তোর নেশালো শহরে গল্পের লিঙ্ক || লেখিকা:ঈশিকা খানম

তোর নেশালো শহরে পর্ব ১+২
লেখিকা:ঈশিকা খানম

বারের বিশেষ রুমগুলোর একটিতে আমায় জোর করে টেনে নিয়ে সেখানের বিছানায় ফেলে দিল এক যুবক। দেখে মনে হচ্ছেনা সে মাতাল। তবে তার চোখে আমি স্পষ্টভাবে ক্রোধ দেখতে পারছি। আমি সেখানে থেকে উঠে যেতে চাইলে সে আমার হাত বিছানায় জোরে চেপে ধরে বলল,
তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার ভাইকে এরোন আহমেদ এর ভাইকে সবার সামনে চর মেরেছ?

বুঝতে পারলাম যে ব্যাক্তিটি আমাকে এখানে জোর করে টেনে নিয়ে এসেছে তার নাম এরোন আহমেদ। কিন্তু আমি কাকে চর মারলাম আবার? তাও আবার সবার সামনে? চর তো আমার এই লোকটিকে মারতে ইচ্ছে করছে আমায় এভাবে নিয়ে আসার জন্যে। আবার ভয়ও হচ্ছে, ইনি যদি আমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে? আল্লাহ বাচাও আমাকে। আমি জোরে চিৎকার করা শুরু করলাম।
-বাচাও আমায় কেউ! এই লোকটা আমার ক্ষতি করতে এসেছে। কেউ বাচাও আমায়!
-এই মেয়ে তোমাকে কে বলেছে আমি তোমার ক্ষতি করতে তোমাকে নিয়ে এসেছি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-তো?
-এর মানে কি তুমি চাও আমি তোমার কোনো ক্ষতি করি?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দিলাম। সে আবার বলল,
-নিজেকে কি মুভি এর নায়িকা মনে কর তুমি?
-ঠেকা পড়েনি তো আমার।
-তাহলে তুমি এভাবে বাচাও কেউ আছো করছ কেন?
-যদি আপনি আমার কোনো ক্ষতি করে বসেন তাই নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি।
-তোমার মতো এই দুইটাকার মেয়েকে কি মনে হয় আমি কিছু করতে যাব? কি আছে তোমার?
কথাটায় যথেষ্ট অপমানিত হলাম আমি। কিন্তু এরোন আহমেদ যে আমার কোনো ক্ষতি করবে না তা নিশ্চিত হলাম।আমি বললাম,
– আমায় এভাবে এখানে জোর করে নিয়ে আসার কারণ কি?

– হুম পয়েন্টে এসেছো তাহলে। তোমার সাহস কি করে হয় ব্যাডমিন্টন ক্লাবে এরিককে সবার সামনে আজ চর মারার? আবার তুমি দেখি বারে ওয়েট্রেস এর কাজ কর।
– এই এরিক আবার কে?
– মশকরা কর তুমি আমার সাথে?
– আরে ধ্যাত আমি জানিনা তো এই এরিক মেরিক নামের কোনো মানুষকে। আর আপনি এখনো আমার উপরে এভাবে আমার হাত চেপে ধরে আছেন কেন? ব্যাথা লাগেনা বুঝি আমার?
– ওহ সরি।

এরোন আহমেদ আমার হাত ছেড়ে উঠে বসল। তারপর আমায় সোজা হয়ে বসতে সাহায্য করল। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
উফ কি ভারী আপনি!
-সরি, কিন্তু তুমি কি সত্যিই এরিককে চিনো না?
-কেন তিনি কোন মহামানব যে আমায় তাকে চিনতেই হবে?
-তুমিই তো ওকে চর মারলে।
-আচ্ছা বুঝলাম আমি মেরেছি। কিন্তু আপনার ওই ভাই কি করেছিল যে আমার তাকে মারতে হয়েছে?
-সেটা তো জানিনা। এই ঠিক বলেছো তো।
-হুম। আপনি এতো নিশ্চিত কিভাবে যে আমিই আপনার ভাইকে চর মেরেছি?
-কারণ একদিন বিকেলবেলায় সে আমাকে তোমার ছবি দেখিয়েছিল।

-আমার ছবি?
-হ্যাঁ তোমার ছবি।
-আর আপনি কি বলেছিলেন যেন আমি এরিককে ব্যাডমিন্টন ক্লাবে চর মেরেছি তাইতো?
-হুম।
-এরিক নাম বলেছিল যার ছবি আপনাকে দেখিয়েছে?
-হ্যাঁ প্রায় তো ওর মুখে তোমার নাম শুনি আমি।
-কি?
-হুম
-বলেন তো আমার নাম কি?
-রাহি।
-বুঝেছি।
-কি?
-এটা রাহির কাজ।
-হ্যাঁ এটা তোমার কাজ।
-ধ্যাত আমার নাম মিহি। রাহি হল আমার জমজ ছোট বোন।
-ওহ, কি?

-হ্যাঁ রাহি আমার জমজ বোন। এই আপনার সাহস তো কম না আপনি আমার বোনকে এভাবে এখানে মিয়ে আসতে চেয়েছিলেন।
-সরি, আসলে ও আমার ভাইকে চর মেরেছে শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল।
-এই খবর আপনাকে দিয়েছে কে?
-এরিকের এক বন্ধু।
-এরিক দেয়নি?
-না। আচ্ছা আমি আজ বাড়িতে গিয়ে রাহিকে প্রশ্ন করব। আপনি গিয়ে আপনার ভাই এরিককে প্রশ্ন কইরেন এই ঘটনার ব্যাপারে।
-ওকে। আপনার বোন কিন্তু খুব ভালো ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়।
-হ্যাঁ জানি, ওর ছোট থেকেই একজন নামকরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার খুব ইচ্ছে। আজ ও সফলতার সন্ধানে সেই পথেই অগ্রসর হচ্ছে।

-আপনি এখানে কাজ করেন কেন?
-আমার বোনের স্বপ্নই আমার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন সফলের জন্যেও বারের ওয়েট্রেস এর কাজ করি আমি।
-আপনার মা বাবা?
-নেই।
-ওহ সরি।
-সমস্যা নাই, আমি এখন আসি। আমার কাজ আছে। পরে বার ম্যানেজার আমায় বকবে।
-হুম, এই নিন আমার কার্ড। কোনো প্রয়োজন হলে আমায় জানাবেন প্লিজ। আমি খুব খুশি হব তাহলে। আর আজকের জন্যে মাফ করবেন আমায়।
-ঠিক আছে।

আমি এরোন আহমেদ এর কাছে থেকে কার্ডটি নিয়ে নিলাম। তারপর সেখানে থেকে সোজা কাজে চলে এলাম। মানুষটিকে খারাপ ভেবেছিলাম আমি, কিন্তু তিনি খারাপ নন। ধ্যাৎ আমিও যে কি না কি ভাবি! এখন সব কাজ গুছিয়ে আমায় হোস্টেলে যেতে হবে। রাহি মনে হয় এখনো না খেয়ে বসে আছে আমার জন্যে। কাজ সব শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম হোস্টেলের উদ্দেশ্যে। আজ ভাগ্যটা ভালো আমার, তাই খুব জলদি একটা রিকশাও পেয়ে গেলাম।

এখন যতক্ষনে আমি পৌছে যাচ্ছি সেই সময়কে অপচয় না করে আপনাদের কাছে আমার আর বোনটার পরিচয় দিয়ে দেই। খুব বেশি বড় না আমাদের পরিচয়। তাই মনে হয়না আপনারা বেশি বিরক্ত হবেন তা জানতে গিয়ে। আমি তাসনিয়া জাহান মিহি। আর আমার চেয়ে ২ মিনিটের ছোট আমার জমজ বোন তাসনিম জাহান রাহি। আমাদের বাবা আমাদের জন্মের ৩ মাস আগেই সমুদ্রে জাহাজডুবিতে মারা যায়। আর আমার মা ৪ বছর আগে আমাদের ছেড়ে বাবা যেই পথে পাড়ি দিয়েছে ঠিক সেই পথে পাড়ি জমান। আমি দিনে টিউশনি আর রাতে বারের ওয়েট্রেস হিসেবে কাজ করে আমাদের দুইজনের খরচ চালাই।

দুইজনের তো তাই লেডিস হোস্টেলে বেশি খরচ লাগেনা। চলে যায় আমাদের। রাহিও দুইটা টিউশনি পড়ায়। আর এখন পাশাপাশি ব্যাডমিন্টন ক্লাবে জয়েন হয়েছে তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। দুই বোন মিলে দিন কেটে যাচ্ছে ভালোই। দেখেন আপনাদের কাছে এই পরিচয় দিতে দিতে পৌছেও গিয়েছি আমি। এখন রাহি রাগ না করে থাকলেই হয়। মেয়েটা আবার পাজি বেশি। এইযে একজনকে চর মেরে দিয়ে বসে আছে।আর ওর কাজে ভুক্তভোগী আমি। চাবি দিয়ে গেট খুলে ঢুকে পড়লাম রুমে। আমার ঢুকতে দেরি কিন্তু রাহির ঝারি দিতে দেরি হল না। রাহি বলতে শুরু করল,

এতো সময় লাগে কেন? জানিস তো আমার একা থাকতে ভালো লাগেনা। খিদেও পেয়েছে কত! আর তুই খালি দেরি করিস।
-আমি যে কাজ করি একটু তো দেরি হবেই।
-অন্য কাজ কর না? ভালো লাগেনা আমার একা থাকতে। সময়গুলো পার হতে গিয়ে যে যুদ্ধ শুরু করে দেয়।
-পেট চালাতে হলে এই কাজটা এখন যে করতেই হবে। তুই যখন নামকরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হয়ে যাবি, অনেক টাকা রোজগার করবি, তখন ছেড়ে দিব আমি এসব কাজ। তখন আমি শুধু বোনের টাকায় আয়েশ করব। আহ কি শান্তি!

-হুম জানিস আমি যদি পারতাম তাহলে তোকে কোনো কাজই করতে দিতাম না।
-জানি তো। আমি তো চাই একদিন সেই সময় আসুক। সেদিন তুইও খুশি আর আমিও।
রাহি আর কিছু বলল না। সোজা এসে আমায় জড়িয়ে ধরল। মেয়েটা এমনই, পাগলামি করবে, রাগারাগি করবে, তারপর নিজেই এমন বাচ্চামি করবে। যতই হোক মনটা খুব ভালো ওর। রাহি অন্যের কষ্ট সহ্য করতে পারেনা। আমি রাহিকে বললাম,

-নামাজ পড়েছিস?
-আজ ছুটি।
-কেন?
-আপু??
-ওহ বুঝতে পেরেছি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর একসাথে খেতে বসব।
-হুম যাও।
রাহি আমায় ছেড়ে দিল। আর আমি চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম দুইজনে।
অন্যদিকে….
রাতে এরোন বাসায় এসে দেখল এরিক ড্রইংরুমে বসে বসে পপকর্ন খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। এরোন যে এসেছে তবুও তার দিকে তাকায়নি। এরোন চুপচাপ নিজের রুমে চলে যেতে লাগলো। তখন এরিক এরোনের দিকে না তাকিয়েই টিভি দেখতে দেকগতে প্রশ্ন করল,

এসেছিল আপনার জিএফ?
এরোন ভ্রু কুচকে এরিকের দিকে তাকালো। এরিক তখনো এরোনের দিকে তাকায়নি। এরোন বলল,
নাহ সে আসেনি আজও। কি জানি কি হয়েছে রিয়ার?
এরিক তখন গানের সুরে বলে উঠলো,
বেদের মেয়ে রিয়া ভাইয়াকে কথা দিয়েছে,
আসি আসি করে ভাইয়াকে ফাঁকি দিয়েছে।
এরোন খুব চটে গেল এরিকের এই কথায়। এরোন টিভির রিমোট কেড়ে নিয়ে টিভি অফ করে এরিকের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,

মজা লাগছে তোর? আমি এদিকে চিন্তায় মরে যাচ্ছি, ২ সপ্তাহ ধরে রিয়ার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নাই। আর তুই? একে কি ভাই বলে?
এরিক উঠে দাঁড়ায় আর বলে, আমি বলেছি রিয়া শুধু তোর সাথে টাইম পাস করছে। একদিন তোকে ফাঁকি দিবেই।
-আমার রিয়া এমন করতেই পারেনা।
-হুহ আমার রিয়া। (ভেঙ্গিয়ে)
-ওই তুই কিন্তু?

-আমি ঠিকই করি যখন যা করি।
-তাহলে আজ কি এমন কাজ করে এসেছিলি যার জন্যে সবার সামনে ব্যাডমিন্টন ক্লাবে রাহি তোকে চর মেরেছে?
-মানে?
তাহলে আজ কি এমন কাজ করে এসেছিলি যার জন্যে সবার সামনে ব্যাডমিন্টন ক্লাবে রাহি তোকে চর মেরেছে? ভ্রু উচিয়ে এরিককে প্রশ্ন করল এরোন।
-মানে? ( অবাক হয়ে বলল এরিক)
-মানে আমি কিন্তু জেনে গিয়েছি যে আজ রাহি তোকে চর মেরেছিল। শুধু কারণটাই আমার জানা নাই।
-তাহলে তার থেকেই জেনে নাও যে তোমায় খবর দিয়েছে।
-এমন ঘাড়ত্যাড়ামি না করে সোজাসাপটাভাবে উত্তর দে। কি করেছিলি?
-শুনবে?
-হুম।
-তাহলে শুন।

ফ্ল্যাশব্যাক…
রাহি মাত্র প্র‍্যাক্টিস শেষ করে ক্যান্টিনে এসে বসল। তখন একটা মেয়ে এসে তাকে বলল,
তুমি তো রাহি তাইনা?
-হুম।
-তোমাকে একজন এই চিরকুটটা দিতে বলেছে।
-কি আছে এতে?
-আমি দেখিনি।
-কে পাঠিয়েছে?
-তাও বলতে পারব না।
-কেন?
-কারণ আমাকেও একটা মেয়ে এসে বলেছে যে তাকে এটা দেওয়া হয়েছে আমাকে দেওয়ার জন্য যাতে আমি আবার গিয়ে তোমাকে দিয়ে দেই।
-বাব্বাহ! তো দাও দেখি কি আছে এতে? আর ধন্যবাদ তোমাকে।
-ঠিক আছে তুমি থাকো আমি যাই, বাই।
-বাই।

মেয়েটা চলে গেল। আর রাহি চিরকুটটা খুলতে থাকলো। কিন্তু চিরকুট এর লিখাগুলো পড়ে তার মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল। প্রচন্ড রেগে গেল রাহি। চিরকুটটা হাত দিয়ে মোচড়িয়ে নিচে ছুড়ে ফেলে দিল। চিরকুটটায় খুব অশ্লীল কথা লিখা ছিল আর নিচে লিখা ছিল E। রাহি মাথায় তখন এরিকের নামটাই আসে। সে উঠে যায় সেখানে থেকে আর সোজা এরিকের কাছে যায়। ও হ্যা যাওয়ার আগে আবার নিচে ফেলে দেওয়া সেই চিরকুটটা উঠিয়ে হাতে নিয়ে নেয় সে। এরিকের সামনে যাওয়ার পর রাহি কিছু না বলে এরিকের টি-শার্ট টেনে এরিককে উঠায়। এরিক তার বন্ধুদের সাথে বসে ছিল। হঠাৎ রাহির এহেন কাজের কারণ সে ঠাওর করতে পারেনি। আর রাহি তো রেগেমেগে এরিককে টেনে নিয়ে অনেক লোকের সামনে একটা চর মেরে দেয়। এরিকের কাছে এটা খুব অপমানজনক। আশেপাশে ভিড়ও জমে গিয়েছে। এরিক কিছু বলতে গেলেই রাহি গর্জে উঠে বলে উঠল,
-কি মনে করেন নিজেকে? আপনার প্রপোজ এক্সেপ্ট করিনি দেখে আজ আমার সাথে এমন করবেন?
-কি করেছি আমি?

-আপনি যে এতো খারাপ কুরুচিপূর্ণ একটা মানুষ তা আমার জানা ছিলনা।
-আমাকে তো বলবা কি হয়েছে?
তখন রাহি এরিকের মুখে কাগজটা ছুড়ে মেরে বলল,
-দেখুম নিজের কৃতকর্ম। অবশ্য আপনি তো জানেনই আপনি কি করেছেন? এটা তো শুধু তার প্রমান।
এটা বলে রাহি চলে গেল। আর এরিক চিরকুটটা খুলে লিখাগুলো পড়ল। সেগুলো পড়ে য়ার নিজেরই রাগ উঠছে। আর সেক্ষেত্রে রাহি যেহেতু একটা মেয়ে তাই তার রাগ উঠাটা স্বাভাবিক। এরিক মনে মনে রাহিকে কোনো দোষ দিলনা। বরং কোন বান্দা তার রাহিকে এই চিঠিটা দিয়েছে তাকে খুজে বের করে রাহির পায়ের সামনে ফেলার সংকল্প করল।
বর্তমান…

হুম বুঝলাম ঘটনাটা। তুই এমন কিছু করবিনা কখনও তা আমি জানি এরিক, এরিকের কাধে হাত দিয়ে বলল এরোন।
-হুম ধন্যবাহ ভাইয়া।
-কিন্তু তোর কি মনে হয় কাজটা কে করেছে?
-আমি জানিনা। আমাদের ক্লাবে E লেটার দিয়ে শুরু নামের মানুষের অভাব নাই। আবার এমনও হতে পারে যে কেউ আমাকে ফাসাতে এই কাজ করেছে।
-এই সামান্য ব্যপারে তোকে ফাসানোর কি আছে?
-থাকতেও পারে। আচ্ছা ঘুমাতে চল, পরেরটা পরে দেখা যাবে।
-হুম চল।
এরোন আর এরিকও পরে ঘুমিয়ে গেল।
পরেরদিন….

সাদা মানেই শুভ্রতা। সাদা রংটি দেখলেই আমাদের মনটা নরম হয়ে যায়। সাদা রঙ এ কোনো ভেজাল পাওয়া যায়না। সাদা নিজের সাথে অন্য রঙ মিশ্রিতে করে নিজেকে হরেক রকম রুপ দিতে পারে। এই রুপের বর্ণনা করে করে আমরা যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ি তবুও শেষ করা যাবেনা। আর আজ এই সাদা রঙ পড়ে বসে আছি আমি। জানিনা আমাকে কেমন দেখাচ্ছে। তবে এইটুকু বলতে পারি খারাপ দেখাবে না আমায়। কারণ আমি আর রাহি আলহামদুলিল্লাহ দেখতে মাশাল্লাহ। এজন্য আমাদের প্রপোজের যেমন অভাব হয়না তেমনই ঝামেলারও অভাব হয়না। রাহি তো যাওয়ার সময় বঅলে গিয়েছে আমাকে শেওড়াগাছের সাদা পরীর সাথে তুলনা করে চলে গিয়েছে। এটা ম্যাডাম আমার প্রশংসা করল নাকি বদনাম করল সেটাই বুঝতে পারলাম না। যাইহোক এখন আপনাদের সাথে বেশি কথা বললে আমার ভার্সিটিতে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে। আবার বিকেলে একটা জব ইন্টারভিউও রয়েছে। আমি বুঝলাম না তারা সময় পরিবর্তন করে বিকেলে কেন সময়টা দিল। যাইহোক আমার একটা চাকরি প্রয়োজন তাই আমায় যেতেই হবে আমি যতোই ক্লান্ত হইনা কেন। আমি রওয়ানা দিলাম, টাটা।

রিয়া তোমার কি হয়েছে আমায় বলো? তুমি আমার সাথে এমন কেন করছ? কেন ইগনোর করছ আমায়? রিয়ার হাত টেনে ধরে বলল এরোন।
-আজব মানুষ তো তুমি এরোন। একটা সিম্পল কথা তুমি কেন বুঝতে পারছো না? আমি আর তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনা। কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখতে চাইনা।
-কিন্তু কেন? কি দোষ করেছি আমি? একবার বল আমায়, আমি সব শুধরে নিব। সব ঠিক করে দিব আমি।
-হাত ছাড় আমার। ( এরোনের হাত ঝাকি দিয়ে বলে উঠল রিয়া।)
-আমার সাথে এমন কর না রিয়া প্লিজ। মরে যাব আমি।
-তাহলে মরেই যাও।
-কেন করছ তুমি এমন আমার সাথে?
-কারণ এখন তোমার চেয়েও অনেক বড়লোক অনেক বড় মনের মানুষ আমায় ভালোবাসে। আশা করি তুমি আর আমার পিছু করবেনা।

এরোন এবার প্রচন্ড রেগে গেল। রিয়ার দুইহাত জোরে চেপে ধরে বলে উঠল,
তুই এমন করতে পারিস না আমার সাথে। আজ টাকা পেয়ে অন্য কারো হয়ে গেলি তুই? একসময় তো বলেছিলি তুই আমারই থাকবি, আমাকেই ভালোবাসবি।
– এখন আর বাসি না।
– তুই এমন করতে পারিস না।
– হাত ছাড়ো বলছি।
– রিয়া প্লিজ।
রিয়া এবার চিৎকার করে লোক জড় করল। আশেপাশে অনেক মানুষ জড় হয়ে গেল। তারা কি হয়েছে জানতে চাইলে রিয়া তাদের বলল এরোনকে সে চিনে না আর সে তার সাথে অসভ্যতামি শুরু করেছে। এরোন নিজের সাফাই করার চেষ্টা করল কিন্তু তখন কিছু লোক এসে এরোনকে মারা শুরু করল। এরোন নিজেকে রক্ষা করার অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু এতোগুলো মানুষের সাথে তার পেরে উঠা কষ্টকর। এরোন চিৎকার করে বলতে লাগলো,

রিয়া তুমি কেন মিথ্যা কথা বলছ? কেন এদের বলছ না যে আমি তোমার সাথে কোনো অসভ্যতামি করিনি?
কিন্তু রিয়া এরোনের কাছে সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসলো না। এরোনের প্রতিটা চিৎকারের বিনিময়ে সে একটা পৈশাচিক হাসি দিল। তারপর রিয়া সেই স্থান ত্যাগ করল। আর ঐদিকে এরোনকে রক্তাক্ত করে ফেলছিল ওখানকার জনগণ। আমি ওখানে এতো চিৎকার আর ভিড় দেখে সামনে এগিয়ে আসলাম। আর সেখানে গিয়ে যেটা দেখালাম তাতে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি চিৎকার করে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এরোনকে নিজের কছে নিয়ে আসলাম। ওরনা দিয়ে তার শরীরের রক্ত মুছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তারপর তাদেরকে বললাম,

আপনারা মানুষ? এভাবে কাউকে কেউ মারে?
তখন একজন বলল, এভাবেই মারা উচিত যারা মেয়েদের সাথে অসভ্যতা করে।
আমি রেগে গিয়ে বললাম, চলে যান এখানে থেকে আপনারা, চলে যান।
সবাই সেখানে থেকে চলে গেল আর আমি অনেক কষ্টে তাকে উঠিয়ে সামনের ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম। এরোন আমার কাধে ভর দিয়ে হাটছিল। সামনে একটা ক্লিনিক পেয়েছি আমাদের ভাগ্য ভালো দেখে হয়ত। সেখানে এরোনের ড্রেসিং করিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এলাম। এরোন একজনকে কল দিয়ে আসতে বলল আর বলল যে সে এখানেই বসে অপেক্ষা করবে তার গাড়ি আসার এবং আমায় যেতে বলল।

তখন আমি তাকে প্রশ্ন করলাম,
একা এখানে থাকতে পারবেন তো?
-হুম।
-দেখলেন আপনিই কাল বলেছিলেন যে আমার কোনো প্রয়োজনে আপনার কাছে আসতে। আর আজ আপনার প্রয়োজনেই আল্লাহ আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিল। খোদার কি খেলা তাইনা!

তোর নেশালো শহরে পর্ব ৩