তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ২৯

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ২৯
Israt Bintey Ishaque

আবহাওয়া গুমোট। নিঃশব্দ ঘরে মাথার উপরে তিন পাখার ফ্যানটা যেন বিকট শব্দ তুলছে। শামীম ওসমান সাহেব নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। আর নজরাত একটু ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চেয়ে আছে রাদের কঠিন মুখশ্রীর দিকে। রাদের দৃষ্টি অতিশয় কঠোর মনোভাব সম্পন্ন। এতে যেন নজরাত এর বুক ধড়ফড় করতে লাগল।

একটু সাহস যুগিয়ে খুব ম্লান একটু হেসে নজরাত যখন কিছু বলতে যাবে তখন রাদ ভ্রু কুঁচকে যতদূর সম্ভব কঠোর মুখভঙ্গি করে বলল,
–” তুমি কি আমাকে অপমান করছো? বুঝতে পারছি না আমি, যত‌ই এসব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি তত‌ই তুমি কোন না কোন কারণ দেখিয়ে এই প্রসঙ্গ টেনে আনছো! কিন্তু কেন? কি চাইছো তুমি?
নজরাত কাচুমাচু মুখে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–” আপনি ব‌ই টা একটু দেখুন..
রাদ নজরাত এর মুখের কথা টেনে নিয়ে চাপা রা’গের সাথে বলল,
–” কি দেখবো আমি? আর কি দেখার বাকি আছে?
রাদ শাহমাত এর কন্ঠস্বর সামান্য কম্পিত শুনাচ্ছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে সে এখানে এসে যেন মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে। তবুও নজরাত তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে একটু চেয়ে থেকে বলল,

–” প্লিজ একটু মনোযোগ দিয়ে দেখুন ব‌ইটা?
রাদ তার দিকে বিরক্তিতে ভ্রু জোড়া কুঁচকায়। তখন নজরাত আবারো বলে, প্লিজ?
রাদ আর আপত্তি না করে ব‌ই টার দিকে লক্ষ্য করে। খুব সুন্দর মলাটে বাঁধাই করা হয়েছে ব‌ই টা। নাম “#তোমার_নিরব_অভিমানীনি”! লেখিকা “রুপকথা”!

প্রথম তিন পেইজ উল্টে লক্ষ্য করল উৎসর্গ। তারপর আবার পেইজ উল্টাতে নিলে নজরাত বাধা দিয়ে বলল,
–” আপনি কিছু মিস করে যাচ্ছেন! ভালো করে খেয়াল করুন।
রাদ পুনরায় পেইজটি উল্টায় সেখানে লেখা,
উৎসর্গ

আমার হাজার হাজার পাঠকদের ভিরে একজন পাঠক, যে আমার লেখাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। আর লেখাকে ভালোবেসে আমাকে না দেখেই ভালোবাসে এসেছে। যে ভালোবাসার শুরু আছে কিন্তু অন্ত নেই। সে আর কেউ নয় আমার জীবন সঙ্গি! আমার দ্বিতীয় ব‌ই “তোমার নিরব অভিমানিনী” আমার স্বামী রাদ শাহমাত এর নামেই উৎসর্গ করলাম। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা তাকে নেক হায়াত দান করুন, আমিন।

এতটুকু পড়ে রাদ এর নেত্রযুগল টকটকে লাল রঙা বর্ণ ধারণ করে। অনিমেষ চাহনিতে চেয়ে থাকে নজরাত এর দিকে। নজরাত তার ডাগর ডাগর আঁখি মেলে সেই চাহনির রেশ উদঘাটন করতে বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
মিনিট খানেক পর রাদ ধরা গলায় বলল,

–” এখানে আর কোন কাজ আছে তোমার? যদি না থাকে তবে চলো!
নজরাত দ্বিরুক্তি না করে বলল,
–” জ্বি চলুন?

যাওয়ার পথে রাদ হাতের ব‌ইটা হাতে নিয়েই চলল। লম্বা লম্বা পা ফেলে গাড়িতে গিয়ে বসে সে। তাকে অনুসরণ করে নজরাত ও গিয়ে বসে। ড্রাইভার কোথায় যাবেন জিজ্ঞাসা করতে রাদ শাহমাত একটা ঠিকানা বলে দিল তাকে। ঠিকানা টা অচেনা নজরাত এর কাছে। তবুও কিছু বলল না চুপ করে বসে রইল।

কিয়ৎক্ষন পর রাদ বাসায় কল করে তার মাকে বলল, আমরা আজকে বাসায় ফিরবো না!
এতটুকু বলতেই নজরাত সকৌতুকে তাকায় রাদ এর দিকে। তখন রাদ আবারো বলে, আমরা ঢাকার বাহিরে যাচ্ছি! দুশ্চিন্তা করো না তুমি। আচ্ছা আমি ওর খেয়াল রাখব ইনশা আল্লাহ। সাবধানে থেকো তোমরা।
তারপর ফোন রেখে দেয়। নজরাত মুখচোখে বিহ্বল ভাব ফুটিয়ে তোলে বলল,

–” আমরা কোথায় যাচ্ছি?
উত্তরে রাদ রা করল না। স্থির দৃষ্টিতে সামনের দিকে চেয়ে রইল। নজরাত জবাব না পেয়ে দৃষ্টি নত করে বসে রইল।

বেলা গড়িয়ে দুপুর হতে চলল। গাড়ি তার আপন গতিতে ছুটে চলেছে। গাড়িতে তিন জনেই নিরব যেন ঘোর কিছু ঘটে গেছে।
প্রায় চার ঘণ্টা পর গাড়ি এসে থামে একটা বিরাট বড় রিসোর্ট এর সামনে। রাদ নজরাত গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ানোর পর রাদ ড্রাইভার কে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করলো। যাওয়ার আগে বলে দিল, কল করলে যেন চলে আসে।

তারপর নজরাত কে ভিতরে ঢুকে রাদ। রিসিপসনে কিছু ফর্মালিটিজ পুরুন করার পর যে রুম বুক করে সে রুমের চাবি এবং নাম্বার বলে দেয় তারা। তারপর রুমের দিকে হাটা দিলে তার পিছু পিছু নজরাত ও যায়। রুমে ঢুকেই রাদ বিকট শব্দে দরজা বন্ধ করে! যার ফলে কেঁপে উঠল নজরাত। মুখের নেকাব খুলে অনুচ্চ স্বরে বলল,
–” আপনি শান্ত হোন। আমি আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।

এতে করে রাদের গনগনে অভিমান আরও ফুঁসে উঠল। নজরাত এর কাঁধে চেপে ধরে ঝাঁকুনী দিয়ে বিরস মুখে বলল,
–” তুমি জানতে না? আমি যে লেখিকা রুপকথা কে পাগলের মত ভালবাসতাম!

তারপর‌ও এতো নিষ্ঠুর কিভাবে হলে তুমি? আমি সেদিন ঠিক ধরেছিলাম তুমি আসলেই একটা নিষ্ঠুর! দিনের পর দিন আমি কষ্টে গুড়িয়ে গিয়েছিলাম সবটা চোখের সামনে দেখেও তুমি চুপ করে ছিলে একটা বার বলো নি কেন? তুমিই সেই রুপকথা! কেন বলো নি? তোমার কোন আইডিয়া নেই ঠিক কতোটা ভালোবেসেছি তোমায়! যখন ব‌ই মেলায় জানতে পারলাম রুপকথা বিবাহিত আমি যাকে রুপকথা ভেবে এসেছি সে ফেইক তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আ’ত্মহ’ত্যা করব! শুধুমাত্র মায়ের কথা ভেবে সেদিন বেঁচে যাই আমি!

বলতে বলতে নেত্রযুগল থেকে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ে রাদ শাহমাত এর। ভীষণ কষ্ট পেয়েছে সে। তার এমন পরিনত দেখে নজরাত বেসামাল হয়ে পড়ছে। নজরাত কখনো ভাবতেও পারেনি তার আড়ালে তাকে না দেখে এতোটা ভালোবাসতে পারে কেউ। সবসময় গল্পতেই দেখে কিংবা লিখে এসেছে বাস্তব জীবনেও যে এমন কিছু হতে পারে সেটা কল্পনাতীত ছিল তার কাছে।

নজরাত নিজেকে সংযত করতে পারে না।রাদ কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে। আর বলে,
–” আমাকে মাফ করে দিন। আমি বুঝতে পারিনি। আর কখনো এমন ভুল হবে না ইনশা আল্লাহ।
রাদ পাথরের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নজরাত কে শান্তনা দেওয়ার মত কোন উৎসাহ পাচ্ছে না সে। আজ তার কষ্ট গুলো নতুন করে জেগে উঠেছে। বাসায় সাজেদা চৌধুরী আছেন তাই একটা নতুন সিন ক্রিয়েট হবে বলে রাদ এই রিসোর্ট এ চলে আসে। যা বোঝাপড়া এখানেই করবে বলে আসা।

রাহা শ্বশুরবাড়িতে বেশ ভালো দিন কাটাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। তবে রূপক কে খুব মিস করে। এতো বড় বাড়িটা চারদিকে কেমন নিস্তব্ধতা বিরাজ করে রূপক কে ছাড়া। বেড রুমে আসলে মনে পড়ে এই তো এই ইজিচেয়ারে বসে মানুষটা তাকে পর্যবেক্ষন করত। যখন রাহা ঘুমিয়ে থাকতো তখন গভীর চুম্বন এঁকে দিত তার ওষ্ঠদ্বয়ে। মাঝে মাঝে ঘুমের মাঝেও স্পর্শ টের পেত রাহা। তবে বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে এটা রূপক। মানুষটা যেন তাঁকে লজ্জা পেত তাই আড়ালে আবডালে লুকিয়ে আদর করতো তাকে।

এই ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাহা।
বিদেশে যাওয়ার আগের রাতে সব বাধা অতিক্রম করে রূপক রাহা’র কাছাকাছি পৌঁছাতে সক্ষম হয়। কেননা তার প্রেয়সীকে ছেড়ে বহুদূর যেতে হবে তাকে। যদি তার প্রেয়সীর কোন চিহ্ন না থাকে তবে কিভাবে কাটবে দিন? তাই তাদের মধ্যকার সমস্ত দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয় রূপক। সেদিন রাহা ও তার ভালোবাসার মানুষটির আলিঙ্গন সাদরে গ্রহন করে। মত্ত হয়ে উঠে দুজন দুজনাতে।

বেগুনের মত দেখতে কোলবালিশ কে জড়িয়ে সেদিনের সুন্দর তম দিনটা মানসপটে ভেসে ওঠে রাহার। তখনি রূপক কল করে। রাহা ফোন হাতে নিয়ে রূপক এর কল দেখতে পেয়ে বিস্তর হাসে। কল রিসিভ করে মিষ্টি হেসে সালাম দেয়। রূপক সালামের জবাব দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে। পরে যখন জিজ্ঞাসা করে কি করছিলে তখন রাহা অকপটে স্বীকার করে বলে তোমার কথা ভাবছিলাম।
রূপক যখন বিগলিত হয়ে হেসে উঠল তখন রাহা লজ্জায় জ্বিবে কামর দেয়।

রাদ রুম থেকে বেরিয়ে গেছে সেই কখন। নজরাত ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে বসে আছে তার অপেক্ষায়। জায়নামাজে বসে খুব কেঁদেছে। তাই চোখের কোল ভারী। মুখখানা থমথমে। চোখের দৃষ্টি কাঁচের মতো ভাবলেশহীন। কিয়ৎক্ষন পর রাদ আসে হাতে তার খাবারের বক্স।…..

তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব ২৮

(আসসালামু আলাইকুম।
জানি সবাই এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন।জানি না আপনাদের প্রত্যাসা অনুযায়ী ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি কিনা?নেক্সট কমেন্ট না করে গল্প সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করবেন প্লিজ তাহলে আমি অনুপ্রেরণা পাই।
রিচেক করা হয় না। ভুল ত্রুটি মার্জিত ভাষায় ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ রইল। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।)

তোমার নিরব অভিমানীনি শেষ পর্ব