তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৭ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৭
Suraiya Aayat

আরিশ ক্লাস নিচ্ছে আর আরু চুপচাপ মন দিয়ে আরিশ এর লেকচার শুনছে ৷ আরোশী খুবই অ্যাটেনটিভ আরিশের ক্লাসে, যতই হোক প্রিয় মানুষের বলা প্রত্যেকটা কথাই যেন মধুর লাগে , খুব ভালো লাগে ওর আরিশের ক্লাস টা করতে….
আজকে সানা আসেনি , সামনে আরাভের সাথে ওর এনগেজমেন্ট বলে তাই আরাভ ভাইয়া সানাকে নিয়ে শপিং এ গেছে….
আরিশ বোর্ডে লিখে লিখে বোঝাচ্ছে,,,,

বোর্ডে মার্কারটা বুলিয়ে বলল :
এই মলিকিউলটার সঙ্গে যদি এই মলিকিউল বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাহলে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটতে পারে তাই সব সময় আমরা এই বিক্রিয়াটি এড়িয়ে চলব , অন্যভাবে বিক্রিয়া ঘটানোর পদ্ধতি অবলম্বন করবো ৷
হুট করে আরু উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,,
মে আই গো টু ওয়াশরুম?
মুখে হাত চেপে বললো কারণ ওর খুব বমি বমি পাচ্ছে,
আরূর কথা শুনে আরিশ ওর দিকে ফিরে তাকাতেই আরিশের ভ্রু কুঁচকে গেল , মুখে হাত চেপে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরু, খুব যেন অস্বস্তি বোধ করছে দাঁড়িয়ে থাকতেও ৷

আরিশ আরুকে আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরু আরিশের পারমিশন না নিয়েই মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে,আরেকটু দেরী করলেই হয়তো ক্লাসরুমেই বমি করে দেবে ৷
আরিশ বুঝতে পারল আরুশির শরীরটা একটু খারাপ বমি করতে গেছে ৷ বেশ কয়েকদিন ধরেই আরোশী কিছু খাচ্ছে না সেটাও বেশ ভালই লক্ষ্য করছে ও ৷ আরুশিকে বারবার জিজ্ঞাসা করলেও আরোশী বলতো যে খেতে ভালো লাগেনা , জোর করে খাওয়াতে গেলে আরূ শুধু বলে আপনি আমাকে আর ভালোবাসেন না তাই আর কিছু বলতে পারেনা আরিশ ৷
আরুশিকে অমনভাবে ছুটে যেতে দেখে আরিসের কপাল কুঁচকে গেল , মনটা আনচান করছে আরিশের, হয়তো শরীরটা খুবই খারাপ না হলে আর অমনভাবে বেরিয়ে যেত না ৷
আরিশ কপালে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘামটা মুছে কনুই দিয়ে মুছে একটু কাঁপা কাঁপা গলায় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,,,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আই থিং সি ইজ ইন বেড সিচুয়েশন , আই এম কামিং আফটার টেন মিনিটস , বি সাইলেন্ট আনটিল আই কাম ৷
সবাই একসাথে বলল : ওকে স্যার ৷
আরিশ ব্যস্ততার খাতিরে সকলের সামনে থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে ৷
আরিশ চলে যেতেই স্টুডেন্টরা মুচকি মুচকি হাসছে, সবাই বলাবলি করছে ,,,
আরুশিকে কত ভালোবাসেন স্যার , আর কতো কেয়ারিং ,সবার যদি এরকম একটা হাজবেন্ড থাকতো! এই ধরনের নানান কথা সবাইকে সবাই নিজেদের মধ্যে বলা-কওয়া করছে…

গার্লস ওয়াশ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিস তবে ভিতরে ঢুকতে পারছে না, ঢুকলে একটা বাজে ব্যাপার হবে তাই বাইরে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করছে ৷ কপালের ঘাম মুছতেই তা আবার পুনরায় বিন্দু বিন্দু হয়ে জমা হচ্ছে কপালে , যতক্ষণ না আরূকে নিজের চোখের সামনে ঠিক দেখছে ততক্ষণ ওর চিন্তা যাচ্ছে না….
কিছুক্ষণ পর আরোশী ক্লান্ত হয়ে বেরিয়ে এলো, বেরিয়ে আসতেই আরিশকে দেখল ৷
আরিশ আরুশির কাছে ছুটে গিয়ে আরুকে জরিয়ে ধরল, আশেপাশে অনেক স্টুডেন্টরাই দেখছে ওদেরকে কিন্তু সে নিয়ে আরিশ কখনও ভাবেনি’ আর কখনো ভাববেও না ৷

আরিস আরুশিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর হাত ধরে ওর নিজের রুমে নিয়ে গেল ৷
আরুশিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আরুশির পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো আরিস ৷ আরূশির হাত দুটো শক্ত করে চেপে রেখেছে আরিশ ৷ আরুশির শরীর এখনো কাঁপছে, বমি হয়ে আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে ৷ একেই খাওয়া দাওয়া করে না তার ওপর নিজের যত্নও নেয় না , যতটুকু আরিশ করে ততটুকুতেই ওর যত্ন সীমাবদ্ধ থাকে, নিজে থেকে বাড়তি যত্ন নেয় না আরোশী ৷
আরিশ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো : এখন কেমন লাগছে আরূপাখি ?
আরুশি চোখটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে আরিশের দিকে মুচকি হেসে বলল :
আরে আপনি চিন্তা করছেন কেন , এই দেখুন আমি একদম ঠিক আছি ৷
আরিশ এবার একটা ধমক দিল আরুশিকে ৷

” সব সময় আমাকে মিথ্যা কথা বলে কোন লাভ আছে ? আমার নিজের কি সেন্স অফ হিউমার নেই যে কে সুস্থ আর কে অসুস্থ তা বোঝার ক্ষমতা আমার থাকবে না ৷
বারবার বলি নিজের যত্ন নাও ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া করো তা নয়…”
আরোশী কাচুমাচু ফেস করে বলল : আপনি আমাকে এভাবে বকছেন কেন ? আর আপনি তো নেন আমার যত্ন , আপনি আমার কল্পনার থেকেও বেশি যত্ন করেন তাই নিজের খেয়াল রাখার প্রয়োজন বোধ করি না ৷
আরিশ আরুর দুই গালে হাত রেখে বলল:
তোমাকে নিয়ে আমি সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি তা কি তুমি বোঝনা ! তুমি জানোনা তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না ৷ বলে আরুশির কোমর জড়িয়ে ধরল ৷

আরুশি মুচকি মুচকি হাসছে , আরিশের ব্যবহারে মাঝে মাঝে ও নিজেও চমকে যায়, ভালো লাগে অবশ্য ৷
আরিশ মাথা তুলে বললো :
চলো তোমাকে এক্ষুনি আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো ৷
ডক্টর এর নাম নিতেই আরুশির মাথায় এলো সবার প্রথমে স্যালাইনের বোতল আর ইনজেকশনের কথা, ভাবতেই ঢোঁক গিলে বলল :

আমি একদম ঠিক আছি দেখুন , আমার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কোন দরকার নেই ৷
আরিস : তা বললে আমি শুনবো না , আমি যখন বলেছি তুমি যাবে তখন যাবেই ৷
আরু এবার আরিশকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলো ৷
“আমি যাব না প্লিজ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন না , আমার খুব ভয় করে বলে একটু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতেই আরিশ ঘাবড়ে গেল , তারপর আরুকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল :
আচ্ছা যাব না , তবে তুমি প্রমিস করো ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া করবে আর নিজের যত্ন নিবে ৷
” আমি বললাম তো ,আমি নিজের যত্ন নেব,এবার প্লিজ আপনি চিন্তা করবেন না , আর আপনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলেন কেন?”

আরিশ রেগে গিয়ে বলল : কানের নিচে এক থাবড় দেবো , তুমি ওভাবে চলে এলে আর আমি ওখানে ক্লাস নেব তাই না?
“সবাই কি ভাববে বলুন তো?”
কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার তুমি কি তা জানো না যে আমি কাউকে পরোয়া করিনা , যে যা ভাববে সেটা তার একান্তই পার্সোনাল ব্যাপার আমার তাতে কিছু যায় আসে না ৷
তবে আপনি এখন ক্লাসে যান, অন্তত ক্লাস টা কমপ্লিট করে আসুন ৷
আরিশ একটু ভেবে বলল :
আচ্ছা ,তবে তুমি এখানে বস যতক্ষণ না আমি আসবো ততক্ষণ কোথাও যাবেনা ৷
আচ্ছা আমি আপনার জন্য ওয়েট করছি, আপনি ক্লাসটা করে আসেন ৷
আরিশ আরুর কপালে একটা কিস করে বলল: আমি আসছি কেমন , এক পাও নড়বে না, যদি এক পা ও নড়েছ তো তোমার খবর আছে ৷
আরিশ ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে, এখন ঠিক বুঝতে পেরেছে যে আরুশি কিছু না কিছু বলে ওকে ডাক্তার দেখাতে বারণ করে দিয়েছে কিন্তু বাড়ি ফিরে ও ডক্টরের চেকআপ করিয়েই ছাড়বে সে আরুশি যত বাহানায় করুক না কেন ৷

সোফাতে বসে আছে আরুশি আর অনিকা খান একের পর এক বকা দিয়ে চলেছেন আরুশিকে, আরুশি শুনছে ঠিকই কিন্তু আর এক কান দিয়ে তা বার করে দিচ্ছে , কারণ ও এই পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে ভাল করে চেনে এবং জানে, এটাও বোঝে যে সবাই ওকে কতটা ভালোবাসে তাই ওগুলো বলাটাই স্বাভাবিক ৷
অনিকা খান আরুশিকে বকছেন আর তখনই আরুশি ফিক করে হেসে ফেললো , ওকে হাসতে দেখেই অনিকা খান অবাক হয়ে গেল কারণ উনার এত বকাঝকা শর্তেও মেয়েটা কিভাবে হাসে সেটা উনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না ৷
আমি বকছি আর তুই হাসছিস , আমি কি তোকে কোন হাসির কথা বলেছি?
আরশি মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলল : সরি আর হাসবো না,তুমি বলো ৷

আসলে আরুশি যে আরিশ কে কিভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে আটকাতে পেরেছে সেটাই মনে পড়তেই খুব হাসি পেল ওর,তাই ফিক করে হেসে ফেললো….
আর এদিকে অনিকা খান আরুকে আবারো বকাবকি করেই চলেছেন ৷
এবার থেকে যদি ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া না করেছিস তো আমি তোর সব দায়িত্ব কিন্তু এবার আরিশের উপর ছেড়ে দেবো , আর যদি আরিশ তোর সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে নেয় , টেক কেয়ার করে তাহলে বুঝতেই পারছিস কি হবে তোর ৷
আরু অনিকা খানকে জড়িয়ে ধরে বলল:
ও মামনি তুমি এমন করছ কেন বলোতো, আর আমার আমাদের মা মেয়ের মাঝে উনাকে ডেকে আনার কি দরকার ? তুমি তো আমার কত যত্ন করো বলো ৷
আরু জানে আরিশ যদি ওর খেয়াল রাখতে শুরু করে তাহলে ওর আর রেহাই নেই….

নিচের ঠোটটা কে দাঁত দিয়ে শক্ত করে কামড়ে ধরে রেখে ফোনের স্ক্রিনের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে আরোশী হয়তো খুবই একটা ইম্পোর্টেন্ট জিনিস হচ্ছে ফোনে আর তা দেখায় মগ্ন ও ৷
আরিশ শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো, ভেজা চুল গুলোকে হাত দিয়ে একবার ঝেড়ে নিয়ে আরুশির দিকে চোখ যেতেই দেখল আরোশী একমনে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে, ফোনে ঠিক কি এমন হচ্ছে যার জন্য আরুশি ওভাবে তাকিয়ে আছে তা নিয়ে আরিশের ও একটু বেশ কৌতূহল হল ৷ তবে তা দেখার জন্য আরিশ আরূশির পিছন দিক দিয়ে উঁকি মারতেই আরুশি জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো :

গেল গেল গেল, শাশুড়ি টা এবার গেল ৷ বউটা কিভাবে মারছে , কি ডেঞ্জারেস রে বাবা ৷ আরূ এসব বলেই যাচ্ছে আর. এদিকে যে আরিশ এসেছে তাতে ওর খেয়াল নেই…
আরোশী যে এমন টপিকের কিছু জিনিস দেখে তা আরিশ ও আজ দেখে খানিকটা হলেও চমকে গেছে৷ লাইক সিরিয়াসলি ! এত বড় মেয়ে এসমস্ত দেখে ? এগুলো তো ছোট ছোট পিচ্চিরা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দেওয়ার জন্য ,এখন আরূ এই বউ শাশুড়ি র ঝগড়া দেখে !

এসব ভাবলেই আরিশের যেন নিজেকে পাবনা থেকে ফেরত পাগল বলে মনে হলো ৷
আরিশ আর আরুশিকে ডিস্টার্ব করলো না , ওয়ারড্রব এর দিকে এগিয়ে গেল শার্টটা আনার জন্য তখনই আরুশির গলার আওয়াজ পেতেই সেদিকে তাকিয়ে দেখলো আরুশি ছুটেছে ওয়াশ রুমের দিকে,
অরিশের আর বুঝতে বাকি রইল না যে আরু আবার বমি করতে গেছে , ও নিজেও আর দেরি না করে আরুশির পিছন পিছন ওয়াশরুমে গেল ৷

আরশির অবস্থা খারাপ বমি করতে করতে ৷
আরিশ ওর হাত-মুখ ধুয়ে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল৷
আরেকটা বার তুমি এখান থেকে নড়ো দেখো কি করি ৷ তুমি দাড়াও আমি এক্ষুনি ডক্টর আংকেলকে ফোন করছি ৷
প্লিজ আপনি ওনাকে ফোন করবেন না ৷
আমি তোমার কোন কথা শুনছি না বলে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ…
ইতিমধ্যেই আরুশির ভয়ে হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে ৷ ইনজেকশন নামক জিনিসটা কে বড্ড ভয় পায় ও ৷ ওর মনে আছে ছোটবেলায় একবার টিটেনাস দিতেই দুদিন ওর জ্বর ছিলো তারপর থেকে ইনজেকশন এর প্রতি তীব্র ভয় ওর ৷
ডাক্তার গম্ভীরমুখে আরুর সামনে বসে আছে আর আরোশী ভয়ে মুখ কাচুমাচু করে রেখেছে ৷
ডাক্তারের মুখ দেখে কোন কিছুই বোঝা সম্ভব নয় যে উনি কি বুঝাতে চাইছেন , আরু এবার ভয়ে কান্না করে দেওয়ার অবস্থা ৷
ডাক্তার গম্ভীর কণ্ঠে বলল:

তুমি কি খাওয়া-দাওয়া কিছু করো না? এত কেয়ারলেস কেন ? নিজের প্রতি যত্নশীল হও , এখনই যদি নিজের কেয়ার না করো তাহলে পরে কি হবে, তোমার শরীরে যে ছোট্ট প্রাণটা বেড়ে উঠছে তার কি হবে!
ডক্টর ঠিক কি বলতে চাইছেন তার কিছুই আরু বুঝতে পারছেনা, কারণ ডাক্তার এমন কথা এর আগে ওকে কখনও বলেনি ৷.
আমার কি খুব বড় কোন সমস্যা হয়েছে ডক্টর, প্লিজ বলুন না কাঁদো কাঁদো গলায় আরু বলল…..
ডাক্তার জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললেন : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো খবর আপনাদের পরিবারে, আপনারা দাদা দাদিমা হতে চলেছেন তুমি মা হতে চলেছ….

সানা তো খুশিতে আরুকে জড়িয়ে ধরলো, সারা পরিবারজুড়ে আনন্দের বড় বন্যা বয়ে যাচ্ছে ৷
আরিশ রুমের এক কোণে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে , ডাক্তারের মুখ থেকে এতক্ষণ এই কথাটা শোনার অপেক্ষায় ছিলো ও ৷ কিছু আন্দাজ করতে পারেনি তেমনটা নয় , আন্দাজ করেছিল তবে শিওর ছিল না ৷
আরুশির চোখে জল চলে এলো, এ এক অদ্ভুত প্রাপ্তি, মা হওয়ার একটা অদ্ভুত আনন্দ যে কি তা ও আজকে বুঝতে পারছে,আর এটাও বুঝতে পারছে যে এতবছর ধরে ওর মা কতটা কষ্ট পেয়েছেন ওকে ছাড়া থাকতে ৷চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়তেই আরিশের দিকে তাকাতেই আরিশকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেই আরূর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো ৷ তাহলে কি আরিশ এই খুশির খবরে খুশি নয় ? ও কি চায়না এই বেবিটা কে ?

এসমস্ত হাজার আজগুবি কথা আরূর মাথায় আসছে এখন ৷
আরু কাঁদছে আর এসব কথা ভাবছো তখনই অনিকা খান আরুর কাছে গিয়ে ওর কপালে ভালবাসার পরশ একে চোখের জলটা মুছে দিয়ে বললেন :
এমন খুশির দিনে কাঁদতে নেই রে মা , এ এক আনন্দের দিন ৷ কথাটা বলেই আরূকে জড়িয়ে ধরলেন….
ডাক্তার অনেকক্ষণ আগেই চলে গেছেন তবে এখনও আরিশ রুমে আসছে না দেখে আরূর চিন্তায় কাতর হয়ে যাচ্ছে , তাহলে কি আরিশ সত্যিই বেবীটা কে চায় না, কিন্তু ও তো চাই এই বেবিটা কে ভীষণভাবে আর তার সাথে আরিশ কেও চায় ও ৷ দুজনকে নিয়ে একসাথে ভালোভাবে থাকতে চায় আরূ, এখন যদি আরিশ বলে নেগেটিভ কথা বলে তাহলে আরূ কি করবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই ওর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ৷

গুটি গুটি পায়ে সারা বাড়িতে ঘুরেও খুঁজে খুঁজে আরিশ কে পেল না আরূ , তাহলে হয়তো ছাদে আছে এই ভেবে ছাদের দিকে পা বাড়ালো ও ৷
জোসনা রাতে আকাশের চাঁদটাও তীব্রভাবে উজ্জল, মাঝে মাঝে একরাশ সাদা মেঘগুলো তাকে ঢেকে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছে, তারপর আবার ক্লান্ত হয়ে সরে যাচ্ছে একে অপরের থেকে , হয়তো মেঘগুলোও অভিমান করে চাঁদের থেকে দুরত্ব বজায় করে চলছে৷

ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার উপরে চাঁদের আলো পড়ে তার সৌন্দর্যতা যেন আরো দ্বিগুন করে দিয়েছে ৷ মানুষটার প্রেমে হাজারবার পড়লেও আরু কখনো বিরক্তবোধ করবে না ৷
ধীর পায়ে আরিশের কাছে যেতেই আরিস আরূশির হাতটা টেনে আরুশিকে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিল ৷ হঠাৎ আচমকা এ মনটা হওয়াই আরূ ও বেশ একটু ভয় পেয়ে গেল ৷
আরিস কাঁপা কাঁপা গলায় বললো :

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৬

তুমি কি ভাবলে আরূপাখি আমি বেবি টা কে চাইনা ? তুমি এটা ভাবলেই বা কি করে ৷ তুমি আর আমার বেবিটাই তো আমার জীবনের একমাত্র সম্বল যাদেরকে আঁকড়ে ধরে আমি সারাজীবন পার করে দিতে পারি, বলে আরুশির কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল:
থ্যাংক ইউ আরূপাখি আমার জীবনের সবথেকে বড় সুখ এনে দেওয়ার জন্য ৷
তোমাকে না পেলে হয়তো জানতেই পারতাম না জীবনটাকে কতভাবে আর কতটা সুন্দর ভাবে রঙিয়ে দেওয়া যায় , কতভাবে একটা মানুষকে ভালোবাসা যায়, কতটা গভীর ভাবে চাইলে একটা মানুষ কে নিজের করে পাওয়া যায়….
আরিশূর কথা শুনে আরূও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, সব সময় নেগেটিভ কথাই আরূশির মাথায় আসে বারবার, আর সব সময় আরিস তা ভেঙে দিয়ে ওর ভাবনার পরিবর্তন করে দেয় ৷

আসলে আরিশ তখন ওখান থেকে চলে এসেছে কারণ খুশিতে ওর চোখে জল চলে এসেছিল আর ও নিজের চোখের জলটা কারো সামনে দেখাতে চায় না তাই এতক্ষণ ছাদে সে চোখের জল ফেল ছিল কিন্তু এ হলো খুশীর , আনন্দের, এক অদ্ভুত প্রাপ্তির ,ওর আর আরুর ভালোবাসার ফসল ৷
আসলে আরু আর আরিশ হলো একে অপরের পরিপূরক , যারা বিশ্বাস করে যে তারা একে অপরকে ভালবাসতে শিখিয়েছে ৷
এভাবেই বেঁচে থাকুক হাজার হাজার ভালোবাসা , পূরন হোক তাদের প্রত্যাশিত স্বপ্নবিলাস , ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠুক সকলের জীবন,
পূর্ণতা পাক সকলের ভালোবাসা ৷

তোমার নেশায় আসক্ত পর্ব ৩৮