তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৯+২০

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৯+২০
শান্তনা আক্তার

রিমি নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে। আজ শুক্রবার। সরকারি ছুটি। রিমি বাসায় আছে তাই। পুরো রাতে ছটফট করেছে শুধু ও। এক রাতেই আহসানের প্রতি রিমির ভালবাসার অনুভূতিটা আরও গাঢ় হয়ে গেল। সুযোগ পেলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠছে কিছুক্ষণ পর পর। তবে সকলের দৃষ্টিগোচরে। তিয়াসাকে রুম থেকে বের হতে দেখে আবার শুরু হয়ে গেল রিমি,

‘অ্যায়ায়া তারখাম্বা আমার সাথে এমন কিভাবে করতে পারলো? আমি যে কিছুতেই ওই স্রুতি নামক অপরাধী টাকে মেনে নিতে পারছি না। বোইন স্রুতি, বোইন স্রুতি রে তুই অপরাধী রে। আমার ভালবাসার তারখাম্বারে দে ফিরাইয়া দে। এতো পোলা থাকতে ক্যান পড়লো আমার তারখাম্বার উপর নজর? আমি এখন পাগল হবো, কেউ পাইবে না খবর!’
রিমি কান্না করছে আর গাইছে। আচমকাই তিয়াসা চলে আসে আর রিমির গান শুনে ফেলে। তার পর পরই তিয়াসা বলে ওঠে,
‘আপু এই তারখাম্বা টা কেরে?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিয়াসাকে দেখে রিমি সোজা হয়ে বসে বিছানায়। তারপর বৃথা হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘কে তারখাম্বা? আমি কি জানি।’
তিয়াসা কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে বলে, ‘আমি স্পষ্ট শুনেছি। তুই তারখাম্বা নিয়ে গান গাচ্ছিলি সাথে কান্না কান্না গলায়।’
‘ও হ্যাঁ,আসলে একটা ওয়েব সিরিজ দেখেছিলাম। সেখানে নায়কটার নাম তারখাম্বা। খুবই পঁচা। নায়িকাকে রেখে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করবে বলেছে।’

‘হোয়াট এ জোক? তারখাম্বা কেমন ওয়েব সিরিজ? দেখা তো আমায়।’
‘কিহ! আ আ আসলে কি বলতো,এখন ফোনে নেট নেই। অন্যসময় দেখাবো।’
‘আচ্ছা চলবে। এখন একটা শাড়ি পড়তো। আর একি চেহারার হাল? লাল ভূত দেখা যাচ্ছে।’
‘শাড়ি! কেন?’
‘তুই পড় তারপর বলছি। একটা সারপ্রাইজ আছে।’
‘কি সারপ্রাইজ?’

‘পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী সারপ্রাইজ নামক শব্দটা শুনে কেন যে বলে কি সারপ্রাইজ? সারপ্রাইজ তো সারপ্রাইজ ই। বলে দিলে আর কি বাকি থাকে সারপ্রাইজ এর?’
‘মানে শাড়ি পড়া আবার কেমন সারপ্রাইজ?’
‘সেটা সারপ্রাইজ না। তুই শাড়ি পড়লে তোকে একটা সারপ্রাইজ দেব।’
‘বল না কি সারপ্রাইজ।’
‘আগে পড় তারপর বলছি।’
‘আমার মন ভালো নেইরে। খুব কষ্টে আছি। আব্বু একটা গান গাইতো না, কি যেন গানটা?’
‘আব্বু তো অনেক গানই গায় মনির খানের।’
‘ওইযে একটা ছ্যাঁকা খাওয়ার গান।’
‘কোনটা?’

‘বুকের জমানো ব্যথা,কান্নার নোনা জলে,ঢেউ ভাঙ্গে চোখের নদীতে। অন্যের হাত ধরে চলে গেলে দূরে,পারিনা তোমায় ভুলে যেতে। ও প্রিয়া থুক্কু। ও তারখাম্বা,ও তারখাম্বা তুমি কোথায়?’ রিমি গানটা গেয়ে ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিল।
‘আবারও তারখাম্বা? আমার মনে হচ্ছে ওয়েব সিরিজের তারখাম্বা নায়িকাকে না,বরং তোকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করছে।’
‘কিভাবে বুঝলি?’
‘মানে?’
‘সরি, কি বলতো আমার খুব খারাপ লাগছে তাইতো নায়িকার জায়গায় নিজেকে রেখে অনুভব করছি। কি যে বেদনা! কি আর বলি?’

‘থাক আপু। তুই এতো উদার হোস না আর। তোর ইমোশন দেখে এখন আমারই কষ্ট লাগছে। এখন আমার আপুটাকে দেখে আমার মন চাচ্ছে ধাক্কা দিয়ে পঁচা খালে ফেলে দেই। দয়া করে শাড়ি পড়। হাত জোর করছি।’
তিয়াসার রাগে গা হিনহিন করছে। রিমি তা দেখে বাধ্য মেয়ের মতো শাড়ি পড়ে নিল। তিয়াসা কুচি ঠিক করছে তখন রিমি বলল, ‘বল না কি করছিস তুই?’

‘চুপ কর আপু। চল বাহিরে যাই এখন। কিন্তু তার আগে একটু মুখটা ধুয়ে আয়। মানে কেমন যেন লাগছে। চোখের পানি শুকিয়ে খসখস হয়ে গেছে তোর মুখটা।’
রিমি তাই করলো। মুখটা ধুয়ে আসলে তিয়াসা তোয়ালে দিয়ে রিমির মুখ মুছে দিয়ে চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিল।
‘আচ্ছা তুই এতো যত্ন কেন করছিস বলতো?’ রিমি জিজ্ঞেস করল।
‘বাইরে চল বুঝতে পারবি।’

রিমি কোন উপায় না পেয়ে তিয়াসার সাথে হাঁটা দিল। কিন্তু দরজার বাহিরে আসতেই থেমে গেল। রিমি আবারও জিজ্ঞেস করে, ‘ওও, আমি এখন বুঝেছি। নিশ্চয়ই তুই আমাকে ছেলে পক্ষের সামনে নিয়ে যাচ্ছিস? আমাকে দেখতে এসেছে তাইনা?’
‘বাহ ভালোই বুঝেছিস। চল ছেলের পাশে গিয়ে বসবি।’

‘আমি যাব না। জানের দুশমন। সৎ না হয়েও সৎ বোন তুই আমার। আজ থেকে তোকে আমি চিনি না।’ এই বলে আবারও রুমের ভেতর যেতে নেই। কিন্তু সাথে সাথে তিয়াসা দিল এক ধাক্কা রিমিকে। রিমি চিল্লিয়ে ওঠে। উষ্ঠা খাবে কি খুব চেষ্টায় নিজেকে সামলে নিল। ওইদিকে সোফায় বসে থাকা সবাই সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। রিমি সামনে তাকাতেই চরম পর্যায়ের বৈদ্যুতিক শক খেল। একেবারে চোখের সাইজ না চাইতেও বড় হয়ে গেল রিমির। শক খাওয়ার ই কথা। কারণ রিমি ওর সামনে আহসানকে দেখতে পেল। সাথে একজন বয়স্ক মহিলা। মহিলাটি চিন্তিত মুখে রিমির দিকে চেয়ে আছে। সেই মহিলাটি আর কেউ নয় মুনতাহা। তবে রিমির কাছে অচেনা। তাই সব কিছু রিমির মাথার উপর দিয়ে গেল। নাজমুল তিয়াসাকে গরম চোখে বললেন, ‘এটা কোন ধরনের ফাজলামো তিয়াসা? বড় বোনের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে?’

তিয়াসা মাথা নিঁচু করে বলে,’সরি আব্বু। আমি করবো বলো তো? আপুই তো আসতে চাচ্ছিলো না।’
আম্বিয়া মুনতাহার দিকে চেয়ে বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না। আসলে ওরা দুজন এমনই।’
মুনতাহা চওড়া হাসি দিয়ে বললেন, ‘কোন সমস্যা নেই। তুমি এদিকে এসো রিমি।’

রিমি ইতস্তত মনে মুনতাহার সামনে গেল। আম্বিয়া গলা খাঁকারি দেওয়ায় রিমি বুঝতে পেরে মুনতাহাকে সালাম দিল। মুনতাহা নিজের গলার মোটা স্বর্ণের চেইনটি খুলে রিমির গলায় পড়িয়ে দিয়ে বলল,’খুব সুন্দর মুখখানা। একেবারে জোছনা রাতের চাঁদ। মাশাআল্লাহ।’ মুনতাহা থেমে না গিয়ে আরো কিছু কথা যোগ করল,’আমার খুব পছন্দ হয়েছে আপনাদের মেয়েকে। আমার একমাত্র নাতির বউ এমনই হওয়া দরকার। রিমির মতো।’ বলে রিমির মুখ ছুঁয়ে চুমু খেল। রিমি মুনতাহার কথায় মুচকি হাসি দিল।
মুনতাহা আবারও বলল,’আহসানের পাশে গিয়ে বসো। দেখি কেমন দেখায় দুটিকে।’ রিমি এবার খুব ভালো করে আহসানের দিকে তাকালো। দুজনের চোখাচোখি হতেই আহসান ঠোঁট কামড়ে হাসলো। রিমি ভ্রু কুচকে ভেংচি কেটে আহসানের পাশে গিয়ে বসলো।

তারপর পরপরই নাজমুল বলল,’খালা আপনি একা আসলেন? ছেলের বাবা মা আসলো না?’
‘আমি রিমিকে দেখতে এসেছি মাত্র। যখন বিয়ের পাকাকথা বলবো,তখন তাদের নিয়ে আসবো।’ মুনতাহা বললেন।
আম্বিয়া মুখ ভাড় করে বললেন, ‘আহসানের বাবা মা জানে তো এসব?’
মুনতাহা বললেন,’না জানে না। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমার সিদ্ধান্তই সবার সিদ্ধান্ত। আমি গত রাতে আহসানের মুখে রিমির বর্ণনা শুনেই রিমিকে সামনাসামনি দেখার পরিকল্পনা বানিয়ে ফেলি। নাতবউকে খুব পছন্দ হয়েছে আমার। সবারই হবে আশা করি। চিন্তা করবেন না,আমি সব সামলে নেব। আজই কথা বলবো আহসানের বাবা মায়ের সাথে। যদিও আমি জানি তারা মেনে নেবে রিমিকে।’

মুনতাহার কথায় আম্বিয়া ও নাজমুল স্বস্তি পেল। এদিকে রিমি আড়চোখে আহসানকে দেখছে আর রাগে ফুসছে। এখন শুধু আহসানের খবর নেওয়ার অপেক্ষায় রিমি।
স্রুতি ফোনের ম্যাসেজ চেক করে দেখলো ও ব্যাংকের চাকরির জন্য সিলেক্টেড। এরুপ একটা এসএসএস এসেছে। দেখেই ওর মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। জান্নাতকে ডেকেই বলল, ‘আমি সিলেক্টেড হয়ে গিয়েছি। সামনের সপ্তাহেই জয়েন করছি।’
জান্নাত শোনা মাত্র ফোন ছেড়ে স্রুতির দিকে তাকালো। তারপর হাসি দিয়ে বলল, ‘গ্রেট আপু। এখন তাহলে তুমি এ বাড়িতেই থাকছো।’

‘হুম, নানু তো থাকতে বলেছে।’
‘তাহলে তো আর কোনো সমস্যা থাকার কথা না।’
‘এখন শুধু আহসান আমাকে পছন্দ করলেই হয়।’
স্রুতি কথাটা শেষ করতেই দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো। বাড়ির কাজের লোক বাহির থেকে গলা ছেড়ে বললেন,
‘আপামণি, আপনাগো বড় সাহেবা ডাকছে।’
জান্নাত ভেতর থেকে বলল, ‘আচ্ছা, মুন্নু চাচা তুমি যাও আমরা আসছি।’
‘জ্বি আপামণি।’ বলে চলে গেল মুন্নু।
স্রুতি মুখশ্রী বিকৃত করে জিজ্ঞেস করল,’নানু হঠাৎ কেন ডাকলো রে জান্নাত?’
‘জানি না। চলো, গিয়ে দেখা যাবে।’
‘হুম চল।’

ড্রইং রুমে সবাই একসাথে সোফায় বসে আছে। মুনতাহার আসার অপেক্ষা করছে। মুনতাহা আসামাত্র সবার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
‘সবাই এসেছো তো?’
অপা উত্তর দিল, ‘না মা। আহসান এখনো আসেনি।’
মুনতাহা ক্ষীণ গলায় বলল, ‘যাকে নিয়ে কথা সেই আসেনি? মুন্নু তুমি আরও একবার যাও। গিয়ে দেখ কি করছে আহসান।’
‘এইতো এসে পড়েছি দাদিয়া।’ আহসান সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলল।
সাথে সাথে রঞ্জিত মুনতাহার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল, ‘আহসানকে নিয়ে কি এমন কথা বলবে মা? সবাইকে জরুরি তলব দেওয়ার কারণ কি?’

মুনতাহা কর্কশ শব্দে বললেন, ‘আমি বলছি সবাইকে। এতো উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই।’
রঞ্জিত চুপ হয়ে গেল। মুনতাহা আবারও বলল, ‘তো যে জন্যে ডাকা। তবে আমি আগে থেকে বলে রাখি। আমার কথা শেষ না হওয়া অবধি কেউ একটা রা শব্দও করবে না বলে দিলাম।’
সবাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। মুনতাহা সোফায় বসতে বসতে বললেন, ‘তোমরা সকলে চেয়েছিলে আহসান আর স্রুতির বিয়ে হোক। তবে আহসান না চাওয়াতে সেটা আর হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই বলে যে আহসান বা স্রুতির বিয়ে হবে না তা কিন্তু নয়।’

কথাটা শুনে সকলের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বিশেষ করে স্রুতির। ও ভেবেছে ওর সাথে আহসানের বিয়ের কথা বলতেই ডেকেছে সবাইকে। সকলে মনে মনে ভাবছে আহসান হয়তো মেনে নিয়েছে স্রুতিকে। কিন্তু সকলের ভাবনা পাল্টে দিয়ে মুনতাহা আরও একবার বলে ওঠে,

‘আমি আহসান আর স্রুতির বিয়ের কথা বলিনি। তাই খুশি হয়ে লাভ নেই। আমার কথার মানে,ওদের দুজনের বিয়ে না হলেও অন্য কারো সাথে তো হবেই। অর্থাৎ আহসান অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করে। তাকেই বিয়ে করতে চায়।’
কথাটা শুনে সকলের মুখের রঙ বদলে গেল। বিশেষ করে স্রুতির তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। স্রুতি ভয় ভয় চোখে মুনতাহার দিকে চেয়ে পরে আহসানের দিকে তাকালো। স্রুতি দেখলো আহসান মিটিমিটি হাসছে।
‘মা আহসান কাকে পছন্দ করে?’ রঞ্জিত জিজ্ঞেস করল।
‘মেয়েটির নাম রিমি। খুব সুন্দর দেখতে। আর আমি যে আজ আহসানের সাথে বেড়িয়েছিলাম হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে,সেটা মিথ্যে ছিল।’

রঞ্জিত বলল, ‘সেটা জানি তবে মিথ্যে কেন বলেছো তাতো এখনো বললে না!’
‘বলছি। আমি রিমিকে নিজের চোখে দেখতে চেয়েছিলাম। তাই আহসানকে বলি মেয়েটির বাসায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কাউকে আগে থেকে জানাতে চাইনি বলে মিথ্যে বলি।’
‘তো মা মেয়েটিকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?’ অপা জিজ্ঞেস করল।
‘হুম খুব। প্রথমে ভেবেছিলাম পছন্দ না হলে আহসানকে মানা করে দেব ওই মেয়ের সাথে কথা বলতে। তাই আহসানকে বলি আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। রিমিকে দেখে বুঝেছি আহসান যা বর্ণনা দিয়েছিল, কমই দিয়েছিল। মেয়েটি সত্যিই খুব সুন্দরী।’

‘কিন্ত দাদিয়া, মেয়েটির ফ্যামিলি কেমন দেখেছো কি?’ জান্নাত জিজ্ঞেস করল।
‘সেটা দেখে কি হবে? মেয়েটি সুন্দর,শিক্ষিত। এসব হলেই হলো। এর থেকে বেশি কিছু লাগবে না আমার। আর তুই বড়দের কথার মাঝে নাক কেন গলিয়েছিস?’ মুনতাহা শেষের কথাটা বেশ ধমকের সুরে বলায় জান্নাত চুপ হয়ে গেল।
‘জান্নাতকে চুপ করাচ্ছো কেন মা? ওতো ঠিকই বলেছে। দেখো,আমরা যেমন ফ্যামিলি থেকে বিলং করি। আমাদের বাচ্চাদের সম্পর্ক তেমন ফ্যামিলির সাথে করাই মার্জনীয়।’
‘তোর বউ কেমন ফ্যামিল থেকে এসেছে রঞ্জিত?’

রঞ্জিত কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তা দেখে মুনতাহা আবার জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে কিছু বলছিস না কেন? বল অপা কোন ফ্যামিলির মেয়ে? অপা ওতো সাধারণ পরিবারেরই মেয়ে। তুই জেদ করে তোর বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে অপাকেই বিয়ে করেছিলি। বলেছিলি ভালবাসার মানুষ টা গুরুত্বপূর্ণ। তার কি আছে না আছে বা ফ্যামিলি স্ট্যাটাস নয়। এখন ছেলের বেলায় উল্টো সুর ধরছিস কেন?’

‘মা তুমি যা করবে তাই হবে। তবে একটা কথা বলে রাখি, অপা তো ওর কাজ কর্ম দ্বারা তোমাদের মন জয় করে নিয়েছিল। ফলে সবাই ওকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সেভাবে যদি ওই মেয়েটাও পারে,তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
‘সুন্দর একটা কথা বলেছিস৷ আমিও একমত হলাম তোর সাথে। তবে রিমি যদি ওর কাজ কর্ম দ্বারা তোদের মন জয় করতে পারে,তাহলে কিন্তু তুই কখনো কাউকে ছোট করে দেখবি না।’

‘মা আমি কাউকে ছোট করছি না। ঠিক আছে বিয়ের আয়োজন করো। তারিখ ফেলো।’ রঞ্জিত নারাজ হয়ে কথাটি বললেন।
‘সামনের শুক্রবারই বিয়ে। সব কিছুর বন্দবস্ত কর। সব কিছুর দায়িত্ব তোর বুঝলি।’ মুনতাহা রঞ্জিতের উদ্দেশ্যে বললেন কথাটা।
রঞ্জিত মুনতাহার কথায় সম্মতি জানিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
মুনতাহা সকলের উদ্দেশ্যে বলে,’বাকিদের কোনো সমস্যা আছে?’

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ১৭+১৮

কেউই দ্বিমত জানালো না। তবে কেউ মন থেকে মেনেও নিল না। স্রুতি অনেক কষ্টে নিজের মুখের হাসি বজায় রেখেছে। তবে ভেতরে ভেতরে দম বন্ধ লাগছে তার। চোখের পানি অনেক চেষ্টায় আটকে রেখেছে সে। অপেক্ষা করছে কখন ছাড়বে।
আহসান রিমিদের বাসা থেকে আসা অবধি রিমির ফোনে কল দিয়ে যাচ্ছে তবে বন্ধ পাচ্ছে। বিষয় টা খুব বিরক্তিকর লাগলো আহসানের কাছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর আবারও কল দিল। এবার রিং হতে দেখে স্বস্তি পেল আহসান। সাথে রাগও হলো। বিরক্তির ছাপটা স্পষ্ট ফুটিয়ে ফোন কানে ধরলো আহসান। ধরা মাত্র বলে ওঠে,

‘ফোন বন্ধ কেন হুম?’
ওপাশে নিশ্চুপ।
আহসান আবারও বলল,’আমি কতগুলো কল দিলাম। ফোনে কি হয়েছিল?’
একই অবস্থা। নিশ্চুপ।

আহসান এবার বেশ কঠোর হয়ে বলল, ‘কি সমস্যা? আমি জানি আপনি আমার কথা শুনছেন। সো আন্সার মি ডেম ইট।’
রিমি এবার মুখ খুলল, ‘ধমকা ধামকি কিসের হুম? আমার রোল আপনি প্লে করছেন কেন?’
আহসানের টনক নড়ে রিমির কথায়। ও শান্ত গলায় বলল, ‘আপনি কোথায় খুশি হবেন তা না রাগ দেখাচ্ছেন?’
‘আপনি এতো বড় মিথ্যেটা কেন বলেছেন আমার সাথে আগে তাই বলুন?’………

তোলপাড় সিজন ২ পর্ব ২১+২২