তোমার দ্বিধায় বাঁচি গল্পের লিঙ্ক || মুন্নি আক্তার প্রিয়া

তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ১
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

বিয়ের তিনদিনের দিন নিতু জানতে পারল জিয়ানের পূর্বে একটা বিয়ে হয়েছিল এবং সে ডি-ভো-র্সি। এই সত্যিটা যখন জানল তখন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না সে। নিতু বুঝতেই পারছে না, তার সাথেই কেন এমনটা হবে? তার সবচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছিল নিজের পরিবারের ওপর। তারা কী খোঁজ-খবর নেয়নি? ভালো ছেলে পেল, আর ওমনি বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে রাগ হচ্ছে নাকি কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছে না সে। শুধু অপেক্ষা করছে জিয়ানের ফিরে আসার।

ঘণ্টাখানেক পর জিয়ান বাড়িতে আসে। এই সময়টুকু নিতু দরজা বন্ধ করে ঘরে ছিল। শ্বশুর, শাশুড়ি, ননোদ কারও সাথেই কোনো কথা বলেনি। দরজা খুলে জিয়ানের হাতে বেলী ফুলের মালাটা দেখতে পেল। সে প্রতিদিনই বাইরে থেকে আসার সময় নিতুর জন্য ফুল, চকোলেট নিয়ে আসবে। গতকালও নিতু তার হাতে প্রিয় ফুল দেখে একই সাথে আনন্দিত এবং লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠেছিল। তবে আজ তার মাঝে রাগ ব্যতীত আর কিছুই নেই। জিয়ান নিতুকে জড়িয়ে ধরতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে নিতু দু’পা পিছিয়ে গেল। রাগে ফুঁসে উঠে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“একদম আমার সামনে আসবেন না বলে দিলাম। মি’থ্যা’বা’দী, প্র’তা’র’ক!”
জিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। নিতু কথা বলতে গিয়ে খেয়াল করল কান্নায় কণ্ঠস্বর রোধ হয়ে রয়েছে তার। জিয়ান বুঝতে পারেনি এমনভাবে বলল,
”এসব কী বলছ?”
”কী বলছি? বুঝতে পারছেন না তাই না?”

বলেই নিতু বালিশের নিচ থেকে ডি-ভো-র্স পেপার আর কিছু ছবি জিয়ানের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলল,
”এগুলো বোধ হয় লুকিয়ে রাখতে ভুলে গেছিলেন আপনি। আপনারা প্রত্যেকে আমায় ঠকিয়েছেন।”
জিয়ান চমকে যায় এসব দেখে। এগুলো নিতুর কাছে এলো কী করে? তবে সে কিছু বলতে পারল না। অপরাধীর মতো মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইল। নিতু আলমারি থেকে কাপড়-চোপড় বের করে লাগেজে ভরতে শুরু করেছে। প্র’তা’র’কের সাথে সংসার করার তো কোনো মানেই হয় না। এই পর্যায়ে জিয়ান নিতুর হাত ধরে বলে,

”কাপড় লাগেজে ভরছ কেন? কোথায় যাবে তুমি?”
নিতু এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিল। কান্না করতে করতেই বলল,
”চলে যাচ্ছি এই বাড়ি থেকে। আপনার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
”আমার কথা শোনো।”
”কোনো কথাই আমি শুনব না। আগে শোনানোর কথা মনে হয়নি? কেন ঠকালেন আমায়? কেন লুকিয়েছেন আগের বিয়ের কথা?”

“তুমি আগে শান্ত হও। আমি তোমাকে সব বলছি।”
“আপনি আর একটা কথাও বলবেন না আমার সাথে।”
চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বাড়ির লোকজন ওদের রুমে চলে এসেছে। নিতু তখনও কাপড় গোছাচ্ছিল। জিয়ানের বাবা জুবায়ের রহমান তখন জানতে চাইলেন,
“কী হয়েছে? কাঁদছ কেন মা?”

কিছু কড়া কথা বলতে গিয়েও নিতু বলতে পারল না। দমে গেল। কান্না গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। অসহায় লাগছিল তার নিজেকে। ওর থেকে জবাব না পেয়ে তিনি জিয়ানকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কী হয়েছে রে? বউ মা কাঁদছে কেন?”
জিয়ান মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিতু ততক্ষণে লাগেজ নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। পথ রোধ করে দাঁড়ায় জিয়ান। মিনতি করে বলে,

“প্লিজ নিতু! এভাবে চলে যেও না।”
“খবরদার! আমার সামনে কোনো নাটক করবেন না। পথ থেকে সরে দাঁড়ান।”
“কী হয়েছে মা বলো না?” নরম গলায় শুধালেন আফরোজা বেগম।
নিতু কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“এভাবে আমায় না ঠকালেও পারতেন আপনারা।”
নিতুকে আর কেউই আটকে রাখতে পারল না। সে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় বাড়ি থেকে। জুবায়ের রহমান ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন,

“সব জেনে গেছে না? তোকে আগেই বলেছিলাম,লুকাস না কিছু। এখন হলো তো?”
ছেলেকে গালমন্দ করে সবাই চলে যায়। এখন শুধু জিয়ানের ভাবি মিনা দাঁড়িয়ে আছে। সে বিদ্রুপ করে বলে,
“এজন্যই বলে অতি বাড় বেড়ো না, ঝড়ে পড়ে যাবে!”
“তুমিই ডিভোর্স পেপার আর ছবিগুলো আলমারিতে রেখেছ তাই না ভাবি?” চোখ-মুখ শক্ত করে বলল জিয়ান।
মিনা তাচ্ছিল্যর স্বরে বলে,

“বুঝতে কি তোমার আপত্তি আছে?”
“কেন করলে তুমি এমনটা?”
“ওমা! জানো না বুঝি? আমার বোনের জীবনটা ন’র’ক বানিয়ে দিয়ে তুমি হাসি-খুশি থাকবে তা কী করে হতে দেই আমি?”
“তোমার বোনের ন’র’ক জীবনের জন্য তো আর আমি দায়ী নই। সে আমাকে ছেড়ে গেছিল; আমি না।”
“ভুল বুঝতে পেরে তো ফিরেও আসতে চেয়েছিল। কী হতো একটা সুযোগ দিলে? সে যাই হোক, প্রথম বিয়ের খবরটা নিতুর থেকে লুকিয়ে ভালোই করেছ। নয়তো নিতুকে কী করে আর সরাতাম?”

“কাজটা তুমি ভালো করোনি ভাবি।”
মিনা হাসে। হাসতে হাসতে বলে,
“তুমিও আমার বোনের জীবনটা নষ্ট করে ভালো করোনি।”

মিনা চলে যাওয়ার পর জিয়ান বিছানায় বসে পড়ে। তার মাথা কাজ করছে না। কী করবে সে এখন? বিয়ের কথা লুকিয়ে যে চরম অন্যায় আর বোকামি করে ফেলেছে জিয়ান এটা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে। সে ব্যস্ত হয়ে নিতুকে ফোন করে। ফোন বন্ধ। কোথায় গেল নিতু? বাপের বাড়ি? তাই-ই হবে। জিয়ানও তৎক্ষণাৎ ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে যায়।
নিতুদের বাড়ি গিয়ে দেখল নিতু এই বাসায় আসেনি। নিতুর মা মমতা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,

“কিছু হয়েছে?”
জিয়ান মিথ্যে বলল,
“না, মা। নিতু বলেছিল শপিং-এ যাবে। আসার সময় এই বাসায় আসবে। তাই দেখতে আসলাম।”
“ওহ। আচ্ছা বাবা বসো তুমি।”
“না, মা। বসব না। নিতু মনে হয় মার্কেটে আছে। আমি যাই।”

জিয়ান বাইরে এসে হাঁপাচ্ছে। ভয়ে তার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। কোথায় চলে গেল নিতু? সে তার পরিচিত নিতুর কয়েকজন বন্ধু, বান্ধবীকে ফোন করল। তবে আশানুরূপ কোনো তথ্য কারও থেকেই পায়নি। নিতু এদের কারও বাসায় তো যায়-ই নি এমনকি রিসেন্টলি কোনো যোগাযোগও করেনি। বেস্ট ফ্রেন্ডও জানে না কিছু। এবার সে চারদিকে শূন্য দেখছে। পৃথিবী দুলছে তার।

সে পথে পথে হেঁটে নিতুকে খুঁজছে। এভাবে কি একটা মানুষকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব? এর আগে ফোন নাম্বার খোলা থাকলেও, এখন ফোন সুইচড অফ বলছে। দুশ্চিন্তায় তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। ক্লান্ত হয়ে সে পথে এক সাইডে বসে পড়ে। সারা শরীর ঘেমে একাকার। তখনই তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। ফোন রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি স্বর ভেসে আসে,

“এখনও সময় আছে জিয়ান। আমি এখনও তোমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি। প্লিজ! আমার কাছে ফিরে এসো।”
কণ্ঠটি জিয়ান চেনে। তার এক্স ওয়াইফ মাহিরা।

বিঃদ্রঃ-১ মনটা ভীষণ বিষণ্ণ। বিষণ্ণ মন নিয়ে কীভাবে যেন লিখে ফেললাম গল্পটা। ভাবলাম শেয়ারও করে ফেলি। তাই পোস্ট করে ফেললাম।
বিঃদ্রঃ-২ রাত নয়টায় যেদিন তুমি এসেছিলে-২ এর পরবর্তী পর্ব পেয়ে যাবেন।]

তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব ২