দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৪

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৪
আফরোজা আশা

জুনায়েদ তালুকদার আর জয়নাল তালুকদারের সহ বাড়ির সবাই একসাথে রাতের খাবার খাচ্ছে। দিগন্ত বাদে তালুকদার বাড়ির প্রত্যেকে রয়েছে। বেলা খাওয়ার মাঝে ঘাড় উঠিয়ে কয়েকবার দেখলো দিগন্ত আসছে কি না। কিন্তু দিগন্তের দেখা পেল না। ভারী অবাক হলো। এতো বড় রাত কফি খেয়েই পার করে দিবে নাকি! খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বেলা আর বৃষ্টির সাথে ভালো-মন্দ কথা বলছে বাড়ির দুই কর্তা। মিতালী আর বাণী ছোটাছুটি করে কার কি লাগবে তা দেখছে। দিহানের পাশে দিশা বসেছে। এক লোকমা খাবার মুখে পুরে মিনিটের পর মিনিট পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওর খাওয়া শেষ হচ্ছে না। টেবিলে রাখে ফোন এক হাত দিয়ে স্ক্রল করছে আর খাচ্ছে। দিশার কাজ দেখে ওর মাথায় বারি মারলো দিহান। অনেকটা জোরেই মেরেছে। সহসা খেঁকিয়ে উঠল দিশা। দিহানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ মারলা কেনো? ’
দিহান ভাবলেশহীন ভাবে খেতে খেতে উত্তর দিল, ‘ ফোন রেখে আগে খাওয়া শেষ কর। সব খাবার শয়তানের পেটে চালান দিচ্ছিস। কামাই করার ঠেলা জানিস?বেকুব! ’
‘ আমাকে খাওয়ার খোটা দিচ্ছো! ’
দিহান মুখ ভেঙিয়ে নিজ খাওয়া মনযোগী হলো। দিশার আউল ফাউল পেঁচাল শুরু হবে এখন। তাই কথা না বলাই ভালো।
দিহানের কাছে পাত্তা না পেয়ে দিশা ফুঁসতে ফুঁসতে মিতালীর দিকে তাকালো,
‘ কি আজব! আমাকে বিয়ে দিচ্ছো না কেনো তোমরা? জামাই নেই বলে তোমার ছেলে এভাবে অপমান করতে পারলো। ’
মাইশা পাশ থেকে দিশাকে গুতা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ বড়রা আছে। একটু তো সরম করো! ’
দিশা বিরস মুখে বাপ-চাচাকে দেখলো। ওরা খাওয়া শেষ করে একে একে বেসিনের কাছে চলে যেতেই দিশা মুখ লটকিয়ে বলা ধরলো,
‘ আম্মু, তোমাদের বিয়ের পর একটা মেয়ে হয়েছিল। দিশা নামের সেই মেয়েটা যে তোমাদের ঘরে বড় হয়েছে চোখে দেখো না? বিয়ে কবে দিবা? একটা জামাইয়ের অভাবে মেয়েটা আজ সবার কাছে অবহেলিত। ’
দিশার দুঃখের কথা শুনে উপস্থিত সবাই হু হা করে হাসলো। মিতালী দিশার পাতে খাবার দিতে দিতে বলল,
‘ তোর বাপ আমাকে বিয়ে করতে আসছিল বলে আমি করেছি। এখন তোর জামাই তোকে বিয়ে করতে না এলে আমার দোষ!’

মিতালীর কথা শেষ হতে না হতেই আরেকদফা হাসির রোল পড়লো সেখানে। দিশার মুখ চুপসে গিয়েছে। ফটর ফটর করে সবার সাথে কথায় জিততে পারলেও মায়ের সাথে কোনোদিন পারে না। কি সুন্দর অপমানটা করলো দিশাকে।
জয়নাল হাত ধুতে ধুতে জুনায়েদকে বললো,
‘ এখন কি চলে যাবে? ’
জুনায়েদ গাম্ভীর্যহীন ভাবে উত্তর করলো,
‘ দু’রাত তো থাকলাম। আজ এ বাড়িতেই থাকবো। ’
জয়নাল একটা ভারী শ্বাস ফেলে বললো,
‘ ছেলেটার দিকে একটু নজর দিলেও পারো। বয়স তো কম হলো না ওর। ছেলে বিয়ে দেওয়ার বয়সে নিজেই বিয়ে করে বসে আছো। ’

ছোট ভাইয়ের সূক্ষ্ম খোঁচাটা আঁচ করতে পারলো জুনায়েদ। পাল্টা জবাব দিল,
‘ পুরুষের বিয়ের বয়স হয় না। আর আমি একসাথে দুই সংসার সামলানোর সামর্থ্য রাখি। যেখানে আমার সমস্যা নেই, সেখানে অন্য কারো সমস্যাকে গুনে দেখি না আমি। ’
ভাইয়ের এই দম্ভ সহ্য হয় না জয়নালের। কিছুটা রুচিহীন ভাব নিয়ে বলল,
‘ যাক গে! তোমার আর তোমার ছেলের ব্যাপার। এসবে আমি যেতে চাই না। তবে নিজের সুখ-শান্তি খোঁজার মাঝে ছেলের দিকেও একটু খেয়াল দিও পারলে! একটা সুন্দর জীবন তিক্ততায় ভরিয়ে দিয়ে কিভাবে যে এতো দম্ভ নিয়ে কথা বলো বুঝি না। ’
বলে নিজ রুমের দিকে অগ্রসর হলো জয়নাল। জুনায়েদ চোখমুখ শক্ত করে নিয়েছে ওর কথায়।

দিশার রুমে ভারী জলসা চলছে। বড়রা সবাই শুয়ে পড়েছে। দিশা,মাইশা,বেলা,বৃষ্টি আর বাণীর অবস্থা এখন এক রুমে। দিহান দু’একবার ছুঁক ছুঁক করে উঁকি দিয়ে গিয়েছে বাণীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মেয়ে পার্টি ভাগিয়ে দিয়েছে ওকে। লাজ-লজ্জা ভেঙ্গে আর বেশি জোর করতে পারেনি ভদ্র দিহান। কাঁচুমাচু করে রুমে চলে গিয়েছে।
রুমের দরজা বন্ধ। ফ্যানের স্পিড সর্বোচ্চ। উজ্জ্বল আলো নিভিয়ে হালকা রঙের আলো জ্বলছে রুমময়। বিছানার উপর ফোনে হাই ভলিউমে গান বাজছে। মাঝখানে পাঁচ রমণী যে যার মতো এলোমেলো নাচছে। বাণী আর মাইশা একটু নেচে হাপিয়ে উঠছে। দুজনেই বেডে বসে হাঁপানি রোগীর ন্যায় হাপাচ্ছে। কিছুক্ষন পর বৃষ্টিও ওদের সাথে যোগ দিল। কিন্তু বেলা আর দিশার থামার নাম নেই। দুই পাগলের ঈদ লেগেছে যেন। হাসছে, গাইছে আর লাফালাফি করছে। ক্লান্তি ওদের ছুঁতেই পারে নি বোধহয়। বাণী ঠান্ডা পানি এনে মাইশা আর বৃষ্টিকে দিল। বাকি দুজনকে ডাকলো কিন্তু তারা তাদের মতো মস্তিতে ব্যস্ত। অবশেষে ফোন হাতে নিয়ে গান অফ করে দিল। গান বন্ধ হতেই একসাথে চেঁচালো দিশা আর বেলা।

‘ আমার নাচা শেষ হয় নি আপা। গান দেও। ’
দিশাও বলতে চাইলো তার আগেই বাণী চোখ পাকিয়ে বললো,
‘ মার খাবি দুজনেই! অনেক নেচেছিস।আর না; শরীর খারাপ করবে। ’
দিশা ধরাম করে হাত-পা মেলে বেডে শুয়ে পড়লো। জোরে ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আফসোসের স্বরে বলল,
‘ নাহ! আমার ভাইও বেরসিক, ভাবিও বেরসিক। দুটো বেরসিক মানুষ একসাথে। ভারী চিন্তার বিষয়! আমার ফুপিদের আস্তে মনে হয় দেরী-ই হবে। ’
সরু চোখে দিশার দিকে তাকিয়ে আছে বাণী। মাইশা আর বৃষ্টি ঠোঁট টিপে হাসলো খানিক। মাঝ থেকে বেলা ফট করে প্রশ্ন করে বসলো,

‘ কেনো আপু? বেরসিক হলে কি বাচ্চা হয় না। ’
লজ্জায় চোখমুখ গরম হয়ে এলো বাণীর। মাইশা দাঁত দিয়ে জিভ কামড়ে ধরলো। বৃষ্টি কিছু না শোনার ভান করে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো। কিন্তু দিশার মুখের লাগাম টানে কে! একহাত মাথায় ঠেকিয়ে আধশোয়া হয়ে বেলাকে বললো,
‘ তুই আরেক গাধা! কার ভাগ্যে যে আছিস। বেটায় মনে হয় কপাল পুড়া। ’
কৌতুহলের শেষ নেই বেলার। হেঁটে এসে দিশার পাশে বসে হাত নাড়িয়ে প্রশ্ন করলো,
‘ আগে বলো না; রসিক কিভাবে হয়? রসিক না হলে কি ভালোবাসা,বিয়ে,বাচ্চা কিছুই হয় না? ’
বেলার জানার আগ্রহ দেখে নিজেকে খানিকটা দামী দামী লাগলো দিশার। গুরু’র মতো একটা ভাব নিয়ে কিছু বলবে তার আগেই বাণী হালকা স্বরে ধমকে উঠল ওদের।

‘ তোরা দুটো খুব পেঁকে গিয়েছিস। বেলা; তোর এতো জানার আগ্রহ কেন? ছোট মানুষ তুই..’
বেলা তাতক্ষনাৎ প্রতিউত্তর করে বললো,
‘ দূর! আপা। আর ছোট মানুষ বলবা না তো। আমি কলেজে উঠছি। ’
বাণী মুখ খুললো কিছু বলার জন্য কিন্তু বলতে পারলো না। এর মধ্যেই বৃষ্টি ওর ফোন সামনে এনে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
‘ দেখো এই পেইজের লাইভটা। একটু পরেই গান শুরু হবে। আগে অনেক গান শুনতাম এই পেইজের। অনেকদিন হলো গান শুনি নি। আজ এতো রাতে লাইভে এসে গান গাইবে। ’
সবাই একসাথে জোটলা হয়ে বসলো। বৃষ্টি হাতের ফোনটা মাঝখানে রাখলো। লাইভে একটা ছবি দেওয়া। ‘ সিন্ধুবাসনা ’ পেইজের নাম দিয়ে ছবিটা তৈরি।
গিটারের টুংটাং আওয়াজ হচ্ছে। হয়তো হাত চালিয়ে গিটারে সুর তুলছে। ইতিমধ্যে লাইভ ভাইরাল হয়েছে। রাত হলেও হাজার হাজার মানুষ জয়েন হয়েছে গান শুনবে বলে।

চোখ গড়িয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়লো। মোছার প্রয়োজন বোধ করলো না মনা। মুছলেই যে আবার গড়াবে না তা তো নয়! বুক ভার হয়ে গিয়েছে। শ্বাস টানতে কষ্ট হচ্ছে। কিছু স্মৃতি মোচড়ে উঠেছে অন্তরস্থলে। স্মৃতির পাতা আরেকটু খুলে দিতে চোখ বন্ধ করে নিল। এই গানের অযুহাতে প্রিয় মানুষটার আকর্ষণ পেতে চেয়েছিল সে। শ’খানেক তালবাহানা খুঁজতো একটু বেশি সময় কাটানোর জন্য। ওর এক ঝলকে ভার্সিটির কত ছেলে দূর্বল হয়ে যেতো। সেই সব ছেলেকে উপেক্ষা করতো যে মেয়ে, সেই মেয়ের সাথে এতো সময় কাটিয়েও এক ছেলে কি সুন্দর তাকে উপেক্ষা করতো। মনা সেই উপক্ষাতেই ছেলেটাকে গভীর মন দিয়ে বসেছিল। চোখ বুজে রেখেই পুরনো সেই মধুর স্মৃতিতে ডুবেছে মনা।

বেশ খানিকটা সময় পর একটা সুরেলা মিষ্টি ভয়েস আওয়াজ ছাড়লো। গলা ছেড়ে গিটারের তালের সাথে তাল মিলিয়ে গান ধরলো। বেলা,মাইশা,দিশা,বাণী,বৃষ্টি মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় গানে মনযোগী হলো।
।। তুমি তো আমায় ছেড়ে চলে গেছো অনেক দূরে, সুখে আছো শুনলাম আমি ভাসাইয়া আমায় সুরে।
তুমি তো আমায় ছেড়ে চলে গেছো অনেক দূরে, সুখে আছো শুনলাম আমি ভাসাইয়া আমায় সুরে।
কতটা যন্ত্রণাময় প্রতিরাতে জেগে থাকি, তোমার স্মৃতি অন্তরেতে ভাঁজে ভাঁজে সাজিয়ে রাখি ।।
।। আমি এক এমন পাখি বুকেতে কষ্ট রাখি, মুখেতে দেখাই হাসি যেন আমি সুখ নিবাসী।
আমি এক এমন পাখি বুকেতে কষ্ট রাখি, মুখেতে দেখাই হাসি যেন আমি সুখ নিবাসী ।।
।। এ জীবন শেষ হয় না, তোমায় ছাড়া ভাল্লাগে না, সবকিছু আন্ধার লাগে, বেঁচে থাকা কী যাতনা।
এ জীবন শেষ হয় না, তোমায় ছাড়া ভাল্লাগে না, সবকিছু আন্ধার লাগে, বেঁচে থাকা কী যাতনা।
আমারে পড়লে মনে তুমিও কাইন্দো গোপনে, সুখে থাইকো, প্রাণের প্রিয়, আমার ভালোবাসা নিয়ো।
আমি এক এমন পাখি বুকেতে কষ্ট রাখি, মুখেতে দেখাই হাসি যেন আমি সুখ নিবাসী।
আমি এক এমন পাখি বুকেতে কষ্ট রাখি, মুখেতে দেখাই হাসি যেন আমি সুখ নিবাসী ।।

গানের মাঝপথে এসে লাইভটা পেয়েছে রায়হান। শুয়ে পড়েছিল ঘুমাবে বলে, ঘুমের আগে কাজীর নাম্বারটা খোঁজার উদ্দেশ্যে আরেকবার ফোন হাতে নেওয়াই বিরাট ভুল হলো। লাইভ সামনে আসতেই গানের কয়েকটা লাইন শুনে শক্ত হয়ে থাকা চোয়ালে তাচ্ছিল্যভরে হাসলো। কমেন্ট সেকশনে গিয়ে টাইপ করলো,
‘ অন্যকে কষ্ট দিয়ে হলেও সুখ খুঁজে নিয়েছিস। অকৃতজ্ঞ,স্বার্থলোভী! ’

এতো এতো কমেন্টের ভীরে রায়হানের সেই কমেন্টটা নজর এড়ালো না মনার। গলার কাছে কান্নাগুলো দলা পাঁকিয়ে আছে। লাইভ শেষ করে অবশ হয়ে থাকা শরীরটা টেনে বিছানায় নিয়ে গেল। মাঝবরাবর হাত-পা মেলে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েকে টেনে এনে বুকের মাঝে নিল। ঘুমন্ত মেয়েকে ঝাপটে জরিয়ে ধরে বাঁধ ভাঙ্গা কান্নায় ভেসে গেল। প্রত্যাশার ছোট্ট শরীরটা ঘুমের মাঝে নড়েচড়ে উঠল। পরক্ষনেই আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। মেয়ের নড়চড় টের পেয়ে দু’ঠোঁট চেপে কান্নার বেগ থামানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালালো মনা। কিন্তু কান্নাগুলো ভেতর থেকে ছিঁড়ে-ফুড়ে বেরিয়ে আসছে আপনগতিতে। মনের ভেতর গুমরোচ্ছে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে।

রক্তলাল চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিল দিগন্ত। গানের মাঝপথে ফোনটা সজোরে আছাড় মেরে ফেলে দিল। রাগে-ক্ষোভে সমস্ত শরীর থরথরিয়ে কাঁপছে। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে মেঝেতে পরে থাকা ফোনের উপর জোরে জোরে পদাঘাত করলো। গুঁড়ো গুঁড়ো হয়েছে ফোন। তাও শান্তি মেলছে না ভেতরে। এই আওয়াজ শুনলেই ভেতরে থেকে ঘৃণা উগলে বের হয়। পেইজটা সেদিনই ব্লক করে দিয়েছিল। কিন্তু লিস্টের অনেকে লাইভ শেয়ার দিয়েছে। ফোন চালানোর মাঝে হুট করে একজনের শেয়ারকৃত লাইভটা চলে আসায় বিশ্রি সেই সুর আবারো দিগন্তের কানে বিষ ঢেলে দিল। বেডে বসে হাঁটুতে দুহাতের ভর রেখে ঠেস দিয়ে বসলো।

পা জোড়া নড়ছে অনবরত। চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। শক্ত মুঠো করা হাঁত কাঁপছে ভীষণভাবে, রাগের বশে হিতাহতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ছে। হাতের রোগগুলো ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। বড় বড় শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার খুব চেষ্টা করছে দিগন্ত কিন্তু ব্যর্থ। মাথা শূন্য লাগছে। কানের পাশে ভোঁভোঁ করে ঘুরছে অনেক মানুষের উপহাস, তাচ্ছিল্যময় কটু বাক্য। বিদ্রুপের হাসির ঝনঝন বিষাক্ত আওয়াজে মেজাজের খেই হারিয়ে ফেললো। মুষ্টিবদ্ধ হাত সজোরে বারি মারলো কাঠের শক্ত হেডবোর্ডে।

ফোনের নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে পেইজের লাইভ নোটিফিকেশনে চোখ আটকে গিয়েছিল ফাহাদের। পুরোটা সময় নিরবে শুনেছে গান। বেলকনির কাউচে বসে দুহাত বুকে চেপে বসে আছে, দৃষ্টি কালো আকাশের দিকে। খোলা জায়গার দরুন হর হর করে বাতাস এসে লাগছে ওর সারা গায়ে। অনুভূতিশূন্য সে! সামনে ফোন অবহেলায় পড়ে আছে। লাইভ এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একক ভাবেই পড়ে আছে ফোনটা। গান শেষ হওয়ার পর পরই আঙুল চালিয়ে সুইচ অফ করে দিল। অতঃপর কাউচ ছেড়ে রুমে অগ্রসর হতে হতে তীক্ষ্ণ কটুক্তিময় গলায় আওড়ালো,
‘ স্কাউন্ড্রেল!ঘৃণাও আসে না, করুণাও আসে না। ’

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৩

বাইক স্টার্ট দিতে দিতে সপ্তম বারের মতো পুনরায় দিগন্তের নাম্বারে ফোন দিল রায়হান। ফোন বন্ধ। দিশার নাম্বারে ফোন দিল সেটাও বন্ধ। মেজাজের দফারফা হয়ে গিয়েছে, সাথে চিন্তায় মাথা ধরেছে। দিগন্ত নিশ্চয়ই লাইভ দেখেছে।

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৫