তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ৭ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ৭
Suraiya Aayat

প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল প্রান্তর মা সুস্থ হয়েছেন , উনাকে বাড়ি শিফট করা হয়েছে হসপিটাল থেকে ৷ আরিশ ওদের ধানমন্ডির বাসায় প্রান্তর মাকে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু একেই প্রান্ত আরিশের কাছে থাকে ওর সব দায়িত্ব আরিশের ই বলতে গেলে প্রায়ই আর তার ওপরে ওর মা আসলে তার একটা দায়িত্বভার আরিশের উপর চাপবে সেই কারণে প্রান্ত ওর মাকে আরিশদের ধানমন্ডির বাসায় রাখেনি , ওর নিজের বাড়িতেই পাঠিয়েছে তবে সঙ্গে একটা আয়া রেখেছেন ওর মায়ের দেখাশোনা করার জন্য ৷ বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে প্রান্ত এখনো কিছুই ভাবছে না তবুও আরিশ ওর বিয়ে দেবে ৷ সামনে ওদের টেস্ট এক্সাম তাই ওদের exam শেষ হলে প্রান্তর বিয়েটা দেবে বলে ঠিক করেছে আরিস ৷

এই এক সপ্তাহের মধ্যে আরিসের সঙ্গে আরূর খুব কমই দেখা হয়েছে যেহেতু আরিসের কলেজে এক্সাম সেই কারণে খুব একটা আসতে পারছে না , আর তা নিয়ে প্রিন্সিপাল ও কোন সমস্যা করেননি আর কারণ উনি জানেন আরিশ কলেজে আসলেও বা কি আর না আসলেও বা কি ওই টপার হবে বরাবর যেমনটা হয়ে আসছে ৷

হাতে ফোনটা নিয়ে বসে আছেন অনিকা খান, তার সামনে বসে আছেন আফজাল খান ৷ দুজনের মুখেই চিন্তার ছাপ , ভাবছেন শুধু এটাই জানিস যে আরিশকে বিয়ের কথাটা বলবে কিভাবে?যদি কথাটা শুনে উল্টে রেগে যায় তাহলে ওকে সামলানো খুব মুশকিল…..
অনিকা খান ভীতু ভীতু চোখে আফজাল খান এর দিকে তাকিয়ে বললেন ,,,,,,

__”কথাটা কি আমাকেই বলতে হবে , তুমি বললে কি হয় না ?”
__”ও আমার থেকে তোমার কথা শুনবে বেশি, জানোই ও তো তোমার কথা কখনো ফেলতে পারে না ৷”
অনিকা খান শুকনো গলায় ঢোঁক গিলে সানার দিকে তাকালেন,,,,,,,
__”সানা মা তুই বল তোর ভাইয়াকে ,ও তো তোকে খুব ভালোবাসে, তোকে কিছু বলবে না ৷ ফোনটা তুই কর ৷”
ঊনি সানার হাতে ফোনটা দিতে চাইলেই সানা ওখান থেকে উঠে গেল ৷
__”আমার মাথা খারাপ যে আমি ওকে ফোন করে বলবো ওর বিয়ের কথা ৷ ওর উপরে কথা বলার কোনো সাহস নেই আমার আর সেখানে বিয়ের প্রস্তাব দেবে তো আমার কাছে আসমান থেকে ধপাস করে পড়ার মত অবস্থা ৷”
আফজাল খান এবার মিনতির সুরে বললেন,,,,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__” ফোনটা তুমিই করো,কথাটা যখন বলতেই হবে তখন দেরি করে লাভ নেই , তুমি একবার শুরু করো তারপর আমি তোমার সাথে গলা মিলাবো চিন্তা নেই৷”
অনিকা খান এবার ফোনটা হাতে নিয়ে আরিশের ফোনে কাছে ফোন দিল ৷ হাতটাও ওনার রীতিমতো কাঁপছে ফোনটা ধরে , অন্যদিন এমন হয় না কারণ রোজ রোজ তো আর আরিশকে বিয়ের প্রস্তাব দেন না ৷”
প্রথমবার ফোনটা করতে বেশ কয়েকবার রিং হলো তবে অপর পাশ থেকে কেউ ফোনটা তুললো না দেখে অনিকা খান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন,,

__” ও হয়তো ঠিক পড়াশোনা করছে ,সামনে এক্সাম তাই হয়তো ফোনটা ধরছেনা, না হলেও ঠিকই ধরতো৷
দ্বিতীয়বার ফোন দিতেই বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর কল কেটে যাওয়ার পূর্বেই ফোনটা ধরল আরিশ ৷
__”বলো আম্মু কিছু বলবে?”
উনি আমতা আমতা করে বললেন ,,,,,,
__” কোথায় ছিলি আব্বু এতখন, তোকে ফোন করেছিলাম আমি ৷”
__”জোরো কে নিয়ে হাটতে বেরোচ্ছিলাম তাই রেডি হচ্ছিলাম ,আর বাইরে এখন ভালোই কুয়াশা তো তাই আরকি ৷ ”
__” ওহ আচ্ছা ৷”

বেশ কিছুদিন হল আরিশ জোরোকে ওর নিজের কাছে এনেছে, রোজ রাতে আরিশ একবার হাঁটতে যায়, তবে তূর্য , সাহেল আর প্রান্তকে যেতে বলে,তবে ওরা যায় না , বাড়ি বসে ফোন চালাতেই ব্যাস্ত থাকে সেই কারণে ও একাই যাই , আর এক্ষেত্রে জোরোই ওর পারফেক্ট হাটার পার্টনার ওর কাছে ৷ তাছাড়া জোরোকে খুব ভালোবাসে আরিশ সেই কারণে নিয়ে এসেছে পারলে নিজের ঘরের মধ্যে থাকা একুরিয়ামটাও নিয়ে চলে আসতো….
তবে অত বড় একুরিয়াম টাকে তো আর তুলে আনা যায়না সেই কারণে আর আনেনি…
__” কিন্ত এখন প্রায় শীতকাল , তোর যাওয়াটা কি খুব দরকার ছিল?’
আরিশ মুচকি হেসে বললল,,,,

__” এটাই আমার আসক্তি ৷”
অনিকা খান কিছু বুঝতে না পেরে বললেন,,,,
__” কি বললি কিছুই তো বুঝলাম না ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল,,,,,,
__” কিছু না ৷”
__ওহহ ৷”
__” তা তুমি কি এখন কিছু বলবে? নাহলে আমি তোমাকে পরে কল ব্যাক করতাম আরকি ৷”
উনি উত্তেজিত হয়ে বললেন,,,,,,,
__” না না কোন দরকারি কথা নেই, এমনিই কল দিছিলাম আরকি ৷”
__” ওকে ৷”
কল কেটে দিতেই আফজাল খান রাগি চোখে তাকালেন,,,,

__” ছেলেটা তো জিজ্ঞাসা করছিল যে তুমি কিছু বলবা কিনা , তা কেন মিথ্যা কথা বললে যে তোমার কিছু বলার নেই ?”
__” আরে ও এখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছে তাই এখনি বললে যদি মেজাজটা বিগড়ে যায় তাহলে না জানি রাস্তার লোককে বেধড়ক পিটিয়ে দেয় ,আমাকে তো জনগণের কথাও ভাবতে হবে তাইনা !”
অনিকা খানের ফাজলামি করা কথা গুলো শূনে আফজাল খান হতাশ হয়ে আর কিছু না বলে রুমে ফিরে গেলে ৷ সমস্ত চিন্তার ভার এসে পড়ল এখন অনিকা খানের মাথায় , কিভাবে যে উনি কথাটা আরিশকে বলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না,,,,

জনশূন্য রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে আরিশ আর জোরো ৷
শীতের রাত তাই রাস্তায় মানুষ জনের খুব একটা দেখা মিলবে না ৷ অন্যদিন যখন হাটতে আসে তখন খালি হাতেই আছে তবে আজকে জোরো ওর সাথে প্রথম এসেছে তাই গিটারটা নিয়ে এসেছে, তাছাড়া ওরা বন্ধুরা মিলে যখন আসতো তখন প্রায়ই গিটারটা নিয়ে আসত কারন ওরা আরিশের গলায় গান শুনতে খুব ভালোবাসে, আর দিনের শেষে যদি আরিশের গলায় একটা গান দিয়ে তা না শেষ হয় তাহলে তো জমে যাই ৷

ওরা হাটতে হাটতে অনেকটা দূরে এসেছে ৷ রাস্তার ধারে যেখানে বড়ো ঝিলটা রয়েছে সেখানে পাঁচিল দিয়ে রেলিং করে দেওয়া আর পাশে বসার জন্য অনেক জায়গা রয়েছে, জোরোও ক্লান্ত হয়ে গেছে বেশ সেখানেই বসলো ওরা ৷ সাথে গিটার এনেছে আরিশ আর এই মুহূর্তে একটা গান হলে মন্দ হয় না….
জোরোও আরিশের পাশে বসে আছে শান্ত হয়ে , আরিশ গিটারটা নিয়ে গান ধরল,,,,,
__” আমি একলা হলেই বুঝতে পারি ভালোবাসি কতো,
একটা তুমি আছো বলেই ভালো আছি এতো,,,,
একটা তুমি আছো বলেই ভালো আছি এতো ৷”
আরুশিও একই রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল , আজ ওর টিউশানি ছিল তাই সেখান থেকে ফিরছে ৷ অন্যদিন গাড়ি করেই ফেরে , তবে আজ মাঝ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার কারনে মাঝরাস্তায় নিজে নিজেই একা হেঁটে আসছে ৷ আর তাছাড়া যেখানে গাড়িটা খারাপ হয়েছে সেখান থেকে আরূর বাড়ি বেশি দূরে নয় ৷
এখন রাত সাড়ে নটায় বাজে প্রায় ,অন্যদিন আটটা বাজলেই বাড়ি পৌঁছে যায় তবে আজকে বেশ অনেকটাই লেট হয়ে গেছে

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ৬

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটা সুরেলা কণ্ঠ কোথা থেকে ওর কানে ভেসে আসতেই আরূশি থমকে গেল ৷ গানটা শোনার জন্য যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই যেন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে আরু ৷আরিশের গান শুনে যেমনটা আশক্তি তৈরি হয়েছিল ওর মাঝে ঠিক তেমনটাই অনুভূতি কাজ করছে এখন…..
যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই যেন গানটা আরো বেশি শুনতে ইচ্ছা করছে ….
হঠাৎ করে আরিশ শুনতে পেলো কোন এক মেয়েলি কন্ঠের চেঁচামেচির আওয়াজ ,তা দেখার জন্য পাশ ফিরে দেখতেই দেখল একটা মেয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসছে ওর দিকেই আসছে আর জোরো মেয়েটাকে তাড়া করছে , অনেকটা দূরেই রয়েছে বলে ওর কাছে আরূর মুখটা স্পষ্ট নই ৷

__” বাঁচাও !”
কথাটা বলতেই আরিশের কাছে ছুটে এসে আরিশকে জড়িয়ে ধরলো আরূ,,,,,,আরূর মাথাটা আরিশের বুকে,,,বড়ো বড়ো শ্বাস নিচ্ছে আর হাপাচ্ছে আরূ৷
না পেরে নিজের মাথাটা সম্পূর্নরূপে আরিশের বুকে রাখল, হাত দিয়ে আরিশের কোটটা শক্ত করে চেঁপে ধরে রেখেছে, যেনো ছাড়লেই আরিশ পালিয়ে যাবে ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ৮