তোমাতে বিভোর সিজন ২ শেষ পর্ব || Sapna Farin

তোমাতে বিভোর সিজন ২ শেষ পর্ব 
Sapna Farin

–“আপনার সাথে আমার অনেক জরুরি কথা আছে।ফোনে সবকিছু বলা সম্ভব না।দয়া করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কোন রেস্টুরেন্টে আমার সাথে দেখা করেন।এখানে আপনার এবং আপনার কাছের মানুষের জীবনের প্রশ্ন।”
–অচেনা ব্যাক্তি ফোনের অন্যপাশে থেকে দ্রুত কথা গুলো বলে।ছোট করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।তখন রুদ্র তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে।

–“যত্তসব ঝামেলা আমার সাথে হয় কেন বুঝতে পারলাম না?এখানে আমার দোষ কোথায়!পুরনো ঝামেলা শেষ হলোনা।এখানে অন্য ঝামেলা আবির্ভূত হচ্ছে।ভাবা যায়?”
–অচেনা ব্যাক্তি কোন ভ্রুক্ষেপ ছাড়া তাৎক্ষনিক বলে উঠে।
–“দেখেন রুদ্র হেয়ালি না করে,আমার কথা গুলো মন দিয়ে শুনেন আগে।”
–রুদ্র উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“রাখেন আপনার কথা,কে আপনি হ্যাঁ?দিনের বেলায় কি খেয়ে মাতলামি করেন।আমার জীবনে কি কোন কম সম্যসা?সেখানে আবার আবির্ভাব হয়েছে আপনার সম্যসা গুলো।শুনেন মি. ভুল নম্বারে ডায়ায় করেছেন।দয়া করে বিরক্ত করবেন না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“হ্যালো রুদ্র আমার কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করেন।এখানে আপনার স্ত্রী অধরার জীবন জড়িয়ে আছে।”
–“কি অধরা?ভুল করে দ্বিতীয় বার তার নাম নিলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।ফোন রাখেন।কোথায় থেকে এসব অদ্ভুত মানুষ গুলো আবির্ভাব হয় কে জানে।”
–রুদ্র রক্ত বর্ন চোখে ফোন কেটে দিয়ে,ফোন বন্ধ করে।ফোনটা বিছানার মাঝখানে ছুড়ে মেরে।ধপাস করে বিছানার মধ্যে শুয়ে পড়ে।
–অন্যদিকে আরিশ রুদ্র কে নিজের জ্বালে ফাঁসাতে না পেরে,রাগে ফুসে রেস্টুরেন্টে থেকে বেড়িয়ে যায়।তার উদ্দেশ্যে এখন নিজের গন্তব্য এবং অন্য কোন জ্বালে তাকে বন্ধ করা।
–রুদ্র বিছানার মধ্যে শুয়ে চোখ বন্ধ করতে তার চোখের সামনে ভেসে উঠে,তার দু’বছর আগের অতীত গুলো।যে অতীত গুলো রুদ্র কে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে।
–দু’বছর আগের অতীত,

রুদ্র এবং অধরার জীবনে সব ঝামেলার শুরু হয়েছিল এমন একটি ফোন কল নিয়ে।যেখানে মূল ঝামেলার বিষয় ছিলো ধ্রুব।ধ্রুব ছিলো অধরার কলেজের সিনিয়র ভাইয়া।সে পুরো কলেজের মেয়েদের ক্রাশ ছিলো,ঠিক তেমন অধরার ক্রাশ ছিলো।অধরা সবেমাত্র কলেজে উঠেছে কৌশর মন তার।ধ্রুব বলতে শেষ হয়ে যেতো সে।কিন্তু সাহস করে ধ্রুব কে মনের কথা গুলো বলতে পারতো না।ধ্রুব ছিলো তার স্বপ্নের রাজকুমার।সে রাজকুমার আচমকা কলেজে ক্যাম্পাসে তাকে প্রপোজ করে বসে।অধরা খুশিতে আত্নহারা হয়ে তাকে গ্রহণ করে।তাদের এমন কাহিনী কলেজের অনেক দেখেছে এবং সেখানে রুদ্রের বন্ধুর বোন আরিশা ছিলো।সে এসব দেখে তার ভাইয়া নিশানের কাছে সবকিছু বলে দেয়।নিশান তখন রুদ্র কে ফোন করে সবকিছু বলে।যে ধ্রুব ভালো ছেলে না।সে প্লে বয় এবং কাপড় চেঞ্জ করার মতো মেয়েদের চেঞ্জ করে।সময় থাকতে নিজের কাজিন অধরা কে যেন সাবধান করে দেয়।

রুদ্র তখন দেশে এসেছে কিছুদিনের জন্য।আগামী কাল তার জন্মদিন।রুদ্র এসব শুনে ধ্রুবের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে শুনে সবকিছু সত্যি।তখন সে অধরা কে কিছু বলতে গেলে এবং বোঝাতে গেলে সে বুঝতে নারজ।রুদ্র তখন বাধ্য হয়ে।ধ্রুব কে ইচ্ছা মতো মেরেছল সেদিন এবং খুব ভালো করে সাবধান করে দিয়ে এসেছিল অধরা এবং অন্য মেয়েদের থেকে দূরে থাকার জন্য।সে ঘটনা কেন্দ্র করে ধ্রুব এবং অধরার বিচ্ছেদ।তারপর ধ্রুব অন্য কলেজে এবং অন্য শহরে চলে যায়।তখন অধরার মন ভেঙে যায়।সে রিভেঞ্জ নেবার জন্য রুদ্রের নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়।তারপর থেকে সব ঝামেলা শুরু।রুদ্র তাকে রেখে চলে যায়।কিন্তু আভা সবকিছু জানার পড়ে রুদ্র কে ছেড়ে চলে যায়।এসব কিছু কেন্দ্র করে রুদ্রের অধরার বিরুদ্ধে মনের ভেতর এতো বিষ এবং অধরার মনের ভেতর রুদ্রের বিরুদ্ধে এতো বিষ।”

–তখন কারো হাসির শব্দ শুনে রুদ্র অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে আসে।সে বিছানা থেকে হকচকিয়ে উঠে বসতে দেখে।তার ছোট বেলা তার সামনে।ছোট অধরা খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে এবং রুদ্র কে মুখ ভেংচি কেটে বলছে।
–“রুদ্র ভাইয়া আমাকে ধরতে পারবে না।”
–“আচ্ছা অধরা।দেখো রুদ্র তোমাকে কিভাবে ধরে ফেলে।”
–রুদ্র অধরার দিকে ছুটে যাচ্ছে এবং অধরা আড়ালে গিয়ে লুকাচ্ছে।
–এসব দেখে রুদ্র শব্দ করে হেসে উঠে।সে ভুলে গিয়েছিল শেষ কবে সে এভাবে হেসেছিল।
–তখন মূহুর্তের মাঝখানে সবকিছু আড়াল হয়ে যায়।আচমকা রুদ্রের হাসি থেমে যায়।তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।যে অনুভূতি এবং ভালোবাসা গুলো মনের মধ্যে এতো দিন পুষে রেখেছিল রুদ্র অধরার জন্য।মূহুর্তের মাঝে সবকিছু বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে।অধরা ছিলো রুদ্রের প্রথম ক্রাশ এবং প্রথম ভালোবাসা।যে ভালোবাসা গুলো কে নিজের মনের মধ্যে শেষ করে ফেলেছিল।

–রুদ্র সবকিছু ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।অধরার উদ্দেশ্য রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখে।অধরা নিজের রুমে বসে রুদ্র এবং তার ছোট বেলার ছবির ফ্রেম গুলোতে আলতো করে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে এবং চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।এসব দেখে রুদ্র স্তব্ধ হয়ে যায়।তখন অধরার ফোন বেজে উঠলো।অধরা চোখের অশ্রু আড়াল করে।ফোন রিসিভ করে করা কন্ঠে বলে।
–“আহান ভাইয়া কেন আমাকে এতো ফোন করে ডিস্টার্ব করছেন?ঐ মেয়েটি এবং ছেলেটি কে ছিলো আপনার জেনে কি হবে।তারা ছিলো রুদ্রের অতীত, অধরা রুদ্রের বর্তমান।আমার আকাশের সব কালো মেঘ দূর হয়ে গেছে।আহান ভাইয়া দ্বিতীয় বার আমাকে ফোন করবেন না?ভুলে যাচ্ছেন অধরা রুদ্রের স্ত্রী।আমাদের নিজেদের মতো করে ভালো থাকতে দিবেন দয়া করে।কেন আমাদের মাঝখানে ঝামেলা করতে আসেন।”

–আহান স্তব্ধ হয়ে যায়।তার কাছে থেকে ধপাস করে ফোন পড়ে যায়।সে ফ্লোরে হাটু গেরে ধপাস করে বসে পড়ে ফিসফিস করে বলে।
–“অধরা তুমি মুক্তি আহানের কাছে থেকে।তুমি ভালো থাকো তোমার মতো করে।আহান কখনো তোমার জীবনে বাধা হয়ে আসবেনা।”
–অধরা ফোন কেটে দিয়ে রুদ্রের ছবি বুকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে।রুদ্র তার এমন অবস্থা দেখে চলে যাচ্ছিলো।তখন অধরা নিজের চোখের অশ্রু মুছে বলে।
–“রুদ্র ভাইয়া।”
–রুদ্রের বুকের ভেতর তোড়জোড় শুরু হয়ে।সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।অধরা ছুটে গিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে বলে।
–“একটা সুযোগ দিবে রুদ্র অধরা সবকিছু ঠিক করে দিবে।”
–রুদ্র স্তব্ধ হয়ে যায় কি বলবে বুঝতে পারছেনা।

–আরিশ বাসায় ফিরতে আভা ছুটে তার রুমে যায় এবং উত্তেজিত হয়ে বলে।
–“আরিশ ভাইয়া কোথায় ছিলে তুমি সারাক্ষণ।তোমার ফোন বন্ধ কেন?”
–আরিশ কোন ভ্রুক্ষেপ ছাড়া বলে উঠে।
–“তোমার জন্য রুদ্র কে নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম।কিন্তু আরিশ লুজার আজকে হেরে গেলো।কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি রুদ্র তোমার কাছে থাকবে।”
–“মানে?তুমি ঠিক আছো আরিশ ভাইয়া।রুদ্র বিবাহিত।রুদ্র কে আভা ভালোবাসে।ভালোবাসে বলে দু’বছর আগে তার জীবন থেকে চলে গিয়েছিল।আজকে তার ভালোর জন্য আভা নিজের জীবনে মুভ অন ল করে দিব্যি ভালো থাকবে।তুমি তাড়াতাড়ি আমাদের যাবার ব্যবস্থা করো।”
–আরিশ খুশিতে আত্নহারা হয়ে বলে
–“তুমি আমার সাথে যাবে।”
–“হ্যাঁ,ভালোবাসার যুদ্ধে হেরে গিয়েছি বলে।নিজের জীবন যুদ্ধে হেরে যাবো।সময়ের সাথে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
–“আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাড়াতাড়ি আমাদের যাবার ব্যবস্থা করছি।”

–তখন রুদ্র অধরা কে টেনে নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়।রুদ্র এবং অধরা পাশাপাশি বসে আছে,নির্জন জায়গায় সচ্ছ নদীর ধারে ঘাসের উপর পানিতে পা ডুবিয়ে।অধরা রুদ্রের বাহু ধরে তার কাধেঁ মাথা রেখে বসে আছে।তখন রুদ্র নীরবতা কাটিয়ে বলে।
–“তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে অধরা।”
–অধরা রুদ্রের ঠোঁটের উপরে আঙুল রেখে বলে।
–“রুদ্র তোমাকে কোন কৈফত দিতে হবেনা।অধরা সবকিছু জানে।আজকে যখন রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।তখন নিচে এসে দেখলাম নিশান ভাইয়া এসেছে।তারপর সে আমকে আলাদা করে সবকিছু খুলে বলে।জানো কথা গুলো শুনে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছিলো।আমাকে একটা সুযোগ দিবে সবকিছু ঠিক করে দেবো।”

তোমাতে বিভোর সিজন ২ পর্ব ৯

–রুদ্র আলতো করে অধরার কপালে চুম্মো খেয়ে, তার হাত দুটি শক্ত করে ধরে বলে।
–“এভাবে সারাজীবন পাশে থাকবে তো শ্যাম কন্যা।”
–অধরা ছলছল নয়নে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে।
–“হুম।তোমাতে বিভোর অধরা।”
–“না,রুদ্র তোমাতে বিভোর।”
–“ঠিক আছে তুমি আমাতে বিভোর এবং আমি তোমাতে বিভোর।”
–তারা দু’জন অট্টহাসি দিয়ে নিজেদের শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।মূহুর্তের মাঝখানে সবকিছু আড়াল হয়ে যায়।শুরু হয় তাদের ভালোবাসার অধ্যায় এবং তোমাতে বিভোর হবার অধ্যায়

#সমাপ্ত

(অবশেষে ধন্যবাদ তাদের যারা আমাকে সাপোর্ট করেন এবং যারা আমার লেখালেখি কে ভালোবাসেন।অনেক ধৈর্য চেষ্টা এবং ভালোবাসা দিয়ে আমার প্রত্যেকটা লেখা।প্রত্যেকটা লেখার মধ্যে নেগেটিভ এবং পজিটিভ দিক আছে।আমার চেষ্টা থাকে সব সময় পজিটিভ দিক গুলো তুলে ধরার।কিন্তু এখানে কিছু পাবলিক নিজ দ্বায়িত্ব আমার লেখার নেগেটিভ দিক গুলো খুঁজে বেড় করে।সামান্য কমেন্টে করে খোঁচা মেরে চলে যায়।তাদের সামান্য খোঁচা দেয়া কথা গুলো কারো মনে কতোটা দাগ লেগে যায় তারা ভুল করে চিন্তা করেনা।তারা বুঝতে পারেনা তাদের সাথে তর্কে জড়ানো বোকামি ছাড়া কিছুনা।এখানে সবার কাছে আমার লেখা ভালো লাগবে এমন না।এখানে অফশন আছে।আপনার যার লেখা ভালো লাগেনা দয়া করে ইগ্নোর করেন।কিন্তু ইগ্নোর না করে তার পিছনে পড়ে থাকবেন।মাঝেমধ্যে মনে হয় লিখালিখি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।কিন্তু পারিনা সব কিছু সহ্য করে সেখানে ফিরে আসা কোন টানে।শেষে অভিযোগ গুলো জমা করে যাবেন।হ্যাপি রিডিং)

(লেখাঃ Sapna Farin) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং এই গল্পের সিজন ১ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন