর প্রান্তে উন্মুক্ত বেলকনি। সেথা হতে দৃশ্যমান পাহাড়ি দৃশ্য। রিসোর্টের আকর্ষণীয় দৃশ্য বিশেষ। স্লাইডিং ডোরের ডান পাশে লম্বা সোফাসেট। নীলাভ তার গাত্র। সামনে ছোট্ট গোলাকার কাঁচের টি টেবিল। এছাড়াও রয়েছে আধুনিক সকল ব্যবস্থা।

কক্ষটি দুয়া’র খুব পছন্দ হলো। সে পড়নে থাকা শীতের পোশাক খুলে ফেললো। সোফার ওপরে পোশাকটি রেখে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় এগিয়ে গেল বেলকনিতে। স্লাইডিং ডোর খুলতেই উন্মোচিত হলো বেলকনি। দুয়া খুশি খুশি এগিয়ে গেল। কোমর অবধি অবস্থিত রেলিংয়ে হাত রেখে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো পাহাড়ি সৌন্দর্যে। বিমোহিত চাহনিতে তাকিয়ে রইলো অগণিত সময়। দেহে মেখে নিলো ভিনদেশী পবন।
তূর্ণ বিছানায় বসে মোবাইলের পাওয়ার অন করলো। ডাটা চালু করে প্রবেশ করলো হোয়াটসঅ্যাপ। বাবা অনলাইনে রয়েছে। সে কল করলো। খানিকের মধ্যেই কল রিসিভ করলেন নিজাম সাহেব।

” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।‌ ”
” ওয়া আলাইকুমুস সালাম আব্বু। তূর্ণ বলছি। ”
” হাঁ তূর্ণ। তোরা পৌঁছে গেছিস বাবা? ” নিজাম সাহেব উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন।
তূর্ণ তাকে আশ্বস্ত করতে বললো, ” হাঁ আব্বু। এই কিছুক্ষণ আগে রিসোর্টে চেক ইন করলাম। ”
নিজাম সাহেব শুকরিয়া আদায় করলেন।

” আলহামদুলিল্লাহ্। পথে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? ”
” না আব্বু। আমরা আল্লাহ্’র রহমতে ঠিক ভাবেই পৌঁছেছি। কোনো অসুবিধা হয়নি। ”
” যাক বাবা। তোর মা তো চিন্তায় চিন্তায় দিশেহারা। ”
” আম্মু কোথায়? ”
” কিচেনে। ডেকে দেবো? ”
” না থাক। ফ্রেশ হয়ে পরে কথা বলবো। ”
” আচ্ছা। তা আমার দুয়া মামণি কোথায়? ”
বেলকনিতে থাকা বিমুগ্ধ রমণীর পানে তাকিয়ে তূর্ণ মুচকি হাসলো।
” সে বেলকনিতে। সুইসের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। ”
নিজাম সাহেব হাসলেন।

” আচ্ছা ঠিক আছে। তোরা তাহলে ফ্রেশ হয়ে নে। একটু ঘুম দে। বেটার লাগবে। আমরা পরে যোগাযোগ করবো। ”
” ঠিক আছে। আল্লাহ্’র রহমতে ভালো থেকো আব্বু। আম্মুকে বলো আমরা পৌঁছে গেছি। শুধু শুধু দুশ্চিন্তা যেন না করে। ”
” ঠিক আছে আমার বাপ। তোরাও ভালো থাকিস। সাবধানে থাকিস। ”
” হুম। আসসালামু আলাইকুম। ”
” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলো দুই প্রান্তের। বড় শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো তূর্ণ। মোবাইল পড়ে রয়েছে বিছানায়। লাগেজ এনে তা উন্মুক্ত করলো। নিজের জন্য পোশাক এবং তোয়ালে বের করলো। লাগেজ লাগাতে লাগাতে উঁচু স্বরে দুয়া’কে বললো,
” আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি দুয়া। ”
দুয়া শুনলো কি? সে তো ব্যস্ত সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ৩০

[ আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। চলে এলাম সুইজারল্যান্ড। ঘরে বসে সুইস ভ্রমণ। জানিনা কতটুকু সফল হবো। সমস্ত তথ্য ইন্টারনেট হতে গৃহীত। আশা করি সুইজারল্যান্ড ট্রিপ আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ]

তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ৩২