তোর নামের বৃষ্টি শেষ পর্ব 

তোর নামের বৃষ্টি শেষ পর্ব 
জাবিন মাছুর

চারপাশ অন্ধকার আচ্ছন্ন। নিস্তদ্ধ প্রকৃতির মেঘলা আকাশ। কিছু মূহুর্ত্য পর পর মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। বোধহয় যেকোনো সময় বিশাল ওই আকাশের বুক থেকে অঝরে বৃষ্টি পড়বে এই ধরনীতে।
হসপিটাল থেকে এসে মেঘাকে খুঁজে চলছে ত্বকি। আজ সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেঘাকে তার মনের কথা জানিয়ে দেবে। অপেক্ষা প্রহর শেষ করে নবীন সূচনা সৃষ্টি করবে। রুমের কোথাও মেঘাকে দেখতে না পেয়ে, ত্বকির অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল। এলোমেলো পায়ে ছুটে এলো মায়ের রুমে।

মোবাইল ফোনে নিজের ছোট বেলার বান্ধবীর সঙ্গে খেজুরে আলাপ করছিলেন ত্বকির মা। ঘরে ছেলের উপস্থিতি টের পেয়ে ফোন কেটে দিলেন সে। নিমেষেই হাসিমাখা মুখখানা গম্ভীর হয়ে উঠেছে।
-কী হয়েছে তোমার? মুখটা শুকনো লাগছে কেন? (ত্বকির মা)
ত্বকি মায়ের প্রশ্নের জাবাবে জড়ে জড়ে নিশ্বাস ত্যাগ করতে লাগল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো,
-মেঘা কোথায়? ওকে কোথাও দেখছি না কেন? (ত্বকি)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ত্বকির মা আগেই থেকেই ত্বকির অস্থিরতার কারনটা আন্দাজ করতে পারেছিলেন। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ থেকে মনের কথা লুকিয়ে রাখা গেলেও মায়ের সামনে মনের কথা লুকিয়ে রাখা যায় না। মা এমন একজন শ্রেষ্ঠ মনোবিজ্ঞানী যে সন্তানের মুখ দেখেই বলে দিতে পারে সন্তানের মনের কথা।
-অস্থির হওয়ার কিছু নেই। মেঘাকে পরে খুঁজেবে। আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে। (ত্বকির মা)
ত্বকির মায়ের কথা শুনে ভদ্র ছেলের মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়ল।
ত্বকির মা ত্বকির মুখের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,

-মেঘা কোন ক্লাসে পড়ে? (ত্বকির মা)
-কলেজে উঠেছে। (ত্বকি)
-তোমার কি এখনো মনে হয় মেঘা ছোট? অবুঝ শিশু (ত্বকির মা)
-নিশ্চুপ (ত্বকি)
-দেখ ত্বকি, আমি কোন কথা পেচাতে চাইছি না। সহজ ভাবে বলছি, তোমারা সাভাবিক জীবন যাপন কর। আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছ। (ত্বকির মা)
-হুম। কিন্তু মা আমর ভয় হয় মেঘাকে নিয়ে। (ত্বকি)
ত্বকির মা ত্বকির কাধে হাত রেখে শান্তনা শুরে বলল,

-কোন ভয় নেই। আমি তো জানি তুমি কখটা ভালোবাস তোমার মেঘাকে। মেঘা তোমার উপর অভিমান করে স্টাডি রুমে আছে। যাও, গিয়ে মেঘার অভিমান ভাঙাও। (ত্বকির মা)
ত্বকির মায়ের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে দিয়ে ছুটে স্টাডি রুমে চলে এলো। চারপাশে তন্যতন্য চোখ বুলিয়ে মেঘাকে খুঁজেতে লাগল। পুরো রুম ফাঁকা। মেঘা নেই। হঠাৎ ত্বকির চোখে পড়ল টেবিলের উপরে থাকা সেই চিরচেনা ডাইরিটার উপর। কিন্তু সে ডাইরিটাকে গুরুত্ব না দিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। অস্থির হয়ে সারা বাড়ি খুঁজেতে লাগল তার বউকে। কোথায় না পেয়ে, ছাদে চলে এলো।

অবশেষে, ছাদের এক কোনে রলিং ঠেসে দাড়িয়ে থাকতে দেখল তার মেঘাকে। সাথে সাথে তার প্রাণ ফিরে এলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। আকাশে দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল মেঘার কাছে।
কাছে এসে মেঘাকে সজ্জিত অবস্থা দেখে ত্বকির গলা শুকিয়ে আসতে লাগল। আহা, কতই না অপূর্ব লাগছে তার মিষ্টি বউটাকে।

ত্বকির পছন্দের হলুদ শাড়ি, হলুদ কানের দুল, দুই হাত ভরা হলুদ বর্নের চুরি পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘা। তার কোমর অবধি লম্বা চুলগুলো বাতাসের সাথে খেলা করছে।
ত্বকি নিজেকে সামলাতে পারছে না। প্রচুর অস্থির লাগছে তার। ত্বকি মেঘার একপল তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। আদুরে গলায় বলল,
-সরি রে বউ। (ত্বকি)

ত্বকির আওয়াজ পেয়ে মেঘার বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। চোখে ভেসে উঠলো, ডাইরিতে লেখা প্রতিটি শব্দ। হু হু করে কেদে উঠলো সে। আস্তে করে ত্বকির সামনে এসে, শার্ট খামচে ধরে বলতে লাগল,
-অনেক ভালোবাসি আপনাকে। খুব ভালোবাসি। আপনার চেয়ে আপনাকে বেশি ভালোবাসি। আপনি এমন কেন? আগে কেন বলেন নি আপনি আমাকে এতটা ভালোবাসেন। আমি যদি আপনার কষ্টটা বুঝতে পারতাম তাহলে, কখনো আপনাকে কষ্ট পেতে দিতাম না। (মেঘা)
মেঘার কথা শুনে খুশিতে ত্বকির চোখ জলে ছলছল করে উঠলো। হাটু ভেঙে বসে পড়ল মেঘার সামনে। আস্তে করে বলল,

-সত্যিই কি আজ আমার অপেক্ষা দিনের সমাপ্তি ঘটবে? আর পারছি না সহ্য করতে। (ত্বকি)
সাথে সাথে আকাশের বুক থেকে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি গড়িয়ে পড়তে শুরু করল। মেঘা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা উপভোগ করতে লাগল।
ত্বকি এক ধ্যানে দেখছে মেঘাকে। মন ভরে। ইশ, তার বউ যে এত সুন্দর তা তার কল্পনার বাইরে ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে মেঘার রুপ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ত্বকির হিংসে হচ্ছে বৃষ্টির ফোঁটার উপর। কেন এই বৃষ্টির ফোঁটা মেঘাকে বার বার ছুঁয়ে দিচ্ছে? ত্বকি সহ্য করতে পারছে না। হঠাৎ মেঘার হাত ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

-ঘরে চল। এই স্টুপিড, বৃষ্টি তোকে বার ছুঁয়ে দিচ্ছে। আমার আগেই আমার বউকে ছুঁয়ে দিচ্ছে।আমি আর পারছি না। বড্ড হিংসে হচ্ছে। (ত্বকি)
ত্বকির কথা শুনে আমি খিলখিল করে হেসে উঠলাম।
মেঘার হাসি দেখে ত্বকি বুকে হাত দিয়ে বলে উঠলো,

-বউ হাসিস না। তোর এই মিষ্টি হাসি আমাকে পাগল বানিয়ে দেবে। তোর হাসি দেখে আমার তৃষ্ণাক্ত মনটাতে ইচ্ছে জাগে তোর নামের বৃষ্টিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে। আর পারছি অপেক্ষা প্রহর গুনতে। বল না, কবে শেষ হবে আমার অপেক্ষার প্রহর। পূরণ হবে আমার ইচ্ছে।পূর্ণতা পাবে আমার ভালোবাসার। (ত্বকি)
ত্বকির ব্যাথা যুক্ত কথাগুলো শুনে আমার বুকের ভেতর দোমড়ে মোচড়ে গেল। চোখ বন্ধ করে বলে উঠলাম,

-আজ নাহয় আপনার অপেক্ষার প্রহর শেষ হক। আপনার ভালোবাসার পূর্ণতা পাক। (মেঘা)
মেঘার কথা শুনে ত্বকি আনমনে বলে উঠলো,
-ভয় হয় রে। বড্ড ভয় হয় তোকে যদি। যদি তোর নামের বৃষ্টিতে বিলিয়ে দিয়ে তুই নিজেই হারিয়ে যাস। আমার থেকে দূরে চলে যাস। (ত্বকি)
ত্বকির কথা শুনে আমি শক্ত করে তার হাত চেপে ধরে বললাম,

-কথা দিচ্ছি, আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। সবসময় আপনার পাশে থাকব। একসাথে সারাজীবন পার করে দেব। আপনি চিন্তা করবেন না। (মেঘা)
আজ ত্বকি মেঘার চোখে কোন ভয় দেখেতে পেল না। দেখতে পেল একরাশ ভালোবাসা।
ত্বকি মেঘার হাত দুটো আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

-সত্যি? (ত্বকি)
-হুম। (মেঘা)
-তাহলে, আজ নাহয় আমার এতোদিন অপেক্ষার প্রহর শেষ হোক। তোর নামের বৃষ্টিতে নিজেকে বিলিয়ে দেই। (ত্বকি)
ত্বকি আকাশে দিকে হাত বাড়িয়ে বলতে লাগল,
-শোনে রাখ বৃষ্টি আজ আমিও ভিজব। শুধু তুই সাক্ষী থাকিস। (ত্বকি)

সময় চলমান ।সবকিছু থামিয়ে রাখা গেলেও সময়কে থামিয়ে রাখা যায় না। আজ আমার খুশীর দিন। হ্যাঁ, সত্যিই খুশি দিন। কারন আমি মা হতে চলেছি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো পূর্ণতা পেতে চলেছে। সেই বৃষ্টি মাখা দিনের সাক্ষী আসতে চলেছে। তার অস্তিত্ব আমার ভেতরে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমি তার সন্তানের মা হতে চলেছি।আজ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যাক্তি মনে হচ্ছে। সত্যি আমি অনেক খুশি যার বর্ননা কাউকে দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই।

কিন্তু দুঃখ একটাই খবরটা শুনে ত্বকি আমার সাথে একবার ও কথা বলে নি। কেন বলেন নি তা আমি বুঝতে পারছি। আজ ও তার মনে হয় আমি ছোট মানুষ। খুব রেগে আছেন তিনি আমার উপর। আমিও কম নয়, আম্মুকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে যতক্ষন পর্যন্ত ওনি আমার সাথে কথা না বলবে ঠিক ততক্ষণ আমি মুখে খাবার তুলব না।

হসপিটাল থেকে বাসায় এসেছে ত্বকি। এসেই মায়ের কাছে থেকে শুনেছি যে, মেঘা দুপুরে কিছু খাইনি ঠিক তখন থেকে ত্বকি রাগে হাত পা কাঁপছে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছি। না, এখনো কোন পরিবর্তন দেখে দেয় নি আমার ভেতর। আগের মতোই চিকন দেখাচ্ছে। আচ্ছা, আমার কথা কি বাবু শুনতে পাচ্ছে? দূর তা পাবে কেন। ভাবেই খিলখিল করে উঠলাম। আল্লাহ, বাবু কি উনার মতোন হবে? নাকি আমার মতো?
এসব চিন্তা করছিলাম ঠিক এমন সময় হঠাৎ তার ধমক খেয়ে আমি ছিট্টে উঠলাম,

-এই মেয়ে, এখনো খাস নি কেন? বেশি সাহস হয়ে গেছে তোর? (ত্বকি)
-নিশ্চুপ (মেঘা)
-এই সময় না খেয়ে আছিস কেন? আমাকে কষ্ট দিতে তোর ভালো লাগে? (ত্বকি)
উনার ধমক শুনে আদুরে গলায় বললাম,
-আপনি রেগে আছেন, বাবুর উপর? (মেঘা)

বেবির কথা শুনে ত্বকি চুপ হয়ে গেল। মেঘার কাছে গিয়ে শক্ত করে ধরে বলে উঠলো,
-আমি কারো উপর রেগে নেই। আজকে আমিও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখবর জানতে পেরেছি। বিশ্বাস কর, আমি ভীষণ খুশি। কিন্তু, আমার শুধু ভয় হয় তোকে নিয়ে। তুই যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাস। (ত্বকি)
আমি তার কথা শুনে বললাম,
-কথা দিচ্ছি, আমার কিছু হবে না। বাবুর ও কিছু হবে না।

দেখতে দেখতে সাত মাস পার হয়ে গেল। এই কয় মাস তিনি আমাকে একদম চোখে চোখে রেখেছেন। আমার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছি। হাত পা ফুলে গেছে। আজ শরীরটা কেমন যেন দুর্বল দুর্বল লাগছে। ভালো লাগছে না কিন্তু নিশ্চিতে আছি এটা ভেবে যে এখন তো মাএ সেভেন ম্যান্ত। এখনো ডেলেভারির অনেক সময় বাকি।
খাবার টেবিলে বসে ভাত মুখে দিচ্ছি। হঠাৎ পেটের মধ্যে ব্যথা করে উঠলো। আমি ভেবেছিলাম হয়তো কমে যাবে কিন্তু না ব্যথা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আমি আর সহ্য করতে পারলাম। চিৎকার দিয়ে আম্মুকে ডাকতে লাগলাম।

ত্বকি আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন। সাথে তিথি আপু, সাদ ভাইয়া, বাবা, আম্মুরাও এসেছে। সবার মুখে দুশ্চিন্তার চাপ ফুটে উঠেছে। শুধু মাএ ত্বকির মুখে কোন চিন্তার চাপ নেই সে অঝরে নিশ্চুপে চোখের জল ফেলছে।
শুধু ত্বকির একটাই ভয় হচ্ছে, মেঘা যদি তাকে ছেড়ে হারিয়ে যায়।
আট মাস পর,
আল্লাহ রহমতে আমি বাবু দুজনই ভালো আছি। ডেলিভারির সময় আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। বেবি পুরোপুরি সুস্থ ছিল। আমাদের ছেলে সন্তান হয়েছে। ত্বকি আমাদের ছেলের নাম রেখেছে মেঘ। ভেবেছিলাম মেঘ আমার মতো দেখতে হবে। কিন্তু না পুরো বাপের মতো দেখতে হয়েছে। ইহাকে বলে বিশ্বাস ঘতঘতা। সাত মাস কষ্ট করে পেটে রাখলাম আমি। আর ছেলে হলো বাপের মতো। দূর ভালোলাগে না।

আজ বড্ড বাইরে ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। এই যে আটমাস তিনি আমাকে একবারও বাইরে যেতে দেয় নি। মেঘের জন্য তো একবার বাতরুমে গিয়েও শান্তি পাই না। মেঘের চোখের আড়াল হলেও কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আর ভালো লাগছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। আজকে যে করেই হোক ঘুরতে যাব।
ত্বকি মেঘকে কোলে নিয়ে খেলা করছে। বাপ ছেলের সেই মিল। শুধু আদর নিয়ে কারাকারি। আমি নিজের মতো রেডি হচ্ছি। আজকে ঘুরতে যাবই।

মেঘাকে সাজতে দেখে ত্বকি ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
-এই ভুতের মতো সাজ্জিস কেন? (ত্বকি)
-আমি আজকে ঘুরতে যাব। আমাকে নিয়ে চলুন। (মেঘা)
নিমিশেই ত্বকি মুখ কালো করে বলল,
-আজ না গেলে হয় না। আজকে যেতে ইচ্ছে করছে না। (ত্বকি)
-না যাব। প্লিজ,,, (মেঘা)
মেঘার আবদার ত্বকি ফেলতে পারল না। রাগ করে বলল,
-ঠিক আছে চল। (ত্বকি)
-থ্যাঙ্কু। (মেঘা)

রেডি হয়ে সেজেগুজে দাড়িয়ে আছি। আজ তার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে ইচ্ছে করছে। তাই সোজা তার কাছে গিয়ে একদমে বলে উঠলাম,
-একবার বলবেন, ভালোবাসি’ । বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছে। যদি মরে যাই তাহলে আপসোস থেকে যাবে।(মেঘা)
‘মরে যাই’ শব্দটা শুনে মেঘ কিছু না বুঝেই কান্না শুরু করে দিল। ত্বকি চোখ জলে ভরে উঠলো। আচমকা মেঘাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,
-চুপ। মারা যাওয়ার কথা আর একবারও বলবি না।তুই কেন বুঝিস না তোকে ছাড়া আমি কি নিয়ে বাঁচব। (ত্বকি)

ত্বকির কথাই মেঘা ফট করে বলে উঠলো,
-কেন আমার স্মৃতি, মেঘকে নিয়ে বাঁচবেন। (মেঘা)
ত্বকি আর সহ্য করতে পারল না অঝরে কান্না শুরু করে দিল।
মেঘা কিছুখন চুপ করে থেকে বলে উঠলো,
-হয়েছে আর কাঁদতে হবে না। চলুন আমি ঘুরতে যাব। যদি না নিয়ে যান তাহলে কিন্তু,,, (মেঘা)

অবশেষে তাদের ছোট পরিবার মেঘা, ত্বকি, মেঘ মিলে ঘুরতে বেড়েছে। গাড়ির মধ্যে থেকে মেঘা বাইনা ধরল সে নাকি আইসক্রিম খাবে।
ত্বকি তার মিষ্টি বউএর কথা ফেলতে পারল না। মেঘকে সাথে করে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আইসক্রিম স্টল এলো। মেঘা গাড়িতে বসে তাদের দেখতে লাগল।

ত্বকিরা মিলে আইসক্রিম কিনছে এমন সময় আমি রাস্তার ওপারে হাওয়ায় মিঠাই দেখতে পেলাম। তার জন্য আর অপেক্ষা করলাম না। গাড়ি থেকে নেমে লাফিয়ে লাফিয়ে হাওয়া মিঠাই আনার জন্য হাঁটতে লাগলাম।
মেঘা হওয়ায় মিঠাই কেনার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিল ঠিক এমন সময় একটা ট্রাক এসে মেঘার উপর দিয়ে চলে গেল।

শুধু পড়ে রইল মেঘার নিথর দেহটা। মূহুর্ত্য চারপাশে মানুষ জড় হয়ে গেল। কোলাহল শুরু হয়ে গেল।
হঠাৎ এক্সিডেনটের হওয়ার কথা শুনে ত্বকির বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। তাড়াতাড়ি মেঘকে নিয়ে লোকজন ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ল। সাথে সাথে তার হাত থেকে আইসক্রিম মাটিতে পড়ে গেল। ছুটে গেল তার মিষ্টি বউটার প্রাণহীন দেহের কাছে।

মেঘকে পাশে রেখে মেঘাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলতে লাগল,
-উঠ বউ, তোর কিছু হয়নি। তোর কিছু হতে দেব না। ওই কথা বলছিস না কেন? তোকে ছাড়া আমি কি করে বাঁচব। ওই কথা বলছিস না কেন? (ত্বকি)
ত্বকি আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই জানশূন্য হয়ে মাটিতে লুকিয়ে পড়ল। মেঘ চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।
হাপড়িয়ে ছুটে গেল মায়ের কাছে। মেঘার বুকের উপর উঠে চোখে মুখে ইচ্ছে মতো চুমু খেতে লাগল আর কাঁদতে লাগল।

তোর নামের বৃষ্টি পর্ব  ২৯

আজও পৃথিবীতে বাতাস বহে। সময় মতো সূর্যদ্বয় হয় ঠিক সময়ে মতো অস্ত যায়। প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে চলছে। শুধু থেমে গেছে ত্বকির জীবন। মেঘাহীনা সে পাগল হয়ে গেছে। দুধের শিশু মেঘ আজ মাকে ছেড়ে ভালো নেই। সারাদিন মায়ের ওড়না বুকে চেপে কাঁদে।

মেঘার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ত্বকি। আজকেও চারপাশ মেঘচ্ছন্ন। সবকিছু আগের মতোই চলমান। শুধু মেঘা নেই। মেঘার কবের সামনে দাঁড়িয়ে ত্বকি পাগলের মতো বলে যাচ্ছে।
তুই কি ভেবেছিস
তোকে ছাড়া আমি ভালো আছি?
কথা তো ছিল একসাথে
হাত ধরে চলব সারাজীবন
এক ফোঁটা বৃষ্টি দিয়ে
নিজেকে মহান প্রমাণ করতে চাইছিস তুই
শুধু চেয়েছিলাম #তোর_নামের_বৃষ্টি ভিজতে
তুই আসলেই কোনদিন আমাকে বুঝলি না।

(লেখাঃজাবিন মাছুরা ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন