তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭২

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭২
তানিশা সুলতানা

দুটো ছেলেমেয়ে নিয়ে ব্যস্ত রাস্তার এক কোণা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আরিফ। চৌধুরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে বেশ অনেকক্ষণ হলো। গোটা ঢাকার শহরের আনাচেকানাচে আবরার আদ্রিতার বিয়ের কথা শোনা যাচ্ছে।
আরিফ হাসে একটু। মনে পড়ে আদ্রিতার ছোট বেলার ঘটনা। কতো সুন্দর পরিবার ছিলো তাদের। বর্ষা জান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো তাকে।

আরিফের মনে আছে। ইমার সঙ্গে প্রথম প্রথম সম্পর্ক শুরু হলো। তখন বর্ষা অতিরিক্ত কল করে বলে ফোন বন্ধ করে রাখতো। বাসায় আসার পরে কোনো প্রশ্ন করতো না বর্ষা। বরং পাওয়ার ব্যাংক কিনে দিতো। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ফোন চার্জ দিয়ে দিতো। তার ধারণা “চার্জ না থাকায় ফোন বন্ধ হয়ে যায়”
সেই সরল মেয়েটিকে ঠকিয়েছিলো আরিফ।
বর্ষা যেদিন মারা গেলো সেই দিন আরিফের হাত ধরে শেষবার বলেছিলো
“তোমাকে ঘৃণা করার আগে আমার মৃত্যু হোক।”
আল্লাহ শুনে নিলো বর্ষার কথা। মৃত্যুই উপহার দিলো তাকে।
আরিফের চোখ দুটো ভিজে ওঠে পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে।
সে বিড়বিড় করে বলে ওঠে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মানুষকে ঠকিয়ে মানুষ কখনো ভালো থাকতে পারে না। তোমাকে ঠকিয়ে আমিও ভালো থাকতে পারিনি বর্ষা। সব ছিলো আমার। তবুও দিন শেষে অদ্ভুত এক যন্ত্রণা ঘুমতে দিতো না আমি বেইমানি না করলে আজকে আমাদের সুন্দর একটা সংসার থাকতো। তুমি আমি মিলে আমাদের ছোট্ট পরীটাকে বড় করতে পারতাম। আমার জন্য কিচ্ছু হলো না। তোমাদের দুটো জীবন আমি নষ্ট করে দিয়েছি। আমি আমার পরীটাকে
বাকিটা শেষ করতে পারেন আরিফ। তার আগে কোথা থেকে একটা চলন্ত বাস এসে ধাক্কা মেরে দেয় তাকে। সুযোগ বুঝে দুটো বাচ্চাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন তিনি। হয়তো নিজেকেও বাঁচাতে পারতেন কিন্তু আর ইচ্ছে করলো না। মুহূর্তের মধ্যেই তার নিথর দেহ খানা পিচঢালা রাস্তায় গড়িয়ে পড়ে। র/ক্তে চারিপাশ লাল হয়ে যায়। আশেপাশের মানুষজন ছুটে আসে। বাচ্চা দুটো হাউমাউ করে কাঁদে বাবার হাত ধরে। হয়ত তারা বুঝে গিয়েছে ” আজ থেকে তারা এতিম হয়ে গেলো”

আরিফ র*ক্তা*ক্ত হাত দ্বারা বাচ্চা দুটোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। শেষবারের মতোই ক্লান্ত ঠোঁট নারিয়ে বলে
“আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি পারলাম না তোমাদের কেউ সুন্দর একটা জীবন দিতে। এই পৃথিবীর সব থেকে ব্যর্থ বাবা আমি। যে তার তিনটে সন্তানকেই দুনিয়াতে এনে দোজখ যন্ত্রণা উপভোগ করালো।

বিয়ের কার্যক্রম শেষ। আবরার চাচ্ছে এখনই মা আদ্রিতা এবং চার বন্ধুকে নিয়ে সুইজারল্যান্ড ব্যাক করতে। কিন্তু আদ্রিতা আর সিয়াম বেঁকে বসেছে। তারা আজকে কিছুতেই যাবে না।
দুজনে দুজনার দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করে চলছে অনবরত। চতুর আবরার ঠিক বুঝতে পারে কোন একটা ঘাপলা চলছে।
আমানও একটু একটু আচ করতে পেরেছে।
ইভান এবং আহাদ ছাদে বাসর সাজাচ্ছে। তাদের দুজনের বক্তব্য
“আবরার তাসনিন ডিফারেন্ট। তার বাসরটাও ডিফারেন্ট হওয়া উচিত। রুমে তো সবাই বাসর করে। আবরার না হয় ছাদেই করলো।

সুন্দর একখানা খাট। চারিপাশে সাদা পর্দা দিয়ে ছোট ঘর বানানো। মাথার উপর বিশাল আকাশ। সেখানে জ্বলজ্বল করছে হাজারখানা তারা। আর তাদের সঙ্গ দিচ্ছে থালার মতো বিশাল চাঁদ। গোটা ছাদখানা কালো এবং লাল গোলাপ দ্বারা ডেকরেশন করা হয়েছে। একটু বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে যেনো।
আদ্রিতা এসব দেখে খুশি হয়। তবে খুশি নয় আবরার। ইতোমধ্যে চোখমুখ কুঁচকে কয়েকবার বলে ফেলেছে
“হোয়াট দ্যা ফা***
এই মুহূর্তে আদ্রিতা সাদা রঙের একখানা শাড়ি পড়েছে। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি। সিয়াম বড্ড চিন্তিত। সে ছোট ছোট নয়নে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আছে। এইতো খানিকক্ষণ আগে আবরার এবং আদ্রিতার বিয়ের কার্যক্রম শেষ হলো। তখন আদ্রিতা সিয়াম কে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে বলল

“সিয়াম ভাই বিয়ে করবেন?
বিয়ে পাগল সিয়াম কোনোদিক চিন্তা ভাবনা না করেই ফট করে বলে ওঠে
“বিয়ে করার জন্যই তো বেঁচে আছি। না হলে কবে মরে যেতাম।
“ঠিক আছে তাহলে আমার প্ল্যানিং শুনুন। আজকে রাতে আপনার এবং ইশারা বিয়ে দিবো।
“কিন্তু কিভাবে
“সুযোগ বুঝে আপনি ইশারাকে নিয়ে একটা কক্ষে ঢুকে পড়বেন। আমি গিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দেবো। আপনি একটু খানি ভয় দেখাবেন ইশারাকে যাতে চিৎকার টিৎকার করে।
তারপরে আমি মানুষ জড়ো করব ব্যাস হয়ে গেল বাকিটা তারাই করে নেবে।
সিয়ামের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। বিয়ে করা এতো সহজ? একটা মেয়েকে ধরে নিয়ে একটু ভয় দেখালেই বিয়ে দিয়ে দেয়? বাংলাদেশ তুমি জিন্দাবাদ।

“ওহে আমার জন্মভূমি
তুমি বড্ড ভালো
আমার আধার মাখা জীবনটাকে
তুমি করে দিলে আলো
পাবো একটা সুন্দরী বউ
রাতেই হবে বাসর
বাংলাদেশ তোমাকে নিয়ে জমিয়ে দেবো আমি
কবিতার আসর
এমন মুহুর্তেও সিয়ামকে কবিতা আবৃত্তি করতে শুনে বিরক্ত হলো আদ্রিতা।
ধমকের স্বরে বলে

” পারবেন কি?
সিয়াম নিজের কলার ঠিক করে বলে
“অবশ্যই পারবো। এটা কেনো ব্যাপার হলো?
তখুনি আবরার এবং আমান চলে আসে সেখানে। আবরার কপাল কুচকে বলে
“কি প্ল্যানিং করছিস তোরা?
চমকে উঠে দুজনই। সিয়াম কেবলামার্কা হাসি দিয়ে বলে
“প্ল্যানিংআবার কি? হোয়াট ইজ প্ল্যানিং? এটা খায় না মাথায় দেয়? আমি তো কোনদিনও খেলাম না। এ মা আমাকে দুই টাকার প্ল্যানিং কিনে এনে দিও তো।
বিরক্ত হয় বোধহয় আবরার। চোখ মুখ কুঁচকে বলে
“আমাদের ব্যাক করতে হবে সিয়াম। সবকিছু রেডি কর।
আদ্রিতা আর সিয়াম একসঙ্গে বলে ওঠে
“আমরা আজকে কিছুতেই যাবো না। কোনো মতেই যাবো না। জোর করলেও যাবো না। আমরা এক কথার মানুষ।
তারপর থেকে কোনো মতেই রাজি করানো যায় নি দুই বলদকে। শেষ মুহূর্তে আতিয়া আবরারকে বুঝিয়ে বলে “ছেড়ে দে আব্বা। আমরা কালকেই যাবো”
মায়ের কথা মেনে নেয় আবরার।

এখন রাত বারোটা বেজে আট মিনিট। আবরার ল্যাপটপের স্ক্রিনে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করে চলেছে। আমান ইভান আহাদ পাশে বসে অনবরত বলে চলেছে
“ভাই রাত কিন্তু চলে যাচ্ছে। বাসর করবি কখন? ফুলগুলো তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আহাদের কথার জবাবে আবরার বলে
“ডোন্ট ডিস্টার্ব। ইম্পর্টেন্ট কাজ করছি।
আমান গালে হাত দিয়ে বলে
“বাসরের থেকে ইমপর্টেন্ট কাজ আছে?
বাই দ্যা ওয়ে সিয়াম কই?
আবরারের হাত থেমে যায়। সত্যি তো সিয়াম কই?

“তোরা ওই বদলকে খুঁজ গিয়ে। i think কিছু একটা প্ল্যানিং করেছে ও আর পাখি মিলে।
সঙ্গে সঙ্গে আমার আহাত ইভান দাঁড়িয়ে পড়ে। বড় বড় পা ফেলে ছোটে সিয়ামের খোঁজে। আবরারও ল্যাপটপের শাটার বন্ধ করে ওদের পিছন পিছন যায়।
ইশারা এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলো তার মনটা বোধহয় একটু খারাপ।
সিয়াম ওর কাছে গিয়ে বলে
“এ বাবা তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? মনে হচ্ছে অসুস্থ। তোমার তো রেস্ট প্রয়োজন। যখন তখন মাথা ঘুরে পড়ে যাবা।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭১

এসো এসো তোমার জন্য আমি একটা রুম ক্লিয়ার করে রেখেছি। চলো রেস্ট নেবে।
বলেই ইশারার হাত খানা ধরে এবং টানতে টানতে তাকে নিয়ে যেতে থাকে।
সত্যি সত্যি একটা কক্ষের মধ্যে ঢুকে দরজাটা ভিড়িয়ে দেয়। ইশারাকে বিছানায় বসিয়ে বলে
“শুয়ে পড়ো। একটু পরে তোমার বিয়ে হবে।
আদ্রিতাও বাইরে থেকে দরজাখানা বন্ধ করে দেয়।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৩