তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১২ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১২
Suraiya Aayat

ক্লাস শেষের পর ওরা সবাই ক্যান্টিনে গেল লাঞ্চ করতে ৷ সানা আরূ আর তিথি তিনজন একটা টেবিলে বসেছে, তিনজনেই বেশ চুপচাপ আছে ৷
অনেকক্ষণ ধরে ওরা তিনজন বসে আছে কিন্তু কেউ খাবারের কোন অর্ডার করছেনা আর এদিকে আরূ বসে ফোনে কুটকুট করছে , না পেরে তিথি বিরক্ত হয়ে বলল,,,,,

__”এইভাবে আর কর আর কতক্ষণ ? আরু কতক্ষন আর এভাবে ওয়েট করে থাকবো বলতো ! ,তুই খাবারের অর্ডার দিচ্ছিস না আর বলছিস ও না যে কি খাবি ৷ ”
আরূ এবার ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বললো,,,,,
__” আমার আজ খিদে নেই, তাই আমার জন্য এক মগ কফিই এনাফ, আর তুই আমার জন্য একটা কফি আর আমার ডার্ক ফ্যান্টাসি অর্ডার করলেই আমি হ্যাপি….”
সানা বিরক্তি হয়ে বললো,,,,,,
__”আমার খিদে পেয়েছে প্রচন্ড তাই আমার তোর মতো কফিতে চলবে না , তিথি তুই আমার জন্য একটা চিকেন বার্গার অর্ডার কর আর তার সঙ্গে একটা স্প্রাইট….”
__” ওকে ডান তাহলে আমিও বার্গার আর একটা স্প্রাইট অর্ডার করে দিই , আর আরুর জন্য জাস্ট একটা কফি আর কুকিজ ৷”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরু আবারো ফোন নিয়ে টুকটুক করতে লাগলো,
হঠাৎ সামনে কোন পুরুষালী কণ্ঠস্বর পেয়ে তিথি সেদিকে তাকিয়ে দেখলো বেশ কয়েকজন না হলেও তিন থেকে চার জন সিনিয়ার টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ এতদিন কলেজে এসে কেউ ওদের টিজ বা হ্যারাস করেনি , আর এমন কিছুর সম্মুখিনও হয়নি কখনো ৷ আর এই কলেজের যথেষ্ট রেপুটেশন আছে সেই কারণে সবাই জানে যে রেগিংটা কম হয় ৷
সানা ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে একটু ভয় পেয়ে গেল কারণ এরা হচ্ছে সিনিয়ার আর আরিশের বিপক্ষ ,এরা কলেজে রেগিং করে আর আরিশ যেসব একদম পছন্দ করে না , তাই বারবার ওদের কাজে ব্যাঘাত দেয় বলে ওদের আরিশের প্রতি রাগ আর তাছাড়াও প্রিন্সিপাল ও চোখ বুজে আরিশকে বিশ্বাস করেন ৷ এর আগে তিন থেকে চারবার আরিশের এর হাতে মার খেয়েছে তবু এদের শিক্ষা হয় নি ৷

তিথি টেবিলের নিচে থেকে আরুর হাত ধরে ওকে ডাকতেই আরূ সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল কয়েকজন সিনিয়র দাড়িয়ে আছে ৷
আরু চোখের ইশারা করে জিজ্ঞাসা করলো ,,,,,,
__”এনি প্রবলেম?”
তার মধ্যে বেশ লম্বা আর হ্যান্ডসাম ছেলেটা আরূর সামনের চেয়ারে বসে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল ,,,,,
__” তোমাদের সাথেই দরকার ছিল আর কি ৷”
আরু একটু ভাব নিয়ে আর তার সাথে অবাক হয়ে বলল,,,,,,
__” আমার সাথে আপনার আবার কি দরকার থাকতে পারে ভাইয়া?”
__” এই এই এই ! ডোন্ট কল মী ভাইয়া , অনলি হৃদয় ৷ আমি হচ্ছি হৃদয় মহামুদ , এই কলেজে সিনিয়র, এ বছরই লাস্ট ইয়ার ৷ সব জুনিয়রদের সাথে পরিচিত হয়েছি শুধু তোমাদের সাথেই পরিচিতি হয়নি তাই আলাপ করতে এলাম ৷”
আরু ভ্রু নাচিয়ে হৃদয়ের দিকে সামান্য ঝুঁকে গিয়ে বলল,,,,,,

__” ওহ রিয়েলি ! বেস্ট এখন আপনাদের আলাপ হয়ে গেছে আমি বিনতে আরুশি রহমান , ও সানা আর ও তিথি , ওদের দিকে ইশারা করে ৷ নাও ইউ ক্যান গো ৷”
এদিকে সানা আরুকে ইশারা করছে যেন সে হৃদয়ের সাথে বেশি কথা না বলে তবুও আরু তো সানার কথা শোনার পাত্রী নয় সব জায়গায় নিজের কারুকার্য দেখাতেই ব্যস্ত থাকে তাই এবারো শুনলো না….
__” ওহ অ্যাটিটিউড , আই লাইক ইট বাট আই ট্রাই টু ডু সামথিং ডিফারেন্ট উইথ ইউ গাইজ ৷”
আরু ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,
__” ঠিক বুঝলাম না ভাইয়া কি বলতে চাইছেন ৷”
__” ওহ প্লিজ ডোন্ট কল মি ভাইয়া,আই ওয়ান্ট টু বন্ড আ গুড ফ্রেন্ডশিপ among আস ৷ জাস্ট ফ্রেন্ড , সো চিল ৷
আমি তো তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর জন্যই সারা ভার্সিটি খুঁজে অবশেষে এখানে এলাম ৷”

__”ওহ রিয়েলি ৷”
__”ক্যান ই উস বি ফ্রেন্ডস?”
__” সিউর ৷হোয়াই নট ৷”
আরুর কথা শুনে সানা তো অবাক মানে যেচে খাল কেটে কুমির ডাকছে আরূ ৷ এই মেয়ে কে বারণ করা সত্ত্বেও কোনো শুনছে না দেখে সানার এবার প্রচন্ড রাগ হলো….
__” দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল , বাই দ্যা ওয়ে তুমি তো সানা তীনা, আরিশের বোন৷”
সানা মাথানিচু করে বলল,,,,,
__” হমমম ৷”

এদের সঙ্গে শত্রুতা বা, কোন বেয়াদবি করলে কোন একটা সিনক্রিয়েট হতে পারে আর তা সানা একদমই চাই না ৷ ভদ্রতা নামের একটা জিনিস থাকে ৷
ওদের কথার মাঝখানে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেল,,,,,
হৃদয় খাবার গুলোর দিকে একবার তাকিয়ে বলল,,,,
__” এত কম অর্ডার এটা কি কোন ভাবে মানা যায় ! আর তার উপরে তোমরা এখন আমার নিউ ফ্রেন্ড তাই একটু ট্রিট তো তোমাদেরকে প্রথমদিন দিতেই পারি তাইনা ! তাই এই খাবারগুলো ক্যানসেল করে নতুন করে খাবারের অর্ডার দাও ৷”
__” আমাদের কোন খাবার লাগবে না ভাইয়া , এই যে আপনি বললেন তার জন্য ধন্যবাদ ৷”
তিথিও সানার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,,,,,

__” আমাদের কোন খাবার লাগবে না এগুলোই এনাফ ৷”
ওদের কথার মাঝখানে আরূ বলে উঠলো,,,,
__” কি করে না করছিস কেন আর সত্তিই তো এগুলোতে কি কখনো কোন মানুষের পেট ভরে? খাবার আমি অর্ডার করছি বাট আগের গুলো cancel করার দরকার নেই, ওগুলোও থাক ৷”
__” এইতো একদম ঠিক বলেছো তুমি ৷ তাড়াতাড়ি অর্ডার করো….’
সানা অবাক হয়ে আরুর দিকে বলতে লাগলো,,,,,
__” এই যে তুই না বললি যে তোর খিদে ,,,,,,,,”
আরূ সানাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,,,,

__” কি বলছিস এসব, আর তুই ই তো বললি যে তোর খিদে পেয়েছে , আর এখন ভাইয়া যখন আমাদের ট্রিট দিচ্ছে তখন নিতে সমস্যা কি ?”
__” ওয়েটার এখানে আসুন, এরা কি খাবার অর্ডার দিছে সবকটা আনবেন , আর বিল নিয়ে টেনশন করবেন না ওটা আমি পে করবো৷”
কিছুক্ষণের মধ্যে ওয়েটার মেনু কার্ডটা আরুর হাতে দিল ,আর তিথি ও সানা উদাস হয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে কারণ এর পরে কি হবে ওরা কিছুই জানেনা , আর না আরূর মতিগতি বুঝতে পারছে ৷ এই কিছুক্ষণ আগেই তো বলল যে ওর খিদে নেই তাহলে এখন আবার কেমনে কি !”

__” 3 প্লেট নুডুলস, 3টে ফিস ফ্রাই উইথ গারলিক সস, পনির টিক্কা 3 টে,3 টা বারগার,1 প্লেট মোরগ পোলাও,1 প্লেট ভুনা খিচুড়ি, 1প্লেট বিরিয়ানি,ডিম ভরতা,চিংড়ির ভর্তা, চিকেন ভর্তা, আলুর ভর্তা, 2 প্লেট সিক কাবাব, 3 টে চিকেন লেগপিস, সাথে একু মটন হলে ভালো হয়, আর একটু ফ্রায়েড রাইস ও চলবে , স্য৷লাড 3প্লেট, আর ডেজারটে 6টা করনেটো, একটু মালাই হলে বেশ হয়, আর একটু পেসট্রি আইমিন হোয়াইট ফরেস্ট কেক , যেগুলো ৮০ টাকা পিস ওগুলো দেবেন. 3 টে ৷
আরুর করা আইটেম দেখি হৃদয়ের মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা , তার সঙ্গে সঙ্গে ওর বন্ধুগুলোর ও ৷ সানা আর তিথি তো পারলে চেয়ার থেকে পড়ে যায় এমনই ৷ মানে এইটুকু একটা চিকন মানুষ এত খায় কেমনে তা বুঝতে পারছে না ওরা আর তাছাড়া আরূ একটু আগেই বলল যে ওর খিদা নাই আর এখন এত খাবার অর্ডার করেছে দেখে কিছু বুঝতে পারছে না ওরা ৷
হৃদয় শুকনো গলায় ঢোক গিলে বলল,,,,,

__” আর কিছু লাগবে?”
আরূ কিন্তু কিন্তু করে বললো,,,,
__” আসলে কি বলেন তো ভাইয়া আজকে খাওয়ার মড নেই তাই অল্প অর্ডার দিয়েছি অন্য দিন আপনার কাছ থেকে বেশ জমিয়ে ট্রিট নেব কেমন ! আর সত্যি আজকে একদমই ইচ্ছা নেই না হলে আরেকটু অর্ডার দিতাম…”
__” হ্যাঁ তাইতো , তাইতো ৷”(হৄদয় মিথ্যা একটা হাসি দিল….)
খাবার ইতিমধ্যেই চলে এসেছে৷ আরূ খাবারের দিকে একনজর তাকিয়ে হৃদয় কে বলল,,,
__” ভাইয়া আপনিও নেন , খান ৷”
হৃদয় হাত নেড়ে না করে বলল,,,,,,

__” না না আমার লাগবে না ,তুমি খাও ৷ আসলে আমাকে আজকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে এক্সাম তো তাই আমরা যাচ্ছি তুমি খেয়ে নিও, বাই দা ওয়ে আবার দেখা হবে কেমন ৷”
আরু দাঁত বার করে হেসে বলল,,,,,
__” আচ্ছা ভাইয়া ৷”
হৃদয় বিল পে করতে গিয়ে দেখলো প্রায় 12 হাজার টাকার মত বিল এসেছে ৷ ও এতদিনে ভার্সিটিতে এসেও এত টাকার খাবার খাইনি যতো আরূ একদিনে খেয়েছে ৷ আর যাই হোক ভুলেও কখনো হৄদয় আরূকে ট্রিট দিতে যাবে না ৷ নিজের কাছে থাকা 7000 টাকা আর ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে 5 হাজার টাকা ধার করে নিয়ে রেস্টুরেন্ট এর বিল পে করে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেল ওখান থেকে ৷ আরু যখন ক্যান্টিনে থাকবে ও কখনো তখন ক্যান্টিনের মুখোমুখি হবে না……
হৃদয় চলে যেতেই আরূ হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে আর তা দেখে সানা বিরক্ত হয়ে বলল,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১১

__” এত খাবার অর্ডার করলি কেন?কে খাবে এত ? বেকার খাবার গুলো তো নষ্ট হবে ৷ আর তোকে বারবার বললাম হৃদয় ভাইয়ের সাথে কথা না বলতে তাও কেন বলতে গেলি? আর তুই না একটু আগে বললি যে তোর খিদা নাই তারপরে এত অর্ডার করলি যে তুই খেতে পারবি এগুলা….?”
__” হ্যাঁ সত্যিই তো বেকার বেকার বেচারার এত পয়সা নষ্ট ৷”
__” বেচারা কি? বেচারা হলে আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে আসত না ৷ বাই দা ওয়ে তুই যে বার্গার টা অর্ডার করেছিলিস সেটা খা আর এখান থেকে যেটা ইচ্ছা হয় সেটা খা আর আমি যে কফি অর্ডার করেছিলাম ওটা খাই ৷ তারপর এই বাকি খাবারগুলো রাস্তায় যারা খেতে পায় না তাদেরকে দিয়ে দেবো, ওরা পেটভরে খেতে পারবে ৷এতে যদি ওনার টাকাটা কোন কাজে লাগে !”

সানা আরূর মুখ থেকে এরকম একটা কথা শুনে খুব খুশি হলো , ভালো লাগছে আরূকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে পেয়ে ৷ মেয়েটা অন্য দিক থেকে দুষ্টামি করলেও মনের দিক থেকে যথেষ্ট ভালো সেটা সানা সব সময় জানে আর খুব বিশ্বাসও করে আরুকে….
ওরা তাড়াতাড়ি করে খেয়ে বেরিয়ে গেল যাওয়ার সময় খাবার গুলো নিয়ে রাস্তার মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিল……
এই যে বন্ধুগন আমি আরূ বলছি গো,,,,,
__” আপনাদের কি মনে হয় যে কেউ আর আমার সাথে আগ বাড়িয়ে ফ্রেন্ডশিপ করতে আসবে?”

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ১৩