তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ২০

তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ২০
নুশা আহমেদ

থম থম পরিবেশ নুশার বাবা খুব চিন্তিত হয়ে বসে আছে ছোফায় উনার পাশে বসে আছে নুশার মা তারিন বেগমও নুশার বাবার ঠিক সামনে বসে আছে সায়ান আর নিশাত নুশা তো সেই কোন সময়ই লজ্জা পেয়ে রুমে চলে গেছে। নুশার বাবা ভেবে পাচ্ছে না সায়ানের প্রস্তাবে কি করবেন উনি কিছুই বুঝতে পারছেন না৷। তার কি করা উঠিত অনুচিত সেটাই যেনো উনার মাথায় এখন কাজ করছে না। সবাই সায়ানের প্রস্তাবের উওরের আশায় নুশার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে কি বলে উনি। এদিকে সায়ানের অবস্থা নাজেহাল হাত পা যেনো কাঁপা কাপি করছে পরিক্ষার রেজাল্টের সময়ও মনে হয়না রেজাল্টের জন্য এতো চিন্তা করেছে সে কিন্তু আজকে নুশার বাবার সামনে যেভাবে চিন্তিত হয়ে বসে আছে সে।
নুশার বাবা খুব চিন্তিত হয়ে চোখ থেকে চশমাটা খুলে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,

-নুশাকি তোমার প্রস্তাবে রাজী,,,,?
সায়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তারিন বেগম বলে উঠলো ,,,
-আপনি রাজি থাকলে তো নুশাও রাজি ।
নুশার আব্বু তারিন বেগমের দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আবার সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-সায়ান বাবা তুমি তো জানো আমি নিশিকে আমার এক বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্য মনে হয় নিশির সাথে ছিলো না তাই হয়তো হয়নি বিয়ে টা এতে অবশ্য আমি একটু লজ্জিত কারন আমার বন্ধুকে আমি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি। তখন কিন্তু আমার বন্ধু বলেছে নিশিকে না নিতে পারলেও নুশাকে যাতে তাদের হাতে তুলে দেই আমার আমার বন্ধুর ছেলেও নাকি নিশির থেকে নুশাকে বেশি পছন্দ করেছে ।
নুশার বাবার কথা শুনে সায়ানের পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি গুলো আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। সায়ান সেই ভয়টাই পাচ্ছিলো সেটাই হয়ছে । সায়ানকে চুপ থাকতে দেখে নুশার বাবা আবার বলে উঠলো,,

-দেখো সায়ান বাবা নিশি আর রিফাত তো দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে তাই না চাইতেও তাদের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। কারন তাদের বিয়ে টা না হলে তিন তিনটা সম্পর্ক নষ্ট হবে সেটা তো তুমিই আমাকে বুঝিয়ে ছিলে মনে নাই তোমার।এখন দেখো তুমি শুধু নুশাকে ভালোবাসো কিন্তু আমার তো মনে হয় নুশা তোমাকে ভালোবাসে না তাই এখানে তিনটা জিবন নষ্ট হবে না একটু বোঝার চেষ্টা করো তুমি। তুমি ভুলে যাও নুশাকে আমি জানি তোমার মতো ছেলে পাওয়া লাখে একটা। আমি তোমাকে সত্যি হাত ছাড়া করতে চাইনি তোমাকে আমার খুবই পছন্দ আমার যদি আরেকটা মেয়ে থাকতো তাহলে সেটাকে আমার বন্ধুর ছেলের জন্য আর নুশাকে তোমার জন্য করে দিতাম কিন্তু এখন তো আমার হাত পা বাধা কি করবো বলো।।

এদিকে সায়ানের কানে শুধু একটা কথা রিপিট করছে সেটা হলো নুশার বাবার ” তুমি ভুলে যাও নুশা কে” এই কথাটা ।
সায়ান কোনো কথা না বলেই চুপচাপ বসা থেকে উঠে দাড়ালো তারিন বেগম নুশার বাবা নিশাত এবার সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে সায়ানের উওরের আশায়। কিন্তু সায়ান সবাইকে অবাক করে দিয়ে কোনো কিছু না বলেই বাহিরের দিকে চলে গেলো নিশাত পিছন থেকে ডাক দিলেও সায়ান কোনো রকম শব্দ করেনাই। সায়ান বাড়ি থেকে বের হতেই নিশাতও পিছু পিছু আসলো ।

সায়ান গাড়ির কাছে গিয়ে কি মনে করে যেনো ছাঁদের দিকে তাকালো। সায়ান তাকাতেই দেখে নুশা ছাদের রেলিং ধরে সায়ানের দিকেই কেমন জানি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেনো তার চোখ জোরা সায়ানকে কিছু বলতে চায় । সায়ান আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকতো সেই দুই জোরা চোখের দিকে কিন্তু নিশাতের ডাকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে করলো । নিশাত দৌড়ে এসে সায়ানের পাশে দাড়িয়ে অবাক কন্ঠে বলে উঠলো ,,,

– সায়ান ভাই তুমি এতো সহজে হার মেনে নিলে এই তোমার আমার নুশা বুড়ির উপর ভালোবাসা ।
সায়ান নিশাতের কথা শুনে নিচু মুখটা উচু করে কপাল টা কুঁচকে নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
সায়ানকে এভাবে তাকাতে দেখে নিশাত আবারো বলে উঠলো,,
– কি হলো ,, বলছো না কেনো এমন বোবার মতো চুপ করে আছো কেনো। তুমি সত্যিই নুশাকে ভুলে যেতো পারবে এই তোমার নুশার প্রতি ভালোবাসা ।

নিশাতের কথা শুনে কুচঁকানো কপালটা আরেকটু কুচঁকিয়ে নিশাত কে বলে উঠলো,,
-এক মিনিট নিশাত, আমি কখন বললাম আমি আমি নুশাকে ভালোবাসি না। আর যেখানে নুশা পুরাটাই আমার সেখানে আমার হার মানা আর না মানার কি আছে ।
-তাহলে বাবা যে বলেছে বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে৷ নুশার বিয়ে দিবে ।
সায়ান এবার কুঁচকানো কপালটা আগের মতো ঠিকঠাক করে মুখের মধ্যে রহস্য জনক একটা হাসি দিয়ে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,,

– আংকেল তো বলেছে কিন্তু বিয়েটাতো হয়নি ঐ ছেলের সাথে তাই না। আর নো চিন্তা নুশার জামাই আমিই হবো তাই চিল কর প্যারা না নিয়ে । আমি তো এখন শুধু চুপচাপ বেরিয়ে এসেছি নুশার জন্য আমিও দেখতে চাই নুশা কি করে। নুশাকি আমাকে নিজে থেকে চায় নাকি আমার জোর করে নুশাকে আমার করতে হয় কোনটা ।
-মানেহ কি বলো কিছুই তো আমার মাথায় কাজ করছে না।
-এখন না করলেও আস্তেধীরে সব কাজ করবে এখন কয়েকটা কাজ দেই সেগুলো ভালো করে কর বুঝলি।
-কাজটা কি,,?

সায়ান আবার ছাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখলো নুশা এখনো দাঁড়িয়ে আছে নাকি। হ্যাঁ নুশা এখনো দাঁড়িয়ে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে তাদের কথা না শুনলেও তাদের দি
কথা গুলো বুঝার চেষ্টা করছে কি কথা হচ্ছে এদের দুই জনের মধ্যে । সায়ানের চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিশাতও সে দিকে তাকাতেই দেখলো নুশা ছাদে রেলিং এর পাশে দাড়িয়ে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে ।
সায়ান নুশার দিকে তাকিয়েই একটা হাসি দিয়ে নিশাতের দিকে তাকালো তার পর বলতে লাগলো কয়েকটা কথা যেটা শুনে নিশাতও সায়ানের থেকে বেশি হাসতে লাগলো , হাসতে হাসতে বলে উঠলো,,

-সত্যি সায়ান ভাই তোমার অনেক বুদ্ধি ।
-আচ্ছা তাহলে আসি আমি যেটা বলেছি সেটা কিন্তু ভালো মতো করবি আর ফুপ্পিকেও তার কাজটা বুঝিয়ে দিবি৷ আর আমি নিশিকে আর রিফাতকে সব বুঝিয়ে দিবো।
সায়ানের কথা শুনে নিশাত হাসতে হাসতে বলে উঠলো,,

– ok brother no tention শুধুই enjoy
নিশাতের এমন অর্ধেক ইংরেজি অর্ধেক বাংলা বলা শুনে সায়ান উপরে একবার ছাদের উপর চোখ রেখে নিশাত কে বায় বলে বাইকে উঠে বসলো । বাইকে বসার পরও এক পলক ছাদে দাড়ানো মায়াবী কন্যার চোখের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টাট করলো আর নিজের গন্তব্যের দিকে চলে গেলো। সায়ান চলে যেতে নিশাতও একবার ছাদে নুশার দিকে তাকিয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলো নিজের কাজটা কমপ্লিট করতে।

এদিকে নুশা ঘরে বসে থেকেই ড্রইং রুমের সবার সব কথাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে । সে তো অবাক হয়েছে সায়ানের আজকের ব্যবহারে যে ব্যাক্তিটা তাকে আর কিছু ভাবতে পারছে না নুশা ভিতর থেকে কান্না আসছে ইচ্ছে করছে গলা ফাটিয়ে কান্না করতে, কিন্তু কেনো তার এতো কান্না পাচ্ছে বাবার বন্ধুর সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ায় নাকি সায়ানের আজকের এমন ব্যবহারে সেটাই বুঝতে পারছে না।

সায়ান কে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে নুশাও দৌড়ে ছাদের রেলিং কাছে চলে আসে সায়ান কে দেখতে তার অবস্থা কি রকম কিন্তু এখানে এসে তো নুশা সায়ান কে দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে কারন সায়ানের পিছনে নিশাতও আসে আর দুই জনই খুব হাসাহাসি করে কথা বলছে যেনো খুব খুশির কোনো কথা হয়েছে । নুশার তো আজকের সায়ান কে দেখে অবাক হচ্ছে সায়ান কি আদো নুশাকে ভালোবেসেছে নাকি সবই নাটক ছিলো। নাহ আর মাথায় কোনো কাজ করছে না, মাথায় শুধু একটা জিনিসই ঘুরাঘুরি করছে সেটা হলো সায়ান কেনো নুশার বাবাকে জোর দিয়ে বললো না নুশাকে বিয়ে করার কথা। কেনো সায়ান খুব সহজেই মেনে নিলো নুশাকে অন্য কারো হতে দিতে।

নুশার এখন খুব ইচ্ছে করছে এখন বৃষ্টি নামুক আর সেই বৃষ্টির পানিতে তার চোখের নোনা জল গুলো ধোয়ে যাক।
নুশা ছাদে আরো অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে নিচে নেমে রুমে চলে গেলো।
এদিকে সায়ান সেই বাটন মোবাইল থেকে বেশ কয়েকটা ফিঙ্গার ছাপ কালেক্ট করেছে। এখন তার সন্দেহ জনক কয়েকজনের সাথে মিলে গেলেই সে খুব সহজে ধরতে পারবে ।

তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ১৯

আর সায়ানের সেই সন্দেহ জনক লোক মোট পাচ জন আর সায়ান চারজনের পিছনে চারটা লোক লাগিয়ে দিয়েছে । আর স্পেশাল একজনের পিছনে নিশাতকে লাগিয়ে দিয়েছে যেভাবেই হোক নিশাত যেনো ঐ স্পেশাল লোকটার ফিঙ্গার কালেক্ট করতে পার৷ তার জন্য ভয়াবহ থ্রেট দিয়েছে থ্রেটটা হলো নিশাত পারলে নিশাতের রিলেশনশিপ টা বিবাহশিপে নিয়ে যাব আর যদি না পারে তাহলে রিলেশনশিপ টা ব্রেকাপশিপে নিয়ে যাবে।

তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব ২১