তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ২২

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ২২
ইরিন নাজ

গাড়ি তে পাশাপাশি বসে আছে আবরার আর আরশি। আরশি দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে সামনে তাকিয়ে আছে। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে রে*গে আছে সে। ওই সময় আবরার ই নিজের সৈ*ন্য-সা*ম*ন্ত অর্থাৎ নিজের গা*র্ড সহকারে এসে আরশির সামনে গাড়ি থামায়। আর আরশি কে বলে গাড়িতে উঠতে। আরশি রাজী না হওয়ায় আজও কোলে তু*লে গাড়িতে উঠাবে বলে ভ*য় দেখায় আবরার। তাই তো এতো রা*গ হচ্ছে আরশির। ইচ্ছা করছে আবরারের গলা চে*পে দিতে।

অন্যদিকে দশ সেকেন্ড পর পর আরশির রা*গী মুখটার দিকে তাকাচ্ছে আবরার। আরশি ও বুঝতে পারছে আবরার বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে। তাই আরশি সরাসরি আবরারের চোখের দিকে তাকিয়ে রা*গা*ন্বিত কণ্ঠে বললো,
— স*ম*স্যা কি? এভাবে লু*চু*র মতো তাকিয়ে আছেন কেনো? লু*চু*র মতো কেনো আপনি তো লু*চু*ই। আমার কি রূপ বেড়ে গেছে? ঝ*রে ঝ*রে পড়ছে নাকি? যে এভাবে তাকাচ্ছেন বারবার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরশির রা*গী মুখ টা দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে আবরারের। কিভাবে রা*গে ফোঁ*স ফোঁ*স করছে, সরু নাকের পাতা ক্ষনে ক্ষনে ফু*লে উঠছে। আবরারের ইচ্ছা করছে আরশির নাক টা চে*পে দিতে। কিন্তু নাক চে*পে দিলে আরশি আবার তার গলা না চে*পে দেয়। তাই এই মুহূর্তে আরশির নাক চে*পে দেওয়ার দুঃ*সা*হ*স দেখালো না আবরার। তবে আরশি কে আরেকটু রা*গি*য়ে দিতে বললো,

— আমি তো আমার প্রিয়তমা কে দেখছিলাম। তার নতুন নতুন রূপ দেখে প্রতিদিন নতুন ভাবে পা*গ*ল হচ্ছি আমি।
আরশি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আবরারের দিকে তাকালো। আবরার ঠোঁট এলিয়ে হাসলো আরশির কা*ন্ড দেখে। বললো,
— আমি তো আমার প্রিয়তমা মানে আমার শুভ্র পরীর কথা বলছিলাম। তুমি আবার নিজেকে ভেবো না যেনো। সে তো সামনে নেই। তাই তোমার মাঝে তাকে কল্পনা করছি।
আরশি দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— আজ নিশ্চয় আমি আর আপনার শুভ্র পরী এক রঙের পোশাক পড়ি নি?
আবরার মুখ টা দুঃ*খী দুঃ*খী করে বললো,
— কি আর বলবো দুঃ*খে*র কথা মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? আজও তোমাদের দুজনের পোশাকের রঙ এক। তাই তো তোমার দিকে তাকিয়ে তাকে ইমাজিন করছি। আজ সে শুভ্র পরী থেকে আসমানী পরী হয়ে গেছে। তুমি আবার তাকে হিং*সা করো না যেনো।

চ*র*ম পর্যায়ের রে*গে গেলো আরশি। কোথায় আছে, গাড়িতে কে আছে সব ভু*লে চি*ল্লি*য়ে বললো,
— ফা*ই*জ*লামি করেন আমার সাথে হ্যা? আপনার প্রিয়তমা না পরী যাই হোক তার করণীয় কি জানেন?
আবরার বো*কা*র মতো দুইদিকে মাথা না*ড়া*লো। মানে সে জানে না। আরশি নিজের ধা*রা*লো নখ গুলো আবরারের দিকে তা*ক করে ক*ট*ম*ট করে বললো,
— তার উচিত নখ ঢু*কি*য়ে আপনার চোখ ফু*টো করে দেয়া। আপনার চোখ গুলো তু*লে নিয়ে মার্বেল খেলা। তাহলে যদি আপনার লু*চু*মি করা কমে? এই চোখ শুধু তাকে দেখবে, শুধুই তাকে। অন্য কোনো মেয়ে কে কেনো দেখবে?
আবরার চোখ বড় বড় করে বললো,

— তুমি তো সাং*ঘা*তি*ক মেয়ে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। তোমার জামাইয়ের কপালে তো অনেক দুঃ*খ আছে। বে*চা*রার চোখ, নাক, কান, গলা সব কিছুর বে*হা*ল দশা দেখতে পাচ্ছি আমি। তুমি আজকেই বাড়ি গিয়ে নখ কা*ট*বে। একদম চা*ম*ড়ার সাথে লাগিয়ে কা*ট*বে। একটুও যেনো বা*ড়*তি না থাকে।
আরশি নিজের নখ গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে ভাব নিয়ে বললো,
— বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা তো নেই। তবে যদি ভাগ্যে বিয়ে থাকে তাহলে তো হবেই। আর বিয়ে হলে আমার জামাইয়ের কপালেও দুঃ*খ আছে। আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকানো তার জন্য নি*ষি*দ্ধ করবো আমি। আর যদি তাকায়…

আবরার গোল গোল চোখ করে জিজ্ঞাসা করলো,
— কি করবে?
আরশি শ*য়*তা*নি হাসি দিয়ে নিজের নখ দেখিয়ে বললো,
— চোখ ফু*টো করে দিবো। চোখ তু*লে মার্বেল খেলবো। সে অ*ন্ধ হয়ে থাকবে কিন্তু অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারবে না।
আবরার শু*ক*নো একটা ঢোক গিলে বললো,

— তোমার জামাই কবুল বলেই আগে তোমার নখ কা*ট*বে দেখে নিও।
আবরারের এমন উ*দ্ভ*ট কথা শুনে রাগের মাঝেও ফিক করে হেসে দিলো আরশি। হাসতে হাসতেই বললো,
— এসব চি*ন্তা ভাবনা আপনার পা*গ*লা মাথা থেকেই আসা সম্ভব।
আরশি কে হাসতে হাসতে দেখে মুচকি হাসলো আবরার। বললো,
— যাক ম্যাডামের রা*গ কমলো তবে। নাহলে কিছুক্ষন আগে যেভাবে ফু*লে ছিলে মনে হচ্ছিলো আর কিছুক্ষন পর ফে*টে না যাও।

আবরারের গা জ্বা*লা*নো কথা শুনে হাসি থামিয়ে দিলো আরশি। চোখ পা*কি*য়ে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার আরশি কে পা*ত্তা না দিয়ে এদিক ঐদিকে তাকাতে লাগলো আর আপন মনে গুনগুন করতে লাগলো।
কিছু সময় যেতেই আবরার নিজের ড্রাইভার কে বললো গাড়ি থামাতে। আরশি উইন্ডো দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে গাড়ি থামিয়েছে আবরার। এটা সেই রেস্টুরেন্ট যেখানে আবরারের এ*ক্সি*ডে*ন্ট হতে যাচ্ছিলো। আবরার গাড়ি থেকে নেমে আরশি কেও বললো নামতে। আরশি নেমে জিজ্ঞাসা করলো,

— এখানে কেনো গাড়ি থামালেন?
আবরার পকেটে হাত গুজে বললো,
— রেস্টুরেন্টে মানুষ কি করতে আসে? খেতে আসে অবশ্যই? আমিও খেতে এসেছি। প্রচুর ক্ষু*ধা লেগেছে। সেই সকালে দুটো ব্রেড খেয়েছি আর এখন পর্যন্ত না খেয়ে আছি। এখন না খেলে আর শরীর চলবে না। তাই আগে পেট ভ*রে পেটের শান্তি অর্জন করি তারপর কাজ কর্ম করবো।

আবরারের মুখে ক্ষু*ধা*র কথা শুনে আরশির ও পেটে গু*ড় গু*ড় করে উঠলো। সেও সকালে পাতলা একটা রুটি খেয়েছে। আর এখন পর্যন্ত না খেয়ে আছে। এখন আবরার তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেলে কিভাবে স*হ্য করবে সে? আরও ক্ষু*ধা বে*ড়ে যাবে। আর এতো বড় রেস্টুরেন্ট এ খাবারের দাম ও অনেক বেশি। তার পক্ষে aff*ord করা সম্ভব নয়। তাই আরশি আবরার কে বললো,
— আপনার যখন ক্ষু*ধা লেগেছে আপনি গিয়ে খেয়ে আসুন। আমি গাড়িতেই অপেক্ষা করছি।
আরশি দ্রুত ঘুরতেই আবরার বলে উঠলো,

— মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি তুমি যে আমার পিএ তা কি ভু*লে গেছো? তোমার কাজ আমার কথা শোনা, আমার সব কিছুর খেয়াল রাখা। আমি যা বলবো তাই করা। এখন আমার ভিতরে গিয়ে যদি কিছুর দ*র*কার পড়ে তাহলে? তাই আর কথা না বাড়িয়ে আমার পিছে পিছে এসো।
আরশি মুখ টা ছোট করে আবরারের পিছু নিলো। ভিতরে ঢুকে আবরার কর্নারের একটা টেবিল দ*খ*ল করে নিলো। আরশি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,

— দাঁড়িয়ে আছো কেনো মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? বসে পড়ো। আমার খেতে সময় লাগবে।
আরশি চুপচাপ বসে পড়লো। আবরার মেনু দেখে অনেকগুলো খাবার অর্ডার করলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই সব খাবার চলে আসলো। এতো খাবার দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো আরশি। এতো খাবার আবরার কি করে খাবে ভাবতে লাগলো সে। তার উপর বাহারি বাহারি খাবারের ঘ্রাণ নাকে এসে পৌঁছাতেই *ক্ষুধা আরও কয়েক গুন বে*ড়ে গেছে আরশির। সে দ্রুত মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলো। ক*রু*ন অবস্থা তার। বসে বসে এখন খাবারের ঘ্রাণ স*হ্য করতে হবে। আবরার নিজের প্লেটে খাবার নিতে নিতে বললো,

— নাও শুরু করো।
আরশি বুঝতে না পেরে আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো,
— কি শুরু করবো?
আবরার বললো,
— খাওয়া শুরু করবে।
এতো এতো ক্ষু*ধা লাগা সত্ত্বেও আরশি একটা ঢো*ক গি*লে বললো,
— আপনার ক্ষু*ধা লেগেছে আপনি খান। আমি কেনো খেতে যাবো?
আবরার বি*র*ক্ত কণ্ঠে বললো,

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ২১

— সব কিছুতেই ঝা*মে*লা করা লাগে তোমার? এখন আমি একা একা খাবো আর তুমি বসে বসে আমার খাবারে নজর দিবে। পরে যদি আমার পেট খা*রা*প হয়?
আরশি রা*গে ফোঁ*স করে উঠলো। সে আবরারের খাবারে নজর দিবে? সে? আরশি রা*গে গ*জ*গ*জ করতে করতে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো এমন সময় তার কাঁধে কেউ একজন হাত রাখলো।

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ২৩