তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ১৫ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ১৫
Suraiya Aayat

রাত প্রায় 11:30 ,আরিশের বুকে মাথা রেখে মাথার উপরে থাকা জ্বলন্ত ঝাড়বাতির টার দিকেই তাকিয়ে আছে আরূ ৷ হাজারো কল্পনা জল্পনার মাঝে ব্যস্ত আরু আর এদিকে আরিশ নিজের মতো আরুর সঙ্গে বকবক করেই চলেছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই আরূর ৷ হঠাৎ আরিশ বলে উঠলো,,,,,,
আরিশ : বুঝলে আরুপাখি!
আরুসির থেকে নো রেসপন্স ৷
আরিশ (সুর করে): আরুওওপাখি!
আরুশি চমকে উঠে : আপনি কিছু বললেন?

আরিস আরুশিকে ওর বুক থেকে নামিয়ে আরুশির ওপরে উঠে ওর দিকে ঝুকে বলল: তুমি কিছু শোনোনি , আমি এতক্ষণ ধরে কি কি বলছিলাম?
আরিশ ওর ওপর ঝুকে গেছে তা দেখে ও ভয় পেয়ে গেল , তার পরে কাপা কাপা কন্ঠে বলল: না শুনিনি, আপনি কি বললেন আরেকবার বলবেন প্লিজ ৷
আরিশ আরুশির দিকে আরো ঝুঁকে বলল : আমি বললাম যে আমরা ইন ফিউচার দশটা বেবি নেব৷
আরিশের কথা শুনে আরুর গলা শুকিয়ে কাঠ,,,,
আরিস: এবার শুনেছো আরূপাখি? বললে আরূশির গালে হালকা করে হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো৷
আরুশি : আপনি এসব কি বলছেন ?আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন!
আরিশ : তোমার জন্যই তো পাগল আমি ৷

আরোশী : অনেক রাত হয়েছে আপনি এবার ঘুমিয়ে পড়ুন , কালকে সকালে ফ্লাইট , তাড়াতাড়ি উঠতে হবে৷
আরিশ: কিন্তু আমার তো এখন তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে আরূপাখি ৷
আরুসি তোতলাতে তোতলাতে: আমার খুব ঘুম পাচ্ছে ৷ (ও ভয় পেয়ে গেল )
আরিস আরুর ওপর থেকে উঠে এসে ওর পাশে শুয়ে উচ্চস্বরে হাসতে লাগল,আর তা দেখে আরু অবাক হয়ে গেল ৷
আরু অবাক হয়ে : আপনি এমন করে হাসছেন কেন?
আরিশ : তোমার ফেস দেখে ৷আমি যেই বললাম আদর করার কথা তুমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলে জানো! পুরো গোলু গোলু ফেস ৷
আরিশ : চিন্তা নেই , তুমি ঘুমাও ৷ আরুশিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল….
আরুশি মনে মনে : উনি কখন কি চায় বোঝা মুশকিল, বড্ড জটিল ব্যক্তিত্বের একজন মানুষ ৷ এই ভালোবাসেন আবার এই বকাঝকা করেন ৷ কখনো কি হবে আমার ওনাকে বোঝার ক্ষমতা!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সকালবেলা,,,,
আফজাল সাহেব : এয়ারপোর্ট থেকে নেমে দেখবা একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে, নাম্বারটা তোমাকে আমি সেন্ড করে দিচ্ছি সেই গাড়িতে উঠবে, ওটা তোমাকে নিয়ে যাবে হোটেল অবধি ৷
আরিশ : ওকে বাবা(চোখ মেরে)
আরিশের মা : সাবধানে যাস তোরা দুজনে ৷ তোদেরকে নিয়ে বড্ড চিন্তা হয় আমার ৷ আর আরিশ তুই যা অগোছালো , মেয়েটার একটু খেয়াল রাখিস৷

সানা: হ্যাঁ ভাইয়া খেয়াল তো রাখবেই , যতই হোক ওর আরুপাখি বলে কথা ৷ আরুশিকে দেখে চোখ মেরে ৷
সানার এরকম কর্মকাণ্ডে আরুশি একটু ঘাবড়ে গেল কিছু বললো না তবে , বড়োদের মাঝে এরকম কথা বলে সানা প্রায় ই ৷
আরিশ : তাহলে আসছি আমরা ৷আরাভ বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷
সানা : উনি দাঁড়িয়ে আছেন মানে ! উনিও কি আমাদের সঙ্গে যাবেন নাকি?
আরিশ : আরাভ যেতে চাইলো না করতে পারলাম না, তুই আর বেশি কথা বাড়াস না তাড়াতাড়ি চল ৷
সানা :উনি যাচ্ছি মানে আমি যাব না ৷

আফজাল সাহেব: এটা কোন কথা হল ! তুমি যাবে৷ আর আরাভ অত্যন্ত ভালো একটা ছেলে , আশাকরি তোমার কোন সমস্যা হতে দেবে না ও ৷
আরিসের বাবা বলাতেই সানা আর না করতে পারল না , ওদের সাথে গেল ৷
সারাটা রাস্তা সানা আর আরু দুজনে মিলে বকবক করতে করতে এসেছে ৷যদিও সানা বেশী কথা বলেছে ৷ আগের দিন আরাভ কে অনেক কিল ঘুষি মারায় ও লজ্জায় বেশি কথা বলতে পারেনি ৷
এয়ারপোর্টে নেমে আরাভ আরিশকে আলাদাভাবে ডেকে বলল: দোস্ত তোর বোনটাকে বলনা আমার সাথে .রিলেশনে যেনো রাজি হয়ে যাই ৷

আরিশ : পছন্দ তোমার, বিয়ে করবে তুমি ,আমি কেন রাজি করাবো হ্যাঁ ! (একটু ভাব নিয়ে)
আরাভ: দোস্ত তুইও এরকম করতে পারলি তো আমার সাথে, মনে রাখব ৷ বাই দ্যা ওয়ে যাচ্ছিস যখন তখন গোল করে বাড়ি ফিরিস , নাহলে তোর মান-ইজ্জতের ফেলুদা করে দেবো আমি ৷
আরিশ : আগে নিজের কেসটা সামলা ,তারপর আমাকে বলিস ৷
সানা: ওই বিরক্তিকর লোকটার সাথে আমাকে আবার বাড়ি ফিরতে হবে ,উফ অসহ্য কর ৷
আরোশী: সমস্যা কিসের?ওনাকে দেখে যথেষ্ট ভাল মনে হয় ৷
সানা : ভালো না তো ছাই, ওনার কথা ছাড় তুই , সাবধানে থাকিস আর ভালো খবর নিয়ে আসিস আরুপাখি ৷(চোখ মেরে)
আরোশী চোখ গরম করে : সানা আমি কিন্তু তোর ভাবী হই ৷

আরমান সাহেব : তোমার কি মনে হয় অভ্র আরূ কি রাজি হবে এত কিছু বলার পর ও ৷
অভ্র : আঙ্কেল আমার মনে হয় আরূ যে এত সহজে রাজী হবে না ,আর তাছাড়াও হয়তো আরিস ওকে আসতে দেবে না, তবুও ওকে যে করে হোক আমি আমার কাছে আনবোই , না হলে আমার নামও অভ্র নয় ৷
আরমান সাহেব : অনেক বড় মুখ নিয়ে তো বলছ তা কাজটা ঠিকঠাক হবে তো?
অভ্র মনে মনে: আপনাকে কি করে বলি আংকেল আমি যা করি সবই আরিস আগে থেকে জেনে যায় , ব্যাপারটা এত সহজ ভাবে বললেও সহজ নয় ৷
অভ্র: আমি যখন একবার বলেছি কাজটা করব তো করবোই না হলে আপনি তো আছেন ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে নিয়ে আসবেন , যতই হোক নিজের মেয়ে বলে কথা বলে হাসতে লাগল ৷

আরিশা আর আরুকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে রেখে সানা আর আরাভ দুজনেই বাড়ি যাচ্ছে,,,,,
সানাকে না চাইতেও ওকে অভ্রের পাশের সিটে বসতে হয়েছে যদিও বা ও চাইনি ৷
মাঝ রাস্তায় গিয়ে আরাভ গাড়িটা থামিয়ে দিল,,,,,,
সানা: এ কি আপনি মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামালেন কেন ?
আরাভ: আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে সেইজন্য ৷
সানা : দেখুন আমার সঙ্গে আপনার কোন দরকারি কথা নেই ৷ আপনি এখন প্লিজ তাড়াতাড়ি চলুন আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছাতে হবে ৷

আরাভ সানার দিকে খানিকটা ঝুকে গিয়ে: যতক্ষণ না আমার কথা তুমি শুনবে ততক্ষণই এখান থেকে কোথাও যেতে পারবো না তুমি ৷
সানা একটু ভয় পেয়ে গিয়ে বলল : আপনার ইচ্ছা নাকি?
আরাভ: হমম আমার ইচ্ছা ৷
সানা: জানি প্রত্যেক বারের মতো সেই একই কথা বলবেন যে আপনি আমাকে ভালবাসেন আর আমিও যেন আপনাকে ভালোবাসি এই কথাটাই তো ! যদি এটা ভেবে থাকেন তাহলে খুব বড় ভুল করছেন ৷
আরাভ: আমি কি একেবারেই অযোগ্য যে তুমি আমাকে মানতে পারছো না ৷
সানা: সে উত্তর আমার কাছে নেই ৷

সানার থেকে এমন একটা উত্তর শুনে আরাভের খুব রাগ হলো কারণ পজেটিভ হোক বা, নেগেটিভ যেকোন একটা উত্তর আরাভ শুনতে চেয়েছিল ৷ আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দিল…..
আরাভ(মনে মনে): ভালো কথার মেয়ে তুমি না বুঝতে পেরেছি ৷ এবার আমার টেকনিকেই তোমাকে মানাতে হবে ৷ বাঁকা একটা হাসি দিয়ে ৷

কলকাতা এয়ারপোর্টে অনেকক্ষণ আগেই প্লেন থেকে নেমেছে ৷ দশ মিনিট হল দাঁড়িয়ে আছে ওরা গাড়িটার জন্য , অপেক্ষা করছে ৷ যদিও বা আরিশ এর আগে অনেকবারই কলকাতা এসেছে ঘুরতে তবে আরূশির কখনো আসা হয়নি তাই সব কিছুই চোখে যেন কেমন নতুন নতুন লাগছে ৷
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল : ভালো লাগলো কলকাতা?
আরুশি মুখে হাসি নিয়ে: হ্যাঁ ভালো লেগেছে ,আপনি এর আগে এসেছেন?
আরিস : হ্যাঁ এসেছি অনেকবার তবে তোমার সাথে এই প্রথম সুযোগ হয়ে উঠল ৷
ওরা কথা বলতে বলতেই গাড়ি চলে এল, ওরা দেরি না করে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গেল ৷
বেশ অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি চলছে , আরূর খুব বিরক্ত লাগছে এতক্ষণ ধরে বসে থাকতে ৷
আরুশি আর না পেরে আরিশ কে জিজ্ঞাসা করল: আর কতক্ষণ লাগবে?

আরিশ : এখনো বেশ অনেকক্ষণ , তোমার যদি ঘুম পায় তো আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাতে পারো৷
আরুশি একটু ইতস্তত বোধ করলেও না করতে পারলো না তাই আরিশের কাধে মাথা রাখল আর কখন যে চোখ দুটো এক হয়ে এসেছে বুঝতেই পারলো না ৷
আরূকে সাইট থেকে জড়িয়ে ধরল আরিশ যাতে গাড়ির ঝাকুনি তে ওর ঘুম ভেঙে না যায় ৷ প্রিয়তমার দিকে তাকিয়ে আছে আরিশ, হয়তো এ দেখার যেন কোন শেষ নেই…..
ঘুম ভাঙতেই কোন একটা তীব্র আওয়াজ পেয়ে আরুশির মনে কৌতুহল যেনো আরও বেড়ে গেল ৷এতক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছিল তাই কিছু জানতেই পারেনি ৷

আরিশকে কোথাও দেখতে পেল না কিন্তু তার থেকেও বড় কৌতুহল যে আওয়াজটা আসছে কোথা থেকে অনেকটা ?
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতই শুনতে তাই তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল চারিদিকে সমুদ্র আর প্রচন্ড ঢেউ পাড়ে এসে আছড়ে আসার জন্য তার তীব্র আওয়াজ ৷
ঘুম থেকে উঠে এরকম যে একটা দৃশ্য দেখতে পাবে আরুশি সেটা হয়তো ও ভাবতেই পারেনি ….
ওর রুমটা সমুদ্র থেকে সামান্য একটু দূরেই,দুই মিনিট হাটতেই সেখানে যাওয়া যাবে….
আরোশী আনন্দটা উপভোগ করার জন্য দুহাত মেলে জোরে জোরে প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছে তখন আরিস পিছন থেকে এসে আরুশির কোমরটাকে জরিয়ে ধরে ওর মুখে কিস করে বলল: পছন্দ হয়েছে আরুপাখি?

আরুশি : ভীষণ ৷ কিন্তু আপনি আমাকে আগে বলেননি কেন?
আরিশ : আগে বললে এটা কি আর সারপ্রাইজ থাকতো !
আরোশী এবার আরিশ এর দিকে ফিরে হুট করেই আরিশের গালে হালকা করে একটা কিস করে বলল : থ্যাংক ইউ সো মাচ ফর দিস সারপ্রাইজ বলে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে বিচের ধারে চলে গেল ৷
আরশি ও আরুশির পিছন পিছন গেল ৷ভালোবাসার মানুষটাকে কখনো একলা হতে দেবে না ও, সব সময় নিজের সাথে আগলে আগলে রাখবে ৷

জলের মধ্যে পা ডুবিয়ে হাতে হাত রেখে হাঁটছে আরূ আর আরিশ ৷ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা আর সমুদ্রের ঢেউ গুলো ক্রমশ পায়ের ছাপগুলোকে মিলিয়ে দিচ্ছে তার নোনা জল দিয়ে….
আরুশি: আচ্ছা গাড়ির ড্রাইভারকে কি বাবা আগে থেকে বলে রেখেছিলেন এখানে আসার জন্য?
আরিশ: আসলে বাবাকে আমিই বলেছিলাম সবকিছু একটু অ্যারেঞ্জ করার জন্য , আর বাবা কে কথাটা বলতেই বাবা একেবারে রাজি হয়ে গেল ৷
আরুশি: তাহলে আপনার অফিসের কাজ ?

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ১৪

আরিশ হাসতে হাসতে : ওটা তো একটা বাহানা তোমাকে এখানে আনার জন্য , আর প্রিন্সিপালের কাছ থেকে ছুটি নেওয়ার জন্য ৷ উনাকে যদি এই কথাটা না বলতাম তাহলে এই সিচুয়েশনে উনি আমাকে কখনই ছুটি দিতেন না ৷
আরু: সত্যিই তো আপনার ফাইনাল এক্সাম আর আপনি ছুটি নিলেন কেন?
আরিশ: আমার এই বউটার জন্য, বড্ড ভালোবাসি যে আমার এই বউটাকে ৷

আরুশি লজ্জা পেয়ে কথা ঘুরানোর জন্য বলল : আচ্ছা জায়গাটা কিন্তু খুব সুন্দর কক্সবাজার এর মতোই ৷
আরিস : হ্যাঁ জায়গাটা খুব সুন্দর , এটা হল দীঘা ৷ আরো সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে দেখার মত, সব তোমাকে দেখাবো ৷
আরুশি : পরে দেখব সব আগে আপনাকে একটু ঢেউ এ ভিজিয়ে দিই ৷ এই বলে ধাক্কা মেরে আরিসকে জলে ফেলে দিল , তবে আরিশ ও ওর হাত ধরে থাকার জন্য আরুশিকে নিয়েই পড়লে ৷ জলে পড়ে দুজনেই হাসতে লাগল….
সমুদ্রের ঢেউ এসে দুজনকেই ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে , মিলে মিশে যাচ্ছে সবকিছু, একাকার হয়ে যাচ্ছে ভালোবাসায় ৷ হয়তো শুরু হতে চলেছে কোন এক নতুন ভালোবাসার অধ্যায়….

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ১৬